বাঙলা বাঙালী

বাঙলা বাড়াল

নৈৈলেম্পকুম্াত্ বন্দ্তোক্াধ্্াজ

বুদ্ধ মা, প্পাটনা ৮০০ ৩১

থম এল ক্চাশ আসা ৭১ ৩৯ ২৯

প্রকাশ নিদেশক, বিহার বাওলা আক্াাভডেন্সি বুদ্ধ মার্শ, পাটনা ৮০০ ৮০১৮ বিহানল

এপ্রচ্ছদ দীপক ০গা্ষামী

পর্পিবিশক মিত্র ঘোষ পাবলিম্ার্গ প্রাঃ লিও ১০ শ্যামাচরণ €দ স্্রীট, ক্লক্কাতা। ৭৩

মুদ্রক আঠাস্লকুমার লাউ

সব্রম্বত্তী শ্প্রিন্টিং ওওয়ার্কস

গুকুশ্রসপাদ €চীধুরী ০লন, কলকাতা

বিহারে বাঙল। ভাষার সেবকদেব উদ্দেশে নিবেদিত

পকাাশকেজ নিবেদন

গ্রন্থক্াাক্ বিহারের অধিবাসী সর্বভারতীয় কমী হওয়ার, তার রচনায় বাডালীয়ানার যে বৃহত্তর ক্পটি ফুটে উঠেছে, তত পাঠকদের সামনে তুলে ধরার ইচ্ছা নিয়েই এই সংকলনের প্রকাশ 1 এহ গ্রন্থ প্রকাশকালে অন্ত একটি গ্রস্থের ন্সহ্য তাকে “আনন্দ পুরস্কার” দিয়ে সম্মানিত কর হয়েছে

এরই গ্রস্থের বচনাগুলিতেও্ও ্ুশংসনীযু €যাগ্যতান্ প্রতিফলন পয়েছে বলে €সগুলিক্ে আমব্রা সানন্দে পাঠকদের হাতে তুলে দিচ্ছি

এই গ্রন্থকারের অন্যান্থা গ্রন্থ

সধোদয় শাসনমুক্ত সমাজ, গান্ষীজীর গঠনকর্ধ- সত্যাগ্রহের কথা, বিপ্রবী বন্ধুর প্রতি, জিন্ন!, পাকিস্তান : নতুন ভাবনা

অন্ুবাদ-গ্রন্ছ মহাত্মা গান্ধীর £ আমার ধ্যানের ভারত, ছাদের প্রতি, সত্যাগ্রহ, আমার

ধর্ম, সংযম বনাম স্বেচ্ছাচার, পল্লী পুনর্গঠন, শিক্ষা, আমার জীবনকাহিনী।

আলবার্ট আইনস্টাইনের £ জীবন-জিজ্ঞাসা আলডুস হাকসলের £ বিজ্ঞান শ্বাধীনত। শান্তি, এপ আও এসেন্স।

কিশোরলাল মশকুওয়ালার £ গান্ধী মার্স

সম্পাদিত গ্রন্থ

মহাতা। গান্ধীর £ 4 বৈ0-ড1072া০5

আলবার্ট আইনস্টাইনের ৬15৬৭ গাদ্ধী পরিক্রমা ইত্যাদি

অবতরণিকা

বিহারে আমার জন্ম। আর কর্মন্বত্রে একরকম সর্বভারতীয় তবু যে-কোন আত্মপচেতন বাঙালীর মত বাঙলা বাঙালীর সঙ্গে সন্বপ্ধিত গ্রশ্নসমূহ আঘৌবন আমাকেও ভাবিত করেছে বিগত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায প্রকাশিত আমার এই প্রবন্ধগুলি বাল! বাঙালীদের নিয়ে আমার সেই চিন্তা-ভাবনার ফপল। স্বভাবতই সেজন্য প্রবন্ধগ্ুলিতে সম- সাময়িকতার ছাপ আছে। পরিপংখ্যান কোন কোন স্থলে সবাধুনিক নয়। এসবের সংস্কার করতে গেলে অনেকগুলি প্রবন্ধকেই নূতন করে লিখতে হত। সেই অসম্ভব কার্ধে ব্রতী না হয়ে যেখানে নিতান্ত আবশ্তক সেখানে কিছু টীকা-ভান্ত যোগ করা হয়েছে একালের পাঠকদের স্থবিধার জন্য |

এরপর বাঙলা প্রসঙ্গ বাল্যকালে শুনেছি বঙ্গভৃমি বলতে আসাম বিহার-উড়িস্তা নিয়ে বিশাল ভূখণ্ড এর আওতায় ছিল। ১৯১২ খ্রীষ্টাবে বঙ্গভঙ্গ রদ হবার নামে বহু বঙ্গভাষী এলাকাকে বাঙলার বাইরে রেখে দেওয়। হল। ১৯৪৭ গ্রীষ্টাব্দের দ্বিতীয় বঙ্গভঙ্গ তো স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলাম আজ তাই স্বভাবতই প্রশ্ন_-বঙ্গভূমির আয়তন কতটুকু? কারণ, কারও কারও মতে এর উপরই তার বাসিন্দা বাঙালীর অভিধ] নির্ভর করে। বল। বাহুল্য রাজ- নৈতিক সত্য হলেও খণ্ডিত পশ্চিমবঙ্গ অথবা তার বাসিন্দাদের পরিধিতেই আমার আলোচনা-বুন্তকে সীমিত রাখা উচিত মনে করিনি আমার বাঙল৷ বাঙালী আজকের রাজনৈতিক ভৌগোলিক সীমাকে অতিক্রম করে-- যদি আধ্যাত্মিক শব্দটা এদেত্রে ব্যবহার করতে পারি--তার আধ্যাত্মিক সত্তাকে স্পর্শ করে। এতট] স্বাধীনতা নেওয়া উচিত হয়েছে কিনা তা সুধী পাঠক বিচার করবেন

অতংপর আনন্া-কৃত্য আমার পরমাত্্ীয় বিহারের বাঙলা আকাডেমির ডঃ গুরুচরণ সামন্ত মহাশয় উৎসাহী হয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের ছত্রচ্ছায়ায় গ্রন্থ প্রকাশ না করলে রচনাগুলি হয়ত সাময়িক পত্রিকার পৃষ্ঠাতেই চিরসমাধি লাভ করত। ন্থতরাং গ্রন্থ প্রকাশের যাবতীয় কৃতিত্ব তার বিহারের বাঙল। আকাডেমির দঈর্ঘকালের গ্রীতিভাজন বন্ধু এবং বর্তমানে আত্মীয় প্রখ্যাত

প্রকাশন প্রতিষ্ঠান “মিত্র ঘোষ”-এর শ্রীযুক্ত সবিভেন্দ্রনাথ রায় তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের শতবিধ কর্মব্যস্ততার মধ্যেও বই-এর প্রুফ দেখে দিয়ে এবং প্রয়োজনে পরিমার্জন করে আমাকে প্রভূত সাহায্য করেছেন। এদের কারও সঙ্গেই আমার ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানাবার মত লৌকিকতার সম্পর্ক নয় বলে খণ স্বীকার করেই ক্ষান্ত হচ্ছি। পরম শ্রদ্ধাভাজন অন্নদাশক্কর রায় তাঁর মুক্ত মন মননশীলতার জন্য যৌবনের প্রারস্ত থেকেই কেবল আমার আদর্শ নন, দীর্ঘকাল যাবৎ তার স্রেহলাভের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আমার এই রচনা-সংকলনের ভূমিকা লিখে ভিনি শুধু এর মর্ধ।দ1 বুদ্ধি করেননি, বক্তিগতভাবে আমাকেও গৌরপান্বিত করেছেন এই অবকাশে আবার তাকে সশ্রদ্ধ প্রণতি জানাই

ইতিহাস-চক্রের অমোথ আবর্তনে যুগে যুগে বাঙলা বাঙাল বিবর্তন ঘটেছে ঠিকই তবু আমার বিশ্বান, সব পরিবর্তন উত্থান-পতনের উর্ধে বাউলা বাঁঙডালীর একটা শাশ্বত কূপ আছে সমালোচনার আশঙ্ক1 থাকলেও সবিনয়ে নিবেদন করি-_এ রূপ দেশ-কংল নিরপেক্ষ বাউলা বাঙালীর সেই চিরায়ত ক্ধপের অন্ততঃ এক ঝলক উপলব্ধি করতে এবং তাকে তার ইভিহাসনিদিষ্ট পরিণতিতে নিয়ে যেতে আজকের বাঙালীকে রচনাগুলি যদি কিছুমাত্র সাহায্য করে, তবে আমার €েখনী সার্থক হয়েছে মনে করব

চারু-নীড়, কামডহরি শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় গড়িয়া, কলিকাতা ৭** ০৮৪

ভূমিক'

ছয় শতক ধরে ফারসী ছিল বাংলাদেশের রাজভাষা। তার বদলে ইংরেজী রাজভাষ। হওয়ায় আরো আগে ইংরেজী শিক্ষা প্রনরত্তিত হওয়াঘ বাগালী ঘুসলমানর] রাজকর্মে পেছিষে পড়ে, বাঁডালী হিন্দুরা এগিয়ে যায়। অপর পক্ষে বাঙালী মুপলমানরা বংখ্যাগ্তরু আর বাঙালী হিন্দুরা সংখ্যালথু সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। এক শতাব্দীর ভিতরেই হিন্দু মুপলমানের মধ্যে একটা ভাবনৈষম্য দেখা দেয়। ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার কোনো উপায়ই কালো তানা ছিল না। এমন সময় ভারতের বড়লাট লঙ কার্জন প্রস্তাব করেন বাংলাদেশকে ছুই "ভাগে বিভক্ত কর] হোক

কলকাতার হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের প্রধানর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন যে বাংলাদেশের হিন্দু সুপলমান মিলে বাঙালীরা নেশন? হিসাবে এক বিভাজ্য বাসভূমিকে দ্বিধাবিভক্ত করলে দেশকেও দ্বিখত্তিত করা হয়। সেটা অন্যায় ঢাকার নবাব পরিবারের মধ্যেও দ্বিমত দেখা যায়। ঢাকা অঞ্চলের কয়েকজন মুপলিম নেতা একটি ইস্তাহাঁরে লেখেন, মুশলমানদের যদিও কতকগুলি স্বতন্ত্র দাবি আছে তা হলেও তাঁর। স্বতন্ত্র নেশন নয়, হিন্দু মুসলমান মিলে একই নেশন তখনো মুসলিম লীগ প্রত্ত্ঠিত হয়নি বহু অবাঙালী মুসলমান চাকার নবাববাড়ীতে বসে শিক্ষা সম্মেলনের পরে রাতারাতি মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন মুসলিম লীগের অন্যতম দাবি হয় আইনসভার জন্যে দ্বতস্ নিরাচন বাবস্থা প্রবর্তন | দাবিট] সারা ভারতের মুপলমানদের তরফ থেকে বাঙালী মুসলমানদের তরফ থেকে নয়। কিন্ত স্বতন্ত্র নিব'চন ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে তাদের সেট] মেনে নিতে হয়

স্বতস্থ নির্বাচনের বীজ থেকে জন্মায় স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের দাবি। সেটার মূলেও অবাঙালী মুসলমান | বাঙালী মুসলমানরা পাকিস্তানের কথা ভাবতেই পারেনি তবে তাদের অগ্রগণ্য নেতা ফজনুল হক সাহেব লাহোরে গিয়ে অবাঙালী মুসলমানদের পাল্লায় পড়েন তাকে বোঝানো হয় যে ইংরেজরা চলে গেলে সুমলিমপ্রধান প্রদেশগুলিকে নিয়ে গো] কয়েক স্বাধীন রাষ্ট্র স্ষ্টি হবে, তাদের

একটি বাংলাদেশ লাহোরে পাকিস্তান নামকরণ হয়ান। হক সাহেব হে প্রস্তাব উত্থাপন করেন সেটি একটিমাত্র পাকিস্তানের জন্তে নয়। ভাষায় বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে জিন্না প্রমুখ মুসলিম লীগ নেতাদের চাতুরীতে বহুবচন হয়ে দাড়ায় একবচন। পাকিস্তান হলে একটাই হবে, বাব বাংলাদেশ তার অঙ্গ

হিন্দুদের এতে তীব্র আপত্তি আধিপত্য করবে তো! অবাঙালী মুসলমান পাকিস্তান না হয়ে স্বতন্ত্র স্বাধীন বাংলাদেশ হলে শরৎচন্দ্র বন্ছ প্রমুখ নেতার! সায় দিতেন। তবে তাদের প্রধান শর্ত সংবিধানের ভিত্তি হবে যৌথ নির্বাচন অথাৎ ফিরে যেতে হবে বঙ্গভঙ্গের পৃতুর্ব বাঙালী হিন্দু মুপলমান যখন এক নেশন বলে নিজেদের ভাবত যখন আইনসভার জন্তে স্বতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থা ছিল না। কিন্ত বাঙালী মুপপিম লাগ নেতাদের যৌথ নিরাচনে সায় ছিল না বাংলাদেশ আবার ভেঙে যাঁর ভারত পাকিজ্ঞান হয় ছুই নেশন পাকিস্তান থেকে বু হিন্দু ভারতে পালিষে আসে, ভারত থেকে বহু মুললমান পালিয়ে যান্ধ পাকিস্তানে পাশপোর্ট ভিসা প্রবর্তন পূর্বক এই ছুই স্রোত রোধ করতে হয়

ইতিহাস সেইখানেই শেষ হয়ে যায় না। উরু বনাম বাংলার প্রশ্নে বাঙালী অবাঙালী মুসলমান ছুই স্বতন্ত্র নেশনে বিভক্ত হয়। বাঙালী! মুসলমানদের রা্রের নাম রাখা হয় বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গ এর বাইরে থাকা এটা হয় কার্ধত পূর্ববঙ্গ, সমগ্র বঙ্গ নয় কিন্ত পাশপোর্ট ভিস1 বলবৎ থাকে ভারত বাংলাদেশ ভেদবুদ্ধি কার্ধত হিন্দু মুললমান ভেদবুদ্ধির খাত দিয়ে বহ্মান তাদের আত্মীয়তা সেই খে ছেদ গডেছিল সে ছেদ এখনো বিদ্যমান তবে ওপারের হিন্দুর সঙ্গে এপারের হিন্দুর কোনো ফারাক নেই। ওপারের মুসলমানের সঙ্গেও এপারের মুখলমাঁনেরও কোনো তফাত নেই। ব্যক্তিগত স্তরে আত্মীয়তা যেমনকে তেমন

আমরা যাঁধা একদা 'ভবিস্যাতের স্বপ্ন দেখতুম তারা এখন হাল ছেড়ে দিকে বসে আছি নিয়তির হাতে কেই বা ভাবতে পেরেছিল যে শেখ মুজিবুর রহমান তার চার সহযোদ্ধা প্রতিক্রিয়াশীলদের দ্বার নিহত হবেন? একটু একটু করে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে দ্বিতীয় এক পাকিস্তান? বঙ্গভাষী পাকিস্তান £ ইতিমধো ইসলাম হয়েছে তাঁর রাষ্ট্রধর্ম এর পরের পদক্ষেপ রাষ্ট্র হবে ইসলামী রা্রী। হিন্দু বৌদ্ধ শ্রীন্টান হবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বা জিম্মি কবে আবার ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরে আসবে তা কেউ গণনা করে ফুবলতে পারে না। তে

আমর] যার] বাঙালী মুসলমানদের সঙ্গে সাতশে। বছর ধরে পরিচিত তার! ওদের সবাইকে অবিশ্বাস করতে পারিনে ওরা ধর্মপ্রাণ হলেও ধর্মান্ধ নয়। মৌলবাদ প্রতিহত হবে যখন বাংলাদেশে রেনে্সাস হবে। ইতিমধ্যেই তার স্থচন] লক্ষিত। ওপারের বাংল৷ সাহিত্যে তার বহু নিদর্শন

ওপারের বুদ্ধিজীবীদের উপর আমার শ্রদ্ধা বিশ্বাস অন্ন তারা এখন আর পশ্চাৎপদ নন বরং কোনো কোনো বিষয়ে অগ্রগামী আর এক পুরুষ কি দু'পুরুষ বাদে বাংল! সাহিত্যের মূল শ্রোত বোধ হয় ওপারেই প্রবাহিত হবে। ভুলে গেলে চলবে না যে বাংলাভাষীদের অধিকাংশই স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করে আর বাংলা যাদের মাতৃভাষা তাদের অধিকাংশই ধর্মে মুসলমান ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমরা যারা এপারে আছি তাদের আরো মডার্ন তথা আরো সেকুলার হতে হবে সম্ভব হলে সেই সঙ্গে গান্ধীপন্থী। তা না হলে সত্যিকারের মার্কসপন্থী। কালীপুজা আর দুর্গাপূজায় যাদের অনীহা

পুরাতন অভ্যাস সহজে যায় না। এখনে! আমরা বাঙালী বলতে বুঝি বাঙালী হিন্দু। বাঙালীর স্থখছুঃখ বলতে বুঝি বাঙালী হিন্দুর বুখছুঃখ বাঙালীর ভবিষ্তৎ বলতে বুঝি বাঙালী হিন্দুর ভবিস্তৎ। যেন বাঙালী আর হিদ্দু দমার্থক জাতীয় সঙ্গীতগুলি সেই মর্মে রচিত। 'বন্দেমাতরম্” গানও ওপারে ওব। রবীন্দ্রনাথের “সোনার বাংল।” আর দ্বিজেন্দ্রলালের ধনধান্তে ছাড়। আর যা গ্রহণ করেছে তা নজরুল ইসলামের জাতীয় সঙ্গীত। নেশনকে এক করে ন্াশনাল আনথেম কোথায় সেই গান য| বাঙালী হিন্ু মুসলমান সবাই মিলে একসক্ষে দাড়িয়ে গাইতে পারে ? জবাই মানে ছুই পারের সবাই, সতেরো কোটি বাংলাভাষী

বাংলাদেশের ছুই কোটি হিন্দু যদি ওপার থেকে এপারে চলে আসে তা হুলে পশ্চিমবঙ্গে তাদের জায়গ! হবে না। তার্দের যেতে হবে বিহারে, উত্তর প্রদেশে, মধ্য প্রদেশে তাদের ধর্ম অটুট থাকবে, কিন্তু ভাষা! বদলে যাবে। তাদের আর বাঙালী বলে চিনতে পারা যাবে না। পৃথিবীর বাংলাভাষীর সংখ্যা দ্ুই কোটি কমে যাবে। বাংলাভাষীর সংখ্যা কমলে বাংল! সাহিত্যের হবে অপুরণীয় ক্ষতি অপর পক্ষে ভারত থেকে দুই কোটি মুসলমান যদি বাংলা- দেশে যায় তা হলে ওপারের বাংলাভাষী মুসলমানদের সঙ্গে উু্ভাষী মুসলমানদের গৃহযুদ্ধ লেগে যাবে। যেমন লেগেছিল, ১৯৭১ সালে। লোকবিনিময়ের ফলে বাংলাদেশ আর বাঙালীদের দেশ থাকবে না। তার নাম

বদলে দিতে হবে আবার দেই পূর্ব পাকিস্তান ! বাঙালী জাতির ভবিস্তুৎ নির্ভর করছে এপারে ওপারে ছুই পারেই বাংলাভাষীর সহ-অবস্থানের উপরে কিন্তু এখন পর্যন্ত সত্য সকলে মেনে নেননি | তাই সংখ্যালঘুরা কোনে! দেশেই নিরাপদ নোঁধ করে না। ধর্মানরপেক্ষতা ভারতেও আত্তরিক নয়। বাংলাদেশ ভারতের সাষিল হবে না পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সামিল হবে না। তা সত্বেও বাংল] বাঙালী মনেপ্রাণে এক হবে এটাই আদর্শ

শ্রী শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই গ্রন্থ প্রকাশ করছেন বিহারের বাংল! আকাদেমি। বাংলাদেশে হিন্দুরা সংখ্যালঘু বিহারে বাঙালী হিন্দু মুসলমান সংখ্যালঘু কিষনগঞ্জের মুসলমানরাও বাঙালী ইংরেজী শিক্ষায় অগ্রণী হয়ে বাঙালীর বিহারের প্রশাসনে অধিকতর তথ! উচ্চতর স্থান অধিকার করেছিল এর আরো এক কারণ ছিল কলকাতা থেকে বিহারের শাসন বিহার ওড়িশ? পৃথক হয়ে যাধার পর থেকে অবাঙালীদের অগ্রাধিকার শুরু হয়। ইংরেজী শিক্ষা তাদের বিকাশ ত্বরান্বিত করে। স্বাধীনতার পর থেকে হিন্দীর জয়জয়কার | হিন্দী শিক্ষায় যারা অগ্রণী এখন তাদেরই আধিপত্য বাঙালীর ছেলেমেয়ের যদি বাংল] ভুলে যায় তা হলে সেটা আশ্চর্ধের ব্যাপার হবে না। চাকরি বাকরি পাবার দৌড়ে হিন্দীই সহায়ক। বাংলা নয়। বিহারে বাঙালীর] ছিল, আছে থাকবে কিন্তু তাদের সংস্কৃতির কী হাল হবে তা কেউ জানে না। নিহার সরকার বাংলা আকাদেমি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছেন। সরকারী আনুকূল্য বাংল! শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও প্রন্যাশ] করা যায়। কিন্ত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে হিন্দী ভাষায় ছুবল বাঙালী সন্তানরা পেছনে পড়ে থ/কবে। নিঘ্নতি !

শ্রী শেলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বিহারের বাঙালী | বিহার বিহারর প্রতি তিনি শ্রদ্ধাবান প্রীতিমান সেতুবন্ধনের কাজ তার মতো লোকের দ্বারাই সম্ভব তিনি একজন নিষ্টাবান নিবেদিত গান্ষীপন্থী। বিহারে গান্ধীজীর আপন স্থপ্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশে'ও কতক গান্ীপন্থী কর্মী এখনে জীবিত সক্রিয় তিনি “বাংলাদেশে গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগরক্ষা করেছেন তার কাছে পাঠক যা পাবেন আর কারো কাছে তা পাবেন না। তার এই গ্রন্থ বাঙালীর আত্মজ্ঞান বর্ধন করবে

১৭ ডিসেম্বর অনমদাশহর রাজু

১৪৯০৯

নচী

ভৃমিকা : অন্নদাশস্কর রায়

বাঙলা বাঙালীর বিবর্তন

বাঙালীর সংস্কৃতি

বাঙালী সংস্কৃতির রূপান্তর

বাঙালীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যৌবন-জল-তরঙ্গ রোধিবে কে?

বাঙালীর ম্বাদেশিকতা!

বাঙালী মধাবিত্তের ভবিষ্যৎ

বাঙলা, বাঙালী বিপ্রব

বাঙালীর রাজনীতি সংস্কৃতি

পশ্চিমবঙ্গের যুববিব্রোহ

পুরববঙ্গের সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎ

বাঙালী মুসলমান-নমাজ

পশ্চিমবঙ্ষের আদিবাসী-সমাঁজ

প্রবাসী বাঙালীর কথ!

বাঙলাদেশের হৃদয় হতে

পশ্চিমবঙ্গের সমাজ £ আজ আগামীকাল বাঙালীর সংস্কতি_-ভিন্ন দৃষ্টিতে

পশ্চিমবঙ্গ কোন্‌ পথে ?

আফিং

আন্দামানের বাঙালী

রাঢ়বঙ্গের ইতিহাসের অমূল্য উপাদান বাঙালীত্বের ভূমিকা

বঙ্গসংস্কৃতির প্রতিনিধি

শিল্পায়ন বাঙালীর সামাজি নেতৃত্ব বাঙালীর সামাজিক নেতৃত্ব--আগামী শতাব্দীর প্রস্তুতি আজকের পশ্চিমবর্গ আগামীকালের ভাবনা বাঙালীর সবচেছে বড় সমস্থ

[ ক---ঘ

২০৩ ৪৩ ৫১ ৫৭ ৬৮ ৮৮৮ ৯১৩ ১২৪ ১২৭ ১৪১ ১৪৮ ১৫৪ ১৫৯ ১৬০ ১৭২ ১৮২ ১০৫ ১৮৭ ১৪৯২ ১৪৯৬,

৩৪

বাঙল। বাঙালীর বিবর্তন

বাঙলা, বাঙ্গালা বা বঙ্গদেশের সর্ধপ্রাচীন উল্লেখ এতরেয় আরণ্যকে পাওয়া যায়। তবে এরও পূর্বে এতরেয় ব্রাঙ্ধণে প্রাচীন বঙ্গের এক জাতি পুণগুদের উল্লেখ আছে দন্থ্য নামে স্থৃতরাং বঙ্গদেশ বাঙালীর ইতিহাস নিঃসন্দেহে আরও প্রাচীন, যদিও তার কোন লিখিত বিবরণ পাওয়া যায় না যাই হোক, এতরেয় আরণ্যকে বল! হয়েছে £ “বয়াংসি বঙ্গাবগধাশ্চেরপাদ1:”। এখানে বগধ চেরপাদ জাতীয় লোকেদের সঙ্গে বঙ্গের অধিবাসীদের পক্ষী বা পক্ষীজাতীয় বল৷ হয়েছে স্পই্টতঃ আরণ্যকের রচনাকারী বৈদিক খষি হয় অজ্ঞতার জন্য অথবা! অবজ্ঞ। সহকারে তদনীস্তন বাংলার অধিবাপী অনার্ধদের সম্বন্ধে জাতীয উত্তি করেছিলেন। বুদ্ধ-পরবর্তী বোধায়নের ধর্মন্বত্রেও এর উল্লেখ আছে এবং এই দেশে গে সময়ে আর্য ধর্ম ক্রিয়াকলাপ প্রচলিত ছিল ন] বলে ধর্মস্থত্রে বঙ্গদেশে গেলে প্রায়শ্চিত্ত করার বিধান দেওয়া হয়েছে। রামায়ণ, মহাভারত এবং পরবর্তী অন্যান্য কাব্য, পুরাণ স্মৃতি ইত্যাদিতেও বঙ্গদেশের উল্লেখ আছে।

তবে বঙ্গদেশ বলতে আজকে আমাদের মনশ্চক্ষুর পক্মুখে একদ] পুর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমানে বাংলাদেশ নামে পরিচিত রাষ্ট্র পশ্চিমবঙ্গ সহ আসাম বিহার ওডিশার রাজ্যের সংলগ্র অংশ নিয়ে যে বৃহত্তর বঙ্গের (ত্রিপুরাকেও এর অন্তর্গত কর1 অন্যায় হবে না) ভাবযৃত্তি উত্তানিত হয়ে ওঠে, আদি বঙ্গ বা বঙ্গালের আয়তন কিন্তু এত বড় ছিল না আদি বঙ্গ বঙ্গাল ছিল ভাগীরঘীর পূর্ব দিকে দুটি ক্ষুত্রায়তন রাজ্য যা আজ বাংলাদেশে" অঙ্গীভভূত। সমগ্র বাঙলায় এরকম বহু সংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য ছিল এবং এগুলির নাম হল পু, গৌড়, নুষ্ষ, বজ ( অথবা ব্রহ্ম ), রা, তাত্রলিপ্ত, সমতট, কামরূপ, বঙ্গ, বঙ্গাল, হরিকেল ইত্যাদি এই নামগুলির অধিকাংশই এক একটি জাতির সঙ্গে যুক্ত, জাতির নাম থেকে দেশের নামকরণ স্থপ্রচলিত প্রথা প্রশাসনিক দিক থেকে এইসব রাজ্য পরম্পর পৃথক হলেও এই সমস্ত রাজোর .

বা.-১

বাঙলা বাঙালী

সমবায়ে যে বৃহত্তর বঙ্গের ভাবমৃহ্তি-তার ভৌগোলিক সীমা ছিল উত্তরে হিমালয় এবং হিমালয়ধূত নেপাল, সিকিন, ভূটান রাজ্য) উত্তর পূর্ব দিকে ্রন্ষপুত্র নদ উপত্যকা 3 উত্তর-পশ্চিম দিকে ছ্বারভাঙ্গী৷ বা ছ্ারবঙ্গ পর্যস্ত ভাগীরথীর উত্তর সমাস্তরালব্তী সমভূমি পূর্ব দিকে গারো-খাসিয়া-জৈস্তিয়া- ত্রিপুরা-টট্টগ্রাম শৈলশ্রেণীর কোল ধরে দক্ষিণের সমুদ্র পর্বন্ত ; পশ্চিমে রাজমহল সাঁওতাল পরগণা-ছোটনাগপুর-মালতৃম-ধলভূম-কে ওঞ্চর-মঘুরভঞ্জের শৈল অরণ্য ময় মালভূমি এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর |

পু গৌড় রাঢ় বঙ্গ ইত্যাদি এইসব প্রতিবেশী জনপদের অধিবাসীরা স্ব ভাবিক বিরোধ-সংঘাত মিলন-বিনিময়েন মাধ্যমে পরস্পরের কাছাকাছি আসেন এবং পণ্ডিতেরা মনে করেন যে খ্রাদপপুর্ব চতুর্থ থেকে খ্রীস্টীগ সপ্তম শতকের মধ্যে বাঙালী বলে একট বিশিষ্ট জাতির স্থষ্টি হয় এইভাবে সমন্বয় প্রক্রিয়ার দ্বারা সপ্তম শতাব্দীর প্রথম পাদে গৌড়ের রাজপদে প্রতিষ্ঠিত হন শশান্ক এবং বর্তমান পশ্চিম“ঙ্গ-_ মালদহ মুশিদাবাদ থেকে আরম্ত করে একেবারে উৎ্কল পর্যস্ত সবপ্রথম এক রাস্তায় এক্যলাভ করে ক্রমশঃ রাঢের মত প্রাচীন জনপদও যেন গৌড় নামের মধ্যে বিলীন হয়। পাল (৭৫০-১১৬২ খ্রীঃ) সেন রাজাদের ( ১০৯৫-১১৬* খ্রীঃ) আদর্শ ছিল গোৌড়েশ্বর নামে পরিচিত হওয়া অবশ্য বঙ্গ তখনও স্বতন্ত্র নাম সত্তা নিয়ে বিরাজিত। তারপর ১২০০ খ্রীণ্টাব্ডে তুর্কী আক্রমণ এবং পাঠান আমলে প্রথম সথবা বঙ্গাল নাষে বুহত্তর বঙ্গের ভাবযূত্তির প্রশাসনিক ভৌগোলিক স্বীকৃতিলাভ।

ডঃ স্থনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, * বঞ্গাল' শবে ফারসী প্রত্যর “অহ” ৭] “আ” যোগে দেশের কারসী নাম 'বঙ্গালহ, বাঙ্গালা” , তাহা হইতে মধ্য যুগের বঙ্গ ভাষাগ্ন “বাঞ্গাল।” আধুনিক ববাঙ্গলা, বাউল1”।” (বাঙ্গাল! ভাষাতত্বের ভূমিকা, চতুর্থ সংস্করণ, পৃ1%০ )। ডঃ নীহাররঞ্ন রায় বলেন “আবুল ফঞ্জল তাহার আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে বাংলা-বাঙ্গাল! নামের ব্যাখ্যা দিয়াছেন। বঙ্গ শব্দের সঙ্গে আল, (সংস্কৃত আলি, পূর্ববঙ্গীয় আইল ) ঘুক্ত হইয়া বাঙ্গাল বা বাঙ্গালা শব্ধ নিপন্ন হইয়াছে ।” (বাঞ্গালীর ইতিহাস, আদি পঝ, প্রথম সংস্করণ, পৃ১৩৪)। মোগল যুগের পাশ্চাত্ত্য বণিক পর্ধটক ইত্যার্দি এদেশকে বলত 13617891% বা বেঙ্গালা। সেইসব যুগে বিদেশীদের দ্বারা অস্কিত মানচিত্রেও এই নাম পাওয়া যায়।

বাউলা বাঙালীর বিবর্তন ৩,

২.

একথা আজ সর্বজনম্বীকৃত যে আর্ধরক্তের গরিমা বাঙালীর শোভা পায় না। কারণ নৃতত্র-বিচারে বাঙালীর ভিতর শবার্ধ জাতির প্রভাব নেই বললেই চলে।

স্থনীতিকুমার চট্টোপাধ্যাম্ন মহাশয়ের মতে এঁতিহাসিক কালে মোটা- মুটি চারটি নরগোঠীর সংমিশ্রণে বাঙালীর উদ্ভব | এর মধ্যে প্রথমটি হুল উচ্চ, দেহ উচু মাথাওয়াল। উত্তর ভারতীয় আধ (970 [70)91) 4৯152 1.0781,5805) জাতি যারা ভারতে মাগত আদি আর্ধদের বংশধর উত্তর ভারত এবং পঞ্জাব রাজপুান। প্রভৃতি অঞ্চলে ব্রাক্মণাদি উচ্চবর্ণের মধ্যে এরকম দীর্থশির মানুষের সাক্ষাৎ বেশী মেলে না, অল্প-্বল্প পাওয়া যায়। দ্বিতীয় শ্রেণীটি হল লম্বা! নীচু মাথাযুক্ত দক্ষিণ ভারতীয় বা দ্রাবিড়-মুগ্তা গোষ্ঠীর | বঙ্গদেশের তথাকথিত নিয়ন শ্রেণীর মধ্যে এই জাতীন্ন মস্তকের আকৃতি বিশুদ্ধ ভাবে কিছু কিছু পাওয়া যার। তৃতীয়ত্ঃ গোল মাথাওয়াল। একটি জাতি (10105 91807057051 বঙ্গদেশে এই জাতীয় লোকের প্রাচুধই বেশী__ বিশেষ করে ভদ্র সমাজে সাধারণ বাঙালী গোল মাথাযুক্ত, উত্তর ভারতীয়দের মত লঞ্ী মাথাওয়াল। নয় এই জাতীয় মান্ষদের অস্তিত্ব সিন্ধু, গুজরাত, মধ্যভারত, কর্ণাটক অন্ধপ্রদেশেও পাওয়া যায়। চতুর্থ হল মক্ষোলীয় গোলমাথাযুক্ত গো্ী এদের নাক চাপা, গালের হাড় উচু দাঁড়ি-গোফ কম উত্তর পুরববঙ্গের জনসাধারণের ভিতর এই উপাদান অধিক মাত্রায় মেলে

এই চতুধিধ নরগোষ্ঠী ছাড়াও অল্প পরিমাণে নিগ্রোবটু বা ক্ষুদ্রকায় নিগ্রে। (৩৪:7০) অথবা নিগ্রোরূপ (৩৪1০1) রক্তের সংমিশ্রণ ঘটেছে বাঙালীদের মধো তার উপর দ্বাদশ শতাব্দীর তুক্কীবিজয়ের পর থেকে কিছু পরিমাণ তুক্ণা, আরব, পাঠান মোগলের সঙ্গে বাঙালীর বৈবাহিক সম্পর্ক ঘটেছে এরই ফাকে ফাকে মগ, পতু গীজ, ওলন্দাজ প্রভতিদের রক্ত সঞ্চারিত হয়েছে বাঙালীদের মধ্যে--বিশেষ করে সমুদ্র নদীর তারবতী অঞ্চলে, ফরাসী-ইংরেজদের আগমনের পরবর্তী কিঞ্চিদিধিক ছুইশত বংপরে অল্প কিছু মাত্রায় তাদের রক্তও মিশ্রিত হয়েছে বাঙালীর দেহে এইভাবে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আধুনিক যুগ পর্যস্ত বু নরগোষ্ঠী জাতির সংমিশ্রণে সমন্বয়ের ফলে গড়ে উঠেছে বর্তমানের এই বাঙালী জাতি।

ডঃ নীহাররঞ্জন রায় বলেন £ '“নরতত্বের দিক হইতে বাংলার জনসমষ্টি

বাঙলা বাঙাবী

মোটামুটি দীর্ঘদুও, প্রশস্তনাস আদি অস্ট্রেলিয় বা “কোলিড, দীর্ঘমুণ্ড দীর্ঘ মধ্যোক্নতনাস মিশর-এশীয় বা 'মেলানিড,,, এবং বিশেষভাবে গোলমুও উন্নত- নাস আলপাইন ব] 'পূর্ব-ব্রাকিড», এই তিনজনের সমন্বয়ে গঠিত। নিগ্রোবটু রক্তেরও স্বল্প প্রভাব উপস্থিত, কিন্তু তাহা সমাজের খুব নিম্স্তরে এবং সঙ্কী্ন স্থানগণ্ডির মধো আবদন্ধ। মোঙ্গোলীয় রক্তের কিছুট। প্রভাবও আছে, কিন্ত তাহাও উত্তর পূর্বদিকে সঙ্কীর্ম স্থানগপ্ডির সীমা অতিক্রম করে নাই। আদি-নডিক বা খাটি “ইগ্ডিডও রক্তপ্রবাহও অনস্বীকার্ধ, কিন্ত সে ধারা শীর্ণ ক্ষীণ ।” ( পুর্বোল্লিখিত গ্রন্থ, পূ ৪৮)

এই কারণে বাঙালী উচ্চবর্ণের নর-নারীর সঞ্গে নৃতত্বের দিক থেকে উত্তর ভারতের অনুরূপ বর্ণের নর-মারীদের সঙ্গে যতটুকু মিল, তার থেকে অনেক বেশী মিল বাঙলার তথাকথিত নিষ়বর্ণের সঙ্গে। নৃতত্বের দিক থেকে বাঙালী ত্রাক্মণ, কায়স্থ বা বৈদ্যের সঙ্গে নমংশূদ্র নবশাখ ইত্যাদির বিশেষ কোন পার্থ*্য নেই এর থেকে এই সত্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে ঘে আধধীকৃত অনার্ধরাই বঙ্গদেশের আধপভ্য তার স্তম্ত |

সন্ত 'তঃ মৌর্য অথনা গ্রপ্ত সম্রাটের| প্রথম বঙ্গদেশ জর করে এদেশে আর্য- সভ্যতার ব্যাপক প্রবর্তন করেন। তার পুর্বে পুরোহিত, শ্রঘণ, পরিব্রাজক, বণিক অথবা প্রতিবেশী মগধ-মিথিল! অঞ্চল থেকে বৈবাহিক স্থত্রে ক্ষীণ ধারায় বঙ্গদেশে আধ সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ অসম্ভব নয়। প্রাকৃ-মার্ধ যুগে অঞ্চলে দ্রাবিড় কোল নরগোর্ঠীর বাপ ছিল এবং তাদের নিজন্ব ভাষা, ধর্,, আচার- ব্যবহার, সভ্যতা, রীতি-নীতি সবই ছিল। কোলের! প্রায় সমগ্র দেশটি জুডে ছিল, দ্রাবিড়রা ছিল বেশীর ভাগ পশ্চিমবর্ষে আর মঙ্গোলবা! ছিল পুর্ব উত্তরবঙ্গে--পণ্ডিতদের এই রকম অনুমান বঙ্গদেশের আদি অনার্ধ ভাষাও এই তিনটি নরগোষ্ঠীর নিজন্ব অধদান। এগুলি হল কোল, দ্রাবিড় উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ভোট-চীন। ভাষা

বাঙালীর সভ্যতা-সংস্কৃতির একটি অন্ততম মুল উপাদান হুল তার সাহিত্য এবং যে বাঙল! ভাষাকে অবলম্বন করে এই সাহিত্য গড়ে উঠেছে তা আর্ধ ভাশাগোর্ঠীর প্রত্যক্ষ অবদান আধুনিক বাঙলা ভাষা মূলতঃ আর্ধ

বাঙউল। বাঙালীর বিবর্তন £

ভাষা'গাঠীর উত্তরপুরুষ, যদ্দিও প্রাচীন বাঙলার কোল দ্রাবিড় ভোট-চীনা ভাষার কোন কোন স্থানীয় দেশজ শব্দও এতে বজায় রয়েছে।

আধুনিক বাঙল! ভাষার অতীত ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গেলে দেখ। যায় যে এর আদি উৎস প্রায় তিন হাজার বৎসর পূর্বেকার (আম্মানিক খ্রীঃ পুঃ ১০০০ অব; ) বৈদিক সংস্কৃতির কথ্য রূপভেদ লোকমুখে স্থানীয় ভাষার প্রভাবে পরিবহ্তিত হয়ে শ্রীঃ পুঃ ৫** অন্ধ নাগাদ এর থেকে আদি যুগের প্রাচ্য প্রারতের জন্ম হয়। অত্ঃপর অনুরূপভাবে ২০০ খ্রীস্টাবে মাগধী প্রাকুত ৭০০ গ্রীস্টাব্দে মাগধী অপতভ্রংশের উদ্ভব এই মাগধী অপত্রংশ থেকে আনুমানিক ১১০ খ্রীপ্টাব্ধে প্রাচীন বাঙলা ভাষার স্থত্টি যা মধ্যযুগের ( আনুমানিক ১৫০০ খ্রীঃ) বাউলার একটি ধাপ পার হয়ে আধুনিক বাঙল৷ 'ভাষায় রূপাস্তরিত হয়।

আধুনিক বাঙলা ভাষার মূল উপাদান ভারতীয় আর্ধভাষার বিবন্তিত রূপ হওয়া সত্বেও এতে যেমন বনু প্রাচীন অনার্ধ বাউলা শব মিশে গেছে তেমনি প্রাচীন ভারতে পারসীক গ্রীক অভিযানের জন্য সংস্কৃত প্রারুতের মাধ্যমে বাঙলা ভাষায় কিছু কিছু প্রাচীন পারসীক গ্রীক শব্'ও স্থানলাভ করে। তবে বিদেশী শবের সর্বাধিক অনুপ্রবেশ ঘটে বঙ্গদেশে তুক্কী বিজয় তারপর ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত মোগল রাজত্বের ফলে। তুর্কেরা ঘরে যে তু্কা বলতেন তার কিছু কিছু শব্ধ তো বাঙলা ভাষায় এলই কিন্তু তাঁর থেকেও বেশী এল ফার্সা শব্খ। কারণ তুর্কদের সাহিত্য রাজকার্ধের ভাষা ছিল ফার্সী আবার ফার্সা ভাষা আরবীতেও ভরপুর বলে ার্দীর মাধ্যমে

রবীও বাঙলা ভাষায় স্থান পেল। বাঙলা ভাষায় এই কাণে আড়াই

হাঁজারেরও বেশী ফাপাঁ শব আছে।

্রন্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে বঙ্গদেশে পত্তৃগীজ বণিক জলদস্থ্যদের প্রভাবে পতু্গীজ শব বাওলায় স্থান পায়। একশতেরও বেশী পতুগীজ শব্ধ এইভাবে বাউলা ভাষার অঙ্গীত্ভৃত হয়ে গেছে এছাডা ফরাসী ওলন্দাজদের প্রভাবে কিছু কিছু সেইসব পাশ্চাত্তা ভাষার শবও বাংলা ভাষার অস্ততুক্ত হয়। কিন্ত যে পশ্চিমী ভাষা বাঙলা ভাষার উপর সর্ধাপেক্ষা প্রবল প্রভাব বিস্তার করে তা হল ইংরেজি এবং ১৭৫৭ গ্রীঃ পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে অগ্যাবধি এর প্রবল প্রভাব রয়েছে এর কারণ হল এই যে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমেই বঙ্গ- দেশ বাঙালী আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে এবং আধুনিক

বাঙলা বাঙালী

' জ্ঞান-বিজ্ঞান সাহিত্য-দর্শন অনুশীলনে ইংরেজি ভাষাই বাঙালীর প্রধান পহায়। সুতরাং অজন্ত্র ইংরেজি শব্ধ বাঙালীর লিখিত ভাষায় এবং আরও বেশী শব্ধ কথ্য ভাষায় স্থান পেয়েছে ইংরেজির এই প্রাব বাঙল] ভাষার উপর ভবিষ্যতেও থাকবে সাম্প্রতিক কালে হিন্দি ভাষারও কিট! প্রভাব বঙ্গভাষার উপর পড়েছে। বিশেষ করে বিহার উত্তর প্রদেশের বালিন্দ। বাঙালীদের ভাষায় হিন্দির কথ্য শৈলীর প্রভাব লক্ষণীয় কালক্রমে তাদের লিখিত বাঙলার উপরও এর ছাপ পড়তে পারে৷ বাঙলা হিন্দি উভয়েরই আদি মূল সংস্কত। তবে বর্তমানে যে হিন্দির প্রভাব বালা ভাষার উপর পড়েছে তা বাওলারই মত নানা বিবতনের মধ্য দিয়ে সংস্কৃত থেকে খডিবোলি বা হিন্দিতে রূপান্তরিত হযেছে বলে সংস্কৃত থেকে পৃথক এর এক দ্বতন্ত্র সন্ত বিদ্যমান। আর সব জীবন্ত ভাষার মত বাঙলাও বহতা নদী তাই এর গতিপথে নানা ভাষার শ্রোতস্বতী থেকে পুষ্ট হওয়াই এর প্রাণবত্তীর নিদর্শন | বাউলা লিপির জন্ম ব্রাহ্মী লিপির “কুটিল” (খ্রীষ্টয় সপ্তম শতক) রূপ-ভেদ থেকে তবে আদি বাঙলা লিপির বহু পরিবর্তনের ফল আধুনিক বঙ্গভাষার অক্ষরসমূহ | ধাউল| ভাষার সবাপেক্ষা প্রাচীন যে লিখিত বূপ বা বাঙলা সাহিত্যের নিদশন আবিষ্কৃত হয়েছে তা হল চর্ধাচর্যবিনিশ্চয় ১৩২৩ সালে মহা- মহোপাধ্যায় হরপ্রনাদ শাস্ত্রী মহাশয় নেপালে এর প'গুলিপি আবিষ্কার করেন। বাঙলার এই আদি লিখিত কূপ বা সাহিত্যের নিণন মোটামুউ স্াইীর ৯৫০ থেকে ১২০০-এর মধ্যে রচন। বলে পণ্ডিতদের ধারণা এর পরবতী বাঙল। সাহিত্যের নিদর্শন বড়ু চণ্তীদাসের 'শ্ররুঞ্ণকীর্তন' যা মধ্যযুগের বাওল! সাহিত্যের প্রাচীনতম পুস্তক পিতদের মতে এর রচনাকাল ১৪০* থেকে ১৪৫০ ্ীস্টাব্দের মধ্যে বড়ু চণ্ডীদাসের ছুই এক শত বছর পূর্বেও মধুরভট্ু, কাণা হরিদন্ত, মাণিকদত্ত প্রমুখ কবি বাঙলা ভাষাপ কবিতা রচনা করলেও বা গান বাধলেও তাদের সাহিত্যকুৃতির কোন নিদর্শন আজ আর পাওয়া যায় না। বড়ু চণ্ডীদাপের পর কৃত্তিবাপ, বিজয় গুপ্ত, মালাধর বনু শ্রীকর নন্দী প্রমুখ কধির রচনার নিদর্শন আজ অল্পাধিক পাওয়া যায়। এর! সবাই ছিলেন ১৫৫০ গ্রীন্টাবের পূর্বেকার কবি। খ্রীস্ট্ীয় ষোড়শ শতাব্দীর পরবর্তী কালে লিখিত বাঙল! পুখির কোন অভাব অবশ নেই।

বাঙলা বাঙালীর বিবর্তন রখ

বাঙলা সাহিত্যের প্রথম যুগে গদ্য-রচনার একাস্ত অভাব, চিঠিপত্র, দলিল- দন্তাবেজ ব্যতীত গদ্যের ব্যবহার লিখিত সাহিত্যে ছিল না সমস্ত সাহিত্যই আবার পয়ার, ত্রিপদী প্রভৃতি সহজ ছন্দে রচিত। দ্বিতীয়তঃ প্রাচীন বাঙলা সাহিত্যে অল্প কয়েকটি বিষয়ই স্থান পেয়েছিল প্রধানতঃ ধর্ম প্রেম বিষয়ক গান, রামায়ণ-মহাভারত অন্যান্য পুরাণ স্থানীয় দেব-দেবীদের নিয়ে রচিত কান্য-কাহিনী এবং এছাড়া কিঞ্চিৎ মাত্রায় জীবন-চরিত, বংশাবলী, ত্রমণবৃত্তাস্ত, চিকিৎসা! দর্শনশাস্ত্র প্রাচীন বাঙলা সাহিত্যের উপজীব্য ছিল। ধর্ম, মঙ্গলকা?া, বারমাশ্ত। ইত্যাদিও এই যুগের সাহিত্যের প্রতিনিধি বালা সাহিত্যের এই গতান্থগতিকত। দূর হয় চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রভাবে তিনি তাঁর পার্ধদবর্গ সেকালের বঙ্গদেশের আরুদ্ধ মানসিকতাঁতে নূতন ধ্যান-ধারণার প্রবল বন্য প্রবাহ হাটি করেন এবং যোডশ শতাব্দীতে তাই বাউল] সাহিতো জীবনচরিত, দার্শশিক আলোচনা দেশ-বিদেশের কাহিনী ইত্যাদি মননশীল রচনার প্রাছুর্ভাব ঘটে বাওলা ভাষা সাহিত্য এইভাবে ক্রমশঃ আধুনিক মননশীলতাঁর বাহন হবার যোগ্যতা অর্জন করে।

চৈতন্ক মহাপ্রভু ছারা অস্থুপ্রাণিত বৈষ্বদাঁস (অথবা গোকুলানন্দ সেন ) কর্তৃক সম্পাদিত 'পদকল্পতরু' এবং বুন্দাবনের সনাতন, কপ জীব গোস্বামী গোপাল ভট্ট প্রমুখের প্রয়ামে যেসব গৌড়ীয় বৈষ্ণব সাহিত্যের স্থ্টি হয় তাও বঙ্গলাহিত্যের অযূলা সম্পদ এছাডা “ভক্তমালে'র কুষ্ণ?ান বাবাজী কৃত অস্থ- পাদ এবং চট্টগ্রামের আলাওগল কৃত “পন্মাবতী” কাব্যের অন্বাদও বঙ্গসাহিত্যকে সমুদ্ধ করে। চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বর্ধীভাষী রাজার সভায় দৌলত কাজী, কোরেশী মাগন ঠাকুর, মহম্মদ খ! আবছুল নবী প্রমুখ যেসব মুসলমান কবি ছিলেন, মধাধুগের বাউল! পাহিত্যের শ্রিবৃদ্ধিতে তাদের অবদানও যথেষ্ট | এছাড়। বিভিন্ন মঙ্গলকাব্য কবিকম্কণ মুকুন্দরামের “চণ্তীমঙ্গল” মধাযুগের বঙ্গ- সাহিত্যের উজ্জল রত্ব। পরাগল খার পৃষ্ঠপোষকতায় কবীন্দ্র শ্রীকর নন্দী রচিত “বিজয়-পা গুব-কথা” মহাভারতের প্রথম বঙ্গানুবাদ, যদিও সপ্তদশ শতকের প্রথমে কাশীরাম দাস রচিত মহাভারতই বঙ্গভাষায় সমধিক প্রচলিত। “পন্নপুরাণ”, “য়নামতীর গান” পূর্ববঙ্গের গাঁথাঁপমৃহ ( মমনসিংহ গীতিকা) ষোড়শ সপ্তদশ শতাব্দীর বঙ্গ-সাহিত্য-ভূষি কর্ষণের উল্লেখযোগ্য ফসল

অস্টাদশ শতাব্দীতে রাষ্ট্রবিপ্নবের জন্য বঙ্গদেশের জনজীবনের শান্তি খ্যাহত হয় বলে সাহিত্যের খুব একটা স্থষ্টি হয়ে ওঠেনি এই শতাব্দীর প্রথম ভাগে

, বাঙল। বাঙালী

বঙ্গদেশ থেকে দিলীর মোগল বাদশাহের কর্তৃত্ব লোপ পায় এবং স্বাধীন নবাবেরাও দেশ শাসনে যোগ্যতার পরিচয় দিতে অক্ষম হন। তার উপর বর্গার হাঙ্গামা অবশেষে ১৭৫৭ খ্রীন্টাব্ধে ইংরেজ রাজত্বের স্থচনা। এর তের বৎসর পর বঙ্গের ভয়ঙ্কর ছিয়াত্তরের মন্ম্তর। এই শতাব্দীতে অল্প কয়েকজন কবি বিখ্যাত হন-রামপ্রসাদ সেন (শ্যামা-সঙ্গীত ), ভারতচন্দ্র রায় ( অন্নদামঙ্গল ), এবং জয়নারায়ণ ঘোষাল (পন্মপুরাণের কাশীথণ্ডের কাব্যান্ুবাদ ) এদের মধ্যে প্রধান। বাঙলা গদ্যসাহিত্ের স্ুত্রপাতও এই শতাব্দীতে ১৭৪৩ খ্রীঃ লিসবন নগরে পতুগীজ পাত্রী আস্নুম্পর্সাও সর্বপ্রথম রোমান অক্ষরে বাঙলা পুস্তক মুদ্রণ করেন এটি ছিল একটি ব্যাকরণ পতুগীজ-বাঙলা শব্বকোষ | বাঙল] হরফ প্রথম মুদ্রিত হয় হালহেড-এর ব্যাকরণে। (“এ গ্রামার অফ বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ", ১৭৭৮ )। ইংরেজদের চেষ্টায় হুগলী থেকে এটি প্রকাশিত হয়। এরপর শ্রীরামপুরের গ্রীস্থীয় পাত্রীদের প্রয়াসে উনবিংশ শতাব্দীর প্রারস্তে ব্যাপকভাবে বাউলা লিপিতে মুদ্রণ কার্য আরম্ভ হয়।

উনবিংশ শতাব্দী বিশেষ করে এর দ্ধিতীয়ার্ধ বাউলা বাঙালীর আধুনিক যুগে উত্তরণের প্রথম চরণ ইংরেজি শিক্ষার প্রবর্তন তার মাধ্যমে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন এবং বিশেষ করে যুক্তিবাদের প্রবল প্রবাহ এদেশের অস্ততঃ উপরের স্তরে প্রবাহিত হওয়ায় বাঙলায় রেনের্সাস বা নবধুগের প্রবর্তন হয় এই শতাব্দীতে বাউল। ভাষা সাহিত্যও এই সময় থেকে অজশ্র বনুবিচিত্র পত্র-পুষ্প ফল সম্ভারে শোভিত হয়ে ওঠে এযুগের সবশ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক সমাজ সংস্কারক এবং লেখক রাজা রামমোহন রায়, ধীর ভিতর বৈদিক ধর্ম, ইসলাম এবং পাশ্চাত্ত্য দর্শন ধ্যান-ধারণার ল্ষ্ঠু সমন্বয় ঘটেছিল। এছাড়া কেরি, মার্শমান ওয়ার্ড প্রমুখ শ্রীরামপুরের মিশনারীদের অবদানও অদ্ধিতীয় আধুনিক বঙ্গসাহছিত্যের আদি পুরুষ হিসাবে এই প্রসঙ্গে ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও উল্লেখযোগ্য |

প্রথম যুগের বাঙলা গদ্য সংস্কৃত-বছুল হওয়ায় ক্কি ছিল অক্ষয়কুমার দত্ত, প্যারীচাদ মিত্র বিশেষ করে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রয়াসে তা প্রসাদগ্ডগসম্পন্ন হয়ে ওঠে। কিন্তু বিদ্যাপাগর কেবল পক্তিত বা বাঙলা পসাহিতোর দিকৃপাল ছিলেন নাঁ। তিনি ছিলেন বাঙলার এধুগের দিকপাল যুগন্ধর পুরুষ হিন্দুদের মধ্যে বিধবা-বিবাহ প্রবর্তন তার এক অগ্দিতীস্র কীততি। সতীদাহ প্রথা নিবারণের পর বিধধা-বিবাহ নারী-শিক্ষার

বাঙলা বাঙালীর বিবর্তন ৯.

প্রবর্তনের ছার! বাঙালীর অর্ধেক-__-তার নারীসমাজ আত্মস্থ হবার পথ ত্তার প্রয়াসে খুঁজে গেল। সেষুগের বিশিষ্ট কবি হিসাবে প্রসঙ্গে ঈশ্বরচন্্র গুধের নামও ম্মরণীয়

অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করে মাইকেল মধুস্থদন বাঙলা কাব্যের দিগন্তকে সুদূরপ্রসারী করেন বন্ধিমচন্দ্র কেবল বাঙলা উপন্যাস কথাসাহিত্যোরই জনক নন, যুক্তিবাদী মননশীলতারও একজন পথিরুৎ। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, বিহারীলাল চক্রবর্তী, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীনচন্দ্র সেন, রমেশচন্দ্র দত্ত, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অম্ুতলাল বন্ধ হরপ্রসাদ শাস্তী, মীর মোশাররফ হোপেন প্রমুখ বঙ্গপাহিত্যের অঙ্গনে মাইকেল বঙ্কিমচন্দ্রের উত্তরসাধক | ধর্ম সমাজ-চিস্তার ক্ষেত্রে রামকৃষ্ণ বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ (বঙ্গসাহিত্যেও তাঁর অবদান অতুলনীয়), কেশবচন্ত্র সেন শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখ মনীষী উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ বিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক |

রবীন্দ্রনাথ আধুনিক বাউল! বাঙালীর শিক্ষা-সংস্কৃতি-সাহিত্য সমাজ- জীবনের একটি যুগচিহ্থ বাঙল! বাঙালীর সম্বন্ধে এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় তার বহুমুখী প্রতিভা, যার দ্বারা তিনি বাঙালীকে সমৃদ্ধ করেছেন, তার মূল্যায়ন করার অবকাশ নেই। তেমনি স্থানাভাব তার সমসামগ্নিক তার পরবর্তী কবি সাহিত্যিক অন্যান্য মনীষীদের সম্বন্ধে আলোচনা করার তবে নজরুল শরৎচন্দ্র-_এই ছুটি নামের উল্লেখ না করলেই পয়, বাঙালীর উপর তাদের গভীর প্রভাবের জন্য |

8

ইংরেজের শাসনের ফলে সহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভাবজগতে আমরা সমৃদ্ধ হলেও বিদেশী শাসনের বন্ধন বাঙালীচিন্তকে পীড়িত করেছে--বিশেদ করে বাঙলার নবধুগের স্বত্রপাত থেকে বাঙালীর আত্মাভিমান পরশীসনের চাপে পীড়িত হয়ে তাকে বিদ্রোহী হতে প্রেরণা জুগিয়েছে। বাঙালীর আত্মশাসনের আকৃতি প্রথমে রূপ নিয়েছে বঙ্গভক্ষের বিরোধী আন্দোলন স্বদেশী বয়কটকে কেন্দ্র করে। এই ঘুগে জমে ওঠ অবরুদ্ধ আবেগ অতঃপর অভিব্যক্ত হয়েছে বিপ্লবী গুপ্ত সমিতি বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসবাদী কার্ধকলাপের'

১৬ বাঙলা বাঙালী

মাধ্যমে ইতিনধো ভারতীয় বোধেরও ব্যাপ্তি ঘটেছে এবং বহু ভাষা ধর্ম নানাবিধ আচার-বিচারে বিভক্ত বিরাট এক দেশের স্বাধীনতা-আন্দেলিনের পক্ষে মৃষ্টমেয় ব্যক্তির গোপন বা সশস্ত্র বিদ্রোহ-প্রচেষ্টা স্বভাবতই অপ্রতুল সিদ্ধ হয়েছে অতঃপর ভারত-ভাগ্য-বিধাতার নির্দেশে দেশের রাজনৈতিক গগনে প্রকাশ্ত গণবিদ্রোহের ভেরী বাজিয়ে অহিংস অসহযোগী গান্ধীর আবির্ভাব বঙ্গের স্বাধীনতা-আন্দৌলনের মূল প্রবাহ তাই সশস্ত্র বিপ্রবের পথ ছেড়ে গান্ধীর প্রকাশ্ঠ গণবিদ্রোহের পন্থাকে গ্রহণ করে পরশাপন-বন্ধনকে ছিন্ন করার সঙ্গে »ঙ্গে স্বরাজ্যের বনিয়াদ গড়ার জন্য গান্ধী স্বাধীনতা-আন্দোলনের পাশাপাশি গঠনকর্ধের কর্মস্থচি উপস্থাপিত করেন বঙ্গদেশের চিত্ত কর্মজগৎকে তাও প্রভাবিত করে গান্ষী-ভাবধারার সমান্তরাল এনং কথনও কখনও এর প্রতিদ্ন্দী একটি ধারাও স্বাধীনতা-আন্দেলন প্রসঙ্গে বঙ্ঈদেশে পরিলক্ষিত হয় এবং নেতাজী ক্ভাষ ছিলেন এর উজ্জ্বলতম নিদর্শন |

বঙ্ছদেশে ইসলামের আগমনের স্থচন] থেকে প্রাকৃতিক নিয়মে ছন্দ-সংঘর্ষের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ, সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে হিন্দ্-মুসলমানের যুক্তসাধনার যে ধারা প্রব্িত হয়েছিল প্রকাশ্যে তা বিদ্থিত হওয়া আরম্ভ করে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই পাশ্চাত্য শিক্ষা তজ্জনিত স্থযোগ-ম্থবিধায় অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর বাঙাী মুসলমান সমাজের একাংশ ইংরেজের সঙ্গে অসহ- যোগিতায় অনিচ্ছুক ছিলেন ক্রমশঃ প্রতিনিধিত্বশীল শাসন-ব্যবস্থার প্রবর্তন তাদের বাঙালীর বদলে নুপলিম স্বার্থের প্রবক্তা করে তোলে সাম্রাজ্যবাদী ভেপনীন্তি একে পূর্ণনাত্রায় কাজে লাগায় বাছালী হিন্দুর একাংশের রাজ- নৈতিক দূরদৃষ্টর অভাব ফজলুল হক্‌ তাঁর সমভাবাপন্ন খাটি বাঙালীর হাত মজবুত করার বদলে সাম্প্রবায়িক ভেদভাঁব মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদকে পুষ্ট হতে সাহাধা করে। স্বাধীনতার প্রান্কালে ভ্রাতৃঘাতী দাক্গায় জর্জর বাঙালী হোলেন শহীদ স্বরাবদর্শ শরৎচন্দ্র বছর “সার্বভৌম বঙ্গের” বদলে ভারতের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গ ব্যবচ্ছেদেরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সাময়িকভাবে বঙ্গদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিজয় ঘোষিত হয়। উভদ বঙ্গের বাগ/লী এর প্রভাব এখনও সম্পূর্ণভাবে কাটিয়ে উঠতে পারেনি

্বধীনতাপুর যুগে মার্কপবাদ বঙ্গদেশে কুগ্ঠিত চরণে প্রবেশ করলেও স্বাধীনতা- উত্তর পশ্চিমবর্গে মানবমুক্তি সাম্যের উপায় স্ব্প এই মতবাদ বিশেষ করে রুশ-চীনের উদাহরণ রাজনৈতিক দিক থেকে এধুগের বাঙালীর হৃদয়ে

বাউলা বাঙালীর বিবর্তন ১১

দোলা দেয়। অতি সাম্প্রতিক কালে আবার মাও-সে-তুং ঢে গুয়েভারার মতবাদ অর্থাৎ শ্রেণী-সংগ্রাম সশস্ত্র গেরিল! যুদ্ধের মাধ্যমে আঁথধিক রাঁজ- নৈতিক শোষণ বন্ধ করার পদ্ধতি বাঙলার যুবমাঁনসের একাঁংশকে প্রবলভাবে আলোড়িত করেছিল। তবে সত্তরের দশকের সেই রাজনৈতিক উন্মাদন। বর্তমানে আশাভঙ্গের শিকার এবং এর বড় একটা কারণ হল এই আদর্শবাদকে রাজনৈতিক কর্মন্ুচির বাইরে সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত করতে না পারা। পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পস্থা ধরে বাউলা বাঙালীর ইতিহাসের এই যে বিবর্তন, এর প্রেরক-শক্তি কি? ক্রাস্তরর্শা কবি এর জবাব দিয়েছেন_-দিবে আর নিবে, মিলাবে খিলিবে, যাবে না ফিরে।” “ভারততীর্ঘ” সৃষ্টির যে প্রক্রিয়া কবিগুরুর দিব্যদৃষ্টির সম্মুখে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল আমাদের এই বঙ্গদেশ বাঙালী জাতি গড়ার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য | “হেথায় আর্য, হেথ। অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন, শকহুনদল পাঠান মে!গল এক দেহে হল লীন |” এবং “রণধার] বাহি জয়গান গাহি উন্মাদ কলরবে ভেদি মরুপথ গিরিপর্বত যার! এসেছিল সবে তারা মোর মাঝে সবাই বিরাজে, কেহ নহে নহে দুর আমার শোণিতে রয়েছে ধ্বনিত তার বিচিত্র সুর 1” প্রত্যুতঃ শুধু বঙ্গদেশ অথবা ভারতবর্ষের ইতিহাসের ধারাই নয়, তাবৎ দেশ সমগ্র জগতের সকল জাতি সংস্কৃতির বিবর্তনের ধারাই এই “দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে”- অর্থাৎ সমন্বয়ের নীতি-নির্ভর | সমন্বয়ের অর্থ বহিরাগত কোন জাতি, ভাষা, সাহিত্য বা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ নয়। ভিন্ন সংস্কৃতি, ভাবধারা] মূল্যবোধ তার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বিলোপ করে যখন কোন দেশের জীবন মানপিকতার অঙ্গীভূত হয়ে দেশের সংস্কৃতি, ভাবধারা! মূল্যবোধকে অধিকতর সমৃদ্ধ এক নৃতন রূপ দেয় তখনই তাকে বলে সমস্বয়। সমন্বয় বলতে অতীত এঁতিহ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্কচ্ছেদ বোঝায় ন]_-অতীতের ভিত্তিভূমির উপর নৃতনকে গ্রহণ করার নামই সমন্বয়। সমন্বয়ের ফলে দেশজ অথবা! বহিরাগত ভা বধারা-_-কোনটিই আর পূর্বতন রূপে থাকে না, উভয়ের সংমিশ্রণে এক অধিকতর সমুদ্ধ নূতন ভাবধারার স্থ্টি হয়।

১২ বাঙলা বাঙালী

এর যূল দেশের মাটিতে হলেও ভিন্ন দেশের সার-জল গ্রহণে এর কোন কুগা থাকে না, এইভাবে সমন্বয়ের প্রক্রিয়া নিত্য নবীন সংস্কৃতির ফুল ফুটিয়ে থাকে

অতীতে বাঙলা বাঙালীর বাহা মনোজগতের ইত্তিহাস এইভাবে বিবব্তিত হয়েছে এবং আত্মবিলোপন যদ্দি বাঙালীর উদ্দেশ না হয় তাহলে ভবিষাৎ ইত্তিহাসের ধারাকে উৎকেন্দ্রিক বা ন্জনধর্মী নয়, একাধারে কেন্দ্রাভিগ গ্রহণশীল হতে হবে

বাঙালীর সংস্কৃতি

"আমি বললাম, আর সব দ্বিক মার খেলেও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাঙালী আজও অদ্বিতীয়

বন্ধু বললো, কথাট। শুনতে ভাল ; কিন্তু তোমার বক্তব্য স্বীকার করে নেবার আগে ছুটো! বিষয়ের একটু স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন প্রথমতঃ বাঙালী বলতে কাদের বোঝায় এবং দ্বিতীয়তঃ সংস্কৃতির অর্থ কি?

মুখে একটু অন্থকম্পার হাসি ফুটিয়ে আমি বললাম, পাঁঙালী কথাটিরও ব্যাখ্যা করতে হবে? কেন, তৃমি আমি-_মামর! সবাই বাঙালী

বন্ধু বললো, বাঙলাদেশে যে কয়েক লক্ষ ভিন্ন প্রদেশবাসী একাদিক্রমে কয়েক পুরুষ ধরে বসবাস করছেন তাদের যদি তোমার হিস।ব থেকে বাদও দাও তাহলেও বাঙলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা যে কয়েক লক্ষ নেপালী ভূটানী রয়েছেন, এদের তুমি বাঙালী বলে ধরবে ? এদের সংস্কৃতিকে বাঙালী সংস্কৃতি মনে করে তার জন্ত গব অনুভব করবে ?

'আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য হতচকিত হযে গেলাম তারপর বেশ স্বাভাবিক ক্জেই বললাম, না, তা কি করে ধরব?

এর পর বন্ধু বললো, তাহলে বাঙলার বাসিন্দা কয়েক লক্ষ রাজবংশী সম্প্রদায়ের লোক ধাদের উত্তরবঙ্গের আদিম বাসিন্দা বলা যায় অথবা বর্ধমান- বীরভূম-বাকুড়া মেদিনীপুর জেল! তার আশেপাশে যে লাখ কয়েক সাওতাল আছেন তারা তোমার বাঙালীর হিসাবে পড়েন কিনা বলতে পার?' একটা কথা, এদের কেবল মাথা-গুনতিতে বাঙালী বলে স্বীকার করে নিলেই হবে না, এ'দের সংস্কৃতি আচার-বাবহার নিয়ে গর বোধ করার মত মানসিকতা! তোমার আছে ক্ষিনা সেইটাই ক্ষেত্রে বড় প্রশ্ব। খেয়াল রেখো, বাঙলাদেশে এই সব উপজাতীয়দের যোট সংখ্যা পনের লক্ষের বেশী

আমি বেশ কিছুক্ষণ নীরব হয়ে রইলাম অস্বস্তিকর নীরবতা তারপর গভীরভাবে বললাম, নান!

বন্ধু বললো, জানতাম তুমি “না” বলবে আচ্ছা, এবার বল বাঙলাদেশের বাসিন্দা বাঙউলাভাষী গাড়ি বাগদি ডোম বাউন্লি মুচি মেথর ইত্যাদি তপশীলভুক্ত

১৪ বাঙল! বাঙালী

জাতির লোকদের সম্বন্ধে তোমার কি বক্তব্য রাজবংশী অথবা সাওতাল' উপজাতীয়দের মত এদের সংখ্যা কয়েক লক্ষ নয়-_সমগ্র বাঙালী সমাজের একটা মোট1 অংশ, শতকরা প্রায় সতের ভাগ হলেন এইসব তপশীলী জাতিতুক্ত সম্প্রদায়েরা মাথা-গুনতিতে অথবা অন্য প্রদেশের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা করার সময় এদের বাঙালী বলে স্বীকার করলেও, সংস্কৃতির পরিপ্রেক্ষিতে এদের তুমি বাঙালী বলবে, ন| এদের আচার-ব্যবহার, সঙ্গীতশিল্প ইত্যাদিকে বাঙালীর গর্ধের বস্ত বলে মনে করবে?

আমি এবার ঝাঁঝালো কগ্গে বললাম, বুঝেছি তোমার উদ্দেস্ট। তোমার কাছে লুকব না। হ্যা, বাঙালী মধ্যবিত্ত দমাঁজের সংস্কৃতিকেই আমি বাঙালীর সংস্কৃতি বলেছি এতে লজ্জা বা সক্ষোচের কি আছে? বাদবাকি অত্যান্ত সম্প্রদায় এই উচ্চ*র সংস্কৃতির অনুবর্তী হবে।

প্রাথমিক বিহ্বলতার পর এবার আমার কঠে আত্মপ্রতায়ের স্বর ফুটে উঠছে।

বন্ধু বললেন, ধীরে বন্ধু, ধীরে শুধু এই নয়। পয়ধট্র লক্ষ বাঙালী মুসলমান, 'আড়াই লক্ষ বাঙালী খ্রীস্টান বাঙালী বৌদ্ধরাও বাঙালীর সংস্কৃতির বিচারের সময় আমাদের মনশ্চক্ষুর সামনে থাকে না। তা ছাড়া বাংলাদেশের অগণিত চাষী ( “চাষাভুনে।” ) এবং শ্রমিকও (কুলি মজুর? বা কুলি কাবাড়ি? ) সংস্কতি- বিচাবে এখনও ব্রাত্য আর মধ্যবিত্তের সংস্কৃতি বলে আমর] যেটুকু বিনয় প্রকাশ করছি প্রকৃত প্রস্তাবে তাও অলীক কারণ ঘে সংস্কৃতির গর্ব আমর! করি তা মধ্যবিত্তের সংস্কৃতি নয়_-এ আসলে সমাজের উচ্চবর্ণের সংস্কৃতি | বাড়ুজ্জে মুখুঙ্জে এসং ঘোষ বোন মিত্র ইত্যাদি ইংরেজি শিক্ষিত হুতোম কখিত বাবুদের কালচার এ। আধিক কারণে এইসব রোদজল ধুলোকাদার সংস্পর্শ বাচিয়ে চল। সম্প্রবায়ের অনেকে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র হয়ে পড়লেও সামাজিক কাগামোর শীর্ষবিন্দুতে এদের অবস্থান এবং তাই তথাকথিত মধ্যবিত্ত সংস্কৃতি বস্ততঃ বাঙালীদের এক মুষ্টিমেয় সংখাক ধোপছুরস্ত পোশাকধারী পরের শ্রমে জীবন নির্বাহকারী 'ভদ্রলোকদের কালচার

আমি বললাম, এই তে! তোঁযার দোষ। রাজনীতি কপচাতে শুরু করলে এবার

বন্ধু বললো, ঘাট হয়েছে পেলব রায় আর দোছুল দে-দের কাছে সমাজ- বিজ্ঞানের চা কর! অন্তার হয়েছে 'আচ্ছ1, যেতে দাও প্রসঙ্গ এবার বল দেখি সংস্কৃতি বলতে তুমি কি বোঝ ?

বাঙালীর সংস্কৃতি ১৫.

কেন, শিক্ষা-_

আমি একদমে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু মাঝপথে আমাকে বাধ! দিয়ে তিনি বললেন, আচ্ছা, শিক্ষার কথাই প্রথমে ধরা যাক। জান তো বাঙলাদেশে শতকর! উনত্রিশ জন অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন অর্থাৎ জন-গণন! বিভাগের কর্তাদের হিসাবে শিক্ষিত। এই শিক্ষিতরা সবাই যদি সংস্কৃতিসম্পন্ন হন তাহলে ধারা শিক্ষেত' নন, তারা সংস্কৃতিবিহীন-__-একথা তুমি স্বীকার করবে ?

না না, তা কেন হবে?

'শিক্ষা*্র প্রসার যে সংস্কৃতির নিদর্শন নয়, তার আর একটা নমুনা দিই। কাল বাসে যখন আসছিলাম আমাদের সহযাত্রী ছিলেন এক শিখ ভদ্রলোক চোখে দেখে আর নিজের কানে শুনেও বিশ্বাস হচ্ছিল না বেশ ফিটফাট পোশাক-পরা এবং নিঃসন্দেহে “শিক্ষিত' ছুই বাঙালী তরুণ সেই ভিড়ের মধ্যে ভদ্রলোককে ব্যঙ্গ করার জন্য 'বাধাকপি”, “সিঙাড়া” বলে তার শ্ররতিগোচর স্বরে চেঁচাচ্ছিল। এমনকি কয়েক স্টপেজ পরে তরুণ ছুটি বাস থেকে নেমে গিয়েও ভদ্রলোককে রেহাই দিল না। বাগ ছাড়ার পরও আমর] তাদের ওই অসভ্য চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম "শিক্ষিত বাঙালীর অপর প্রদেশবাপীর প্রতি তাচ্ছিল্যস্থচক উক্তি__খোট্টা, ছাতু, উড়ে, ম্যাড়া, তেঁতুল ইত্যাদি আমর! প্রায়ই শুনে থাকি অপরকে হেয় করার এই শিন্দশীয় বৃত্তি কি দংস্কৃ সম্পন্নের কাজ ?

আমি স্বীকার করলাম যে এসব সংস্কৃতির লক্ষণ নয়। তবে তারপরই বললাম, কিন্তু শিল্প সাহিত্য চারুকলা সঙ্গীত ইত্যাদির ক্ষেত্রে তো বাঙালীর প্রাধান্য স্বীকার করতে হুবে। অন্ততঃ এইসব গ্ুকুমারবৃত্তির অনুশীলনের জন্য তো বাঙালীকে সংস্কৃতিসম্পন্ন বলে মেনে নিতে হবে।

_ বন্ধু বললো, এসব সংস্কৃতির অপরিহার্য নিদর্শন নয়, বড় বেশী হলে সংস্কৃতির বাহপ্রকাশ মাত্র। কারণ একজন প্রথম শ্রেণীর চিত্রশিল্পী ঝগড়াটে স্বভাবের হতে পারেন, সাহিত্যিকের পক্ষে ইন্ছিয়াপক্ত লম্পট হওয়া অসম্ভব নয়, উচ্চ- শ্রেণীর সঙ্গীতবিশারদও হয়তো সামান্য স্বার্থের জন্য মিথ্যা বলতে পারেন চিত্রশিল্প, সাহিত্য রচনা অথব সঙ্গীতের টেকনিক আয়ত্ত করলেই তাকে সংস্কতিসম্পন্ন বলতে হবে-এর কোন অর্থ নেই। আর তা ছাড়া এইসব নক্মারকলার অন্ুশীলনই যদ্দি কেবল সংস্কৃতির পরিচায়ক হয় তাহলে জন- সাধারণের যে সামান্ত ভগ্নাংশ এসবের অনুশীলন করেন তাদের ধাণ দিযে আর.

সকলকেই সংস্কৃতিবিহীন আখ্য। দিতে হয়।

১৩ বাঙলা বাঙালী

আমি এবার হাল ছেড়ে দিয়ে বললাম, মহা মুশকিল তোমাকে নিয়ে সব সময়েই তুমি উলটো1-পালট। কথা বলবে আচ্ছা বেশ, সংস্কৃতির আমার দেওয়া ব্যাখ্যা যখন তোমার পছন্দ নয় তখন সংস্কৃতি বলতে তুমি কি বোঝ শুনি এবার অভিধানে সংস্কৃতি শব্দটা যখন আছে তখন এর বাস্তব অস্তিত্ব নিশ্চয় রয়েছে।

অভিধানের কথাই যখন তুললে তখন বলি শোন বড় বড় অভিধান আর এনসাইক্লোপিডিয়া ছেড়ে হাতের কাছের অক্সফোর্ডের সংক্ষেপিত অভিধানের মত নেওয়া যাক। অক্সফোর্ড অভিধানের মতে বর্তমান আলোচনার পটভূমিকায় সংস্কৃতি বা কালচারের অর্থ হল মনের অনুশীলন দ্বারা লভ্য জ্ঞান বৃত্তি। আমাদের রাজশেখরবাবুও “চলস্তিকা*য় বলেছেন যে সংস্কৃতি হল শিক্ষা বা চ্চ৷ দ্বারা লব্ধ বিদ্যা বুদ্ধি শিল্প কলা রুচি নীতি ইত্যাদির উৎকর্ষ সংস্কৃতির সর্বজন- মান্য সংজ্ঞার্থ দেওয়! সম্তব নয়। তবে পুবৌক্ত পরিভাষার আধারে একথা! বলা যার যে সংস্কৃতি হল জীবন জগত সম্বন্ধে একট! বিশিই মানসিকতা-_দৃষ্টিভঙ্গী শিল্প সাহিত্য চারুকলা সঙ্গীত ইত্যাদি এর বনহুর মধ্যে কয়েকটি প্রকাশের মাধাম। মূল কথা হল 'ওই বিশিষ্ট মানসিকতা |

আমি প্রশ্ন করলাম, এই মানসিকতার ভিত্তি কি?

বন্ধু বললো, ভাল প্রশ্ন করেছ এর ভিন্তি হল মানবীয় মূল্যবোধ দয়া মায় মমতা] করুণা প্রেম প্রীতি বন্ধুত্ব সহাশ্থভূতি শ্রদ্ধা ভক্তি উপাসনা ধর্মনিষ্ঠ। নীতিনিষ্ঠা আদর্শনিষ্ঠ৷ পরার্থপরতা দেশাত্মবোধ আত্মোৎ্পর্গ ইত্যাদি সন্কীর্ণ অহংএর উধ্র্বে ওঠার যেসব বৃত্তি মানুষকে পশু থেকে ভিন্ন করেছে তাব নাম মানবীয় মূল্যবোধ নিজের সমাজ-জীবনে এইসব বৃত্তির উত্তরোত্তর বিকাশের নামই সংস্কৃতি চর

আমার সংশয় কিন্ত গেল না। আমি বললাম, তাহলে বাঙালীর পংস্কৃতি-_

বন্ধু বললেন, কথাট। একটু কট শোনালেও সত্য যে বাঙালীর সংস্কৃতি বলে কোন কিছু নেই। বাঙালীর বৈশিষ্ট) থাকতে পাবে-_-তার পৃথক সংস্কৃতি নেই। সমগ্র পৃথিবীতে মাত্র একটিই সংস্কৃতি আছে, আর তার নাম মানবীয় সংস্কৃতি

বাঙালী সংস্কৃতির রূপান্তর

ব্রচনায় “সংস্কৃতি” শব্দটি ব্যহার কর] সহজ ব্যাপার নয়। কারণ শব্দটির একাধিক ব্যাথা আছে রাজশেখরবাবু চলস্তিকায় এর অর্থ দিয়েছেন £ “শিক্ষা বা চর্চা দ্বারা লব্ধ বিদ্যা বুদ্ধি শিল্পকল! কচি নীতি ইত্যাদির উৎকর্ষ, কৃষ্টি, 00110761” ন্ুত্রাকারে বললেও রাজশেখরবাবু সংস্কৃতি শব্টির বহু ব্যাপক অর্থ দিয়েছেন আমরা এখানে কিকিৎ সন্কুচিত অর্থে-জীবনের প্রতি একটি বিশিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গীর অর্থে শব্বটর ব্যবহার করব।

“শিক্ষা বা চর দ্বার লব্ধ রুচি নীতি ইত্যার্দির উৎকর্ষ এবং আমরা যাকে জীবনের প্রতি একটি নিশিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গী বলেছি, একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা! যাবে তা সমঅর্থগো তক এবং তাই একথা বললে অন্যায় হবে না ষে, রাজশেখরবাবু প্রদত্ত 'সংস্কৃতি'-র পুরো ব্যাখ্যায় আমাদের এই ভান অন্তনিহিত |

জীবনের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গীর বাহ অভিব্যক্তির বহুবিধ মাধ্যম আছে। সাহিত্য সঙ্গীত চারুকলা অভিনয় থেকে আরম্ভ করে আচার-ব্যবহার দর্শশ পধন্ত অনেক কিছু এর আওতায় পড়ে আমরা কিন্তু আলোচনার স্বল্প- পরিগরের জন্য আমাদের বীক্ষণকে সংস্কৃতির দুটি মাত্র বহিরঙ্গের মধ্যে সীথাবঞ্ধ রাখব, খদিত সংস্কৃতির "অপরাপর ক্ষেত্রেও ব'গালী-সংস্কৃতির বূপাস্তর লমপরিমাণে দইগোচর |

সংস্থ্তির একটি লখু নিদর্শন হল পোশাক। অথচ এই পোশাক মান্ষের মানপিক প্রবণতার বাহ অভিব্যক্তিও বটে এবং বলাই বাহুল্য, মানসিক প্রবণতা সংস্কৃতির একটি বিশিষ্ট উপাদান। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় থেকে বিভিন্ন কারণে বাঙালী পুরুষদের মধ্যে ইউরোপীয় পৌশাকের প্রাধান্য উত্তরো স্তর বুদ্ধি পেতে পেতে বর্তমানে শহর কেন, এমনকি হুদূর গ্রামাঞ্চলের পুরুষদের মধ্যেও প্যান্ট শার্ট বাঁ হাওয়াইয়ান শার্টের প্রচলন হয়েছে বাঙালীর মনাতন পোশাক ধুকি পার্ধীবীর চেয়ে সস্তা এবং দৌড়বাঁপের কাজের উপযুক্ত ইত্যাদি অনেক কুধুক্তি এর সমর্থনে উপস্থাণিত করা হয়, যদিচ অধিকাংশ ফুলপ্যাণ্ট ব্যবহাঁর- কারী যেপব টেরিলিন ইত্যাদির প্যান্ট ব্যবহার করেন তার দান ধুতির চেয়ে অনেক বেশী এবং শহরের পখেধাটে এখনও বহু ধুতি পাঞ্জাবী পর] চটপটে

বা.-২

১৮ বাঙল বাঙালী

মানুষ দেখা যায়। যাই হোক, প্যান্ট শার্টের পক্ষে এইসব ওকালতী যদিও ব1 কান-সওয়া হয়ে আসছে তাহলেও ইউরোপ আমেরিকা থেকে যে বো এবং টাইকে বিসজন দেওয়া হচ্ছে, স্বাধীনতার পর নৃতন করে সাহেব হবার নেশায় মশগুল অপরাপর প্রদেশবাসী সহ বাঙালীদের ভিতর তার প্রচলনের সপক্ষে কোন যুক্তি শোন। যাচ্ছে না। এর ব্যবহার নিছক সাহেব হবার মোহে পুরুষের পোশীকের পরিবর্তনের এখানেই শেষ নয়। এর সবুশষ অবদান হচ্ছে ড্রেন পাইপ প্যান্ট অথবা বেল-বট এবং ছু'চলে। জুতো পশ্চিমের যেসন টেডি বন্ন, রকার অথবা হিশিদের কাছ থেকে আমরা এনব ধার করেছি তারা সংস্কৃতি- জগতের কোন্‌ নিমস্তরের মানু তা বোধ হয় আমাদের অনেকেরই জানা নেই। যাই হোক যে মানপিকতা আমাদের সনাতন পোশাক ছেড়ে প্যান্ট শার্ট পরতে অনুপ্রাণিত করছে এবং যে ক!রণে এই বিদেশী পোশাক আমাদের কর্মক্ষেত্র থেকে পামাজিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও উত্তরোত্তর অধিক পরিমাণে চড়াও হচ্ছে তার নাম হল সাহেব হ্বার ইচ্ছা ইচ্ছা ভাল কি মন্দ, উচিত শা অন্থচিত__ নে প্রশ্ন এখানে তোল। হচ্ছে ন|। এখানে শুবু এইটুকু বুঝলেই যথেই যে সাহেব হবার এই মানপিকত। এসে বাঙালী মানপিকতার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে। নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রেও এই একই মানগিকতার পরিচন্ব তো পাওয়! যায়ই, এতদতিরিক্ত আরও কিছু লক্ষ্য করা যায়। এই আরও কিহ্ুটি হল যৌন সচেতনতা ব্লাউজের হাতা! বুক পিঠে নির্মমভাবে কাচি চালিয়ে এবং এর উপর সম্ভাব্য অসম্ভাব্য সব জায়গায় সেলাই দিয়ে দেহের প্রতিটি রেখাকে পথ- চারীদের নয়নগোচর করে মুহ্মুছ স্থলিত বপনাঞ্চল কন্ুই-এর ভাজে কোন রকমে লাগিয়ে রেখে লাস্তনয়ী ভঙ্গিমায় যে বিনোদিনীর] পথ চলেন, সঙ্ঞ|নে হে!ক অথবা অবচেতন মনে তারা তাদের যৌবনশোভা! প্রদর্শনাভিলাষিণী নিঃসন্দেহে যে মানসিকতার কারণে ঈষৎ অবগুঠনে মুখ ঢেকে শ্রাস্ত সৌম্য চলনে আক্জ থেকে পনের বিশ বছর পুধে বাঙউলাদেশের পথেঘাটে বঙ্গললনারা পথ চলতেন আজকের পূর্বোক্ত ধরণে বিচরণকারিণী মহিলাদের মানসিকতা তার থেকে পৃথক সংস্কৃতির অপর যে নিদর্শনটি নিয়ে আমরা আলোচিন। করব েটি একটু গুরু পর্যায়ের হল আমাদের পুজা পার্ণ। আজ থেকে মাত্র পনের-কুড়ি বছর পূর্বে দুর্গা লক্ষ্মী বা সরম্বতী পুজা ইত্যাদির সময় পুজার আয়োজনকারী ব্যবস্থাপক ভক্তদের মধ্যে একটা সৌম্য ভক্তিভাব--একট] 59110051795 পরিলক্ষিত হত। নান করে উপবাসী থেকে কাচা কাপড় পরে ফুল, বিশ্বপত্র,

বাঙালী সংস্কৃতির বূপাস্তর ১৯

দূর্বা ইত্যাদি পূজার উপকরণ সংগ্রহ, অনুরূপ সংযম সহকারে পুজার নৈবেছ্য ভোগ সাজান, পাছুকা খুলে রেখে পুজামণ্ডপে ওঠা, উপবাপী থেকে অঞ্জলি দেওয়া শুদ্ধাচারে প্রনাদ চরণামত ব। পুজার ফুল নিয়ে যাওয়! ইত্যাদি ছিল বাঙালীর পৃজানুষ্ঠানের অপরিহার্ধ অঙ্গ দেবী প্রতিমা বিসর্জনের অনুষ্ঠানে আপামর জনসাধারণ যোগ দিলেও তার মধ্যে আপনক্গনের কাছ থেকে বৎ্সর- কালের জন্য বিচ্ছেদজনিত একট] শকুত্রিৰ শোকভাবের পরিচগ্ন পাওয়া যেত আজ কিন্তু বাঙালীর পুজানুষ্টটনে__বিশেষ করে সর্বজনীন পুজার ক্ষেত্রে পূর্বোক্ত নিষ্ঠা শুচিতা এক রকম অদৃশ্য হয়ে গেছে আর বিসর্জনের অনুষ্টান? তার কথা না ০তোলাই ভাল। ট্রাকের উপর দেবী প্রাতিমার সম্মুখে তাস সহযোগে টুইস্ট কিংবা রক আ্যাগড রোল নুত্যরত কয়েকজন কিশোর বা যুবক এত্বং তাদের ঘিরে উদ্দাম উল্লাপে চীৎকারকারী আরও কিছু কিশোর যুবক_-এইভাবে প্রতিমা নিরগ্তনের শোভাবাত্রারই আজকাল 'প্রাবল্য

সংস্কৃতির রূপান্তর যুগে যুগে ঘটেছে এবং 'ভবিষ্কাতেও হবে জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রাণ-স্পন্দনের লক্ষণ। কিন্ত থে পরিণর্তন মানবীয় গুণ যূল্যবোধের অপহ্ৃন ঘটায় সে পরিবর্তনের নাম অধোগতি পোশাকের ক্ষেত্রে সাহ্বিয়ানা যৌনতার প্রাবলা এবং পুজা! পাব,শর ক্ষেত্রে সংঘম শুচিতা নিষ্টার পরিবর্তে উদ্দগুতাত্ আবির্ভাব নিঃসন্দেহে বাঙালী-সংস্কতির অধোগতির পরিচায়ক | বাঙালী-সংস্কৃতির এই বূপাস্তরের প্রতি অবহিত হবার দিন এসেছে

বাঙালীর সাংস্কাতক অনুষ্ঠান

সভাপতির ভাষণ শেষ হতেই মঞ্চের উপর যবনিকা পড়ল এবং তারপরই মাইক্লোফোনে ঘোষিত হল, এার পনের মিনিটের জন্য বিরতি এবং তারপরই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আরম্ত হবে

আমি আজকের অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের অন্যতম | হাতের কাছে আমাকে পেশ্বে"বন্ধু তাই প্রশ্ন করালেন, এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আরম্ত হবে! তবে এতক্ষণ যে সব গণামান্য নাক্কিদ্রে বক্তৃতা শুনহিলাম তা কি অসংস্কৃতিযূলক না কি?

ম্বামি ছোট্ট একটি ধমক দিয়ে নললাম, তো তোমার দোষ সব কিছুই তুষি বাকা চোখে দেখ

তিনি নললেশ, রাগ কোরো! না। এর পরবর্তী কার্ধক্রমকে সাংস্কৃতিক গন্রগান বলার কারণ আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।

আমি বললাম, কেন- রবীন্দ্রনাথের একট নৃত্য-নাট্যের অভিনয় হবে, তা ছাড়। গান নাচের কাধক্রম আছে এসব সাংস্কৃতিক কর্মস্থছচি নয়?

বন্ধু বললেন, এর জবাব না এবং হ্যা-ছুই-ই।

আমি ঝাঁঝিয়ে উঠে বললাম, রাখ তোমার হেয়ালী

বন্ধু বললেন, অভিনয়, নৃত্য সঙ্গীত ইত্যাদি স্বয়ং সংস্কৃতির নিদর্শন নগ্ব। তাবে হা], সংস্কৃতিসম্পন্ন মানুষের চিগ্তাভাতনা খায়বুবির অগিবাক্তি হতে পারে এসন।

আমি বললান, কথাটা মার এক্সটু স্পই করে নল।

বন্ধু বলতে লাগলেন, মামার বক্তব্য হল এই যে অভিনয়-কলা, নৃত্য বা সঙ্গীতে পারদশশ অথলা শর রসগ্রাহী ব্যক্তি বে সংগতিপম্পন্ন হবেনই তার কোন নিশ্চয়তা নেই। জাতীর বাক্তি স্বার্থপর, কুটিল এবং ঝগড়াটে হনে পারেন এাং তাহলে এন" চারুকলার টেকনিকে অভিজ্ঞ হওয়। সত্বেও তাদের দস্কতিসম্পন্ন মানুষ বলা যাবে না! আসল প্রশ্ন হল মাহ্্ষটি-_তাঁর মন কতট। কম্সিত, এবই উপর নির্ভর করে সংস্কৃতি! কেবল চিগ্প্রকর্ষণূলক বৃত্তি টেক- নিকে অভিজ্ঞ হওয়াই যথেষ্ট নয়।

আমি বললাম, বড় নৃতন ঠেকছে কথাটা

বাঙালীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২১

বন্ধু বললেন, হোক না নৃতন, সত্য কি না তাই বিচার করে দেখ আর তাছাড়া আর একটা কথা আছে

কি?

অভিনয়-কলা, নৃত্য সঙ্গীত ইত্যাদি সংস্কৃতির একমাত্র বহিঃপ্রকাশ নয়। সংস্কৃতির বহুবিধ বহিঃপ্রকাশের মধো কয়েকটি যদিরাগ না কর তাহলে বলব সংস্কৃতির ফলিত রূপের মধ্যে সবচেয়ে প্রাকৃত, সবচেয়ে প্রাথমিক স্তরে রয়েছে এগুলি

আমি বিশ্মিত কে বললাম, আজ তোমাকে হেয়ালীর ভূতে পেয়েছে নাকি হে? দেখি, তোমার ভাগারে আর কোন্‌ রহস্ত সংগুপ্ত রয়েছে?

বন্ধু বললেন, অভিনয়-কলা, নৃত্য সঙ্গীত ছাড়া সংস্কৃতির অপর একটি বাহ্‌ অভিব্যক্তি হল সাহিত্য-চ$1 তবে এও অভিনয়-কল! ইত্যাদির সমগোত্রীয়-_- অর্থাৎ প্রাকৃত পধায়ের জিনিস। জীবন-শিল্পী হল এর চেষেও উ-চু দরের জিনিস।

সেট। আবার কি?

ংস্কতির অর্থ যদি আমাদের সঙ্কীর্ন সত্তা অর্থাৎ পশুপ্রবৃত্তির উর্ধ্বে ওঠার নিদর্শন হয় তাহলে নিজের প্রাণ বিপন্ন করে যে যুবকটি চলন্ত বাসের সামনে থেকে ছোট্ট মেয়েটিকে সরিষ্কে আনল বা] যে কিশোরটি অচেন। অন্ধ লোকটির হাত ধরে তাকে যানবাহনবহুল রাস্তা পার করে দিল তাদের এবং তাদের মত আর সবাইকে জীবন-শিল্পের সাধক ন্লতে হবে শুধু তাই নষ, দেশের স্বাধীনতার জন্য ধার প্রাণ দিয়েছেন ব। তিলে তিলে আত্মোৎ্সর্গ করেছেন অথবা এখনও জাতিকে নৃতন করে বাচার মন্ত্র দেবার জন্য স্থ্দূর পলীতে পড়ে রয়েছেন--সর্ববিধ পদের মোহ বর্জন করে গ্রাষের সেবা করছেন, সংস্কৃতি বিচারে তাঁরা প্রথম শ্রেণীতে আসন পাবার যোগ্য যে সন্্যাসী, যে সাধক বিশ্বমানবের কল্যাণের জন্য ব্যক্তিগত প্রবৃত্তিনিচয়ের উত্বে ওঠার প্রয়াস করছেন তার স্থান তো আরও উপরে

তোমার কথায় যুক্তি যে নেই তা নয়, আমি বললাম

বন্ধু বললেন, অথচ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অভিনয়, নৃত্য গীত ছাড়া আর কোন কিছুরই স্থান নেই। এই ঝুটা সংস্কৃতির ভূত আমাদের এমন পেম়ে বসেছে যে ভারত সরকারও বিদেশে যে সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদল পাঠান তাতে কেবল নৃতা, সঙ্গীত অভিনয়েরই ছড়াছড়ি অথচ আমরা ভুলে

২২ বাঙলা বাঙালী

যাই যে এই শতাব্দীতে বিদেশে ধারা ভারতীয় সংস্কৃতি প্রচার করেছেন তারা সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ, কবি রবীন্দ্রনাথ মানবসেবক গান্ধী হৃতরাং জাতীয় কার্যক্রমকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ন|। বলে মনোরঞ্জনের কার্ধক্রম আখ্য দিলে তাতে সত্যের মর্ধাদ1 অধিকতর রক্ষিত হয় নাকি?

তা হয় অবশ্টা, তবে তাতে কিন্তু অনুষ্ঠানের মর্ধাদা অনেক কমে যায়। খানিকক্ষণ ভেবে নিয়ে আমি জবাব দিলাম

বন্ধু বললেন, তা গিয়েও ঘদি আমর] সত্যকার সংস্কাত সম্বন্ধে সচেতন হুই তাতে দেশের কল্যাণ হবে না কি? তুমি কি লক্ষ্য করছ না যে এই তথাকথিত 'সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করার ফলে আমাদের জীবনের অন্য অনেক মুল্যবান দিক বন্ধা থেকে যাচ্ছে। মানুষের জীবনে অভিনয়, সঙ্গীত নৃত্য ইত্যাদি স্থকুমার কলার স্থান আছে কিন্তু এগুলিই সব নয়। জাতিকে বিজ্ঞান, মর্থশাস্ত্র। সমাজশান্ত্র রাজনীতি ইত্যাদি জ্ঞান- বিজ্ঞানের অন্যান্ত বিষয় সম্বন্ধে জানতে হবে এছাড়া শরীর চর্চা করতে হবে, সমাজসেবায় নামতে হবে এবং স্বদেশ সমগ্র বিশ্বমানবের সেবায়ও আত্মনিয়োগ করতে হবে এসব বাদ দিম্বে কেবল তথাকথিত সংস্কৃতির চর্চা করলে জান্তির ভবিষ্যৎ কি বলতে প'র?

যৌবন-জল-তরজ রোধিবে কে?

কথা নেই বার্তা নেই কিছু ইট-পাটকেল এবং বোমা-পটকা পড়ল এবং তারপর ছু-একখানি বাঁস বা ট্রাম আগুনে পুড়ল-_-কলকাতার নাগরিক জীবনে এতে আমরা এক রকম অভাস্ত হয়ে উঠেছি ব্যাপারটা অনেকটা জাপানের ভূমিকম্পের মত। যে কোন সময় বাস্থকি মাথা নাড়া দিতে পরেন এবং দশ বিশ পর্াশটি ঘর ভেঙে পড়বে কিছু নর-নারী হতাহত হবে। এর কোন প্রতিকার নেই, নেই প্রতিবিধান। কলকাতা তথা বাঙলাদেশের তরুণ সম্প্রদায় ইট-পাটকেল পটকা ছুড়ে এবং আরও একটু বেশী মাত্রা হলে ট্রাম বাঁ জালিয়ে তাদের যৌবনোচিত অতিরিক্ত উদ্ধমের অভিব্যক্তি প্রকাশ করবেন এটা যেন আমাদের গ! সওয়া হয়ে আসছিল কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় মনে একটু চিন্তার দোলা লাগছে।

পর পর বেশ কয়েকবার একাধিক পরীক্ষা কেন্দ্রে কালকে ধারা গ্রাজুয়েট হবেন তারা যে লগুভগ্ড কাণ্ড করলেন ত1 দেখে হতচকিত হতে হল। করেক দিন পব ধার] ডাক্তার হবেন, ধাদের ধীরস্থির বুদ্ধি, বিবেচন1 সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে শত শত নর-নারীর বাঁচা মরা, তাঁরা (এর মধ্যে মহিলাও কয়েকজন ছিলেন ) বিশ্ববিদ্ভালয়ের উচ্চতম কর্তৃধক্ষকে ঘিরে যে ট্যাঙ্গো, হুলাহুপ, রক আ্যাশ রোল টুইস্ট নাচের কসরৎ দেখালেন তার তুলন] মেলা ভার বলতে ভুলে গেছি এই নৃত্য ছিল সঙ্গীত সংবলিত এবং সেই সঙ্গীতে খিস্তি খেউড় এমন বিপুল পরিমাণে ব্যবস্থত হয়েছিল যে সেকালের রাম বস্থ 'অথব] গোপাল উড়ে ইত্যাদির মত পেশাদার কাচ! ভাষার সঙ্গীতের গায়কেরাও একালের আযামেচারদের ভাষা শুনলে হার মানতেন এবং বিশ্বাস কন্ধন বা না-ই করুন এসবই প্রযুক্ত হয়েছিল তাদের শিক্ষকদের উদ্দেস্তে। কিছুদিন পূর্বেকার আরও ছুটি ঘটনার কথ! মনে আসছে উনবিংশ শতাব্দীর বাঙলা - দেশের নবজাগরণের অগ্রনায়কদের স্যষ্টির কেন্দ্র বিশ্ববিখ্যাত এক কলেজের ছাত্ররা তারের অধ্যক্ষকে যেভাবে দীর্ঘকাল ঘেরাও করে রাখলেন যেভাবে তাকে দীর্ঘ সময় নির্জল। একাদশী পালনে বাধ্য করলেন তার তুলনাই কোথায়? এবং কলেজের বনু এতিহ্মণ্ডিত বিজ্ঞানের লেবরেটারীটি যেভাবে

২৪ বাঙলা বাঙালী

ংশতঃ ধ্বংস হল তাঁর তুলন1 চলে একমাত্র অন্নপূর্ণার ছিন্নমস্তা হবার সঙ্গে এঁ কলেজেরই হে'স্টেলের স্থপারিনটেন্ডেন্টের সঙ্গে তাঁর পুত্রবৎ ছাত্ররা যে আচরণ করলেন (জল বিছ্যতের সরবরাহ বন্ধ করা এবং বাজারহাট বঙ্গ করে দেওয়াও এর মধ্যে পড়ে ) এবং শুধু তাই নয় গুরুর “অপরাধে” গুরুপত্বীকে পর্যস্ত যেভাবে দিনের পর দিন কট্রকাটবা শুনতে হল তারই ণা তুলনা কোথায়? ইদানিং এর সঙ্গে ঘুক্ত হয়েছে স্কুল-কলেজে দক্ষযজ্ঞ, মনীষীদের যূতি ভাঙা ব1 অন্যভাবে তার অব্মানন! এবং তাদের রচিত মহত গ্রন্থানলীর বহুৎসব। রাজনৈতিক মতে না মিললে সহপাঠী ছাত্রদের ছুরি, বোমা বন্দুকের শিকার বানানর মত চরম নুশংস ঘটনাবলীও ঘটছে ফিরিস্তি আর বাড়িয়ে লাভ নেই--কারণ তালিকা মহাভারতের আকার নেবে

এরা চিকিৎসার অতীত হাই দুষ্টক্ষতের মত অস্ত্রোপচারের দ্বারা এর হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে-হতাঁশার মুহূর্তে ক্ষোভে একথা বললেও মনোভাবে যে কোন যুক্তি নেই, একট চিন্ত করলেই তা বোঝা যাবে এর] আমার আপনার সবার বাড়িতে আছে একালে বিশেষ করে নাগরিক জীবনে এমন কোন পরিবার নেই যেখানে এই উৎকেক্সিকতার ছেশায়া লাগেনি ব্জন করা যে কেবল কোন সমাধান নম তাই নয়, বর্জনের প্রক্রিয়ার কাবণ নিতে গেলে তা হবে কম্বলের লোম বাছার মত শ্রধু বাঁঙলাদেশেই ব্যাপার ঘটছে না। ৬171 3611571 01)11 15 [0909 [10017 [1)1115 (০0-11010৬ _এই মহাজনবাক্যকে নিয়তির পরিহাসের মত ব্যঙ্গ করেই যেন ভারতবর্ষের সধত্র এই অশান্ত যৌবন বিক্ষুব্ধভানে মাথ| তৃলে দাডাচ্ছে। শুধু 'ভারতধষুই বা কেন--এই সেদিন ফ্রান্সে কি হল? ুগাশ্লাভিগার ছাত্ররা! কি কাণ্ুটা করল? আর ইংলগ্ের বিটল, মড আর রকার এবং আমেরিকার হিপিরাও কি এই বিদ্রোহী যৌবনের অশান্ত প্রতিকৃতি নয়? এমনকি সোভিয্লেট রাশিয়ার মত কঠোরভাবে নিয্নন্ত্রিত শমাজ্ঞাতন্ত্রেব পমাজেও যে অযৌক্তিক বিদ্রোহ ভাঙনের গানের স্বরের ছোয়া লেগেছে প্রায়শই ভার সংবাদ পায়! যায়।

বিদ্রোহ বা বেহিপাবীপনা স্বযং কোন নিন্দার বিষয় নয়_--বিশেষ করে তরুণ যুবক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিদ্বোহ বেহিসাবীশনা তো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এট! তরুণের ধর্ম এবং তাই বাঞ্ছনীয়ও বটে। তাকলানাকান মক্ুভূমি পার হতে, অথবা দক্ষিণ মেকর আকিষ্কারের সময় কিংবা আজকের দিনে স্পুটনিক বা গ্রহাস্তরে যাবার রকেটে ওঠায় যে মনোবৃত্তি কাজ করে তা এই

যৌবন-জল-ত্রঙ্গ রোধিবে কে? ২৫

যৌবনের বেহিসাবীপনাই আপন প্রাণের অর্থ দিয়ে দেশমাতৃকাব বন্ধনমোচন করার যে আগ্রহ অথবা ইউরোপ-আমেরিকার স্থখের জীবন ছেড়ে আফ্রিকার ঘন অরণ্যে সম্পূর্ণ অনাত্মীয অপরিচিত কালা আদমীদের সেবার জন্য থেকে যাওয়ার পিছনে যে মনোবুত্তি বিদ্যমান তাও এই যৌবনের বিদ্রোহ বেহিসাবীপন] সঞ্জাত। এমনকি এসব মহৎ অভ্ভিবাক্তি ছাড়াও যৌবনের বিদ্রোহ বেহিপাবীপনার গতাম্থগতিক জানন সংসারেও একটি ভূমিকা আছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তরুণ-তরুণীর জীবনে মান্স প্রেমরূপে এর আবির্ভাব ঘটে | মানব-জীবনকে রূপ রস গন্ধে সমৃদ্ধ করার পক্ষে এই প্রেম 'ও রোমান্সের ভূমিকাও অদ্বিতীষ। কিন্ধ ক্ষুত্র অহংকে বিম্মরণপ্রয়াসী বৃহত্তর মানবতার ঘেবাভিমুখী করার দুঃলাহসিকতাই হোক, অথবা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের ছোট্ট পরিধিটিকে বর্ণাঢ্য স্থষমাঘ্ ভরে দেবার উদ্দেশ্টে নিয়োজিত রোমান্স বা প্রেমই “হাক__-উভয় জাতীষ বিদ্রেহ বেহিসাবীপনারই একটা গঠনমূলক শিল্পসন্ম ভূমিকা আছে কিন্তু পূর্বে যে মারাত্মক ছিন্নমস্তাবৃত্তিজ্লভ বিদ্রোহ বেহ্সাবীপনার উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে আত্মহননেব ধ্বংসাত্মক এবং স্থল কদর্ধতার ভূমিক। ছাঁড়া তো অপর কিছু নেই, এবং নেই বলেই এই বিদ্রোহ বেহিসাবীপনা শক্তির নিছক অপচয় মানব-সভ্যতা! বা সংস্কৃতি এর দ্বারা লাভবান তো হয়ই না বরং এর অন্তনিহিত সুলতা কদর্ধতার জন্য সভ্যতা সংস্কৃতির অধোগতি ঘটে সমাজের কল্যাণকামীদের ভিতর বিষয়ে নিশ্চম্ব দ্বিমতের অবকাশ নেই যে যৌবনের জাতীয় বিদ্রোহ অপচয় অবাঞ্চনীয় এবং তাই এর প্রতিবিধানও 'আবশ্তক। কিন্তু প্রশ্ন হল কোন্‌ পথে? একটু ধীরভাবে চিত্ত! করলেই বোঝা! যাবে যে আরও অনেক উপায়ের শরণ নিলেও এক্ষেত্রে প্রধান উপায় হল যুব সম্প্রনীয়কে আদর্শবাদে দীক্ষিত কর!। প্রশ্ন উঠবে-আঁদর্শবাদে দীক্ষিত করার দলের তো অভাব নেই, প্রতাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি তো ভাঁবং রাজনৈতিক দলের আখড! ম্বরূপ। কিন্তু আদর্শবাদ বলতে এখানে কোন রাজনৈতিক দলবিশেষের ক্ষমতা প্রাপ্তির উদ্দেগ্ঠ সাধন অথবা! আথধিক, সামাজিক কিংবা ধর্মীয় কোন ক্ষুদ্র গোঠীর স্বার্থ সাধনের কথা বল! হচ্ছে না। আদর্শনাদ এখানে ৪108191) ব1 নিঃম্বার্থ পরোপকারের অর্থে ব্যবহাত, যার বলে মানুষ ক্ষুদ্র অহং-এর উর্ধে উঠে সমগ্র মানবতর সেবার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে

হত বাঙলা বাঙালী

যে কোন সভ্যতা ব! জাতির স্বর্ণযুগ হল সেই কাল যে কালে সেই সভাতা বা জাতি ক্ষুদ্র অহং-এর গণ্ডি ভেঙে অমগ্র মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগের প্রয়াস করে দুরের উদাহরণ ছেড়ে দিয়ে আমাদের নিজেদের এই বাঙলাদেশ বাঙালী জাতির ইতিহাসের দিকে যদি দৃকপাত করি তাহলে দেখতে পাব যে উনবিংশ শতাব্দীর মধ্য থেকে বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক পর্যস্ত বাঙলা বাঙালীর যে স্বর্ণযুগ ছিল তাঁর যূলকথা হল একই আদর্শবাদ বা ৪101507-এর প্রেরণা শিক্ষা জ্ঞান শিজের মধ্যে গ্রহণ, তাঁর আত্তীকরণ অবশেষে তার বিকীরণ, ধর্ম সেবা শিল্পের সম্প্রপারণ_-এই ছিল এই কালের বাণী। রাখমোৌহন থেকে শুরু করে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ দেবেন্দ্রনাথ কেশবচন্্র ইত্যাদি ধর্ম লোকশিক্ষার ক্ষেত্রে, নিদ্ভালাগর ভূদেব ইত্যাদি শিক্ষার ক্ষেত্রে, মাইকেল বঙ্কিম রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে অবদান স্থষ্টি করেছেন তা সেই উনবিংশ শতাব্দীর আদর্শনাদের ভূমিকারই ফসল স্বাধীনতা-সংগ্রামে সশস্ত্র এবং অহিংস--উন্ভপ্ন ধরণের আন্দোলনের প্ররক্রিয়াতেই বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক পর্যন্ত বাঙলা! যে অদ্বিতীয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তার মূলেও ছিল এই আদর্শবাদনিষ্টা-_যাঁর মূল কথ। হল ক্ষুদ্ধ অহংকে বিশ্বৃত হয়ে বৃহত্তর মানবসমাজের সেবা কল্যাণ সাধনার মধ্যে নিজ চরিতার্থতা খোঁজ! ছিল এক ধরণের যৌবনের বিদ্রোহ বা বেহিসাবীপনা-_কিন্তু পৃথক জাতের এর বৈশিষ্ট্য হল গঠনমূলক-_সর্জনাজ্মক যৌবনের বিদ্রোহকে আদর্শবাদের দীক্ষা দিয়ে এইভাবে গঠনমূলক খাতে প্রবাহিত করতে না পারলে বাউল! "ও বাঙালীর কোন ভবিষ্যৎ নেই। ভূমাতেই সুখ, অল্পে সুখ নেই-_- এই মন্ত্র অধ্যাত্মবাদের বৃহত্তর ক্ষেত্রের মত সমাজ প্রাত্যাহক জীবনের সঙ্বীর্ণতর ক্ষেত্রেও সমভাবে সত্য |

বাঙালীর স্বাদেশিকতা

চায়ের পেয়ালায় তৃপ্তিস্থচক দীর্ঘ চুমুক দিয়ে আমি ধললাম, বাঙালীর ম্বদেশপ্রেম যে অদ্বিতীয় বিষয়ে দ্বিমতের অবক।শ নেই ইংরেজ আমলের গোড়ার দিকেই দেখ সিরাজ মীরকাশিম মীরমদন মোহনলাল নন্দকুমার*-*

মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বন্ধু বললেন, মীরজাফর জগৎশেঠ উমিঠাদ রায়ছুর্লভ-** |

আমি কটমট করে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বললাম, স্বদেশী আমলেও বাঙালী ফাসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেখেছে। ক্ষুদিরাম প্রফুল্ল চাকী থেকে আরম্ত করে বিনয় বাদল দীনেশ পর্যন্ত বাঙালীর স্বদেশপ্রেমের জলন্ত নিদর্শন |

বন্ধু বললেন, নরেন গৌপাই এ৭ং আরও যেসব আযাপ্রভার ইনকর্মারের দল খ্ঞিবীদের সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন, তাদের সম্বদ্ধেকি বল?

বন্ধুর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমি বললাম, অসহযোগ আন্দোলন তার পরবর্তা যুগেও দেখ দেশবন্ধু, যতীন্দ্রমোহ্‌ন সেনগ্তপ্ত, তারপর স্থভাষ তাদের অনুগামী আরও কত হাজার হাজার নরনারী

বন্ধু বললেন, এর সঙ্গে সঙ্গে দেখ মেইসব শত শত রায় সাহেব, রায় বাহাছর, হাজার হাজার বুটিশ রাজ্যের বশংবদ বাচলীকে। একটু হেসে বন্ধু যোগ করলেন, এদের অনেকেই স্বনামধন্য ; কিন্তু তাদের নাম করে বিপদে পড়তে চাই না। কারণ পনেরই আগস্ট ১৯৪৭ সনের পরে এদের অনেকে গায়ে খদ্দর চড়িয়ে প্রচ জাতীধষতাবাদী হয়ে গেছেন

আমি ক্ষুব্ভাবে বললাম, আচ্ছা তোমার এই নেতিবাচক মনোবৃত্বি কি কোন দিনই বদলাবে না?

বন্ধু বললেন, কি করব বল--অন্ধ আশাবাদী হতে পারছি না যে। কিন্তু আমি নৈরাশ্টবাদীও নই-বাস্তববাদী হবার চেষ্টা করছি বলে সত্যকে খু'টিয়ে বোঝার প্রয়াম করছি।

আমি বললাম, প্রপঙ্গে তোমার পজিটিভ বক্তব্যটা কি?

বন্ধু জবাব দিলেন আর সব প্রদেশবাসীর মতই বাঙালীর ভিতর পাশাপাশি স্বদেশপ্রেম স্বার্থপরতা রয়েছে বিষয়ে বাঁডালীর স্থান আর কারও উপরে

২৮ বাউলা বাঙালী

বা নীচে নয়। এছাডা আর একটি কথা মুষ্টিমেয় জনকয়েক নেতা কর্মীর ভিতর জলন্ত স্বদেশপ্রেমের নিদর্শন দেখা গেলেও অধিকাংশ বাঙালী বিষয়ে নিবিকার | অর্থাৎ তারা না স্বদেশপ্রেমী, না দেশদ্রোহী

বিশ্মিত কগে আমি বললাম, বলছ কি তুমি? এই যে এক একটা আন্দোলনে এত বাঙালী যোগ দেয় তার কি বাখ্যা আছে ভোঁমার কাছে!

বন্ধ বললেন, দেখ, স্বাধীনতার আন্দোলন যখন একেবারে উত্তেজনার উত্তঙগ শিখরে তখনও হাক্তার কয়েকের বেশী নরনারী এতে প্রত্যক্ষভাবে যোগ দেয়নি সমস্ত বাঙলাদেশের জনসংখ্যার সঙ্গে তুলনা] করলে এর আনুপাতিক হার কত হয়?

আমি বললাম, কিন্ত ভ্রান্ত পথে পরিচালিত হলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী বামপন্থীদের আন্দোলন সঙ্গন্ধে কি বক্তণ্য তোমার? ট্রাম ভাড়া বাডাবার বিরুদ্ধে এবং খাদ্য আন্দোলনে এচ কলকা'তাতেই তো! হাজার হাঁজার বাঙালী নরনারী যোগ দিয়ে নির্যাতন ভোগ করেন একে তুমি ম্যাস আপপার্জ ব! ব্যাপক জন আন্দোলন বলবে না?

বন্ধ বললেন, মাপ কব ভাই রাগ না করলে বলি ওসব হুছুক। যাদের এপব আন্দোলনে দেখেছি তাঁদেরই আবার রাজকাপুর নাগিতসর দর্শা পাবার জন্য এসপ্রাযানেডে যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে দেখেছি অথবা ফুটবল ক্রিকেটের মধদানে কুরুক্ষেত্রের নায়ক তারাই এসব আন্দোলনের তথ|কখিত গণ সমর্থন যদি হুজুক ন1 হত তাহলে আন্দোলন থেমে যাণার পর এসব নরনারীকে দেশের শতবিধ সমস্যার যে কোন একটির সমীধানের জন্য গঠনমূলক কিছু করতে দেখা যে৩যেমন দেখা যেত__যেমন দেখা দিয়েছি গসনমূলক কাজের প্রবাহ গান্ষীজী পরিচালিত স্বাধীনতা আন্দোলনের ফানে ফান্ে।

আমি চিস্তাপ্বিতাভাবে ব€ লাম, ত" অস্শ্া বলা যাষ।

বন্ধু বললেন, তা যদি না ** হাহলে পামান্য ছুতোনাত'ধ কলকাতার পথে- ঘাঁটে ট্রামবাঁস পুডত না আগ অন্যান্য জনসাধারণের »*পন্তি ক্ষতিগ্রস্ত হত শা।

আমি তাড়াতাড়ি বল্লাগঃ এসব গ্রগাদের কাজ। সং নাগরিকদের এর

তোমার সঙ্গে একমত হছে পারলাম না।

সঙ্গে সম্বন্ধ নেই বন্ধু বললেন, মেনে নিলাম কথা কিন্তু মুট্টিমেয় গুগতাই কি লক্ষ লক্ষ

বাঙালীর ম্বাদেশিকতা ২৯

স্নাগরিকের ভাগ্য-বিধাতা। হবে-__সৎ নাগরিকরা কি জাতীয় গুগাবাজীর প্রতিরোধ করবে না? আর নিক্ষিয়তা কি স্বদেশপ্রেষের গ্যোতক ?

আমি স্বীকার করলাম যে বন্ধুর বক্তব্যে সত্য আছে

নদ্ধু বললেন, কোটি কোটি জনসাধারণ নিক্ষি় আর মাত্র মুষ্টিমেয় নেত। কমী স্ববেশমন্ত্রে উদ্ধদ্ধ--এ অবস্থা বাঞ্চনীয় নয় এবং পরিস্থিতিতে কিছুতেই এলা চলে না যে জাতি হিসেবে আমরা স্বাদেশিকতায় উদ্দ্ধ।

আমি জিজ্ঞাস] করলাম, জনসাধারণ স্বাদেশিকতার কোন্‌ প্রত্যক্ষ কর্মস্থচি গ্রহণ করতে পারে ?

বন্ধু বললেন, এক নয় অনেক কর্মস্থচি হাতে নেওযা যেতে পারে। একটু চিন্তা করলেই এসব কার্যক্রম চোখে পড়বে তবে আমি কেবল একটি কর্মস্থচির প্রতিই ইঙ্গিত করখ-স্বদেশী জিনিস কেনা খেয়াল করেছ স্বাধীনতার পর বিদেশী জিনিসে ঝাজার কেমনভাঁবে ছেয়ে গেছে? কাপড়-চোপড়, বাঁসন- কোসন থেকে আর্ত করে সাবান, তেল, মাজন পর্যন্ত প্রতিটি নিত্যব্যবহার্ঘ জিনিপ আমরা চোখ বুজে কিনি বলেই না বিদেশী জিনিসের এত ছড়াছড়ি

আখি বললাম, অনেক বিশেশী জিনিস 'ভাল।

বন্ধু বললেন, এট! বনুপাংশ মনের ভ্রম আর ধর যদি ভাল হয়ও তা শা নিখে একটু খারাপ হলেও দেশী জিনিস কেনার নামই তো স্বাদেশিকতা। কোন কষ্ট স্বীকার ন। করে ম্বদেশগ্রেমী হওয়া যায় নান্কি?

আমি বললাম, কিন্ত যাই ধল আজকের দিনে স্বদেশী জিনিস ব্যবহার কর] সম্বন্ধে এতটা গৌড়ামি আন্তজাতিকতার সঙ্গে খাপ খায় না

বন্ধু বললেন, জাতীয়তাঁর ভিত্তির উপরেই তে! সুস্থ গু সরল আস্তর্জাতিকত৷ গড়ে ওঠে জাতীয়তার সম্বন্ধবিহীন আন্তর্জাতিকতা রঙিন বৃদদ ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু না, এরকম অ্যাবস্্রাক্ট উদাহরণ না দিয়ে একটা প্রত্যক্ষ উদাহরণ দিই আন্তী|তিকতার ভ্ম্যতম ধ্বজাধারক সোভিয়েট রাশিয়ায় এখনও উচ্চমানের বহুবিধ ভোগ্য উপকরণ তৈরী হয় নাঁ_জুত] ইত্যাদি কোন কোন জিপিসের মান ভারতবধের মত শিল্পে অনগ্রগর দেশের চেয়েও নিম্ন পর্যায়ের | তবু ভারতবর্ষের মত সে দেশে অপিয়ন্ত্রিতভাবে বিদেশী ভোগ্যপণ্য যেতে পারে না। রাশিয়া চীন যপি অপেক্ষাকৃত বেশী দামী নিষ়্ মানের হওয়া সন্কেও স্বদেশী পণ্য ব্যবহার করাকে ধর্ম হিসাবে নিয়ে থাকতে পারে, তাহলে আমাদের স্বদেশী ত্রতের জন্য লজ্জিত হবার কারণ নেই।

বাঙালী মধ্যবিত্তের ভবিষ্যৎ

বাঙলার বর্তমান সভ্যতা সংস্কৃতির ধারক বাহক এবং ভারতের নবযুগের অন্যতম পথিকৃৎ বাঙালী মধ্যপিত্ত সম্প্রদায়ের জন্মের ইতিহাপ খুব বেশী প্রাচীন নয়। ভারতে ইংরেজের আগমনের পৃবে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অস্তিত্ব একট! উল্লেখযোগ্য ব্যাপার ছিল বলে মনে হয়না আজকেপ মধাবিত্ত সমাজের স্ট্রির মূলে একাধিক কারণ কাজ করেছে প্রশমতঃ বাঙলার জমিদারী প্রথার কথা ধরা যেতে পারে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর বাঙলার আর্িক জীবনে এক নূতন শ্রেণীর উদ্ভব হ'ল। এরা হচ্ছেন জমিদার, তালুকদার, গাতিদার ইত্যাদি নানালিধ মধ্যন্বজ্ভোগীর দল। ভূমিকর্ষণকারী ক্লুঘকদের কাছ থেকে রাজত্ব সংগ্রহ করে রাঁজকোবে জম! দেবার ফ্রিয়ার বিভিন্ন পর্যাষে এদের অবস্থিতি

মধ্যপিত্তদের দ্বিতীয় ধারার স্ট্ হ'ল ইস্ট ইণ্ডিি কোম্পানী, বিভিন্ন নীলকর, চ!-কর প্রতিষ্ঠান অপরাপর ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং হৌন কুঠির কার্যকলাপের সম্প্রপারণের ফলে এইসব কার্ধ পরিচালনার জন্য বহুলসংখ্যক কেরানী, বাবু, মুত্সুদ্দি ইত্যাদির প্রযোজন হল ফলে বাঙলার একটি বিশিষ্ট অংশ এইসব জীবিকা গ্রহণ করে নিজেদের অবস্থা ফিরিয়ে নিলেন এবং পদের ভিতর কেউ কেউ আবাৰ চাকুরী দ্বারা অজিত অর্ধ নিয়েগ করে জমিপারী ইত্যাদি কিনে প্রথমোক্ত মধ্যবিত্তের সংখ্যার স্ফীতি ঘটালেন

ইস্ট ইত্ডিম্না কোম্পানী ক্রমশ: শক্তিশালী হয়ায় বুটিশ রাজত্বের পত্তন হ'ল এর প্রপান কেন্দ্র তখন ছিল বাঙলাদেশ কলকাতা সে সময় ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ব্রিটিশ রাজদণ্ড পরিচালন! তার ভিত্তিঘূল দৃঢ় করার জন্য বুসংখ্যক সরকারী কর্ধচারী প্রয়োজন সাধারণ শাসন পিভাগ ছাড়াও সামরিক বিভ'গে৪ াঙালীরা প্রবেশ করলেন অন্ত “বেসামরিক” জাতি- রূপে গণ্য হওগায় প্রত্যক্ষ ফৌজী কার্ধকলপে বাঙালীর] অন্যান্য প্রদেশবাসীর তুলনায় অধিক সংখ্যায় প্রবেশ করেননি ; কিন্ত কমিসারিয়েট দেশরক্ষা বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিই্ অন্যান্য পরোক্ষ (10০910-801855) সমরবিভাগীয় চাকুরী নিয়ে বাঙালীর! বাঙলার বাইরে গুদুর পেশোয়ার, কোহাট, বানু, ডেরা ইস্মাইল

বাঙালী মধ্যবিত্তের ভবিষ্যৎ ৩১.

খী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিলেন এইভাবে ব্রিটিশ শাসনের ছত্রচ্ছায়!তলেও বেশ একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাঙালী মধ্যবিত্তদের পু'টি ঘটল।

বাঙালী মধ্যবিস্তদের তদানীত্তন পরিস্ফীতি পরিব্যাপ্তিতে অতুলনীয় সহায়তা করল ইংরেজি শিক্ষা মহাত্মা রামমোহন প্রমুখ বাঙলার নবধূগ প্রবর্তকবৃন্দের দুরৃষ্টি এবং উদ্যমের ফলে প্রবতিত পাশ্চান্তা শিক্ষার পরিণামে বাঙল1র মানসলোকে রেনের্সার জন্ম হ'ল এর সঙ্গে সঙ্গে এই পাশ্চান্তা শিক্ষা বাঙালী মধ্যবিত্ত সমাজের পরিপুষ্টিরও পহাঁধক হ*ল। দেশের রাজা ইংরেজ এবং রাজকীয় কার্ধকলাপ পরিচালনার মাধ্যম ইংরেজি ভাঁষা। অধিকাংশ বণিক ইংরেজ এবং তাই তাদের হৌস কুঠির কাজকর্মও ইংরেজিতে চলে ইংলগ থেকে কেরানী বাবুদের কাজের জন্য লোক নিয়ে আসা ব্যয়বহুল তাই ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষাপ্রাপ্ত এতদদেশীয়দের চ।হিদ| সরকারী দণ্তরখানায়, বণিকদের কুঠি হোসে দ্রতগতিতে বৃদ্ধি পেতে লাগল এর ফলে ইংরেজি শিক্ষারও প্রসার ঘটতে লাগল ছুপাতি। ইংরেজি পড়.লই সাহেবদের কাছে চাকরী পাওয়! যায় এবং সে চাকরীর মাইনে যাই হোক না কেন, আয় প্রচুর অতএব ইংরেজি শেখার জন্য হু হু করে স্কুল কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগল কেবল পাশ্চান্তা সাহিত্য সংস্কৃতি এবং নবীন জ্ঞানবিজ্ঞানের আকষণই নয় নিছক আধিক লাভের প্রেরণা যে এদেশে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের মূলে কাজ কাজ করেছে-_-একথা বললে শিশ্চঘ সত্যের অপলাপ হবে না। প্রত্যুত উপরের মুষ্টিমেয় স্থুসংস্কৃত মনের অধিকারীদের +খ] বাদ দিলে সর্বসাধারণের ইংরেজি শিক্ষার নাপক প্রপাকের মূলে যে এই আথিক কারণ ক্রিয়াশীল ছিল, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই।

ইংরেজি শিক্ষার কল্যাণে একদিকে ভারতে বিভিন্ন প্রদেশে সরকারী কর্মচারী এবং কুঠিগাল সাহেবের বাবুরূপে বাঙালী মধ্যবিত্তের প্রাচুর্য দেখা দিল এবং অন্যদিকে শিক্ষক অধ্যাপক ইত্যাদিদের সংখ্যাবুদ্ধি ঘটে তারাও মধ্যপিস্ত শ্রেণীর আয়তনকে ম্ফীতকায় করতে লাগলেন। দেশে ইংরেজি আইনকাহুন চালু হবার সঙ্গে সঙ্ষে উকিল, মোক্তার, ব্যারিস্টার ইত্যাদির সংখ্যা বাড়তে লাগল এবং পাশ্ান্ত্য চিকিৎস। প্রণালীর জন্য ডাক্তাররাও মধ্যবিত্ত সমাজের এক বড় অঙ্গরূপে প্রত্িষ্টিত হলেন

বাঙালী মধ্যবিত্তদের বৃত্তিগত প্রকারভেদ সত্বেও একটি জায়গায় এদের মধ্যে সম্পূর্ণ এক্য বিছ্চমান, অর্থাৎ মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের চরিত্রখর্ম অভিন্ন মধ্যবিস্তদের

"৩২ বাঙলা বাঙালী

কেউই প্রত্যক্ষভাবে সামাজিক সম্পদ উত্পাদন করেন না। সামাজিক সম্পদ উৎপাদনকারী কৃষক শ্রমিকবর্গ দ্বারা উৎপন্ন শ্রমের একাংশ ব্যবস্থাপক বা দালালরূপে গ্রহণ করেই তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে হয়। আচাধ ্রফুল্পচন্দ্র একদ! তাই এইসব বৃত্তিকে নদীর এক কৃল ভেঙে অপর কূল গড়ার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন সংখ্যায় অহী অল্প বলে সাহিত্যিক, সাংব'দিক, শিল্পী, অভিনেতা ইত্যাদি বৃত্তির কথা টদরেখ না করলেও এদের চরিত্র ধর্মও পূর্ণ মাত্রায় মধ্যবিত্ত

জমার পর থেকে প্রা দে শতীন্ধী কাল পরধন্ত সমন বাঙালী মধ্যবিস্ত সম্প্রনাসের স্বর্নযুগ বলা যাযস। এই সমথে বাঙালী মধ্যবিভ্ুদের বিজয়রথ ভারতের কোণে কোণে জগপতাঁক উডিরেছে জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিতা সংস্কৃতি-_সমাঁজছীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই মধ্যপিত্ত শ্রেণীর 2তিত্থ অবিসঙ্কাদী ছিল। রাজনীতি এবং সমাজসেদার ক্ষেত্রেও এরা ছিলেন আদ্িভীপ্ন প্রতাুত্ত একদা এই শ্রেণীর সবাঙ্গীণ উত্কর্ষেব জগ্তই শোনা গিষেছিল, “বাঙালী আজ য1 চিন্তা করে সমগ্র ভারত আগামী কাল তাই ভাবে” বাঙাল মধাপিত্ত শ্রেণীর যে চরম দিক্ষশিত কূপ, তার পরিপ্রেক্ষিতে বাল! সম্বন্ধে পৃরোক্ত অভিমতকে কোন মতেই স্তোকাাকা আখা। দেও! যায় না।

কিন্ত বিগত তিন চার দশক থেকে বাঙালী মধ্যবিত্ত সমাজের গৌরব-রবি পশ্চিম গগন-সুবী হতে আরস্ত করে। প্রথমে এটা চোখে না ঠেকলে5 আজ এই বিংশ শতাব্দীর মধ্যপাঁদে বাঁগালী মধাবিত্তদের ক্ষয়িফু রূপ স্পগতঃ দৃষ্টগোচর | এই মারাত্মক ক্ষণকে আর অস্বীকার করার উপায় নেই মধ্যবিত্ত শ্রেণার সঙ্গে ধাদেরই ঘনিষ্ঠ পরিচয় আছে, ভীরাই আজ শ্বীককার করবেন যে বাঙলার অধিকাংশ মধাবিত্ত পরিবার নানতন পুধিকর আহার্ধ পায় না, তা? প্রায় অর্ধাশনে দিন'তিপাত করছে। জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বিগত কয়েক দশকে বাগালা মধ্যবিস্তদের উল্লেখযোগা অবদান নেই। সব- ক্ষেত্রেই ধ্যতিকম থাকে, একথা যেনে নিয়ে উপরের উত্তি করা হচ্ছে। রাজনীতির আসরে যে বাঙালী আর ভারতের পখিক্কৎ নেই--এ কথা অন্ধ

বাঙালী মধ্যবিত্তের ভবিষ্যৎ ৩৩

বাঙালী-ভক্তকেও আজ মানতে হয় এবং সমাজসেবার ক্ষেত্রেও যে বাঙালী মধ্যবিত্তদের গর্ব করার কোন কারণ নেই, তা আজ আর কারও অজান। নেই মনে হয় এক কালের চরম প্রগতিশীল উন্নত বাঙালী মধাবিত্ত মাজ যেন সর্ব- ভারতীয় ক্ষেত্রে কোনক্রমে আত্মরক্ষার জন্য কোণ খু'জছে এট দেড় শতাব্দীর মধ্যেই কি মধ্যবিত্ত সমাজের প্রাণশক্তি নিঃশেষ হযে গেছে? ইতিহাসে এমন বনু প্রগতিশীল সভ্যতার বিবরণ পাওয়া যায়, যারা কালধর্ষে ক্রমশঃ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বাঁগালী মধ্যবিত্তদের বর্তমান জীর্ণ দশা কি সেই মহতী বিনষ্টির স্চন1?

বর্তমান প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্ত-_বাঁডালী মধ্যবিভ্রদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আলোচনা করা হলেও তার পূরে বর্তমান ক্ষযরোগের কারণ আবিষ্কারের চেষ্টা করা রোগের কারণ আবিষ্কৃত হলে চিকিত্সার ব্যবস্থাপত্র সম্বন্ধে চিন্ত। কর! সহজপাধ্য হয়। বিগত তিন-চার দশকের ভিতর বাঙলার আধিক সামাজিক ক্ষেত্রে কয়েকটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে গেছে, যার প্রভাব বাঙালী মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের পক্ষে প্রতিকূল হয়েছে

ভারত তথ। বাঙলায় শিল্পবিপ্লব শুরু হয়েছে প্রথম মহাযুদ্ধের পর থেকে এক-আধজন বাঙালী ধনী হ্ুদ্বরপ্রসারী পরিবর্তনের বাহন এই ভারতীয় শিল্প- বিপ্রবে প'জিপতিরূপে অংশগ্রহণ করলেও সাধারণভাবে সমগ্র বাঙালী অভিজাত সমাজ বাংলার অর্থ-ব্যবস্থাকে সামস্তবাদের পরিবর্তে শ্রমশিল্প-মাধারিত করার কোন সচেতন প্রচেষ্টা করেননি এবং তার চেয়েও গ্ররুত্তপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে এই যে বৃহত্তর বাঙালী জাতি এই শিল্পবিপ্রবের ভবিষ্তুৎ সম্বন্ধে অচেতন ব। অজ্ঞ ছিল। আমি শ্রমশিল্পের কারণে উদ্ভৃত শ্রমিক-সমাজের দানা বাধার ইতিহাসের প্রতি ইঙ্গিত করছি। নূতন নৃতন কলকারখাঁন। ব্যবসা-বাণিজ্যের শিক্ষিত বাবুকর্মচারীদের পদের জন্য উমেদার হওয়া ছাড়া গায়ে খেটে মজুরী করার প্রতি বাঙালীদের কোন আগ্রহ দেখা খায়নি অথচ যে-কোন আধুনিক শ্রমশিল্প বা ব্যবসায়ে বাবুশ্রেণীর চাকুরিয়ার তুলনায় মঞ্জুরের প্রয়োজন বহুগুণ অধিক। তাই বাঙলাদেশ ভারতীয় শ্রমশিল্প সংশ্রিষ্ট ব্যবসায়ের একটি অন্ততম প্রধান কেন্দ্র হলেও বাঙলার কলকারখানায় বাঙালী মজুরদের পংখ্য। নগণ্য বলা চলে। এর কারণ খুঁজতে গেলে ইংরেজি শিক্ষার দায়িত্ব অনেকটা এসে পড়ে কিন্তু সে সম্বন্ধে পরে বিস্তুত আলোচনা কর। হবে

১৯১১ গ্রীপ্টাব্খে ভারতের রাজধানী দিল্লীতে স্থানান্তরিত হবার সঙ্ষে সঙ্গে

বা.-৩

৩৪ বাঙল] বাঙালী

সব্ভারতীয় সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে বাঙালীদের প্রীধান্ত হ্রাসের সুত্রপাত হল। কলকাতায় রাজধানী থাকার ফলে এতদিন বাঙালীর] তাদের ন্তায়সঙ্গত অংশেরও অতিরিক্ত যেসব স্থযোগ-স্থবিধা এই ক্ষেত্রে পেয়ে আসছিলেন, এবার থেকে তার অবসানের স্চনা হল। কারণ অন্ঠান্ত প্রদেশও এবার 'ন্যায়সঙ্গত- ভাবে ইংরেজ শাসনের প্রসাদের দাবী জানাতে লাগল বর্তমান উত্তর- গ্রদেশের অংশবিশেষ নিয়ে আগ্রা অযোধ্যা সংযুক্ত প্রদেশ প্রতিষ্ঠিত হল এবং দিল্লী রাজধানী হবার সঙ্গে সঙ্গে ১৯১২ খ্রীস্টাবে বিহার উড়িস্যা এক পৃথক প্রদেশরূপে বাউলা থেকে আলাদ] হয়ে গেল। এভাবে আসামও পরে এক ব্বতন্ত্র প্রদেশরূপে পরিগণিত হল অতএব স্বাভাবিকভাবে এসব প্রদেশের চাকরী ইত্যাদি সরকারী স্থযোগ-স্বিধার ক্ষেত্রে বাঙালীদের গাধান্য হাস পেল। বাঙালী মধ্যবিস্তকে তাদের মধ্যবিভ্ত-ম্থলভ পেশার জন্য মূলতঃ বাঙলার উপরই নির্ভর করা ছাড়া গত্যন্তর রইল না। কারণ ক্রমশঃ এসব প্রদেশেও মধ্যবিষ্ত সম্প্রদায়ের স্থষ্টি হল এবং স্বভাবতই তাঁরা ক্ষমতাধিরূঢ বাঙালীদের নিজেদের মাথা তোলার প্রধান অন্তরায়শ্বরূপ দেখতে পেলেন বাঙলার প্রাতিবেশ! প্রদেশসমূহে তথাকথিত “দাঙালী বিরোধিতার, একটি যূল কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক অবস্থার এই পটপরিবর্তন

অবশেষে এল বঙ্গবিভাগ ১৯৪৭ শ্রীপ্টাব্ধে দেশ ব্যবচ্ছেদের ফলে পুরান বাঙলার এক-তৃতীয়াংশ মাত্র এলাকা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের স্থষ্টি হল এ৭ং এই সবল্প- পরিপর এলাকায় এল প্রায় বাহাম লক্ষ উদ্বান্ত। এখানে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন বাঙলাদেশে মহাত্মা ামমোহনের পর থেকে যে নবযুগের স্ত্রপাত হয়, তার প্রধান ধারক বাহক ছিল বাঙলার হিন্দু সম্প্রদায়। নান] কারণে বাঙলার মধাবিত্ত শ্রেণীর ভিতর তাই হিন্দুদেরই একচ্ছত্র প্রতিপত্তি ছিল। প্রসঙ্গনঃ নল! যেতে পারে যে বাউল! তথা ভংরতের ব্যবচ্ছেদের পিছনে যে নুসলিম পাম্প্রনায়িকতা কাজ করেছিল, তাকে প্রেরণ জোগাবার কাজে নব- জাগ্রত মুপলমান মধাবিত্ত সমাজের বিরাট অবদান ছিল। যাই হোক বাঙলা বিভক্ত হল এং পুববর্ণ থেকে যেসব উদ্বাপ্ত এলেন, 'এদের মধ্যে অধিকাংশই মধ্যবিত্ত এরা মূলতঃ ছিলেন ভূমির উপর মধাস্বত্বভোগী অথবা মুসলমান নমঃশুত্র ইত্যাদি সম্প্রদায়ের দ্বার| ভাগচাষ করিয়ে নিজেদের ভরণপোষণ নির্ধাহ- কারী গেসব চাষী উদ্বান্ত হযে এলেন, শীন্ত পুনর্বাসনের জন্য জমি কৃষির অন্যবিধ স্ববিধা না পাওয়া ইত্যাদি সরকারী ক্রটি, অনেক রাজনৈতিক দলের

বাঙালী মধ্যবিত্তের ভবিষ্যৎ ৩&

প্ররোচনা এ+ং সর্বশেষে দীর্ঘদিন যাবৎ খয়রাতি সাহায্যের উপব মির্ভর করে থাকার পরিণামন্বরূপ কর্মবিমুখতার কারণে এরাও অন্ুৎপাদক পেশা গ্রহণ করলেন লজেঞুস, বিস্কুট বা আচার-মোরববা ট্রেনে ফেরী করা অথব! ফুটপাথে ছোটখাট দোকান করায় কোন জাতীয় সম্পদ হ্ট্ি হয় না। ফলে অখণ্ড বঙ্গের এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ এলাকাকে আজ একরকম সমগ্র বাঙলার মধ্যবিত্তদের পালন-পোষ্ণের ভার সইতে হচ্ছে।

জমিদারী উচ্ছেদ হবার ফলে পশ্চিম বাঁলার মধ্যবিস্তদের উপর আর এক আঘাত এসে পড়েছে রাজন্ব-আদায় ক্রিয়ার মধ্যবর্তরপে যেসব মধ্যবিত্ত জমিদার বা জাতীয় লোক মধ্যন্বত্বভোগীরপে জীবিকা! নির্বাহ করছিলেন, তারা বৃত্চ্যিত হয়েছেন। সোজাস্জি বেনামী করে বা কোথাও কোথাও কো-অপ!রেটিভের ছল্মাবরণে পিলিং অর্থাৎ ভূমির উচ্চতম সীম! নির্ধারণের আইনকে ফাকি দেবার চেষ্টা করলেও আর দেশীদিন চলবে না ভ'রতীয় গণতন্ত্রে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ককে ভোটাধিকার দেবার কলে জাগ্রত রুষক শ্রমিক সম্প্রদায় এখন ক্রমশঃ অধিকাধিক মাত্রায় রাষ্ট্যন্ত্রেব দ্বারা তাদের ন্যাধ্য অধিকার আদায়ের প্র্ত্ব করবেন। দশের অপ্িকাংশ ভোটার দরিদ্র সম্প্রদায়ভূক্ত এদং তারা ক্রমশঃ এটা বুঝতে খিখছে যে যাবৎ তারা বঞ্চিত ছিল। তাই তাদের স্বার্থ নিঃপন্দেহেই রাষ্টরন্ত্রকে প্রচণ্ভাবে প্রভাবিত করবে। 'এনুরূপ কারণের জন্যই ভাগচাষী আইন ইতাদি ক্রমান্বয়ে মধ্যবিত্ত স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে।

ইংরেজি শিক্ষার কথা সর্বশেষে উল্লেখ করলেও মধ্যবিত্রদের অবস্থা পরি- বর্তীনৈর জন্ত এর দায়িত্ব সমধিক গুরুত্বপূর্ণ বর্তমান শিক্ষ। সম্পূর্ণভাবে চারু- চর্চামুলক (2০8080110)| ন্থতরাং এই শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালী পেশা হিস'বে মধ্যবিত্তের বুত্তি ছাড়া অন্ত যে-কোন রকম কাজের পক্ষে অনুপযুক্ত অথচ জাতীয় অর্থনীতিতে এই ধরণের পেশার একটা সীমা আছে অর্থাৎ পেশায় যথেচ্ছ কর্মক্ষম নরনারীকে কর্ষে নিয়োগ করা যায় না। তাই একদা যে উংরেজি শিক্ষা মধ্যবিত্তদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েছিল, বিগত ত্রিশ-চলিশ বৎসরে তা-ই তার শ্রহীনতার কারণ হল। একদিকে যেমন মধ্যবিত্রস্থলভ জীবিকার সমুদ্ধ অবস্থা উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুদের ইংরেজি শিক্ষা নিতে উদ্ধদ্ধ করেছে, অন্তদিকে তেমনি চাকরী দ্বারা বাবুদের অল্লায়াসে স্বচ্ছল জীবনযাপন ইংরেজি-শািক্ষিত মনে শ্রম শ্রমিকদের প্রতি দ্বণা বাঙলার কৃষক মজুর সমাজের ভিতর ভদ্রলোক হয়ে মাটি-কাদার ছোয়াচ বাচিয়ে কাজ করার উপায়স্বরূপ ইংরেজি

৩৬ বাঙলা! বাঙালী

শিক্ষার প্রতি আক্ুই্ করেছে অর্থাৎ পব যিলিয়ে মধ্যবিভরদের আন্রপাতিক হর বেড়েই চলেছে

এক শতাব্দীরও অধিক পুর্বে কলকাতা বিশ্ববিগ্ালনের স্থাপনার পর থেকে বা$লাদেশে প্রচণ্ড গতিতে আধুনিক শিক্ষার প্রধার ঘটেছে স্বাধীনতার পর একাধিক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে বাঁওলাদেশে বর্তমানে বোঁধ হয় এমন কোন মহকুমা নেই যেখানে একটি কলেজ নেই এবং প্রতিটি থানায় একাধিক উচ্চ বিদ্যালয় আছে এক কলকাতা তার পার্বতী অঞ্চল থেকেই প্রতি বত্সর কয়েক লক্ষ যুবক-যুনতী পোস্ট গ্রাজুয়েট থেকে আরম্ভ করে স্কুল ফাইন্যাল হায়ার সেকেগডারী পর্যন্ত পরীক্ষাগুলিতে উত্তীর্ণ হন ছাড়া অন্ততঃ এর দেডগুণ বেশী ছাত্রছাত্রী এইপব পরীক্ষায় ফেল করেন অর্থাৎ প্রতি বৎসর এই কয়েকলক্ষ যুবক-যুবতী মধ্যসিত্তদর প্রচণ্ডতম সমস্া-_ শিক্ষিত বেকারদের বিশাল বাহিনীর পরিপুষ্টি সাধন করেন। একথা নিশ্চয় বলাই বাহুল্য যে শিক্ষিত বেকারের 'আদমশুমারীর দৃষ্টিকোণ থেকে স্কুল ফাইন্যাল বা হায়ার স্কেওডারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বা অনুত্তীর্ণ মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ১৯৫৮ সালের ২৯শে নভেম্বর বাঙলার বিধানসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে শ্রমমন্ত্রী জানান যে পশ্চিমবঙ্গের শহ্রাঞ্চলে মোট বেকারের মংখ্যা ১১ লক্ষ এর ভিতর এক- মাত্র কলকাতা অন্তান্য শিল্পাঞ্চলে মধ্যবিত্ত বেকার ২,৪৯,৯০০ এবং অন্যান্ শ্রেণীর বেকার ২,১৫৯১০০ জন গ্রামাঞ্চলের পূর্ণ আংশিক বেকারদের সংখ্য। সরকারের দপ্তরে নেই! আর শ্রমমন্ত্রী প্রদত্ত 'পরিসংখ্যানও শিঃসন্দেহে অসম্পূর্ণ। কারণ সরকারের কাছে একমাত্র এমপ্রয়মেণ্ট এক্সচেঞ্জে ধারা চাকরীর জন্য নাম লিখিয়েছেন, খুন সম্ভব তাদেরই হিসাব রয়েছে এমপ্রয়মেপ্ট এক্সচেঞ্জে নাম লেখানে৷ নে, এমন বহু বেকারও বাঙউল!দেশে রয়েছেন বেকার ন,শ্া সম্বন্ধে আমাদের আর একটি তথ্যের কথাও স্মরণ রাখতে হবে দ্বিতীয় পঞ্চবাধ্ধিক পরিকল্পনায় একমাত্র সরকারী থাতে ৪,৮০* কোটি টাকা ব্যয় করার পরও পরিকল্পনার যেয়াদ শেষ হলে তাকারের সংখ্যা যথাপুর্বং রয়ে যাবে একথা পরিকল্পনা প্রণেতাগণ সখেদে স্বীকার করেছেন ! নিত্য-বর্ধমান জনসংখ্যাকে এর জন্য তারা দারী করলেও স্বীকৃতিতে সমস্যার সমাধানের কোন সম্ভাবনা! নেই যাই হোক বর্তমানের এই বহু লক্ষ বেকারের সঙ্ষে প্রতি পংসর প্রায় দেড় বা! পৌনে ছুই লক্ষ মধ্/বিত্ত চারিত্র-ধর্ম বিশিষ্ট শিক্ষিত বেকারদের জগ্য মধ্যবিত্তস্থলভ কর্মের সংস্থান করা বর্তমান দূরকার তো দূরের

বাঙালী মধ্যবিত্তের ভবিষ্যুৎ ৩৭

কথা, যে-কোন সরকারের সাধ্যাতীত। পশ্চিমবঙ্গের যাবতীয় কল-কারখানা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত কর্ম-নিয়োগ ক্ষমতা এবং সরকারের শক্তি যোগ করলেও প্রচলিত উৎপাদন পদ্ধতি বজায় রেখে সমন্তার স্মাধান করা যাবে না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্টে কেউ জাতীয় অসম্ভব প্রতিশ্রতি দিলেও কোন কাওজ্ঞানবিশিষ্ট ব্যক্তি রাজনৈতিক দলসমূহের এরকম অসম্ভব প্রতিশ্রাতির উপর কোন গুকত্ব আরোপ করতে পারেন না।

ক্রমবর্ধমান স্কুল-কলেজের ছারা শিক্ষিতের অতি-উতপাদন হবার ফলে আর একটি সমস্তা সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে যেমন অর্থনীতিতে মধাবিত্তস্থলভ চাকুরীর সংখ্যার তুলনা কর্মপ্রার্থী মধ্যবিত্তের সংখ্যা বহুগুণ অধিক, অন্যদিকে তেমনি মজুরদের তুলনায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চাকুরিয়াদের বেতনহার বৃদ্ধির পরিমাণও কম এর সঙ্গে ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি মুদ্রম্ফীতির পরিণাম যুক্ত হবার ফলে মধ্যবিত্দের অবস্থ৷ জাতিকলে পিষ্ট যৃমিকের মত। মধ্যবিত্বদের সংখা। প্রয়োজনাতিরিক্ত বলে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের পরিভাষায় যাকে “বার্গেনিং পাওয়ার” বলে, মধাবিত্তদেব ভিতর তার স্বাভাবিক স্বল্পতা এসেছে একটি কর্মখালি হলে মালিক পক্ষ যদি হাজার দরখাস্ত পান, তাহলে কীসের জন্য পদপ্রার্থর বেতন বৃদ্ধি করতে যানেন? অর্থাৎ যখন মধ্বিত্তদের সংখ্যা কম ছিল, তারা কৃষক শ্রমিকদের কাধে বসে যা পেতেন তাতে সচ্ছলভাবে চলে গেলেও এখন ভাগীদার অনেক হওয়ায় কারও আর পেট চলছে না।

মধ্যবিত্তের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আলোচন1 করার পূর্বে এইবার বিবেচনা করে দেখা যাক যে গত তিন চার দশক কালের মধ্যে উপরিউক্ত যেসব কারণের জন্য বাঙালী মধাবিত্তদের গৌরব-রবি অস্তমিত হওয়া আরম্ভ করে, ভবিষ্তাতে তার সমাধানের কোন সম্ভাবনা আছে কিনা ? কারণ রোগের মূল যথাপূর্ব রয়ে গেলে রোগীর আরোগ্যল।ভ করার সন্তাবন। থাকে ন]1।

কিছুদিন যাবৎ বাঙালী যুবকরা কিছু কিছু করে কলকারখানায় শ্রমিকদের কাজ করা শুরু করলেও সমগ্র বাঙালী মধ্যবিত্ব সম্প্রদায়ের মনে এখনও নিজেদের শ্রমজীবীতে রূপান্তরিত করার তেমন কোন সচেতন আগ্রহ দেখা

৩৮ বাউলা ব'ঙালী

দেয়নি। এত আধিক বিপর্যয় সত্বেও বাঙলাদেশে অবাঙালী মজুদের মোট সংখ্যা বা এমনকি আমন্থপাতিক হার বুদ্ধি পেয়েই চলছে কেবল কলকাতী, হাওড়া বা আসানসোলের মত শ্রমশিল্প কেন্্র এবং তার উপকণ্ঠ এলাকাই নয়, বাঁউলার হুদূর পলী অঞ্চলেও অাঙালী শ্রমিকরা ক্রমশঃ অধিকপংখ্যায় সমবেত হচ্ছেন মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলী, বর্ধঘান, বীরভূম, মুশিদাবাদ, পশ্চিম দিনাজপুর ইত্যাদি বাঙলার পশ্চিম দিকস্থ জেলাসঘূহে ধান রোপণ কাটার সময় শিহারের সংলগ্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাঁজার আদিবাসী শ্রমিক গিয়ে কাজ করে থাকেন। বস্ততঃ বাঙলার এনব এলাকার কৃষিকর্ম এইসব 'বিহারাগত শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল--একথ। বললে সত্যের অপলাপ হবে না। রেল স্টেশন থেকে দশ-বার মাইল দূরে মেদিনীপুর দেলার একেবারে গ্রামাঞ্চলে জেল। বোর্ডের রাস্তা ঠরীর কাজে শত শত মধ্যপ্রদেশীয় ন!রী পুরুষ শ্রমিকদের কাজ করতে দেখেছি ন্মরণ রাখতে হবে যে কাজের ঠিকাদাররা বাঙালী হলেও তারা অবাঙালী মজুর নিয়োগ করেন এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে শোনা যাঁবে যে প্রথম হঃ বাঙালী মজুরের অভাব এবং দ্বিতীয় হ£ বাঙালী মজুধরা বেশী পারিশ্রমিক নিলেও কাজ করে অপেক্ষাকৃত কম। বাঙলার গ্রামাঞ্চলে ইদানীং দাঙালী মাঝি, মুচি, মেখর, ধোপা, নাপিত ইত্যাদির সংখ্যা হাতে গুণে বার করা যায়৷ এপব বুত্তির অধিকাংশই এখন অবাঙালীর হাতে রিক্সাচালকের পেশাদ উদ্ধাপ্তরা কিছু সংখ্যায় আত্মশিগেগ করলেও পশ্চিম দিনাজপুর এনং জলপাইগুড়ির মফস্বলের ছোট ছোট শহরেও কাজ যুলত অবাঙালীদের হাতে।

বিহার, উড়িষ্ঞা এবং আসাম প্রমুখ বাঙলার প্রতিবেশ প্রদেশসযূহের সরকারী চাকরী বা লাইসেন্স, পারমিট, কনট্রাক্ট ইত্যাদি সরকারী প্রপাদপুষ্ট পেশায় বাঙালীদের প্রাধান্লাভের আর কোন সম্ভবনা নেই। এসব প্রদেশের ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্তরা সবশক্তি প্রয়োগে প্রচেষ্টায় বাঁধা দেবেন ; কারণ এর সঙ্গে তাদের অন্তিত্তের প্রশ্ন জড়িত কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কিছুসংখ্যক চাকরী জনসংখ্যার অনুপাতে পেলেও বাঙালী মধ্যবিস্তদের বিপুল চাহিদার তুলনায় তা নগণ্য বাঙালী ছাত্ররা যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা করতে পারছে না, তো! সকলেই জানেন আর পারলেও এতে কয়জনের সমস্যার সমাধাশ হবে?

অদূর ভবিষ্যতে যে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত হিন্দু মধ্যবিত্তরা সেখানে ফিরে

বাঙালী মধ্যবিত্তের ভবিষ্যৎ ৩৯

যেতে পারবেন, এরকম কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং পুর্বধঙ্গে যে কয়জন হিন্দু মধ্যবিত্ত আছেন, তাদের এদিকে চলে আসার আশঙ্কাই অধিক আর কোন মতে মাটি কামডে থাকার কথ! ভাবলেও সেখানে মধ্যবিত্তরূপে তাদের বীচায় পথ কোথায়? পূর্বপঙ্গ সরকারও ক্রমশঃ কৃষি থেকে মধ্যম্বত্্‌ বিলোপের ব্যবস্থা করছেন এবং এইসব আইনের প্রথম শিকার হবেন হিন্দু মধ্যবিত্তরা

পশ্চিমবঙ্গে জমিদারী প্রথা আর পুনঃপ্রন্নতিত হবে না এবং ভাগচাষী জমিতে প্রত্যক্ষভাবে কৃষিকর্ম করে ফসল উৎপাদনকারী কৃষি শ্রমিক ইত্যাদিদের অধিকারও ক্রমশ: বৃদ্ধি পেতে থাকবে যে-কোন দলের সরকারকে নিজ অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য এই ক্ষেত্রে ক্রমাগত প্রগতিশীল আইনকানুন তৈরী করতে হবে

পূর্বেই দেখান হয়েছে যে উৎ্পাদনযূলক শ্রমের সম্পর্ক-রহিত কেবল চারু- চর্ামূলক জ্ঞানাধারিত আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার অতি-অন্ুশীলনের ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে এবং প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা বজাষ রেখে সংখ্যা হ্রাসের কোন উপায় নেই |

বাঙলার বুৎ বাবসায়-বাণিজ্য যে অবাওগালীদের করায়ত্র-_-একথা সর্বঙ্জন- বিদিত। অদূর ভবিষ্যতে এক্ষেত্রে বাঙালীদের প্রাধান্যের কোন আশা নেই মূলধন, অভিজ্ঞতা এবং সংগঠন শক্তির অভাব এক্ষেত্রের কায়েমী স্বার্থ শী বাঙালীকে এখানে মাথা তুলতে দেবে না। ছোটখাট দোকান বাবাবসায়ের অবস্থাও খুব আশাবাঞ্চক নর শহরাঞ্চলের কথা বাদ দিলেও পল্লীবাঙলার প্রত্যন্ত প্রদেশে এইসব বাণসায় ক্রঘশঃ অবাঙালীদের কুক্ষিগত হয়ে যাচ্ছে, তা চোখে পড়ছে

তাহলে কঃ পশ্থা ? এইবার একটি নিষ্টুর সত্য উচ্চারণ করতে হবে কথাটি যতই অশ্রিয় হোক এবং উটপাখির মত অলীক আশার বালুকান্ডুপে মুখ গুজে যথার্থ অবস্থাকে যতই আমরা অস্বীকার করার চেষ্টা করি না কেন, নগ্ন সত্য হচ্ছে এই যে মধ্যবিত্ত হিসাবে বাঙ।লী মধ্যবিত্তের সামনে কোন ভবিষ্ুংই নেই অর্থনীতির বর্তযান কূপ বজায় থাকলে সংখ্যার অতিবুদ্ধির কারণে মধ্যবিত্তদের জীবনরসের অভাবে শুকিয়ে মরতে হবে উৎপাদক শ্রেণী, অর্থাৎ কৃষক-মজুররা অধিকতর পরিমাণে শোষণের ভার সহা করতে অপারগ আর উৎপাদকর! বদি মার্কপীয় পদ্ধতি গ্রহণ করে, তাহলে তা'র। তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্ মরিয়া

৪০ বাঙল! বাঙালী

হয়ে অবশেষে ধনিকদের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবিভুদেরও কাধ থেকে ফেলে দেবে দ্বিতীয় পন্থাতেও মধ্যবিত্তদের নিষ্কৃতি নেই--শ্রেণীপংগ্রামের রক্তাক্ত বিপ্লবের প্রবাহে তাদের অস্তিত্ব মুছে যাবে অর্থাৎ মহাকাল মধ্যবিত্ত বাঙালীর কপালে মৃত্যু-পরোয়ানা অঙ্কিত করে দিয়েছেন

কিন্তকোন ভবিষ্তংই নেই কি? আছে, তবে তা মধ্যবিদ্ত হিসাবে নর়। মধ্যবিতদের শ্রমিক সমাজের মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে হবে অথাৎ গান্ধীজী যাকে শ্রেণী পরিবর্তন বলতেন, বাচতে হলে মধ্যবিত্তদের সামনে ত৷ ছাড় গশ্যস্তর নেই শ্রেণীহীন সমাজ গঠন করা আজ আপ মুষ্টমের আদর্শবাদ-পাগলদের অলস কল্পনার বিষয় নয়; কালের দাবী এ। আর সমাজে যদি একটিমাত্র শ্রেণী থাকে, তবে নিঃসন্দেহেই তা হবে উৎপাদকদের শ্রেণী। কারণ এই একটিমাত্র শ্রেণীরই অন্য-নিরপেক্ষভাবে জীবিত থাকার ক্ষমতা আছে। তাই মধ্যবিত্রদের সময় থাকতে প্রাচীরের লিখন পাঠ করে নিজেদের ভিতর যুগোপযোগী পরিবর্তন মংসাধন করতে হবে মজুর হওয়া এখন আর কোন দখাদাক্ষিণা দেখানর ব্যাপার নয়, নিছক জৈব অস্তিত্ব বজার রাখার জন্যই আজ মধ্যবিনুদের শ্রমিক সমাজে বিলীন হতে হবে। প্রসিদ্ধ গান্ধীপন্থী মনীষী ধীরেন্দ্র মজুমদার মহাশয়ের কথায় বলতে গেলে, “মধ্যবিত্রদের সম্মুখে এবার কর্তব্য নির্ধারণের অন্তিম লগ্ন সমুপস্থিত। কাপড় চোপড় নোংরা হযে যাবে--এই আশঙ্কায় তারা যদি দ্বণায় নাপিক! কুঞ্চিত করে উতৎ্পাদনমূলক শ্রম থেকে দুরে থাকেন, তবে যে ধোঁপ-ছুরস্ত কাপড় বাচাবার জন্য তাদের আপ্রাণ চেষ্টা, তাঁদের সে কপিড তাদেরই শরীরের রক্তে লাল হয়ে যাবে নিজের রক্তপা 5 করার চেয়ে মাঁটি কাণা মাখা নিশ্চয় অপেক্ষাকৃত সহজ কাধ ।”

গান্ধী-শিষ্ত বিনোপাজী তার ভূদান-যজ্জ আন্দোলন দ্বারা মধ্যবিত্ুদের এক মহৎ উপকার সাধন করছেন বর্তঘান ভারতে কেবল বাঙাল মধ্যন্ত্ত নয়, সমগ্র দেশের মধ্যবিত্ত সমাজের ক।ছে বিনোবাজীর চেয়ে বড স্হৃদ আর কে নেই, প্রেম শাস্তির পথে তিনি আথিক সাম: প্রতিষ্ঠা করার জন্ত ভূদান, গ্রামদাঁন, সম্পকিদান, বুদ্ধিদান শ্রমদান ইত্যাদি কার্ধক্রম দ্বারা একদিকে শ্রেণীসংঘর্যমুলক হিংশ্র আন্দোলনের সম্ভাবনা লোপ করে মধ্যবিত্তের অস্তিত্ব

বাঙালী মধ্যবিত্তের ভবিষৎ ৪১

রক্ষা করার পথ করে দিচ্ছেন এবং অন্যদিকে মধ্যবিত্তদের থীরে) ধীরে শ্বীয় জীবন পরিবর্তনের সুযোগ দিচ্ছেন। অনেক দিনের অভ্যাসের ফলে মধ্যবিত্ুদের পক্ষে এক ঝটকায় শ্রমিক হওয়া অসম্ভব গ্রামদাঁনের পথে কুড়ি ভাগের এক ভাগ থেকে শুরু করে ক্রমে ক্রমে সমস্ত সম্পত্তি সমাজের কর্তৃত্বাধীনে আনার কার্ধক্রম থাকায় মধ্যবিত্ত সমাজ জীবনপরিবর্তনের জন্য বেশ কিছুটা স্থযোগ পাচ্ছে। ইতিহাস এর চেয়ে বেশী স্থযোগ মধ্যবিস্তদের দেবে বলে মনে হয় না।

প্রশ্ন উঠতে পারে যে তাহলে যে শিক্ষা সংস্কৃতির জঙ্যা মধ্যবিভ্তদের স্বর্ণ যুগের অভ্যুদয় হয়েছিল, মজুর হয়ে তা কি বিসঞন দিতে হবে? তা ছাড়। মধ্যবিত্তদের দ্বাব সংস্কৃতির চর্চা হবার ফলে মানব সভ্যতাও তো এক কদম এগিয়ে গিয়েছিল। সবাই মজুর হলে সভ্যতার বিকাশের পথ অবকুদ্ধ হবে নাকি? এর জবাবে বল হবে “য গান্ধীজী কর্তৃক কল্পিত মজুর আজকের শ্রমিকদের মত বুদ্ধিস্গার সম্পর্করহিত হবে, একথা ধরে নেবার কোন লঙ্গত কারণ নেই। গান্ধীজীর লক্ষ্য ছিল বুদ্ধিজীবী এবং শ্রমজীবী নামক দুটি কৃত্রিম শ্রেণীর বিভাজন বিলুপ্ত করে বুদ্ধিযুক্ত শ্রমিকের এক শ্রেণী প্রবর্তন বরা আজকের শ্রেণীবিভাজনকে এই জন্ত কৃত্রিম বলা হচ্ছে যে প্রথা প্রকৃতিধর্ম- বিকুদ্ধ। প্রকৃতির এক অলঙ্ঘা নিষএই হচ্ছে এট যে প্রকৃতি অপ্রয়োজনীয় জিশিদকে ম্বতঃই বঞ্জন করে। বুদ্ধিজীবী শ্রমজীবী নামক ছুই শ্রেণী যদি প্রকৃতির কাম্য হত, তাহলে প্রকৃতি এক দল মান্ু্কে কেবল মস্তি দিনে এবং অপর দলকে পেশী দিয়ে পৃথিবীতে পাঠাত। কিন্তু প্রতিটি ব্যক্তির মস্তিষ্ক পেশী থাকার অর্থই হচ্ছে এই যে, প্রত্যেকেরই উভয়নবিধ বৃত্তির বিকাশ সাধন করাই প্রকৃতির উদ্দে্ত। এই বুত্তিদ্বয়ের বিকাশের পারম্পরিক হারে মানুষের ভিতর উনিশ-বিশের তারতম্য হতে পারে ; কিন্তু ছুটিকে একেবারে আলাদা করে দেওয়া প্রকৃতির ধর্ম নয়। বিজ্ঞান-দৃষ্টিতে সমৃদ্ধ গান্ধীজী প্রকৃতির এই মূল সত্যের প্রতি দৃষ্টি রেখেই তার নৃতন শিক্ষা পরিকল্পনা বা নঈ-তালিমের প্রবর্তন করেছিলেন বর্তমানে অনেক জাযগায় গান্ধীজীর নাম দিয়ে যেসব বুনিয়াদী বিছ্যালয় চলছে, তা দেখে গান্ধীজীর শিক্ষাদর্শের বিরূপ সমালোচনা করলে চলবে না। এগুলি আদর্শের বিকৃতি গাম্বীজীর লক্ষ্য ছিল উৎপাদনমূলক কর্মের মাধ্যমে শিশুকে জ্ঞানদান করা এবং শিক্ষাকাল থেকেই সহযোগিতামূলক জীবন- চ্ধার মাধ্যমে তাকে এক শোষণবিহীন অহিংস সমাজের নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা সরকার গাঞ্ধীজীর শিক্ষা পরিকল্পবার এই সামাজিক বিপ্লা সংসাধনের

৪২ বাঙল] বাঙালী

আদর্শ গ্রহণ না করে কেবল তার বাহ কাঠামোকে স্বীকার করায় এই বিরুতি দেখা দিয়েছে ফলে সরকারী বুনিয়াদী বিষ্যালয়গুলি চারুচর্চাযূলক শিক্ষা বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা__এতছু ভয়ের কোন সদ্গুণই পায়নি, উভয়ের ক্রুটিই এর মধ্যে দানা বাধছে। গান্ধীজী চারুচর্চাযুলক নিছক জ্ঞানান্ুশীলন এবং বৃত্তিযূলক “কেজো' শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছিলেন মানুষের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের উদ্দেশ্যে মস্তিষ্ক পেশীর যুগপৎ সমান স্ফুরণের জন্য তিনি কর্মের মাধ্যমে জ্ঞানাজনের কথা বলেছিলেন। উপযুক কল্পনাশক্তি নিষ্টাযুক্ত কর্মীর অভাবে এযাঁবৎ এক্ষেত্রে অনন্ত উল্লেখযোগা প্রগতি হানি নিষ্ঠা আন্তরিকতার সাহায্যে তার নঈ- তালিমের আদর্শকে বাস্তবে বশায়ণ করার দ্বারা স্ুুসংস্কৃত মানুষ গডার কর্তব্যে নেতৃত্ব গ্রহণ করার ব্যাপারে মধ্যবিত্তর1! এক গুরুত্পূর্ন ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেন

গাক্দীজী কথিন নিকেন্দ্রিত অর্থনীতিও মধ্যবিত্রত্দের পক্ষে খুবই অনুকূল হবে। প্রথমতঃ নেকাঁর সমস্তা সমাধানের ক্ষমতা বর্তমান ভারতে একমাত্র ক্ষুদ্রায়তন শিল্পভিত্তিক অর্থবাবস্থারই আছে ভারতের মত দ্র বর্ধনশীল দেশে ভূমি পু'জির মাথাপি? পরিমাণ এত অল্প বলে অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকা বা রাশিয়ার মত বৃহৎ যন্শিল্প আধারিত অর্ধব্যবস্থা গড়া এখানে সম্ভব হবে না এন সম্ভন হলেও তা সমীচীন হবে না যাই হোক, বিকেক্তিত অর্ধব্যবস্থার যূলাধার কুটিরশিল্লে কাঁজ করার জন্য অপেক্ষারুত কম টৈহিক শ্রমের প্রয়োজন তাই মধ্যবিত্তদের জীবিকান্বেণ এবং শ্রেণীপরিবর্তন উভয় দৃষ্টি থেকেই বিকেন্দ্রিত অর্থনীতি অত্যন্ত সহায়ক পরিগণিত হবে কুটিরশিল্পেব দ্বারা কর্মপংস্থনের জন্য পুজি প্রয়োজন অপেক্ষাকৃত কম বলে বন্ছ মধ্াবিত্ত স্বনিযুক্ত (53191101950) কারিগর হিসাবে স্বাধীনভাবে উদরান্নের সংস্থান করতে পারবেন

সংস্কারমুক্ত মন নিয়ে বাঙালী মধ্যবিত্তদের ভবিষ্তুৎ সম্বন্ধে চিন্তা করলে গান্ধী- পস্থ! ছাড়া তাদের সামনে আর কোন আশা-ভরসার চিহ্ন দেখতে পাওয়! যায় না। বুগোপযোগী মানসিক পরিধর্তন তাদের ভিতর এসেছে কি _এই প্রশ্নটি বাঙালী মধ্যবিত্রদের শুভাকাক্ষীদেব সামনে উথ।পন করে বক্তব্যের ইতি করা হল।

বাঙলা, বাঙালী বিপ্লৰ

“তুমি যাও বঙ্গে, কপাল যায সঙ্গে*__এই প্রবাদবাক্যের সত্যতা এই পোড়া বঙ্গবাধী আজ যেন মর্মে মর্মে অন্ভদ করছেন একবার নয়, কয়েকবারই তাঁরা বিপুল সংখ্যাধিক্যে যুক্রফ্রণ্ট তথা বামফ্রণ্টকে জয়যুক্ত করেছিলেন এই আশ! নিয়ে যে অন্ততঃ তাঁদের সমস্তাগুলির সমাধানের একট। মোটামুটি উপায় দেখা দেবে এবং একটি কাজচল। গোছের সৎ্"ও দক্ষ প্রশাসন-ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্ষের সাধারণ মানুষের সে আশায় ছাই পড়েছে তবে এর জন্য ক্ষোভ করে লাভ নেই। কারণ পশ্চিমবঙ্গে যে জাতীয় যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল তার পরিণতি এর চেয়ে ভাল হবে আশাও করা যায় না। আমরা অবশ্ঠ একথা বলছি না যে কোগ্নালিশন চলতে পারে নাঁ। কোঁয়ালিশন সরকার সংসদীয় রাজনীতির অন্যতম স্বীকু5 সাধন এবং মোটামুটি সমভাবাপন্ন দল শিয়ে বিশ্বের সর্বত্র সংসদীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে কোম্বালিশন চলছে ভবিষ্যতেও চলবে। কিন্ত কয়েকটি দল মনে করে যুক্তফুণ্টের মাধ্যমে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতিতে জনগণের কল্যাণ সাধন করব, আর কয়েকটি দল মনে করে ঘ্যুক্রফ্রণ্ট সরকার, সংগ্রামের হাঁতিয়ার”_ জাতীর কোয়ালিশন বেশীদিন চলতে পারে ন।।

কারণ সংসদীয় গণতন্ত্রের নীতি হল জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা সংখ্যাধিক্যের বলে লোকসভা! বা বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠর! যেসব কর্মস্থচিকে জনকল্যাণকর বলে মনে করেন তার অনুকূল আইন রচন] কর! এবং স্থায়ী প্রশাসন যন্ত্রের দ্বারা তার রূপায়ণ। এই স্থায়ী প্রশাসন যন্ত্র বা আমলাদের নিরপেক্ষ এবং জন- প্রতিনিধিদের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য সহকারে সংখ্যাগরিষ্ঠটদের দ্বারা শ্বীকুত আইন- কানুন বিধি-বিধানের রূপায়ণ করতে হবে-সংসদীয় রীতির এটা একট! অপরিহার্ধ শর্ত। পক্ষান্তরে সরকারকে ধারা সংগ্রামের হাতিয়ার ব1 বিপ্রবেৎ সাধন বলে মনে করেন তাঁদের কাছে প্রশাসন যন্ত্রের নিরপেক্ষতা এক বুর্জোধা বিলাস যা বর্তমানে বিপ্লব-বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীলদের হাতিয়ার আর লোক সভা! বা বিধানপভায় ( এবং এমনকি নিজেদেরই গড়া ফ্রণ্টের মধ্যে) সংখ্য। গরিষ্ঠ হবার জন্ত ধের্য ধরে অপেক্ষ। করা বা প্রপ়্া চালানর মত সময় তাদের

৪৪ বাঙলা বাঙালী

নেই। তাছাড়া জাতীয় বুর্জোয়া! নীতিশাস্ত্রে তাদের আস্থাও নেই একমাত্র তারাই ডায়লেকটিকসের সহায়তায় ইতিহাসের গতিপথ যথাযথ বুঝেছেন এবং একমাত্র তারাই হলেণ অনিবার্ধ ভবিতব্য_-কমিউনিস্ট সমাজের অগ্রদূত বিপ্লবী স্থতরাং যে-কোন মূল্যে যে-কোন উপায়ে তাদের মত পথকে তারা ঘূর্ত করবেনই। আর ধারা এর বিরোধিতা করবেন তারা শ্রেণী-শক্র, পুজিপতি জোতদারের দালাল, শোধনবাদী, আযংলো-মাকিন (এবং ক্ষেত্রবিশেষে সোভিয়েট) সাম্রাজ্যবাদের দালাল-__ইত্যাদি ইত্যাদি এই ছুই বিপরীতধর্মী প্রবণতা নিছক কংগ্রেপবিরোধী মানপিকতারূপী কমজোর সাধারণ হ্ত্রকে অবলম্বন করে জোট বাধলে যা! হয় পশ্চিমবঙ্গের দুই যুক্তফ্রন্ট তারই জলন্ত নিদর্শন বিশেষ যখন আজ দেখা যাচ্ছে যে আত্মকলহে জর্জর কংগ্রেসী জুজুর নখ-শিং- দাত ভোতা!, নড়ধড়ে। সুতরাং আজকের অবস্থার জন্য বোধ হয় বিশেষ হা-হুতাশ করার কারণ নেই

২॥

তাহলে কি এই অবস্থাই চলবে? প্রশ্রের জবাব দেওয়ার সাধ্য বর্তমান লেখকের নেই কারণ তিনি জ্যোতিষী নন। তবে আমি কেনল এইটুকুই বলনে পারিযে অবস্থা চল] উচিত নয়__বঙ্গবাপীর স্বাঙ্গীণ কল্যাণের জন্য চল] বাঞ্ছনীয় নয়।

তবে কি কংগ্রসী শাসন ফিরে আপার কথা বলছি? আমি বললেও বিগত বি্ধানপভার দলীয় চেহারা যা ছিল তাঁতে তা! সম্ভব হত না! আর নৃতন করে কোন নির্বাচন হলেও কংগ্রেস আধার অন্ত-নিরপেক্ষ সংখ্যাগরিষ্ট লাভ করবে বলে মনে হয় না। এর যেটুকু সম্ভাবনা ছিল ছুই কংগ্রেসের জ্ঞাতি বিবাদে তা উবে গেছে এবং তা ছাড় বাঙালী সমাজের প্রবল একাংশ বর্তমান যুক্তুফণ্ট সম্বন্ধে বীতশ্রদ্ধ আশাহত হওয়া সত্বেও কংগ্রেসের প্রতি এতট1 আকৃষ্ট হয়েছে বলে মনে হয় না যার দ্বারা শতকরা ন-দশটি অতিরিক্ত ভে'ট পেরে সংখ্যাগরিষ্ট হবে। আদি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী নব কংগ্রেধীরা যতই সমাজবাদী নীতির দোহাই দিন না]কেন তাদের বহুসংখাক অন্রগ।মীদের আগার-আচরণে সমাজবাদী মূল্যবোধের ছোয়া নেই! ব্যাঙ্ক জাতীয়কবণ নিয়ে কিছুটা হৈ-চৈ হলেও এই দলের কর্মকুচি অথব! তাকে বূপায়ণের পদ্ধতির ভিতর এমন কোন মৌলিকত্ব

বাউল।, বাঙালী বিপ্লব ৪৫

নেই যা মূল কংগ্রেসের ছিল না। সুতরাং বিদ্রোহী কংগ্রেসের সমাজবাদ নিষ্ঠার ঘোষণার প্রতি খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া যায় না৷ তাছাড়া কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি দল নিয়ে কংগ্রেস যদি কোনক্রমে ক্ষমতাসীন হয়ও তবু পশ্চিমবঙ্গের সমস্যাসমূহের সমাধানকল্পে তার]! ১৯৬৭ সাল পর্যস্ত যা করেছেন তার বেশী খুব একটা কিছু করতে সক্ষম হবেন বলে বিশ্বাস করার কারণ নেই হৃতরাং সেই জোড়াতালির অবস্থাই চলবে

তাহলে কি মিনি ফ্রন্টের স্থপারিশ কর। হচ্ছে? একদ1 কেরলের মঙ 'এখানেও মার্কসবাদী কমিউনিস্ট এবং তাদের সহ্যাত্রীদের বাদ দিয়ে মিনি ফ্রুট সরকার গঠিত হওয়া অসম্ভব নয়। আর কেরলের সে মিনি ফ্রণ্ট সরকারের মত প্রশাসন চালাবার ব্যাপারে সিরিয়ান হলে পশ্চিমবগের বামফ্রণ্ট ব] যুক্তফ্রণট সরকারের চেয়ে দক্ষ অপেক্ষারুত অধিকতর জনকল্যাণ-সাধনকারী সরকার পশ্চিমবঙ্গেও চলতে পারে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সমস্যাসমূহের মৌলিক সমাধান করার ক্ষমতা মার্কপবাদী কমিউনিস্ট বজিত সেই মিনি ফ্রুট সরকারের থাকবে বলে মনে হয় না।

এইখানে পশ্চিমবঙ্গের মৌলিক সমস্াগুলি সম্বন্ধে কিঝকিৎ অবহিত হওয়া উচিত হবে। বর্তমান লেখকের মদত পশ্চিমবঙ্গের প্রধানতম মৌলিক সমস্থ হল ক্ষুধ।

ক্ষুধার মূলে রয়েছে বেকারত্ব কংগ্রেপী শাসনে বেকারত্ব দুর করার জন্য বৃহৎ, যন্ত্রশিল্প এবং সরকারী গুশাসন যন্ত্রের অশ্র্পার্দক বিস্তৃত্র উপর মিথ ভরসা করা হয়েছিল। বামক্রণট এর উপর আরও কয়েকটি মিথ্যা আশা যোগ করেছে এর অন্যতম হল বেকারভাতা দেওয়া এবং এটাও নাকি নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সাহায্যরূপী মরীচিকার উপর এই মরীচিক। স্বভাবতঃই অদৃগ্ত হবে এবং তখন কেন্দ্রীয় সাহায্যের অভাবে বেকারভাতা! প্রবর্তন না৷ করতে পারার জন্য “কেন্দ্রীয় ষড়যন্ত্রের আবিষ্কার করে কেন্দ্রীয় সরকার দখলের জন্য তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার রাজনৈতিক স্থুবিধা হয়তো বামফণ্টের কোন কোন দল পেতে পারে। কিন্তু তাতে বেকার বাঙালী যুবক-যুবতীদের পেটে একমুঠো! অন্ন পড়ার কোন ব্যবস্থা হবে না। পশ্চিমবঙ্গে ছোটবড় সব কলকারখানায় নিযুক্ত কর্মীর সংখ্যা আট লক্ষের মত এবং স্বাধীনতার বাইশ-তেইশ বছরে শিল্পায়নের গতি বহুল পরিমাঁণে বাড়লেও এর দ্বারা কর্ম সংস্থান হয়েছে মাত্র আড়াই লক্ষ লোকের ১৯৬৯ সালে বিধানসভায় শ্রমম

9৬ বাউল! বাঙালী

বলেছেন যে পশ্চিমবঙ্গে রেজিস্রীকৃত বেকারের সংখ্যাই পাচ লক্ষ এবং বেকারের আসল সংখ্যা অনেক বেশী। এই পরিসংখ্যানগুলি বিবেচন1! করলেই বৃহৎ যন্ত্রশিল্লের উপর পশ্চিমবঙ্গের বেকার সমস্যার সমাধানের জন্য ভরসা করা মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন হবে

দ্বিতীয় প্রচলিত সমাধান-পন্থা হল টেস্ট রিলিফ বা গ্রাটটাস রিলিফ এবং সরকারী বিভাগের বিস্তত্িরূপী অনৎ্পাদক পদ্ধতি খয়রাতি সাহায্য দিয়ে বাঙালীকে ভিখারীর জাতে পরিণত কপার নৈতিক সর্ববাশের কথা যদি আপাততঃ ভুলেও যাওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গের রাজন্বের অবস্থা বিবেচনা করে কোন সরকারের পক্ষেই এর জন্য ব্যয়-বরার্দ আর খুব বেশী বাড়ানো সম্ভব নয়-_ বিশেষ করে সরকারী কর্মচারীরূপী বুলবুলি বাহিনীর হোয়াজ করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজস্ব খাতে আমদানির একটা োট। অংশই যখন ব্যয় হয়ে যাচ্ছে অনুৎপাদক সরকারী কর্ষচারীদের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং তাঁদের বেতন ভাতাবৃদ্ধিতে বামফ্রন্টের কোন কোন দলের রাজনৈতিক স্বার্থ থাকতে পারে এবং 'আছেও। কিন্ত সমগ্র বাঙালী সমাজের তারা এক ক্ষুদ্র ভগ্রাংশ মাত্র এবং তাই জন- সাধারণের অর্থে এই অন্থৎপাদক শ্রেণীর ব্যাপ্তি পরিপুষ্টি নিরর্থক

সর্বশেষে উল্লেখ করলেও পরবত্ীকালে বামফ্রট সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অলীক আশার মধ্যে ভূমিহীনদের জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতির ভূমিকা সমধিক গুরুত্বপূর্ণ অন্ততঃ গ্রামাঞ্চলে এর ফলে প্রবল প্রাণচাঞ্চল্যের স্থষ্টি হয়েছে এ“ং ভূমিও পুনধণ্টন অবশ্যই বাঞ্চনীয় কিন্ত এর দ্বারা সব সমস্তারি সমাধান হয়ে যাবে এহ আশার মূল্য কতট্ুক্? ধরে নেওয়া যাক যে পুরতন আমলে জমির সিলিং আইন ফাকি দিয়ে অনেক জমি বেনামী করা হয়েছিল কিত্ত চরম আশা- বাদীও একথা মনে করেন না যে মোট লক্ষ একরের বেশী জমি এভাবে বেনামী করা হয়েছে এর সঙ্গে পূর্বতন আমলে সরকারের ন্যস্ত দেড় লক্ষ একর জমির হিসাব ধরা হল যা কংগ্রসী সরকার ভূমিহীনদের বিতরণ করেননি নি বা করতে পারেননি | সু £রাং বর্তমান সিলিং আইনের দ্বারা মোট সাড়ে সাত থেকে আট লক্ষ একর জমি সরকার পেতে পারেন যা ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ কর! হচ্ছে বা হবে। ন্মার৪ ধরে নেওয়া গেল যে পিলিং-এর পরিমাণ মাথাপিছু না করে পরিবার-প্রিছু করা হল, এর পরিমাণ পচিশ একর থেকে কমিয়ে বিশ বা পনের একর করা হল এবং আইনের অন্যান্য ফাক ক্রটও দূর করা হল। এর দ্বারা আরও দশ লক্ষ একর বেশী জমি সরকার ভূমিহীন-

বাঙলা, বাঙালী বিপ্লব ৪৭.

দর মধ্যে বিতরণ করতে পারবেন বলে কোন চরমত্ম বামপন্থী কৃষক- গান্দোলনের নেতা মনে করেন না। স্থতরাং চরমতম প্রগতিশীল ভূমি-সংস্কার মাইন করে তাকে অত্যন্ত সুষ্ুভাবে কার্ধকর করলেও যোট সাড়ে সতের বা আঠার লক্ষ একরের বেশী জমি পরকার ভূমিহীনদের জন্য পাবেন না। এদিকে পশ্চিমবঙ্গে ভাগচাধী নামমাত্র অমির মালিক সহ ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ত্রিশ লক্ষ নৃতরাং গড়ে আধ একরের কিছু বেশী জমি ভূমি-ক্ষুধায় জজর পরিবারেরা পেলে তাদের পেটের ক্ষুধা কতটা এবং কত দিন মিটবে তা সহজেই অনুমেয়

॥৩ ॥।

তাহলে বাঙালীর ক্ষুধা মেটাবার উপায় কি? মতীতে প্রাদেশিকতার নাম নিয়ে এবং বর্তমাঁনে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামের 'পিপ্লণী” জিগির তুলে পশ্চিমবঙ্গের সব সমস্যার জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করা হয় মনে কর] হয় কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের প্রদ্দি যে অবিচার করছে তার নিরসন হলেই সমস্তার সমাধান হয়ে যাবে। কেন্দ্রের যাঁনতীয় নীতি খোল আন) ন্যায়সঙ্গত, এমন কথা বলা হচ্ছে না। তবে ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশে ধাদের যাতায়াত আছে এবং সেখানকার সংবাদপত্র রাজনৈতিক কর্মী ইত্যাদিদের পণিচয় পাবার ধাদের সুযোগ হয়েছে তারাই জানেন যে ভারতের সব কটি প্রদেশেই পশ্চিমবঙ্গের মত কেন্দ্রে প্রতি দ্বার তথাকথিত অবিচার অত্যাচারের জন্য অল্লাধিক ক্ষোভ রয়েছে? অগস্তোষ কেবল পশ্চিমবঙ্গের একচেটিয়া নয়। এর থেকে একথা বোঝা যায় যে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা। করে বাঙালীর সস্তার বাস্তব কোন শ্রাহা হবে না।

অবশ্য এমন কোন কোন চরমপন্থীও আছেন ধারা মনে করেন যে কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের চা পাট কম্নলা ইত্যাদির আয়ে পশ্চিমবঙ্গের আধিক অবস্থার উন্নতিসাধন করা যায়। কিন্তু প্রশাসনিক, রাজনৈতিক প্রতিরক্ষা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছাড়াও নিছক আঘথিক দিক থেকেও পরিকল্পনা যে নিছক আত্মঘাতী উন্মাদের ব্যবস্থাপত্র, একথা যে-কোন যুক্তিণীল ব্যক্তি কি চিন্তা করলেই বুঝবেন তাই এই সম্ভাবনার কথা বিস্তারিত আলোচন। করা হচ্ছে না।

ক্তরাং ঘুরেফিরে আবার সেই প্রশ্ন _-ততঃ কিম?

৪৮ বাঙল৷ বাঙালী

বর্ধমান লেখকের মতে পিপ্নব ছাড়া শন্য কোন প্রক্রিম্নায় পশ্চিমবঙ্গের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।

এইখানে বিপ্লব? বলতে কি বোনাতে চাইছি তা৷ খুলে না বললে ভুল বোঝার অবকাশ আছে বিপ্রব বলতে নর্তমান সমাজের বিভিন্ন স্তরের পারস্পরিক সম্বন্ধে পরিবর্তন আনার জন্য নকশালপন্থীরা বন্দুকের নলকেই শক্তির একমাত্র উত্স মনে করে যে সশস্ত্র কষক অভ্ভাথানের কথা বলেন তা বোঝানে! হচ্ছে না। অখবা সাময়িক কিংবা! স্থায়ীভাবে যেপব মার্কলবাদী সংসদীয় পশ্থা গ্রহণ করেছেন তাদের অন্তিম শরণ শ্রেণীসংগ্রামের প্রতিও ইঙ্গিত করা হচ্ছে না। কিংবা উওয় কংগ্রেণ, প্রজাপমাজবাদী অথবা! সংযুক্ত সমাজতন্ত্রীদের মত গণতান্ত্রিক সমাজবাদীদের আইন প্রশাসন যন্ত্রের সাহায্যে সমাজ পরিব্র্তনের প্রক্রিয়ার কথাও বলা হচ্ছে না। কৃষকদের সশস্ 'অভ্যুথান স্বহারাদের শ্রেণীসংগ্রাম অথ।া সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্রদের ভোটের শক্তিতে ভা্দর কল্যাণের জন্য বিধিবিধান রচনা ইত্যাদি সবই--একটি লক্ষ্যপাধনের উপায় বা প্রক্রিঘা মাত্র শ্বয়ং এগুলি কোন লক্ষা নয় বিপ্লব বলতে এখানে যুল লক্ষ্য এবং তার ধ্যান-ধারণার আমূল পরিবর্তন বোঝানে। হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কোন্‌ কোন্‌ মূল লক্ষ্য এবং ধ্যান-ধারণার আমূল পরিধর্তন বা বিপ্রব চাই এবারে ভার আলোচন] করা হবে।

একটু ধীরভাবে বিবেচনা করলেই বোঝা যাবে যে সাধ্যমত পশ্চিমবঙ্গে যতই শিল্পায়ন হোক না কেন__যতই বড় বড় কল কারখান। গড়ে উঠুক বাঙালীর বেকার সমস্যার সমাধান ভাতে হবে না। পপাধ্যমত” শব্দটি দ্বার। এখানে একদিকে শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি, কলকঞ্জা কারিগরী জ্ঞান পাওয়ার সম্ভাব্যতা এবং অন্যদিকে বৃহ ন্তরশিল্প গড়ে ওঠার বা নূতন করে পুঁজি বিনিয়োগ করার উপধুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক ইত্যাদি সব কিছু বোঝানো হচ্ছে অর্থাৎ এইসব বাস্তব সীখাবদ্ধতার মধ্যে যতট] শিল্পায়ন সম্ভবপর | স্বতরাং আগামী বিশ-ত্রিশ বা চলিশ বছর পর্যন্ত কষিই হবে আজকের মত সাঁঙালীর প্রধান উপজীবিকা স্তরাং বাঙালীর কর্মশক্তির সঙ্গে সঙ্ষে তার বুদ্ধি, সংগঠনশক্তি পু'জিরও অধিকাংশ কৃষিতে শিয়োগ করতে হবে

কিন্ত পশ্চিমবঙ্গের মাথাপিছু কীষিযোগা জমির পরিমাণ খুবই কম-_আ? একরেরও কম। রাশিয়া, আমেরিকা অথবা চীনের তুলনায় পরিম।"

বাঙলা, বাঙালী বিপ্লব ৪৯

অবিশ্বান্ত রকমের কম এবং এমনকি ভারতের অধিকাংশ প্রদেশের তুলনায়ও কম। অথচ জমির উপর চাপ বাড়ছে ছাড়া কমছে না। এই স্বল্প পরিমাণ জমিতে নিবিড় (105751৩) চাষ করলেও শুধু এর উৎপাদনে কারও ভরণ-পোষণ চলা সম্ভব নয়। ম্তরাং নিবিড় চাষের জঙ্গে সঙ্গে বাগালীকে ফলের চাষ, পশ্ড মত্স্তপালন ইত্যাদিও করতে হবে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে কৃষিশিল্প-ভিত্তিক €( 2810-178150119] ) অর্থব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

স্বভাবতই সেইসব শিল্প এর আওতায় পড়বে যার কাঁচা মাল সাধারণতঃ গ্রামে উৎপন্ন হয় বা হতে পারে এবং যার ছার] উৎপন্ন পাকা মাল গ্রামেই ব্যবহৃত হয়। কাপড় তৈরী, ধান ভানা, তৈলবীজ পেষাই এবং বাঙলাদেশের বিশেষ গ্রামীণ কাচা মাল পাটের কোন কোন রকম জিনিস তৈরী ইত্যাদি এর আওতায় পড়বে এর জন্য যে-কোন স্তরের যন্ত্রকৌশলের (€০০%79198 ) সহায়তা নেওয়া যেতে পারে-_ কেবল এইটুকু খেয়াল রাখতে হবে যে গ্রামের কর্মপ্রাথী কোন মানুষকে যেন শ্রমসংক্ষেপের যন্ত্রকৌশলের জন্য বেকার না কর! হয়।

এইসব শ্রমিক-্প্রধান (19900 110091751৬6 ) মধ্যবর্তীকালীন যন্ত্রকৌশলের ( 1716911090196 (9০171191989 ) ছারা উৎপন্ন পণ্য স্বভাবতই এইসব ক্ষেত্রে প্রচলিত শ্রমসংক্ষেপকারী উচ্চতর যন্ত্রকৌশলের পস্রাহায্যে উৎপন্নপণ্যের সঙ্গে বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। স্থতরাং অধিকতম সংখ্যক বাঙালীর স্বার্থে এইসব শ্রমিক-প্রধান মধ্যবর্তীকালীন যন্ত্রকৌশ,লর সাহায্যে চালিত উৎপাদন-ব্যবস্থাকে বুহৎ ঘন্ত্রশিল্পের অসম প্রতিদ্বন্বিতা থেকে রক্ষা করার জন্ত সরকারকে প্রয়োজনীয় আইনকানুন রচন1 সংরক্ষণ করতে বাধ্য করতে হবে অনেক স্থলে উত্পাদন-ব্যবস্থায় ক্ষেত্র বিভাজন করতে হবে অর্থাৎ যে উৎপাদন- বাবস্থায় অধিকতম বাঙালীর স্বার্থ, তার বিরোধী উত্পাদন-ব্যবস্থ! আইন করে বন্ধ করে দিতে হবে।

এই জাতীয় কৃষিশিল্প-ভিত্তিক উৎপাদনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে কৃষি গ্রসঙ্গে যে-কথা বলা হয়েছে এখানেও তা প্রযোজ্য- বাঙালীর কর্মশক্তির সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধি সংগঠনশক্তি ইত্যাদির অধিকাংশ এক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে। হ্তরাং স্বভাবতই বাঙালীর শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেঞজেও বিপ্লবসাধন করতে হবে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা অথব1 দশ, এগারো! কিংবা বারো বছরের মাধ্যমিক শিক্ষার পরিকল্পনা রচনা কিংবা বিদ্যালয়ের সংখ্যা আরও

বা.-৪

৫৩ বাঁউল৷ বাঙালী

বাড়ানো-_-এর নাম শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্রব নয়। এগুলি জোড়াতালির ব্যবস্থা বাউলা বাঙালীর শিক্ষাব্যবস্থার বিপ্লব হল--যে কৃষিশিল্প-ভিত্তিক উতৎ্পাদন- ব্যবস্থায় তার বাচার পথ নিহিত, বাঙালীকে তার উপযুক্ত করে গড়ে তোল! বাউলাদেশে বছর কয়েক আগের হিসেবে দেখা গেছে, কেবল স্কুল ফাইন্যাল হায়ার সেকেওারী পরীক্ষা ॥দেয় ছু লক্ষের উপর ছাত্রছাত্রী সেই হিসেবেই যদি এর শতকরা চল্লিশ ভাগ উত্তীর্ণ হয় এবং যদ্দি তার অর্ধেকও উচ্চ শিক্ষায় বা ঘরগৃহস্থালীর কাজে যায় তবে শুধু এই পর্যায়ে উত্তীর্ণ কর্মপ্রাথথীর সংখ্যা খুব কম করে হবে বছরে চলিশ হাজার ছাড়া গ্রাজুয়েট পোস্ট-গ্রাজুয়েট ইত্যাদি কর্মপ্রার্থার সংখ্যাও কোন্‌ হাজার আট-দশ না হবে? বাওলাদেশের অর্থব্যবস্থাকে চরমতম সমাজবাদী ছীঁচে ঢাললেও বছরে এই আটচলিশ বা! পঞ্চাশ হাজার কর্মপ্রার্থার জন্তা বাবুদের কাজের ( ৬/17109-০91981 1০৮ ) সংস্থান সম্ভবপর নয় আর এই জাতীয় শিক্ষা সর্বব্যাপক বা এমনকি আরও কিঞ্চিৎ প্রসারিত হলে সমস্যা আরও কত গুণ বাড়বে তাও চিন্তনীয় |

অতএব বাচতে হলে বাগঙালীকে শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্রবসাধন করতে হবে। অর্থা২ এমন শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে যাতে আজকের "শিক্ষিত, যুকদের মত গায়ে রোদ জল কাদা আগুনের আচ লাগানোতে অনীহা ন] থাকে যাতে বাঙলার ভবিষ্যৎ অর্থনীতির পক্ষে প্রয়োজনীয় বুদ্ধিমান উতৎ্পাদক হতে পারে তার যুব-সম্প্রদায়-_এমন শিক্ষান্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। স্বভাবতই কেতাবী জ্ঞান অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার সধস্তরে কৃষি শিল্প হবে শিক্ষার মাধ্যম যাতে শিক্ষা-শেষে হা চাকুরী হা চাকুরী করার পরিবর্তে অধিকাংশ বাঙালী যু'ক ঘুৰৃতী স্বাধীন (৪০17-97021950 ) কৃষক বা শ্রমিক অথবা ছুই-ই হুতে পারে

বাঙালীর রাজনীতি সংস্কৃতি

পি. ডি. এক. মন্ত্রীসভার সময়কার কথা। ট্রামবাস সে সময় যখন তখন বন্ধ হয়ে যেত ( এবং এখনও যে হয় না তা নয়)। এমনি এক দিনে সন্ধ্যার সময় কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরছি মাঝপথে বাঁস বন্ধ হয়ে যাবার জন্য মাইল আড়াই পথ হাটতে হচ্ছে এমন সময় এক শোভাযাত্রার নিকটবর্তী হলাম।

কলকাতা শহর শোভাযাত্রার নগরী এবং বিশেষ করে সে সময় জনমতের বড় একটা অংশ প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকার বরখাস্ত হওয়ার জন্য প্রতিবাদমুগর | তাই অসংখ্য শোভাযাত্রা বেরোয় যত্রতত্র সেটিও ছিল সেই রকম এক শোভা- যাত্রা একদল (5০7-8£6৫ অর্থাৎ বছর কুড়ির মধ্যে ধয়সের বালক-বালিকা একটি সুপবিচিত বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের ফেস্টুন নিষে আকাশের দিকে ঘুষি পাকিয়ে সোগান দিতে দিতে এগিয়ে আগছে। কিন্ত নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারলাম না আমি তাই মনোযোগ দিয়ে ওদের শ্পোগান শুনলাম তদানীন্তন রাজ্যপাল মুখামন্ত্রীকে গালাগালি দিচ্ছে ওরা এবং সে গালাগালি অভিধান বহিভূতি অর্থাৎ অশ্লীল ভাষায় !

যুক্তফ্রণ্ট মন্ত্রীসভাকে বাতিল করে পি. ডি. এফ: শন্ত্রীসভার হাতে শাসনভার দেবার জন্য রাজাপাল সেই দলের নেতার প্রতি ক্রুদ্ধ হওয়া এবং প্রকাশ্ডে প্রতিবাদের মাধ্যমে সেই ফ্রোধকে ব্যক্ত কর! আমি বুঝতে পারি আর আমি এটা গৌড়। নই যে এই বয়সের ছেলে বা মেয়েদের মুখে ছু দশটা অভিধান- বহির্ভূত শব শুনতে পেলে অচৈতন্য হব। বয়সকালে নিজেদের মধ্যে আমরা ওরকম বলেছি এবং বর্তমান ভবিষ্যতের ছেলে মেয়েরাও নিজেদের মধ্যে ওসব শব্দ ব্যবহার করতে পারে কিন্তু যা আমাকে হতবাক করল তা হচ্ছে বয়সের ছেলেমেয়েদের একত্র নম্মিলিতভাবে এসব শব্ধ উচ্চারণ করা এবং তাও আবার প্রকাশ্ঠ রাজপথে শত শত পথচারী নর-নারীর সমক্ষে

জনৈক শ্রদ্ধাভাজন অধ্যাপককে পরে ঘটনাটির কথা জানিয়ে এর পিছনে যে মানসিকতা কাজ করছে তার উপর আলো।কপাঁত করতে অনুরোধ করেছিলাম তিনি বললেন এক বিশেষ রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য--“বিপ্লব” সাধনের হাতিয়ার

৫২ বাঙলা] বাঙালী

ওরা। শ্রদ্ধা সমীহ ইত্যাদি সদর্থক (995161৮০ ) অথবা লজ্জা! সঙ্গোচ ইত্যাদি নেতিবাচক--এর যে-কোন শ্রেণীর মানসিকত্চার প্রভাব থাকলে যুবক-যুবতীর! 'আর বিপ্লবের হাতিয়ার হতে পারবে না। স্থতরাং যাবতীয় পুরাতন মূল্যবোধ উড়িয়ে পুড়িয়ে দিয়ে ওদের বিপ্রবের উপযুক্ত নৃতন যুগের নর-নারীতে পরিণত করার সচেতন প্রয়াস এ।

অধ্যাপক মহাশয়ের বক্তব্যে নিঃপন্দেহে চিস্তার খোরাক আছে সেই বিশেষ দল বা লগুলির কাজ্কষিত *বিপ্রবগ হবে কি হবে না এবং হলেও কবে হবে তা আমি জানি না কিন্তু কোন রাজনৈতিক দল যদি এইভাবে ছেলে- মেয়েদের তাদের বিরোধীদের উদ্দেশে প্রকাশ্তে অঙ্সীল উক্তি উচ্চারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উত্পাহিত করেন তাহলে নগদ লাভ হয় এইটুকুই যে এঁ জাতীয় আচরণ জলচল হয়ে পড়ে এবং যে বাঙালী সংস্কৃতির জন্য আমরা সঙ্গতভাবেই গৌরব বোধ করি, তার মূলে কুঠারাঘাত করা হয়।

আবার বুম্যেরাং-এর মত কখনও কখনও রাজনীতিতে গালাগালি প্রয়োগের এই প্রক্রিয়া! নিজেদের উপরই ঘুরে আঘাত করে “ক” নামক দল “খ” নামক দলকে মাকিন বা পু'জিপতির দালাল বললে, “ও ছেড়ে কথা কইবে না বলবে “ক” বুশ বা! চীনের দালাল ক্রমাগত এইভাবে প্রচার হতে থাকলে ক্রমশ: সাধারণ মান্ষ মনে করবে যে উভয় দলই কোন না কোন পক্ষের দাল[ল।

কিন্ত প্রকৃতির পরিহাস এর থেকেও মারাত্মক রূপ ধারণ করে। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কমিউনিস্টরা যেস্ব গালাগালি প্রয়োগ করতেন কমিউনিস্ট দল দুই ভাগ হবার সময় থেকে অগ্যাবধি মার্কপবাদী কমিউনিস্টর] যূল দলের গুরুদের উদ্দেশে সেইসব এবং তার চেয়েও বেশী অশোভন উক্তি প্রয়োগ করেছেন তবে গুরুমার! বিগ্যায় এর থেকেও বড় কেরা'মতী দেখিয়েছেন মার্কসবাদী কমিউনিস্ট দল ত্যাগ করে ধারা নকশালপন্থী হয়েছেন তারা গুরু মাঁকসবাদী কমিউনিস্টদের প্রতি এইসব শিষ্ত নকশালপন্থীরা যেসব ভাষ! প্রয়োগ করছেন তা পৃথিবীর কোন্‌ নমাজে চলে কে জানে ?

এবং এসবের সম্মিলিত পরিণাম হচ্ছে এই যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি খিস্তি- খেউড়ের আখড়া হচ্ছে৷ অর্থাৎ জনজীবনে অভব্যতা৷ অশালীনতার আমদানী হওয়াষ সাংস্কৃতিক মান হচ্ছে অধোগামী আধুনিক কালে রাজনীতিও লমাজের এক অপরিহার্য কৃত্য, জনজীবনের সঙ্গে এর অন্তরঙ্গ সন্বন্ধ। সৃতরাং এক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অপহ্ৃব ঘটলে সমগ্র সমাজে তার প্রভাৰ পড়তে বাধ)।

বাঙালীর রাজনীতি সংস্কৃতি €ও

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির দ্বিতীয় প্রবণতা সমাজবিরোধী মস্তানদের প্রবল প্রভাব প্রায় অধিকাংশ দলেই এইসব শ্রেণীর লোকের! দ্বিতীয় পর্যায়ের নেতার আসন তো নিয়েইছেন, কোথাও কোথাও প্রথম পর্যারের নেতার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বা হতে যাচ্ছেন

সমাঁজবিরোধী সব দেশে সব কালেই অল্লাধিক থাকে কিন্তু বাঙলাদেশে এরা বিশেষ করে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবদান, যখন যুদ্ধের দৌলতে নানাবিধ পিছনের দরজার পেশার প্রাবল্য ঘটে | যুদ্ধের শেষে এই শ্রেণী প্রায় বেকার হয়ে আসছিল এমন সময় ১৯৪৬ পনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এদের কেবল বিস্তৃতিই ঘটাল না, এই শ্রেণীকে একটা 19599119111 বা অর্ধাদা দিল। আত্মরক্ষার জন্য সাধারণ বাঙালী এদের শরণ নিল এবং ছুরি লাঠি যুদ্ধের দৌলতে পাওয়া বন্দুক স্টেনগান নিয়ে সাধারণ মানুম্নকে নিরাপত্তা দিল এর1। কিন্তু পৃ্থবীতে কোন কিছুই দাম ন! দিযে পাওয়া যায় না তাই এই নিরাপত্তার বিনিময়ে এইদব “পাড়ার ছেলেদের” পাভার নেতৃত্বের মর্ধাদাও দিতে হল। পরবর্তীকালে পেট্রোল বোম ইত্যাদিও এদের অস্ত্রাগারের শক্তিবৃদ্ধি করল এবং যুদ্ধকালীন পেশ! ছাড়াও ওয়াগন ভাঙা থেকে শুরু করে চৌথ জিজিয়া মাথট ইত্যাদি আদায় করা এনং আরও শতবিধ অন্ধকারের রাজ্যের পেশা এদের রসদ জোগাতে থাকল

এইসব পপাঁড়ার ছেলে* আর বনু ছেলেকে তাদের গ্যাং-এর সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত করায় এবং এদের সহায়তায় নিজেদের ভোট জোগাড় করা শাসিয়ে অপরের ভোট ভাঙানো সহজ বলে প্রথমে নির্বাচনের সময় এবং তারপর সব সময়ই এর প্রায় সব রাজনৈতিক দলেই ভিড়ে পড়ল কি কংগ্রেস কি কংগ্রেসবিরোধী বামপন্থী দলসযৃহ-_সর্বত্র এদের মর্ধাদ1!। এরা বিধান- সভার সদস্য হল এবং কংগ্রেস বামপন্থী নিধিশেষে সব মন্ত্রীৰভাতেও স্থান করে নিল।

এদের প্রভাবে কেবল পাড়ার আবহাওয়াই দুষিত হল না, সংসদীয় রাজ- নীতি এবং প্রশাদন যন্ত্রেও গ্লানির ম্পর্শ লাগল এদের কেউ সমাজবিরোধী কাজ করলেও বনু ক্ষেত্রে পুলিশ নিরুপায় কারণ কোন না কোন দলের নেতার চাপে পুলিশকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ছেড়ে দিতে হয়, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হয়। পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলার অধো- গতির একট! বড় কারণই শুধু এইসব রাজনৈতিক দলের পক্ষপুটে আশ্রয়প্রাপ্ধ

৬৪ বাঙলা বাঙালী

সমাজবিরোধীর] নয়,_এদের সামনে সরকার সমাজকে অসহায় দেখে সাধারণ বাঙালীর নৈতিক এবং তার সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক মানও নিম্নমুখী হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল গায়ের জোরের প্রবল প্রতাপ বা হিংসার প্রাবল্য একটু কিছু হলেই ট্রাম বাস পোড়ানো বা বন্ধ করা এখানকার নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা হরতাল বন্ধ এখানে লেগেই আছে এবং প্রচ্ছন্ন প্রকাশ্ শাপানি না থাকলে এইসব তথাকখিত “সম্পূর্ন ফল সবাত্মক ধ্ঘট হরতালের” কযটিতে জনসাধারণ শ্বেচ্ছায় যোগ দিতেন তা জানার জন্য বিশেষ গবেষণার প্রত্নোজন হয় না।

কিন্ত এখানেই এর শেষ নয়। সম্প্রতি শ্রেণীপংগ্রামের নামে এর থেকেও মারাআ্বক ঘটনাটি ঘটছে বাওলার রাজনৈতিক জীবনে লুকানে। জমি বার করা, অত্যাচারী জোতদারকে অথণা পুজিপতির দালালকে শাসেস্ত। করা ইত্যাদির নামে নরহত্যা সংঘটিত হচ্ছে। কার কতটা জমি বেআইনীভাবে লুকানো অথবা কোন্‌ জোতদার বা কারখানার ম্যানেজার কার উপর কত্ট] অত্যাচার করেছে তার খিচারক লুঠন- অগ্নিসংযোগ- হত্য1-কারী ব্যক্তিরাই ! এইরকম আস্থা যদি অপ্রতিহতভাবে চলতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে জঙ্গলের যুগের পুনরাবিভাণ্রে আর দেরী নেই। আর রাজনীতির ক্ষেত্রে অন্ধকার যুগ নামলে সামাজিক সাংস্কৃতিক জীনে তার ছোয়া লাগবে না--এমন কথা কেউ নিশ্চয় বলবেন না।

শ্রেণীসংগ্রামের নামে যেসব হিংসাত্মক্ক কার্ধকলাপকে রাজনীতির ক্ষেত্রে জাতে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে তার সুদ্ররপ্রপারী সাংস্কৃতিক পরিণাম সম্বন্ধে আরও কিছুটা ভেবে দেখা প্রয়োজন শ্রেণীসংগ্রামের তত্ববেস্তারা এই জাতীয় হিংপাকে সাধারণ হিংসা থেকে পৃথক করে এর নাম দেন 1০৬910199979 বা বিপধী হিংসা কিন্তু যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন লাঠি ছুি বন্দুক বোমার স্বধর্ম তাতে পান্টায় না। এর যৃল কথা হল £ যুক্তির বলে নয়, আঘাত বা ম্বতার ভয় দেখিয়ে অস্তপ্ররোগকারীর বক্তব্য মানতে আর সবাইকে বাধ্য করা ইবে। এই প্রক্রিন্নায় জয়ল!ভ করে অস্ত্রপ্রশ্নোগকারীর মতবাদ নয়, তার অস্ত্র।

আঁর একটি কথা। “বিপ্রবী হিংপা”্র তত্ববেতত! যত বড় আদর্শবাদীই হোন, অস্ত্রশস্্ প্রয়োগে নরহত্যার কলায় কুশল না হলে তার “বিপ্রবী হিংস।” কার্ধকর হবে না। মে-কোন খিগ্ভার মত অস্ত্রগালনাও শিখতে হয় এবং

বাঙালীর রাজনীতি সংস্কৃতি ৫৫

নরহত্যা করতে হলে তার উপযুক্ত একটা মানসিকতা গড়ে তুলতে হয় হঠাৎ কোন আদর্শবাদী অথবা বুদ্ধিজীবী অস্ত্র পেলেও তা মানুষের উপর প্রয়োগ করতে পারবেন না। সুতরাং এই “বিপ্রবী হিংসার” ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব নেবে অস্ত্র চালাবার টেকনিক বা কৌশল মানসিকতায় পারক্ষম ব্যক্তিরা, স্বভাবতই সাধারণভাবে আদর্শধাদী বুদ্ধিজীবীদের এখানে কোন স্থান নেই। এই প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক নেতা হচ্ছে অস্ত্র চালানোর কৌশল মানসিকতায় দক্ষ সমাজবিরোধীরা

তাছাড়া “আমরাই একমাত্র শোষিত শ্রেণীর প্রতিনিধি সাচ্চা বিপ্লবী দল” “শ্রেণী-সংগ্রামের হাতিয়ারে আমাদেরই একচেটিয়া অধিকার”-_-একথা সবাই নিধিচারে মেনে নিতে পারে না এবং নেয়ও না। সমাজে ছুই বা ততোধিক “শোষিত শ্রেণীর একমাত্র প্রতিনিধি সাচ্চা বিপ্রবী” যে থাকতে পারে তার নিদর্শন হল পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক দলসমূহ শ্রেণীপংগ্রামের নীতি অন্থপারে এইসব “শোষিত শ্রেণীর একমাত্র প্রতিনিধি সাচ্চা বিপ্লবী? দলগুলির পরস্পরকে বরদাস্ত করার কথা নয়। অতএব শ্রেণীসংগ্রামের তত্ব তার পরিণাম স্বরূপ “শ্রেণী-শক্রকে” খতম করার নীতি স্বীকার করলে বাংলা দেশে গৃহযুদ্ধ ছাড়া অপর কোন পন্থা যে নেই-_একোন তাত্বিক কথা নয়, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির বর্তমান গতি-প্রকৃতির দিকে তাকালেই তা চোখে পড়বে!

রাজনীতিতে গায়ের জোর বা হিংসার প্রাবল্যের অপর একটি দিক হচ্ছে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন কোটি কোটি বাঁঙালীর ভীরু হয়ে পড়া--কোন কথা বা কাজ সত্য মনে হলেও তা বলা বা করার সাহপ হারানো, কোন কথা বা কাজ অন্যায় মনে হলেও তার বিরুদ্ধে বলা সা রুখে দাড়াবার মনোবল খোয়ানো জনৈক বন্ধু সেদিন তার একটি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন বাসে এক প্রৌঢ় ভদগুলোক হঠাৎ বিগত এক সাধারণ ধর্মঘটের বিরোধিতা করেন এই বলে যে এতে ছোটগাট ব্যবসায়ী, দিনমজুর ইত্যাদির ক্ষতি হ্য়। ভদ্রলোকের কথা শুনে বাসেরই সহযাত্রী একদল যুবক তার প্রতি নিতান্ত মারমুখী হয়ে ওঠেন। তারা সেই সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থক ছিলেন আমার বন্ধুটি বললেন যে তারপর সেই যুনকদল প্রো ভদ্রলোকের প্রতি এমন অনব্য ব্যবহার করলেন যে তাকে বাধ্য হয়ে গন্তব্যস্থলে পৌছাবার পূর্বেই বাস থেকে নেমে পড়তে হল এবং তার থেকেও চিন্তাজনক ব্যাপার হল এই যে

৫৬ বাউল! ধাঁঙাঁলী

সেই অসহিষুঃ মারমুখী যুবকদের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করার সাহস কারও হল না। বন্ধুটি ক্ষোভ সহকারে স্বীকার করলেন যে সে সাহস তারও হয়নি এবং তাঁর পাশে উপবিষ্ট অপর এক সহ্যাত্রীর দৃষ্টিতে ঘটনাটি নিন্দাজনক এই ছাপ দেখ! সত্বেও তিনিও তার প্রতিবাদ করে সেই আপন মত ব্যক্তকারী প্রোঢের বাকৃস্বাধীনতার অধিকার বা সম্মান রক্ষা করতে পারেননি অথচ আমার সেই বন্ধুটি উচ্চশিক্ষিত এবং সংস্কৃতিসম্পন্ন বুদ্ধিজীবী নিঃসন্দেহে বাসে আরও অনেকে তার মত বুদ্ধিজীবী ছিলেন। কিন্তু উদ্ধত অসহিষ্ণুতা কাছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এইভাবে লাঞ্ছিত হল এবং সাধারণ মানুষ ভয়ে অন্তায় কাজের প্রতিবাদ প্রতিরোধ করতে পারলেন না। এটা অবশ্য একটা চরম উদাহরণ তবে রাজনীতিতে ভয় সন্ত্রাসের রাজত্ব পশ্চিমবঙ্গে বেশ চলছে এবং জোর করে দলবিশেষের জন্য “্ঠাদ1” নেওয়া, ধর্মঘট হরতালে যোগ দিতে বাধ্য কর! ইত্যাদি তো চলছেই, এর সঙ্গে সঙ্গে কোটি কোটি সাধারণ বাঙালী যারা কোন দলেরই সক্রিয় সমর্থক নয় তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাও কুন্ঠিত। যে রাজনীতি এইভাবে কোটি কোটি মানুষকে ভীত সন্ত্স্ত করে রাখে এবং তাদের ব্যক্তিত্বের স্কুরণ ঘটতে দেয় না, সমন্বয়ের অববাহিক বেয়ে পুষ্ট বাঙালীর সংস্কৃতির সঙ্গে তার কতটা মিল আছে তা সহজেই অনুমেয় এই রাজনীতির পরিণামে বাঙালীর সভ্যতা-সংস্কৃতির যে অধোগতি হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সব বাঙালীর রুখে দাড়াবার সময় হয়েছে

পশ্চিমবঙ্গের যুববিদ্রোহ

যুব বিদ্রোহ অবশ্যই কাম্য কাম্য স্থিতাবস্থার অবসান ঘটিয়ে মানব-সমাজের প্রগতির জন্য | বৃদ্ধের (বয়সে নয়, মনের দিক থেকে) সাধারণতঃ প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তন চান ন। দৈহিক মানসিক জাড্য কায়েমী স্বার্থের জন্য তাই স্বভাবতই যুবকদের ( বয়সে নয়, মনের দিক থেকে ) বিদ্রোহী হয়ে প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তন করে মানব-সমাজকে তার বাঞ্ছিত, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের অভিমুখে কিছুটা এগিয়ে দিতে হয়। ধর্মের ক্ষেত্রে বুদ্ধ, সক্রেটিস, যীন্ত, মহম্মদ, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কোপানিকাস, গ্যালিলিও অথবা রাজনীতির ক্ষেত্রে ম্যাৎসিনি, গ্যারিবন্ডি, সান ইয়াৎ সেন, লেনিন, গান্ধী, মাও, কাস্ত্রো, চে গুয়েভার। ইত্যাদি এই যুব- বিপ্রোহের নিদর্শন এদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ যুগে স্থিতাবস্থা-প্রেমীদের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে সফল বিজ্রোহের নায়ক হিসাবে এরা শুধু নিজ দেশ বা জাতি নয়--সমগ্র মানব-সমাজকে কিছুট। এগিয়ে দিয়েছেন

কিন্ত গতি মাত্রেই মানব-সমাজের পক্ষে কল্যাণকর নাও হতে পারে। কারণ গতি ছুই রকমের-_ প্রগতি অধোগতি আজকের পশ্চিমবঙ্গে যে যুববিব্রোহ ( অথবা হয়ত যুববিক্ষোভ বলাই অধিকতর সঙ্গত) দেখছি, তা প্রগতিপস্থী না অধোগতিযূলক তা ভেবে দেখা উচিত। কারণ বিক্ষোভ মাত্রেই বিপ্রব বা আমুল পরিবর্তন নয়। আর বিপ্লবের অর্থ কেবল ভাঙা বা রক্তপাত নয়। তা যদি হত তবে আ্যাটিলা, চেঙ্গিজ খা, নাদির শাহ, গজনীর মহম্মদ অথবা ইয়াহিয়া খানই শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী হু'তেন। পরিণামে যদি এক মহত্তর মূল্যবোধ মঙ্গলজনক কল্যাণকর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হয় তবে বিদ্রোহ, বিগ্ববে পরিণত না হয়ে হয় প্রতিক্রিয়াশীলতার বাহন

এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান যুববিদ্রোহের স্বরূপ বিশ্লেষণ করা যাক। একে মোটামুটি ছুটি ভাগে ভাগ কর৷ যেতে পারে, যদিও বিভাগ হয়ত খুব

প্৮ বাউলা বাঙালী

একটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। বিভাগ ছুটি হল-_রাঁজনৈতিক শিক্ষা সম্বন্ধীয় শিক্ষাজগতের এই বিদ্রোহের মধ্যে সামাজিক আধিক বিদ্রোহের বীজও নিহিত। আর রাজনৈতিক বিদ্রোহের সক্ষে সাংস্কৃতিক বিদ্বোহও 'গতপ্রোত- ভাবে জড়িত।

রাজনৈতিক বিদ্রোহের ক্ষেত্রে যেপব যুবক কর্মরত তাঁদের বক্তব্য মোটামুটি নিক্নরূপ £ বর্তমান আধিক, সামাজিক রাজনৈতিক ছুংখ-ছূর্ঘশার মূলে রয়েছে মালিক বিত্তবান (এদের অনেকে এক্ষেত্রে বুর্জোয়া শব্দটি ব্যবহার করেন, যদিও এর প্রয়োগ আদে ইতিহাস বা] যুক্তিসঙ্গত নয় ) শ্রেণী কর্তৃক সর্যহারাদের শোষণ এই শোষণ বন্ধ করার অন্য কোন পথ নেই বলে মালিক বিভ্তবানদের হত্যা করে তাদের দ্বার! প্রভাবিত রাষ্ট্রন্ত্রকে ভেঙ্চেরে সর্বাগ্রে সর্বহারাঁদের প্রতিনিধি স্বরূপ বিদ্রোহীদের দ্বার] রাষ্ট্ন্ত্র করাশত্ত কর! প্রয়োজন মোটামুটি এ'দের মার্কসবাদী বললে অন্যাধ হবে না, যদিও মার্কসবাঁদের নানা ব্যাখ্যা ভাঙ্তের অন্থসরণ করেন এইসব বিদ্রোহী যুবকদের এক-একটি দল। আর শুধু মালিক বিত্তবানদের প্রতিই তারা বিরূপ নন, পিদ্রোহী প্রতিটি যুনকদলের পারস্পরিক সম্বন্ধ মারমূী। তবে খু'টিনাটির (যথ| কে সত্যকার বিপ্লবী, কারা ব্প্রবের সাথী হতে পারে কখন পিপ্রন শুরু করতে হবে এবং পার্লামেণ্টারী রাজনীতি বিপ্লবের সহ্থায়ক না নিরোধী ইত্যাদির ) ব্যাপারে নিজেদের যতই মতভেদ থাক ন] কেন, বিদ্রোহের মূল লক্ষা প্রক্রিয়া সম্বন্ধে তাদের ভিতর দ্বিমত নেই।

পশ্চিম্গের বর্তঘান যুপধিদবোহের উপবোক্ধ থিদিপ বা! ম্য'নিফেস্টোতে ( শব্দ দুটি যদি এক্ষেত্রে প্রয়োগ কণা যায়) যেলব গুরুতর ক্রটি রয়েছে তার প্রতি কিন্ত এইসব বিদ্রোহীদের নজর পড়ে না। প্রথমতঃ শোষণ কি কেবল বিশুবানের অত্যাচারের ফল? শোমধিত ব্যক্তি লোভ 'অথধা ভয়ের কারণে বিত্তপানের শোষণের কাছে আত্মসমর্পণ না করলে কেবল বিত্তধানরা একক প্রয়াসে শোষণ করতে পারতেন না। তাই সর্ধহারাদের ভিতর বিদ্রোহী- চেতনার স্থট্ট করে তাকে স্থ'মী করার সোটামুটি একটা ব্যবস্থা করতে ন1 প'রলে আজকের বিত্তবানদের শোষণ বন্ধ হলেও সর্যহারাঁদের অজ্ঞানতা আনুগত্যের সুযোগ নিযে আর কেউ তাদের শোষণ করবে। কমিউনিস্ট বাষ্টে বিপ্রুবপূর্ব শোধণকারীদের নিপাত করা সত্বেও টেকনোক্রাট, বুরোক্রাট, রাজনৈতিক গোষ্ঠি এবং এমনকি প্রবল গ্রতাপাদ্িত ব্যক্তত্ধ ক্ষমতাসম্পন্ন নেতাও যে সাধারণ

পশ্চিমবঙ্গের যুববিদ্রোহ ৫৯

মানুষ বা সর্বহারাদের এখনও শোষণ করছেন--আথিক, সামাজিক ক্ষমতা- প্রতিপত্তির দিক থেকে এই নৃতন অভিজাতদের দল সাধারণ মানুষের থেকে উর্ধ্বে-_এই সত্য ইজমের ঠুলি পরে অন্ধ ছাড়া খোলা বুদ্ধি দৃষ্টির যে-কোন ব্যক্তির নজরে পড়বে

দ্বিতীয়তঃ হত্যা ছাড়া কি শোষণ বন্ধ করার আর কোন পথই নেই? ইতিহাস কিন্তু তা বলে না। অতি প্রাচীন কাল থেকে সামাজিক আধিক হ্যায়বিচার পাবার জন্য মন্থিষ সাফল্য সহকারে অসহযোগের পন্থার শরণ নিয়ে আসছে এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি সমধিক পরিচিত ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে। খ্রীঃ পৃঃ ২৬০ থেকে ২৪৪-এর মধ্যে রোমের সাধারণ মানুষ প্রেবিয়ানরা রাজনৈতিক আথিক অধিকারের জন্ত অভিজাতদের বিরুদ্ধে এর প্রয়োগ করেন। জেকজালেমের ইহুদী সম্প্রদায় অনুবপভাবে ৩৭-৪১ খ্রীষ্টাব্দে রোমান সম্রাট ক্যালিগুলার অত্যাচারের প্রতিরোধ করেন। ১৬৮৩ খ্বীহান্ধে আমেরিকার পেনসিলভানিয়া রাঁজ্োর শ্বেতাঙ্গরা কোয়েকার নেত৷ উইলিয়াম পেনের নেতৃত্বে যুযুধান স্থানীয় রেড ইগ্ডিয়ানদের সঙ্গে যে চুক্তি করেন তার ফলে পরবর্তী সত্তর বছর পধন্ত যতদিন বিধানসভায় কোয়েকারদের প্রাধান্য ছিল, রাজ্যে ইশ্ডিয়ান বা আর কারও সঙ্গে আর কোন যুদ্ধ-িগ্রহ হয়নি যদিও সময়ে পার্বতী অন্যান্ত রাজ্যে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই ছিল। ১৮৩০ খ্রীষ্টাব্দে মহীশুর রাজ্যের প্রজারা রাজার অত্যাচার শোষণের বিরুদ্ধে 'এক সাফল্যজনক ব্যাপক অহিংস প্রতিরোধ করেন ১৮৮১ খ্রীষ্টাব্দে মাইকেল ডেভিটের নেতৃত্বে আগ্নারল্যাণ্ডের কৃষকেরাও ইংরেজ ভূম্বামীদের ধিকদ্ধে সফল নিরস্ত্র বিদ্রোহ কর বন্ধ আন্দোলন করেন। ফ্রান্সিস ।উকের নেতৃত্বে দীর্ঘ পনের বছরেরও অধিককাঁল অহিংস আন্দোলন চালিয়ে ১৮৬৭ খ্রীষ্টাব্দে অস্্রে।-হাঙ্গেরিয়ান ফেড'রেশনের পত্তন হয়। চার্টিস্ট আন্দেলনের সময় খেকে অদ্/াবধি বহু সফল ধর্মঘটের মাধ্যমে বহু দেশে বহু দাবী আদায় হয়েছে প্রপক্ষে ১৯৫ গ্রীই্টাব্দের রাশিয়ার ধর্মঘটের কথা বিশেষভানে উল্লেখযোগ্য দক্ষিণ আফ্রিকার 'অশ্বেতকায়দের স্বাধিকার ভারতে চম্পারণ, খেড়া বাঁরদৌলি ইত্যাদিতে কৃষ্নকদের প্রতি আথিক হ্যায়বিচারের জন্য গান্ধীজীর নেতৃত্বে পরিচালিত সফল সত্যাগ্রহ সমূহ সেদিনকার ঘটনা গান্ধীজীর বিরূপতম সমালোচককেও স্বীকার করতে হবে যে, ভারতের স্বাধীনতার অন্য যে একক উপাদানটির কৃতিত্ব সর্বাধিক, তা হল অহিং সত্য।গ্রহ। গান্ধীজীর আবর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তীকালে দক্ষিণ আফ্রিকা,

বাঙল। বাঙালী

ঘানা, সেনেগাল আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের নিগ্রো সম্প্রদায় স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অল্লাধিক সাফল্য সহকারে এই পন্থার প্রয়োগ করেছেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাৎসী অত্যাচারের বিরূদ্ধে নরগয়ে-ডেনমার্ক প্রমুখ দেশে জনসাধারণের যে ব্যাপক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠে তাও ছিল নিরস্ত্র বিশেষ করে রাশিয়া! কর্তৃক চেকোষ্রে/ভাকিয়া দখলের পর থেকে তার প্রতিবাদে এবং বুদ্ধিজীবীদের পেশাগত স্বাধীনতার জন্য রাশিয়ার বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা যে আন্দোলন চলছে তাও নিরস্ত্র। অতি সাম্প্রতিককালে আমাদের নিকটতম প্রাতিবেশী বাংলাদেশে শেখ মুজিবরের নেতৃত্বে স্বৈরতন্ত্রী শোষণকারীদের বিরুদ্ধে এক অতীব সফল অসহযোগের নিদর্শন দেখা গেল। বাংলাদেশবাসীরা তাদের স্বাধিকার আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করেন। অতি আধুনিক সমরাস্ত্রের সামনে বাংলাদেশের সেই যৎ্সামান্য অস্ত্রনির্ভর আন্দৌলন ক্রমে যে সফলতার পথে এগিয়ে গিয়েছিল তার মূলেও ছিল কোটি কোটি কৃষক- শ্রমিকের অপহযোগ এই অসহযোগের জন্যই দীর্ঘকাল সেখানকার কলকারখানা, দপ্তর শিক্ষায়তন অচল হয়ে পড়ে, কোন অসাষরিক (০1৮11) প্রশাসন চালু হতে পারেনি সাত মাসের নিষ্রতম সামরিক অত্যাচার সন্বেও।

ন্যায়বিচার লাভের অপর পন্থ। হল সংসদীয় গণতন্ত্র যেখানে বিধানসভায় এর জন্য আইন তৈরী হয় প্রশাসন যন্ত্রের মাধ্যমে সেই আইন কার্ধকর করা হয়। ভারতে এই পন্থ! বিবিধ কারণে আশানুরূপ সফল দেখাতে না পারলেও ইংল্যাণ্ড স্থইজারল্যাণ্, পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং বিশেষ করে ্ক্যানডিনেভিয়ান রা্রসমূহ যে এই পন্থায় সামাজিক. আধিক রাজনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বহুদূর অগ্রসর হয়েছে সত্য তর্কাতীত।

এই পরিপ্রেক্ষিতে হত্যার রাজনীতি (শ্রেণীসংগ্রাম নাম দিয়ে যাকে একটা ভদ্র চেহারা এবং তাত্বিক দার্শনিক কূপ দেবার চেষ্টা কর! হয়ে থাকে ) কতটা বিপ্লবী? যে বিপ্রোহী যুবদল জনকল্যাণের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছুরি, লোহার রড, বোমা, পাইপগানের সহায়তায় রক্তশ্লোত বওয়ান তাদের এই প্রশ্সের জবাব দিতেই হবে যে অত্যুচ্চ মূল্য দিয়ে তার কি হাসিল করেছেন ? পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান পর্যাষে ১৯৬৭ সাল থেকে খুনের রাজনীতি প্রবর্তিত হয়। সেই থেকে এযাবৎ কয়েক হাজার প্রাণের বিনিময়ে, কোটি কোটি টাকার জাতীয় সম্পান্তি নষ্ট করে এবং লক্ষ লক্ষ যানষকে ভীত-সম্বস্ত করে সমাজ-বিপ্রব কতটা এগিয়েছে? এই নরমেধ খজ্জে কয়জন শোষণকারী, চোরাকারবারী,

পশ্চিমবঙ্গের যুধবিদ্ধোহ ৬১

ভেজালদাতার তুক্কার্ষের প্রতিবিধান হয়েছে? এবং এর থেকে অনেক কম স্বেদ, অশ্রু রক্তের বিনিময়ে কি এর থেকে বেশী পাওয়া যায় না?

আর একটি কথা যন্ত্রশিল্পের ব্যাপক প্রসার তার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য- ব্যাঙ্কিং-বীমা-জয়ে্ট প্টক কোম্পানী-ট্রেড ইউনিয়ন প্রভৃতির বিস্তাতির ফলে বর্তমানে যে জটল সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাতে সাদ!-কালোর মত শোধিত শোষক অথবা মালিক-বিত্তবান সর্বহারার তফাৎ করা কি সম্ভব? অন্য দেশ অথবা এই ভারতবর্ষের অন্যানা রাজ্যের কথাও যদি বাদ দিই, আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গে কি পরিমাণ জমি এবং কত বড় কলকারখানা, দোকান অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর মালিকানা থাকলে পুবোক্ত অর্থে তাকে মালিক বলা হবে--এ বিষয়ে সর্বঞজনমান্য কোন মানদণ্ড আছে কি? কিংবা মাপিক আয় কত হলে তাকে খি্তবান বলা হবে তারও কোন সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা নেই। তাছাড়। মাসিক ছুই-আড়াইশ টাকা রোজগারকারী কোন দপ্তর অথবা কল- কারখানার কর্মী শ্রমিক-কর্মচারী রূপে সর্বহারার শ্রেণীভুক্ত হয়ে আমাদের সহানুভূতির দাবিদার হবেন অথচ পনের-বিশ বিঘা জমির মালিক চাষীর নীট আয় & টাকার বেশী না হ'লেও ভিনি জোতদার অভিধায় ভূষিত হবেন শুধু এই জন্য যে চাষের জো বুঝে তাকে মাঝে মাঝে বাধ্যতামূলকভাবে কৃষি- শ্রমিকদের তার ক্ষেতে নিয়োগ করতে হয়? অফিপের যে কেরানি বা শ্রমিক নিজের মাইনে বাড়াবার জন্য অন্যান্য স্থবিধা পাবার জন্য প্রচণ্ড রকমের শ্রমিকদরদী, তার বাড়ির ঝি-চাকর অথবা রিকশাওয়ালা কিংব। মুটে-মজজুর এবং এমনকি জুতো! পালিশের ছেলেটির সঙ্গেও তিনি কি মারাত্মক দরাদরি করেন যথাসম্ভব তাদের কম দিতে চান--এও তো বাস্তব সত্য। স্থতরাং একই ব্যক্তি একাধারে শোষিত শোষক হওয়ায় তার স্পষ্ট শ্রেণী-চরিত্র নির্ধারণ কর] কি সম্ভবপর ? সরকারী দপ্তরে যে কেরাণী অথবা। চাঁপরাশীটি ঘুষ ছাড়। মুখ খোলেন না অথবা জনসাধারণের অর্থে প্রতিপালিত হওয়া সত্বেও কাজে ফাকি দিয়ে জনসাধারণের ক্ষতি করেন, তার শ্রেণী-চরিত্র কি শোষিত না শোষণকারী ? যে ছোট দোকান, কারখানা অথবা গ্যারেজের মা[লক স্বয়ং গায়েগতরে খাটার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন কর্মচারীও রাখেন তাদের কোন্‌ শ্রেণীর অস্তভূক্তি করা হবে? জয়েন্ট স্টক কোম্পানীসযূহের দৌলতে শ্রমিক কর্মচারীদের অনেকেই জাতীম্ন কলকারখানা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অংশীদ্বারও হয়ে থাকেন। হিসাব করলে দেখা যাবে পশ্চিমবঙ্গে শ্রমিক-

৬২ বাঙল। বাঙালী

কর্মচারীর সংখ্য। বহু রাজোর চেয়ে বেশী হলেও শুদ্ধ মার্কপীর় পরিভাষায় ধাদের: শ্রমিক ব| সর্বহারা বল! হয় (মার্কপ-এক্ষেলসের মতে “হাতে পায়ের শিকল ছাড়া খাদের হারাবার মত আর কিছু নেই” বলে বিপ্লনী হবেন) তাদের চেয়ে কিছু না কিএ জমি বা কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের মালিকের সংখ্যা হয়ত অনেক বেশী হবে।

দ্বিতীয়তঃ জয়ে্ট স্টক কোম্পানী বড় বড় করপোরেশন ইত্যাদির যুগে আর মালিকানা মানেই কঠত্ব নয়। জত্নেট স্টক কোম্পানীর অংশীদারদের প্রভাব যে অতি সামান্য এং এণব কোম্পানীর আদল কর্ত। যে তাদের ম্যানেজিং এজেন্ট, ম্যানেজিং ডাইরেক্ট অখলা ম্যানেজিং বোর্ড ইত্যাদি একথা এ-ক্ষেত্র সন্বন্ধে কিঞ্চিৎ জ্ঞ'নসম্পন্ন ব্যক্তি মাত্রেই জানেন বড় বড় করপোরেশন- গুলির ক্ষেত্রেও একই কথ।। তাতে অর্থলগ্রীকারী ব্যক্তিদের চেয়ে তাঁর ডিরেক্টরবর্গ, ম্যানেজার, উপদেইা বিশেসজ্ঞ-দর প্রভাব প্রতিপত্তি কর্তৃত অনেক বেশী মালিকানার এই নৃতন ক্রমবর্ধমান পদ্ধতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল অর্থের কোন রকম ঝুক না নিয়ে? প্রবল কর্তৃত্ব ক্ষমতার প্রয়োগ কর।। তাই এইপব ক্ষেত্রে মালিক অর্থাৎ অর্থলগ্লীকারীদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোবণ] করলে শোষণের সমস্তার কোন সমাধান হবে কি, অথপা মালিকদের কোতল করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে টি?

আর একটি প্রশ্ন। কার! সত্যিকার সরধহারা-দরদী কারা মালিক, গ্ুঁজিপতি শোথক শ্রেণীর এজেন্ট ? বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিভিতে সশস্ত্র শ্রেণীপংগ্রাম শুরু করার পূর্বে এই প্রশ্নটির সুষ্ঠ সমাধান হওয়া প্রয়োজন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কথ! যদি বাদও দেওয়া যায় শুধু মার্কপ এক্গেলস্-লেনিনের অন্থুগামী বলে আত্মপরিচয়দানকারী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা রাজ্যে এক ডঙজ্গনের কম হবে না। এর মধ্যে থেকে এস. এস. পি. পি. এস. পি-এর মত সশস্ত্র শ্রেণীপংগ্রামে অবিশ্বাসী কয়েকটি দলের কথা বাদ দিলেও জঙ্গী মার্কপবাদে অর্থাৎ মালিক বিত্তবানদের হত্যা করার রাজনীতিতে বিশ্বাসী দলের সংখ্যাও কম নয়। এবং এইসব দলের অন্ুগামীরা একমাত্র তাদের দলকেই আদি অকৃত্রিম সর্বহা'র। শ্রেণীর প্রতিনিধি বাদবাকি তাবৎ জঙ্গী মার্কপবাদে বিশ্বাসী দলগুলিকে “প্রচ্ছন্ন বুর্জোয়া” “শোষক শ্রেণীর এজেন্ট” মনে করেন তদনুযায়ী তাদের সবে 2151705089 11018090102 চলিত হয়ে আচরণ করেন

পশ্চিমবঙ্গের যুববিদ্রোহ ৬৩

পশ্চিমবঙ্গের এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সশস্ত্র সংগ্রামের কর্মন্থচী গ্রহণ করার পরিণাম কি? পরিণাম আজকের পশ্চিমবঙ্গ, যেখানে কারও জীবন, জীবিক। অথব৷ স্বল্প সম্পত্তিরও নিরাপত্তা নেই, যেখানে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মাহুষ ভীত-সন্ত্রন্ত চোখের সামনে নারী-বালক খুন হতে দেখলেও প্রতিবাদ করার সাহস নেই, যেখানে কলকারখান1, দপ্তর, হাট-বাজার রেল-বাস-ট্রাম চলাচল বিপর্যস্ত, যেখানকার অর্থনীতি অধোগামী, শ্রমিকেরা কর্মহীন বলে তাদের পরিবারে অনাহারজনিত হাহাকার জঙ্গী মার্কসবাদীদের কেউ কেউ পশ্চিমবঙ্গের আজকের অবস্থাকে বিপ্রবের প্রথম চরণ বা গ্রস্তঙকাল বলে থাকেন তাহলে আপল বিপ্লবের স্বরূপ কি? সাধারণ মানুষ যাকে নরক বলে কল্পনা করে তারই মত কিছু?

সশস্ত্র শ্রেণীসংগ্রামের নীতি অনুসারে কাধরত কোন কোন দলও যে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সবনাশ] অবস্থার গুরুত্ব হৃদর়ঙ্গম করতে অক্ষম হয়েছেন, তার একটি স্থস্থ নিদর্শন কিছুদিন আগের এক সংবাদপত্রে চোখে পড়ল। বীরভূম জেলায় কর্ণরত এক্টি জঙ্গী মার্কপবাদী পাট'র তরফ থেকে একটি ইস্তহার প্রকাশ করে বলা হয়েছে যে সম্প্রতি জেলায় ষে প্রবল অসাম!জিক কার্ধ- কলাপের শ্রোত বইছে শ্রেণীপংগ্রামে রত. হলেও তারা তার জন্য দাঁ়ী নন? তাদের নাম করে সমাঞবিরোধীর। এইসব খুন, লুঠ ছিনতাই ইত্যাদি করছে এবং তারা তাই সুস্থ জনজীবনের পরিপন্থী এইসব দুক্ষর্ষের প্রাতিরোধের জন্য জনসাধারণকে পক্রিয় হতে আবেদন জানিয়েছেন বীরভূমের রাজনৈতিক দলটির বক্তব্য অত্যন্ত সাধু কিন্তু ব্যাপারটি গোড়া কেটে আগায় জল দেবার মৃত। প্রথমে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ছুরি, বোষা, পিস্তলের প্রবর্তন করে জনসাধারণের সাহস নৈতিক বল ভেঙে দিয়ে তাদের আবার সাহসী হতে বল হান্তকর ব্যাপার। হিংসার কার্যপ্রণালী সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি মাঞ্জেই জানেন যে নিতান্ত সাধু উদ্দেশ্যেও একবার এই পম্থবর শরণ নিলে শেষ পর্যন্ত এক্ষেত্রে প্রভুত্ব করবে এই পন্থার আঁমেচার অন্থগামীরা নয়, শাস্ত্রের কুশলতম প্রয়োগকারী পেশাদার ছুরি, বোমা, পিস্তল ব্যবহারকারী বা সবাজ- বিরোধীরা

স্থতরাং সশস্ত্র বিপ্লবের গুচিত্য সম্ধব্ধ আজকের পশ্চিমবঙ্গের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিপ্লবীদের নৃতন করে চিন্তা! কর! প্রয়োজন বলাবাহুল্য সশস্ত্র বিপ্রব বলতে এক্ষেত্রে কেবল বোমা, পিস্তল বোঝাবে না। বিপ্রবীরা যেটা

বাউল! বাঙালী

উচিত বলে মনে করেন, যুক্তি দ্বার নয় গায়ের জোরে বা চাপ দিয়ে তা আর সবাইকে মানতে বাধ্য করার তাবৎ প্রক্রিয়াই এর মধ্যে পড়ে অপরের সভ। ভাঙা, তাদের বক্তব্য বলতে ন। দেওয়া, ট্রাম-বাগ পোড়ানো থেকে আরম্ভ করে ভিন্ন মতবাদের বই-পত্তিকায় আগুন দেওয়া বরেণ্য মনীষীদের প্রতিকৃতি যৃ্তি নষ্ট কর! ইত্যাদি সবই এর মধ্যে পড়ে।

এবার শিক্ষার ক্ষেত্রে যুনবিদ্রোহের স্বরূপ সম্থদ্ধে অবহিত হুওয়া যাক | পরীক্ষার তারিখ স্থান অথবা প্রশ্নপত্র ইত্যাদি বদলের দাবীতে অধ্যাপক, অধ্যক্ষ বা বিশ্ববিদ্ঠালয়ের উপাচার্ষ প্রমুখ কর্তৃপক্ষস্থানীয়কে ঘেরাও করে তাদের প্ররুতির আহ্বানেও সাড়া দিতে ন। দেওয়া, লাইব্রেরী, ল্যাবরেটরীসহ শিক্ষ! প্রতিষ্ঠানের সব কিছু মায় চেয়ার টেবিল, পাখা ভেঙেচুরে তছনছ করা, পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র উন্ণরপত্র ছেঁড়! কেড়ে নেওয়া, অবাধ টোকাটুকি ইনভিজি- লেটরদের শাসিয়ে নিক্ছিয় করে রাখা ইত্যাদি যেসব প্রক্রিয়ার শরণ এক্ষেত্রে নেওয়া হয় আমর] সবাই মোটামুটি তার সঙ্গে পরিচিত।

এইপব প্রক্রিয়ার পিছনে যে ফাকিবাজি, স্থবিধাবাদ অন্যবিধ বিকৃতি বিদ্ধমান তার কথ বর্জন করলে শিক্ষাব্যবস্থা সম্বন্ধে বিদ্রোহীদের যে নীট বক্তব্য থাকে তা হল £ বর্তমান শিক্ষা পরীক্ষাব্যবস্থ। নিরর্থক, কারণ আজকের যুব সম্প্রদায়ের সর্ধপ্রধান চাহিদ।-_বেঁচে থাকার লমন্ঠায় সমাধান করার শক্তি এর নেই। মনে হয় যে-কোন বিবেচক ব্যক্তিই প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার এই ত্রুট স্বীকার করে শিক্ষার আমূল পরিবর্তনের সপক্ষে মত দেবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই যে বিদ্রোহী যুবকেরা তাহলে জেনেশুনে এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভত্তি হবার জন্য হন্তে হয়ে ওঠেন কেন এবং কেনই বা তাঁর? এই শিক্ষা গ্রহণ করেন? এর জবাবে হয়ত বল! হবে যে যেহেতু অপর কোন শিক্ষাব্যবস্থা নেই তাই। কিন্ত নৃতন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করবেন কারা? বর্তমান সামাজিক- আথিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থার কর্ণধারেরা, ধাদের ব্যবস্থায় কায়েমী স্বার্থ আছে তার!? এরকম আশা কর] কি বুদ্ধিবৃত্তির দেউলিয়াপন। ঘোষণা কর! নয়?

পশ্চিমবঙ্গের যুববিদ্বোহ ৬৫

অথচ বাঙলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখব যে ১৯*৫ সনের স্বদেশী থেকে ১৯২১-৪৭-এর স্বাধীনতার আন্দোলন পর্যস্ত শিক্ষার ক্ষেত্রে যে বিপ্লব হয়েছে এবং বিশ্বভারতী যাদবপুরের ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন-_-য! আজ যাদবপুর বিশ্ববিগ্ালয়--ও অজন্ন জাতীয় বিদ্যালয় তার প্রবর্তক হোতা ছিলেন প্রধানতঃ যুব সম্প্রদায়। প্রসঙ্গে তরুণ ভাষচন্দ্রের অত্যন্ত সম্তাবনাপুর কেরিয়ারের মোহ বর্জন করে জাতীম্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার দায়িত্ব গ্রহণ ফেরার কথাও ম্মরণীয় এবং কার্ষে স্থভাষচন্দ্রের মত আরও শত শত তরুণ অগ্রণী হয়েছিলেন কিন্তু আজকের বিদ্রোহী যুব সমাজ কোথায় নৃতন শিক্ষানীতির উদ্ভাবন তার প্রয়োগ করছেন? তাহলে কি এই সব তথাকথিত বিদ্রোহী যুবক আসলে প্রচলিত ব্যবস্থারই ধারক- শুধু নিজের স্থবিধাটুকু করে নিতে চান ? এই প্রসঙ্গে কিউবায় চে গুয়েভারার একটি অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ছে। কিউবায় কাস্ত্রোর কর্তৃত্ব প্রত্িিত হবার পর চে গুয়েভারার উপর সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ 'দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। এই সময় একদল শহরের শিক্ষিতা চাকুরীজীবী মহিলা তার সঙ্গে তাদের সমস্থ্া নিষে আলোচনা করেন। যতদুর মনে পড়ছে বিপ্রধী সরকারের কোন কোন প্রগতিশীল কর্মস্চীর জন্য বিদেশ থেকে আমদানী করা দ্রব্যসামগ্রীর বিক্রেতা এইসব মহিলাদের রোজগার বন্ধ হয়েছিল মহিলাদের বক্তব্য তারাও বিপ্লবী এবং তাই বিপ্লবের অন্যতম নারককে তাদের সমস্যার স্থ্রাহা! করে দিতে হবে। চে তাদের বললেন যে তাদের সকলের জন্য কর্মসংস্থান করবেন তিনি কিউবায় তখন চাষের ফসল তোলার মরশুম। সবাইকে সেই কাজে নিয়োগ করবেন মহিলারা কিন্তু এই প্রস্তাবের কথ। শুনেই পৃষ্টপ্রদর্শন করলেন শহরের শিক্ষিতা আধুনিকারা চাষী হবেন? নৈব নৈবচ। সন্দেহ হয় আমাদের যুববিজ্রোহীদের শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লব₹ও এই জাতীয় নচেৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাগব অথবা অই্রম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা (এই ধিকৃত শিক্ষাই ) প্রবর্তন এবং শিক্ষার “জাতীয়করণ” অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সরকারী নিয়ন্ত্রণে আনার চেয়েও আরও কিছুদূর তাদের কল্পনা যেত, যাতে শিক্ষার ক্ষেত্রে যথার্থই বিপ্লবসাধন সম্ভবপর হয়। এই প্রসঙ্গে শিক্ষার মূল সমস্য! সন্বদ্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা বোধহয় অন্যায় হবে না। শিক্ষার লক্ষ্য জীবন-সংগ্রামের জন্য মানুষকে তৈরী করা জীবন- সংগ্রামের ছুটি দ্িক। প্রথমটি জীবিক1 সংক্রান্ত এবং দ্থিতীয়টি মানববিগ্যার

বা..৫

৬৬ বাঙল৷ বাঙালী

এলাকাভুক্ত, যার লক্ষ্য হল মানবীয় বৃত্তিপমূহের সম্যক বিকাশ প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় মানবীয় বৃত্তিসমূহের বিকাশসাধনের পাঠ্যক্রম থাকলেও জীবনচর্ধার সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক ন] থাকায় মানবীয় বৃত্তির উৎকর্ষ বিধানের কোন সম্ভাবনা নেই। আর জীবিকা সংগ্রহের তো কোন আশাই নেই এই শিক্ষার মাধ্যমে এই শিক্ষায় শিক্ষিত যুবক-ঘুবতীর1 কেরানি, ডাক্তার, উকিল ইত্যাদি “হোয়াইট কালার জব* বা ধোপছুরস্ত বাবুদের পেশ! ছাড়া অন্য কাজের অনুপযুক্ত কিন্তু যেকোন দেশের অর্থব্যবস্থার মত পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতেও এজাতীয় চাকুরির সংখ্যা সীমাবদ্ধ হতে বাধ্য এইজন্যই পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষিত বেক।রের সংখ্যা এত বেশী। এর উপর শতকর। মাত্র ২৯'৩ জন অক্ষর- জ্ঞানসম্পন্ন হওয়াতেই প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী হায়ার সেকেগারী স্কুল ফাইন্যাল পরীক্ষা দেন। এদের তিন ভাগের এক ভাগ যদি এইসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং তার আবার অর্ধেক যদি উচ্চ শিক্ষায় ঘর গৃহস্থালী বা অন্তান্ত কাজে যান তাহলে বাকি অর্ধেক অর্থাৎ কম করে হলেও লক্ষাধিক শুধু স্থলের শিক্ষাপ্রাপ্ত যুবক-যুবতীর জন্য বাবুদের পেশা চাই। আর কলেজী শিক্ষাগ্রাপ্ শিক্ষিত বেকার প্রতি বছর কোন্‌ ন] কিশ-চলিশ হাজার হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে যে জাতীয় পরিবর্তনই করা হোক না কেন এবং শাসন- ক্ষমতায় যত বাঘ বিপ্লবীই আসীন হোন ন। কেন বর্তমানের লক্ষাধিক শিক্ষিত বেকারের সঙ্গে গ্রতিবছর এই সংখ্যক নৃতন বেকারের জন্য বাবুদের কাজ জোগাড় কর! তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এর পর এই শিক্ষাব্যবস্থা সবজনীন হলে অর্থাৎ সব ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে আরম্ভ করলে কী নারকীয় অবস্থার স্থষ্টি হবে তা সহজেই অনুমেয়

ইঞ্জিনিয়ারিং, অন্যান্য প্রধুক্তিবিদ্ধা ডাক্তারী ইত্যাদি শিক্ষার সমস্থা ছিবিধ অর্থব্যবস্থার সম্যক বিকাশের অভাব অন্যান্য কারণে এইনব শিক্ষায় শিক্ষিতদের মধ্যেও বেকার সমস্তা রয়েছে এবং এদের শিক্ষা মূলতঃ জীবিকাযূলক বলে মানবীয় বৃত্তিসমূহের সম্যক বিকাশের অবকাশ নেই এইসব ক্ষেত্রে অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ নয়, একার্গ নাগরিক তৈরী হয় এই ব্যবস্থায়।

কিন্ত এর প্রতিবিধান কি? প্রতিবিধান হচ্ছে আজকের ধধ্যবিভ্দের উপশোগী শিক্ষাব্যবস্থার বদলে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন যা শিক্ষিত সংস্কৃতিসম্পন্ন কুষক শ্রমিক সৃষ্টি করতে পারে। পশ্চিম বাঙলার অথথব্যবস্থায় এখনও দীর্ঘকাল কৃষক শ্রযিকদের প্রাধান্য থাকতে বাধ্য তাই যে

পশ্চিমবঙ্গের যুববিদ্বোহ ৬+

সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা এখানে গড়ে তুলতে হবে তা৷ কৃষক শ্রমিকদের উপযুক্ত না হলে নিরর্৫থক। এর জন্য ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানার্জনের সঙ্গে সঙ্গে এবং জ্ঞানার্জনের মাধ্যম শ্ব্ূপ কৃষি শিল্পের অনুসরণ করতে হবে যাতে জীবিকা হিসাবে পরে তারা কৃষি শিল্পকে গ্রহণ করতে পারেন এবং আদর্শ কষক কারিগর হন। এর কমে শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্রবসাধন অসম্ভব মাও-এর নেতৃত্বাধীন চীনে এই ধরণের শিক্ষা সাংস্কৃতিক বিপ্লব সাধন করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্ত এদেশে মাওএর অনুগামী বলে ধার। নিজেদের জাহির করেন শিক্ষা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তাদের বিপ্রন শুধু স্কুল কলেজ ধ্বংস করা মনীষীদের যৃতি, ছবি সাহিত্য নষ্ট করার মধ্যেই সীমিত রয়ে গেছে বিপ্লবের নামে প্রতিবিপ্রবের এমন নিদর্শন সচরাচর দেখা যায় না।

৪8

স্থৃতরাং গশ্চিমবর্গে আজকে যুব ধিদ্রোহ নামে যা চলছে তার শ্ববূপ কি? বিদ্রোহ খদি বিপ্লব বা নৃতন মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার সহায়ক না হয়ে কেবল অস্ধ ভাঙাচোরার কার্যক্রম হয় এবং স্থিতাণস্থার সমর্থক অথবা প্রতিক্রিয়। অভিমুদী হয় তাহলে তাকে আদে৷ বিদ্রোহ আখ্যা দেও] যায় না। সে-জাতীয় চাঞ্চল্য উত্তেজন। বড় দেশী হলে বিক্ষোভ নামে অভিহিত হানে পারে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান উদ্দাম উত্তালতার পিছনে গঠনযূলক প্রয়াস না থাকায় একে তাই যুববিদ্রোহ আখ্যা! দেওয়া যায় না। বর্তমান আথিক সামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছুঃসহ। এর পরিবর্তন

বিপ্রবের কম কোন কিছুতে হবে না এবং সেই বিপ্লব বা নৃতন মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার সাধন হল যুববিদ্রোহ। এবং তাই যুববিদ্রোহ কাম্য--অতীব কাম্য। কিন্ত যুক্তিবঞ্জিত অন্ধ উন্মত্ততার অনুশীলনে যুববিদ্রোহ মূর্ত হবে না, এর জন্য চাই সচিস্তিত গঠনমূলক প্রয়াস কবির ভাষাতেই শেষ করি £

«শো ণিতে ভাসাল ধরণী যাহার তারা নয় তারা নয়,

মোর পথ চাই নৃতন বীরের গাহি তাহাদেরই জয়।”

পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎ

১৯৪৬ খ্রীইাব্বেরে আগস্ট মাপে মুনলিম লীগ কর্তৃক যে তথাকথিত প্রত্যক্ষ সংগ্রাম শুরু হয় ইদানীন্তন কালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার স্ত্রপাত সেই সময় থেকে। তারপর নোয়াখালি গর্ব শেষ অবধি ভারত বিভাজন সৌভাগ্য- ক্রমে দেশ বিভাগের সময় স্বয়ং গান্ধীজী দাউলাদেশে উপস্থিত থাকায় যাউণ্ট- ব্যাটেন কথিত সেই 9130 10907; 9০94)4919 1০0:০০-এর প্রভাবে পশ্চিম বাঙলা পূর্ব পাকিস্তান দেশবিভাগ জনিত রক্তন্নানের হাত থেকে নিষ্কৃতি পায়-_ পঞ্তাবের মত স্বাধীনতা প্রাপ্তি এবং ৬* হাজার নিরপরাধের প্রাণনাশ (দ্রষ্টব্য £ 7185 1,951 10859 01173116151. 11019, : 1৬110152061 120/21095 ), বু কোটি টাকার সম্পত্তি বিনষ্ট 'ও কয়েক হাজার ধধিতা লাঞ্চিতা নারীর অশ্রু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সম অর্থছ্যোতক হয়ে দাড়ায়নি |

কিন্ত এর অর্থ এই নয় যে বাওলাদেশকে দেশবিভাজনের থুল্য দিতে হয়নি স্বাধীনতার পর থেকে উভন্ন বঙ্ঈই এই সমস্তায় ভুগছে তবে পৃ পাকিস্তানের ( বর্তমান ব!ংলাদেশ ) সংখ্য।লঘুদের সমস্যাই এর মধ্যে সর্বাপেক্ষা শোচনীয় স্বাধীনতালাভের পর মাঝে মাঝেই পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘু নিধন পর্বের সুচনা হয়েছে এবং তার পূরিণামে দফায় দফায় ভীতসন্ত্স্ত আত্মীয় বিয়োগ ব্যথায় কাতর নিঃস্ব সংখ্যালঘুর দল বৈধ অথব! অবৈধভাবে ভারতবর্ষে এসেছেন সাময়িকভাবে ভারতনর্ষের সংবাদপত্রপমূহ এবং রাজনৈতিক নেতৃবর্ণ পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের সমগ্তা নিয়ে আন্দোলন করেছেন কিন্তু বাঙালীর জাতিচরিত্রের স্বধর্ম অন্যাত্ী শীঘ্রই সমন্যার কথ বিস্বত হয়ে সংবাদপত্র রাজনৈতিক নেতৃবর্গ অন্য কোন নূতন চাঞ্চল্যকর প্রসঙ্গ নিয়ে মাতামাতি করেছেন এর ফলে স্বাধীনতালাভের পর প্রায় বিয়ালিশ বৎ্সরকাল অতিক্রান্ত হওয়ার উপক্রম হলেও সংখ্যালঘুদের সমস্তার কোন স্থায়ী সমাধানের সুচন] দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।

সমস্তার বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে সমস্যাটির পটভূমিকা সম্বন্ধে কথঞ্চিৎ অবহিত হওয়া প্রয়োজন দ্বিজাতি তত্বের নীতিতে বিশ্বাদী মুসলিম লীগের

পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের ভবিষ্তুৎ ৬৯

ভারত বানচ্ছেদের দাবির কাছে কংগ্রেপ সহ তাবৎ অখণ্ড ভারতের নীতিতে বিশ্বাসী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি স্বাধীনতালাভের প্রাক্কালে নতি শ্বীকার করে। সে সময় জাতীয়তাবাদী নেতৃবর্গের মধো মহাত্মা! গান্ধী, যৌলানা আজাদ খান আবছুল গফুর খান ভারত বিভাগের বিরোধী ছিলেন কংগ্রেসের সমাজবাদী গোষ্ঠীর নেতার] ভারত বিভাজন প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেও সম্বন্ধে সক্রিয়ভাবে কিছু করার ক্ষমতা তাদের ছিল না। বাস্তব অবস্থার জন্য খান আবদুল গফুর খানের পক্ষে কোন কিছু কর! সম্ভবপর হমনি কিন্তু বাকি কেউই ংগ্রেপ ওয়াকিং কমিটির ভারত বিভাজনের প্রস্তাবের সক্রিয় বিরোধিতা করেন নি বলে ভারত বিভাগ হযে যায়। নিজ সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে কংগ্রেপ ওয়াকিং কমিটির বক্তব্য ছিল এই যে দেশের কোণে কোণে সম্প্রপারণশীল সাম্প্রদায়িকতার লেলিহান অগ্নিশিখা, অন্তবর্তী মন্ত্রীম গুলে লীগ প্রতিনিধিদের বাধাদানের নীতির ফলে দেশের বিলম্বিত প্রগতি ইত্যাদির কারণে তার] বৃহত্তর কল্যাণভাবনা দ্বারা চালিত হয়ে দেশ বিভাগের প্রস্তানে অম্মত্তি দিয়েছিলেন তারা বিশ্বাস করেছিলেন যে এর পরিণামে সাম্প্রদায়িক অশান্তির স্থায়ী অধসান হবে এবং নিজ নিজ এলাকায় কংগ্রেপ মুসলিম লীগ ্ব ন্ব ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী দেশগঠনে ব্রতী হতে পারবে পরবর্তী অভিজ্ঞতায় অবশ্য পূর্বোক্ত পিশ্বাস মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে তবে এর জন্য তদানীন্তন নেতৃবর্গের প্রত্তি দোষারোপ করা নিরর৫থক কারণ কোন ঘটন। ঘটে যাবার পর বিজ্ঞ হওয়! সহজ যাই হোক, শ্বাধীনতাল'ভের পরই এমনকি পাকিস্তানের জনক পাকিস্তান গণপরিষদের তদানীন্তন সভাপতি জিন্নাসাহেবও পাক-গণপরিষদে তাঁর প্রথম ভাষণে ঘোষণা করলেন যে "অত:পর প্রশাসনের ব্যাপারে হিন্দুরা আর হিন্দু থাকবে ন1, মুসলমান্রাও মুপলমান থাকবে না” উভষে মিলে পাকিস্তানী জাতিতে পরিণত হবে। স্বভাবতই এতে পূর্ব পাকিস্তানের সংখালঘুদের আশ্বস্ত হবার কারণ ছিল। এছাড়া ভারতবর্ষের তিনজন জননারক--জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল এবং শ্টামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ও পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেন। ১৯৪৭ খ্রীাকের ১৫ই আগস্ট নেহরুজী বললেন, “আমাদের যেসব ভাইবোন রাজনৈতিক সীমান] দ্বার বিচ্ছিন্ন হতে চলেছেন এবং হুর্ভাগা ক্রমে ধারা বর্তমান স্বাধীনতায় অংশ গ্রহণ করতে অসমর্থ সেইসব ভাইবোনদের কথ! সর্বদাই আমি

৭৬ বাঙলা বাঙালী

মানসপটে অঙ্কিত রাখব। তারা আমাদেরই লোক যাই ঘটুক না কেন চিরদিন আমাদেরই থাকবেন এবং আমরাও তাদের সুখ-ছুঃখের সমান অংশীদার থাকব” একই দিনের ঘোষণায় বল্লভভাই প্যাটেল বললেন, প্ধারা এতকাল আমাদের সঙ্গে মিলিত ছিলেন কিন্তু আজ পৃথক রাষ্ট্ভুক্ত হতে চলেছেন স্বভাবতই তাদের প্রতি আমাদের অন্তঃকরণ ধাবিত হচ্ছে। ...সীমাস্তের অপর পারের ভ্রাতৃগণ, কখনও আপনারা মনে করবেন না যে আপনারা অবহেলিত বিস্বৃত হবেন আমরা পরম ওহস্থক্য সহকারে আপনাদের ভবিষ্যতের প্রতি লক্ষ্য রাখব |” ১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দের ২৭শে জুলাই ডঃ শ্যামাপ্রপাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি বারম্বার ঘোষণা করেছি যে বঙ্গবিভাগক্রমে একটি স্বতন্ত্র পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ স্ষ্টির ছারা শুধুমাত্র পশ্চিমবর্গ অঞ্চলের লোকরক্ষার ব্যবস্থা হল তা সত্যি নয়। পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের প্রতি আমাদের গুরুতর দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ সরকার পশ্চিমবঙ্গের জনগণ উভয়কেই একযোগে পালন করতে হবে” এই প্রমুখ নেতৃত্রয় ছাড়। তখনকার প্রায় প্রতিটি ছোট-বড় রাজনৈতিক নেতা কর্মী ভারতীয় স্বাধীনতার বলি-_পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা কল্যাণবিধানের প্রতিশ্রীতি দিয়েছিলেন

|

১৯৪৭ গ্রীষ্টব্ধের ১৪ই আগন্ট বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম হল এবং তাঁর পূর্বাঞ্চলে রইল মোট ১৩৫ কোটি সংখ্যালখু এর মধ্যে থ্ীগ্রান বৌদ্ধ কয়েক হাজার করে হলেও এর অধিক্াংণই ছিল হিন্দু। অবশ্ত অনেকের মতে ১:৩৫ কোটি সংখ্যাটি যথার্থ নয, সংগঠালঘুদের আসল সংখ্যা আরও কিছু বেশী কারণ তাদের মতে ১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দের যে জনগণনার উপর ভত্ত করে সংখা নিধারিত হয় তা যথাযথ নয়। তদানীন্তন সরকারের প্ররোচনায় সময়ের জনগণনায় ইচ্ছে করে হিন্দুদের সংখ্যা কম দেখানো হয়েছিল

১৯৬৩ গ্রীস্টাব্ৰ পর্যন্ত 'এর মধ্যে ৪২ লক্ষ সংখ্যালঘু নিজেদের পৈতৃক ভিটামাটি জীবিকার উপায় ছেড়ে ভারতবর্ষে এপেছেন আর ১৯৬৪ শ্রীইাব্বের দাক্গা- হাঙ্গামার পর ১৯৫৫ সনে আরও লক্ষের মত সংখ্যালঘু ভারতবধে অ!সতে বাধ্য হয়েছেন ১৯৭ সনে এসেছেন গ্রাম আড়াই লক্ষ পূর্ব পাকিস্তানের ১৯৬১ গ্রীই্টাব্ধের জনগণন] বিবরণ অনুযায়ী সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ছিল ৯০ লক্ষ।

পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎ ৭১

তারপর তিন বছরে সংখ্যালঘুদের কিছু সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছে এবং তার থেকে বিগত বৎসরের দাঙ্গার পর ১৯৬৫ সন পর্যন্ত লক্ষ লোক ভারতবর্ষে এসেছেন এদের মধ্যে আবার প্রায় এক লক্ষ পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে গেছেন ম্বতরাং বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তানে ৮* লক্ষের মত সংখ্যালঘু রয়েছেন এবং আমাদের আলোচ্য বিষয় হল এদের ভবিষ্যৎ

পূর্ব পাকিস্তানে যে ৮০ লক্ষেরও কিছু বেশী সংখ্যালঘু এখনও আছেন তাদের ভবিষ্তৎ সম্বন্ধে আলোচনার পূর্বে এযাবৎ্ মোট যে ৫৩ লক্ষের মত সংখ্যালঘু ভারতবর্ষে আসতে বাধ্য হযেছেন তাদের বাস্তত্যাগের মোটামুটি কারণ জানা প্রয়োজন এই কারণগুলির উপর বহুলাংশে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের ভবিষ্ৎ নির্ভর করছে

স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং পূর্ব পাকিস্তানের নিশিষ্ট জননায়ক বর্তমানে পশ্চিম বাঙলায় আগত শ্রীযুক্ত প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ী মহাশয় সম্বন্ধে সম্প্রতি একটি অতীব প্রামাণ্য পুস্তক রচনা করেছেন (দ্রব্য £ [7012 [১7111110109 200 7111100110199 11 78210502120 প্রভাসবাবু সথদীর্থকাল পাকিস্তানের নাগরিক ছিলেন এবং ইউনাইটেড ফ্রণ্টের মন্ত্রীত্বকালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রীর পদও অলঙ্কত করেছিলেন স্থৃতরাং তার বিশ্লেষণ সঙ্গত কারণেই প্রামাণ্যতার দাবি রাখে বর্তমান প্রবন্ধে সংখ্যালখুদের পূর্ব পাকিস্তান পরিত্যাগের কারণগুলির অধিকাংশ তার পূর্বোক্ত গ্রন্থ বাঙলার বিশিষ্ট জননায়ক শ্রীযুক্ত অরুণচন্ত্র গুহ মহাশয়ের লৌকপভার ছুটি বক্তৃতা ( ১২1২/১৯৬৭ ৪181১৯৬৪ ) থেকে সন্কলিত

পূর্ব পাকিস্তান থেকে সংখ্যালঘুদের ভারতে চলে আসার অন্যতম প্রধান কারণ হল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৎসংশ্রিষ্ট লু্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নারীহরণ, নারীধর্ষণ এবং হত্যা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই প্রত্যেক বছবে বনু ছোটখাট স্থানীয় ধরণের দাঙ্গা হয়েছে এবং এর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘুরা একতরফা নিগৃহীত হয়েছে একমাত্র ১৯৫০ থেকে ১৯৫৬ সনের ভিতর জাতীয় ৮০২১টি ঘটনায় সংখ্যালধুরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে ব্যাপকতার জন্য ১৯৫০ সনের ফেব্রুয়ারি মাসের দাক্ষা পাকিস্তান প্রতিষ্িত হবার পর সর্বাধিক কুখ্যাত ঢাকা, বরিশাল পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব প্রমুখ জনপদের সংখ্যালবুরা এই দাঙ্গার শিকার হন। ১৯৬১ সনের মে-জুন মাসে ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমা, ১৯৬২ সনের জান্ুয়ারি-মার্চ মাসে রাজপাহী ঢাক! খুলন। পাবন!

ণ২ বাঙলা বাঙালী

ইত্যাদির দাঙ্গা এবং সর্বোপরি ১৯৬৪ সনের জানুয়ারি মাসের দাঙ্গা লোকসভার সদস্য শ্রীযুত নির্মলচন্দ্র চট্োপাধ্যায়ের মতে শেষোক্ত দাঙ্গায় একমাত্র ঢাক।- গারায়ণগঞ্জেই মৃতের সংখ্যা হল ১* হাজার এবং অনেকের মতে খুলনা-যশোহর সহ সমগ্র পূর্ব পাকিস্ত[নে মৃত সংখ্যালঘুর সংখ্যা ৩০ হাজার হতে পারে অবশ্য ংসদ সদ্য শ্রীযুক্ত অরুণচন্দ্র গুহ মহাশয়ের মতে মোট মৃতের সংখ্যা ২০ হাজারের কাছাকাছি এবং নানাবিধ কারণে এই সংখ্যাটিই নির্ভরযোগ্য মনে হয়। সংখ্যালঘুদের বাস্তত্যাগের গৌণ কারণপালির অন্যতম হল নিরাপত্তার অভাব, অনিশ্চগ্নতা, মুসলিম লীগ ন্যাশনাল গার্ডদের আক্রমণাত্মক আচরণ, ন্যায়বিচার লাভে ব্যর্থতা পরবর্তীকালে ১৯৭* সনে বাস্তত্যাগের প্রধান কারণ অর্থ নৈতিক মনে হয় যার জন্য মাঝে মাঝে পুর পাকিস্তানের মুঘলমানরাঁও গোপনে ভারতে বসতি স্থাপন করেন ইত্যাদি অর্থাৎ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্বে পূর্ব পাকিস্তানের শাকদের অভিপদ্ধি ছিল : “রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন সহস্বুদ্ধি বুদ্ধিমান সংখ্যালঘুদের বিতাড়িত কর। যাতে বাদবাকি অপেক্ষারুত নিরীহ কম বুদ্ধিমান দুর্বল সংখ্যালঘুদের ধর্মান্তরিত করা যায় নেহাত তা সম্ভব না হলে যাতে তাদের এন্সামিক জীবনযাত্র। পদ্ধতি চিন্তাধারা গ্রহণে বাধ্য কর! যায়।” এর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সংখ্যালঘুদের বিতাড়িত করা হয়েছে, তাদের আগ্রেয়াস্ত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে, নিবিচারে সংখ্যালঘুদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দের কাছে প্রতিকারের আশায় আগত সাধারণ লোকদের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।

ছাড়া লীগ শাসনের আমলে সংখ্যালঘুদের বাস্তত্াগের অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে পাসপোর্ট ভিপা প্রথার প্রবর্তন পাকিস্তানের এলামিক সংবিধান দ্বীকার ইত্যাদি এল্সামিক সংবিধান স্বীকৃত হবার পরই মাসে প্রায় ৫*০*-এর হারে সংখ্যালঘুরা বাস্তত্যাগ কর। আরম্ত করেন বলে সংখ্যালঘুদের কাছে এল্সামিক সংবিধানের তাৎপর্য কি তা জানা অপ্রাসঙ্গিক হবে না! ১৯৫৬ সনে বিধিবদ্ধ এই সংবিধান অনুসারে ইপলামের অনুগামী ন]| হওয়ার জন্য কোন অমুসলমান রা্রপ্রধান হতে পারবেন না। এই সংবিধান অন্সাবে স্ন্না কোরান-বিরোধী কোন খিধব্যবস্থা পাকিস্তানে আইনসিগ্ধ হবে না। এ্রক্সামিক সংবিধান অনুসারে অমুপলমানেরা জিম্মী এবং তাই পাকিস্তানেও তার] সম- অধিকারবিশিষ্ট নাগরিক নন-জিম্মী মাত্র। আবার শরিযুৎএ জিম্মীর মর্ধাদা যতই মহান বলে উক্ত থাক না কেন, বাস্তববিচারে পুৰ পা(কস্তানের পাধারণ

পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের ভবিষ্ৎ ৭৩,

অধিবাসীর কাছে জিম্মীর অর্থ দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক এবং প্রত্যুত জিম্মীর] হল ভারতবর্ষে যে-সব মুসলমান রয়ে গেছেন তাদের প্রতিভূ। ভারতীয় মুসলমানদের কোন অস্থবিধা হলে তার দায়দায়িত্ব পুর্ব পাকিস্তানের এইসব জিম্মীদের এন্সামিক সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর ইসলাম প্রত্যুত পাকিস্তানের সরকারী ধর্মের পর্যায়ে উন্নত হয়েছে এবং স্বভাবতই এই পরিবেশে অমুসলমানদের পক্ষে নিজেদের খাঁপ খাইয়ে নেওয়া কঠিন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ প্রাদেশিক পরিষদসমূহের অধিবেশন শুরু হয় কোরানশরিফ থেকে আবৃত্তি দ্বারা পরিষদের সংখ্যালঘু সদশ্যাদের সে সময়কার বিব্রত অবস্থা সহজেই অঙ্গমেয়। স্কুল-কলেজ, সরকারী দপ্তরে মসজিদ এন্সামিক উপাসনার ব্যবস্থা হয়েছে রমজান মাসে এমনকি অমুসলমানদের দ্বারা পরিচালিত খাবারের দোকান সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি এমনভাবে ঢেকে রাখার নিয়ম যাতে খাবার মুপলমানদের চোখে পড়ে তাদের প্রলুব্ধ না করে। ছাড়া সময় প্রকান্তে ধূমপানও নিষিদ্ধ এইসব বিধানের উল্লঘন হলে শাস্তি পেতে হয়। পাঁঠ্যপুস্তকপযূহের মারফত বিধিবদ্ধভাবে এনল্সামিক সংস্কৃতি প্রচার করে সংখ্যালঘু অমুপলমানদের উপর সাংস্কৃতিক বিজয় স্থচিত করার ব্যবস্থা রয়েছে।

মুসলিম লীগ শাসনে আমলে পূর্ব পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত এইসব অনাচারের জন্য কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষেরা অথবা কংগ্রেস কর্মীরা সেদেশ ত্যাগ করেননি যোগেন্দরচন্দ্র মলের মত লীগ সমর্থক তপশীল নেতা কেন্ত্রীয় পাক সরকারের মন্ত্রী এবং শ্রীঘতী ইল! মিত্রের মত কমিউনিস্ট কর্মী যার! চিরকাল নীতিগতভ।বে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দোহাই দিয়ে মুসলিম লীগকে সমর্থন করেছেন তাদের মত আরও অনেককে পূর্ব পাকিস্তান ছাড়তে বাধ্য হতে হয়।

১৯৫৪ সনে প্রাগুবয়ক্কদের ভোটাধিকারের ভিভ্ভিতে পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এই নিধাচনে মুসলিম লীগ প্রচণ্ভাবে পরাজয় বরণ করে। বিজয়ী ইউনাইটেড ফ্রণ্টের নেতৃত্রয়--ফজলুল হক, শহীদ সথরাবদি মৌলান! ভ'সানী সংখ্যালঘুদের প্রতি স্থবিচারের আশ্বাদ দেন এং কার্ধতঃ তার! যতদিন ক্ষমতায় অধিঠিত ছিলেন সংখ্যালঘুর নিজেদের নিরাপত্ত। সম্বন্ধে বেশ কিছুটা নিশ্চয়তা বোধ করেছিলেন মাঝে হক সাহেবের মন্ত্রীমগ্লীকে কেন্দ্রীয় পাক পরকার বাতিল করলে নিরাপত্তাবোধের অভাবে সংখ্যালঘুরা আবার পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে চলে আনতে আরম্ভ করেন। কিন্তু আবুহোসেন সরকার

৭৪ বাঙলা! বাঙালী

আতাউর রহমান খানের মন্ত্রীত্বের আমলে তীদের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক নীতির জন্য পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুর আবার ম্ুদিনের মুখ দেখতে পান। কিন্তু ১৯৫৯ সনের অক্টোবর মাঁপে পাকিস্তানে যে জঙ্গী শান প্রবতিত হয় তার ফলে সংপ্যালঘুদের এই সাময়িক স্থর্দিন চলে গিয়ে আবার অত্যাচারের তপ্ত কটাহে নিক্ষিপ্ত হতে হয়

আমু খার জঙ্গী শাসনের আমলে মুপলমান রাজনৈতিক নেতাঁদের সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রবাপ্রের নেতৃবৃন্দকে নিগৃহীত হতে হয়। সতীন সেন কারাপ্রাচীরের অন্তরালে নিহত হন এবং মনোরঞ্জন ধর, ধীরেক্রনাথ দত্ত চারুচন্দ্র চৌধুরী প্রমুখ বহু সংখ্যালঘু সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি কারারুদ্ধ হন। এ'দের মধ্যে অনেকে এখনও অনিদিষ্ট মেয়াদের কারাদণ্ড ভোগ করেছেন এদের সঙ্গে যোগাযোগের অপরাধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু সাধারণ অধিবাসীকে নানাভাবে হয়রান করা হয়েছে

লীগ শাসনের আমলে সংখ্যালঘুদের আপত্তি সত্বেও পুর্ব পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ তাদের দুর্বল করার জন্য সংখালঘুদের নির্বাচকমণ্ডলীকে (ক) হিন্দু খ) তপশিলী- হিন্দু গ) বৌদ্ধ (ঘ) খ্বীষ্টান_-এই চার 'ভাগে বিভক্ত করেন। তবে বিভক্ত হলেও লীগ আমলে শাপনযন্ত্রে সংখ্যালঘুদের কিছুট। প্রতিনিধিত্ব ছিল। কিন্ত জঙ্গী শাসনের পর যে তথাকথিত ধবধানিক শান প্রবর্তিত হল, তার আমলে আমন খার বুনিয়াদি গণতন্ত্রের মহিমায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের পাকিস্তানের লোকসভা ) ১৫৯ জন সদস্তের মধ্যে সংখ্যালঘুদের একজনও প্রতিনিধি থাকল না। আর পূর্ন পাকিস্তানের প্রাদেশিক বিধানসভাষ্‌ ১৫০টি আপনের মধ্যে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি মাত্র তিনজন। এর একজন হলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি এবং দুজন তপশিলী হিন্দু সমাজের বলা বাহুল্য সংখ্যালথুবের সর্ঝাপেক্ষ। মুখর অংশ-_বর্ণহিন্দুদের কৌশলে বাদ দিয়ে তিনজন দুর্বলচেতা বশংবদ ব্যক্তিকে পূর্ব পাকিস্তানের সানির প্রতিনিধি হিসাবে বিশ্বের দরবারে পেশ করার জঙন্তই এই ব্যবস্থা

সংখ্যালঘু সম্প্রনায়ের কেউই শাপনযস্ত্ের উচ্চপদে নেই-_ইউনাইটেড : ফ্রন্টের আনলে যে ছু-চারজন কাজ পেয়েছিলেন জঙ্গী ঠা আমলে তাদের পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছে বেসরক!রী দপ্তর বা ব্যবসাবাণিজ্যের প্রতিষ্টানেও সংখালথুদের কাজ মেলা ভার সংখ্যালঘুদের বাব্সাঁবাণিজ্য করে জীবিকা অর্জন করার সুযোগও ক্রমশঃ অধিকাধিক মাত্রায় সংকুচিত হচ্ছে।

পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের ভবিস্থুৎ ৭৫

শিক্ষকত। অধ্যাপনা হিন্দু সমাজের এক পুরাতন পেশ! ? কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মারফত এল্লামিক সংস্কৃতি প্রবর্তন মানসে হিন্দুদের অশিক্ষত| থেকে দুরে রাখছেন রাজশাহীর বি. বি. হিন্দু আকাদেমী, সংস্কৃত কলেজ এবং কুমিল্লার বিখ্যাত ঈশ্বর পাঠশালা নিবেদিত৷ বালিকা বিদ্ভালয় প্রমুখ সংখ্যালঘুদের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘকাল যাবৎ সরকার দখল করে নিয়েছেন

পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাঁপী সংখ্যালঘুদের অধিকাংশ লোকের জীবিকা হল জমি থেকে প্রাপ্ত উপন্বত্ব। পূর্ব পাকিস্তানে জমিদারী প্রথার বিলুপ্তি হওয়ায় প্রধাঁনতঃ মধ্যস্বত্বভোগী সংখ্যালঘুর! ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তবে কাল স্বয়ং জমিদারী জমি সংক্রান্ত অন্যবিধ মধ্যস্বত্বের বিরুদ্ধে বলে সংখ্যালঘুদের অন্ন চলে গেলেও জমির মধ্যন্বত্ব বিলোপের বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য কর! হবে না। কিন্ত তাই বলে পুর্ব পাকিস্তানের মুঘলমান নাগরিকদের জমির উপর যতটুকু অধিকার আছে সংখ্যালঘুদের তার থেকেও বঞ্চিত করলে সে ব্যাপারকে নিছক পক্ষপাত ছাড়া আর কি আখ্া। দেওয়া যায়? মুসলিম লীগ আমলেই জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতিরেকে সংখ্যালঘুদের দশ বিঘার অতিরিক্ত জমি হস্তান্তর কর! নিষিদ্ধ ছিল এবং গোপন সাকুলারে জেলা ম্যাজিষ্রেটদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে তার যেন পারতপক্ষে সংখ্যালঘুদের জমি হস্তাম্তরের অনুরোধে রাজী না হন। আমুবশাহী আরও একধাপ অগ্রসর হয়ে নির্দেশ জারী করল যে ইউনিয়ন কাউন্সিল থান। ইত্যাদি সরঙ্তারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জাতীয়তাঁর সার্টিফিকেট দাখিল ব্যতিরেকে সংখ্যালঘুদের জমির কোনরকম হস্তাস্তর চলবে না। এদিকে পরিবারের কর্তার ছেলেমেয়ে ভাই বোন-_-কেউ যদি ভারতীয় নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে তাকে আর জাতীয়তার সার্টি- ফিকেট দেওয়! হয় না। শুধু তাই নয় সাবরেজিস্্রারদের গোপন সাকু'লারে নির্দেশ দেওয়। হয়েছে যে জমি বিক্রয়েচ্ছু সংখ্যালঘুর কোন আত্মীয় ভারতীয় নাগরিক বলে তার সন্দেহ হলেই তিনি তার জমি বিক্রয়ের দলিল রেজিদ্তরি করণে অস্বীকার করতে পারবেন। এর ফলে পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা বিবাহ শ্রা্ধ অথবা শিক্ষা ইত্যাদির ব্যপ়্ নির্বাহ কিংবা খণ পরিশোধের জন্য সংখযা- লঘুদের জমি হস্তাস্তর করার উপায় নেই। আর ফেক্ষেত্রে সম্ভব সেখানেও পূর্বোক্ত গোপন সাকু'লারের অন্য সংখ্যালঘুদের ঘুষ দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে।

জমি হস্তাস্তরে বাধ! হৃষ্টি করে সংখ্যালঘুদের ব্যতিব্যস্ত করার একটি

৭৬ বাঙলা বাঙালী

সাম্প্রতিক নিদর্শন হল ১৯৬৪ সালের জানুয়ারির দাঙ্গার পর সংখ্যালঘুদের জমি হস্তান্তর নিবিদ্ধ করার উদ্দেশ্টে জারী করা অডিনান্স। এর ফলে বাস্তত্যাগেচ্ছুক্ক সংখ্যালঘুদের নিংস্বভাবে ভারতে আসা ছাড়৷ গত্যন্তর নেই। সৌভ!গ্যের কথা সম্প্রতি ঢাকা হাইকোর্টের এক রায়ে এই অন্তিনান্সকে অবৈধ ঘোষণ! করা হয়েছে কারণ নির্দেশ পাক “শাপনতন্ত্র নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের বিরোধী” তবে পাকিস্তান সরকার গ্যায়ালয়ের এই রায়কে মর্ধাদা দিয়ে সংখ্যালঘুদের গীড়নকারী এই অভ্ডিন্তান্স প্রত্যাহার করতে অনিচ্ছুক বলে ঢাকা হাইকোটের রা কার্ধকর ন! করার ব্যবস্থা করেন

পূর্ব পাকিস্তানের বহু যৌথ হিন্দু যধাবিত্ত পরিবারের একাংশ অনেককাল যাবৎ পশ্চিমবাঙল! সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চাকুরি ব্যবস। ইত্যাদি পেশায় নিযুক্ত ছিলেন আয়ু খার আমলে ইউনিম্নব কাউন্সিলসমূহের অধ্যক্ষদের কাছে গোপন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে যেপন সম্পত্তির কোন অংশীদা? পকিস্তানের বাইরে থাকতেন সম্পন্তির পেইনৰ অংশকে নিদেশীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি বিনেচনা কবে তারা যেন তার দখল নেন। এর ফলে সম্পত্তির অন্য শরিকদের টেকা দায় হযেছে কারণ তাদের পক্ষে এই জাতীয় যৌথ মাঁলকানার পুকুরের মাছ 'অথনা বাগ!ন ক্ষেতের ফসল বিক্রি করে সংসার প্রতিপালন অপশুন হযে পডেছে। শুপু তাই নয় অনেক ইউনিয়ন কাউন্সিলের অধ্যক্ষের চাপে এমনকি তাদের বাস্তুভিটার একাংশে মুললমানদের থাকতে দিতে হযেছে। এইসব মুসলমান আবার অনেক সমগ্র বদপ্ররুতির লোক এবং বহুক্ষেত্রে এরা "ভারত থেকে আগত উদ্ধান্্॥। তাই সর্বদাই কোন না কোন ছলে বিবাদ-খিসম্বাদ ঘটিয়ে ওইসব বাস্তভিটা সম্পত্তি থেকে হিন্দু অংশীদারদের উৎখাত করাই এদের লক্ষ্য হয়।

যেখানে এইভাবে মুদলমাঁনদেব বসানো সম্ভব হয়নি সরকারী নির্দেশে পেখানে পাকিস্তানের বাপিন্দা যৌথ সম্পত্তির অংশীদারদের তাদের ভারতস্থ অংশীদারের সম্পত্তির আয় ব্যাঙ্কে এক বিশেষ খাতে জমা দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তবে গ্রয়াজনে এই টাকা ওঠাবার ক্ষমত৷ তাদের নেই। ফলে পারিবারিক দেব-নিগ্রহের পুজা অর্চনার ব্যয় নির্বাহ বা ভারতস্থ অংশী- দারের সম্পন্তির খাজনা ইত্যাদি দেওয়ার উপায় নেই। ভারতস্থ অংশীদার তার পাকিস্তানের শরিককে শিজ অংশ দান করতে চাইলেও করতে পারেন না। এর পরিণামে অনাদায়ী খাজনার দায়ে তাদের অংশ মুসলমাণদের কাছে

পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের তবিষ্তুৎ দূ

বিক্রি হয়ে যায় এং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এন সব লোকের! এই অংশ কেনেন ধারা সম্পত্তির সংখ্যালঘু অংশীদারকে নানাভাবে হয়রান করে বাকি অংশটুকু আত্মসাৎ করার অভিসদ্ধি পোষণ করেন

ইন্ভাকুয়ী প্রপার্টি আযডমিনিস্ট্রেশন আযাক্ট অনুসারে গঠিত ইভাকুযী প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে মনোনীত সংখ্যালঘু সমাজের প্রতিনিধি থাকলেও প্রায়শঃ তার] ছুধল বশংবদ প্রকৃতির হন বলে কমিটি পক্ষপাতিত্ব করে পাকিস্তানত্যাগীদের সম্পত্তির অধিকার মুসলমানদের দিয়ে দেন। এছাড়। পাসপোর্ট দেবার ব্যাপারে সংখ্যালঘুদের উপর পক্ষপাতত এবং ছুষ্টপ্রকৃতির মুসলমান কর্তৃক জোরজব্রদস্তি করে সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রের ফল, বাগানের ফল পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে ধাওয়া কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ কর] সত্বেও যায়বিচার না পাওয়া ইত্যাদি আরও বহুবিধ কারণে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা দলে দলে বাঁপ্তত্যাগ করছেন

পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের অবস্থা স্থ্ধে প্রবীণ বিপ্লবী নেতা ভ্রেলোক্য চত্র?তী (মহারাজ) মহাশয়ের হৃদয়বিদারক বিবুতিটি (আনন্দবাজার, ১৫।৩।৬৪) প্রসগ্গে ম্বরণীয়। এছাড়া স্টেটপম্যানের কলকাতা সংস্করণে ওরা ৪ঠা এপ্রিল ১৯৬৪ শ্রীই্টাব্ধে প্রকাশিত শ্রযু্ত কেদার ঘোষ মহাশয়ের ছুটি প্রবন্ধ এবং ওই পত্রিকাতেই ১২ই মার্চ :৬৪ খ্রীষ্টাব্ডে প্রকাশিত মৈমনসিংহ জেলার রান আদিবাসীদের মধ্যে একদা কর্মরত পাত্রী সি. ভিক্টর. বান্নাড সাহেবের দীর্ঘ পত্রও পূর্ব পাকিস্তানের খ্রীষ্টান সংখ্যালঘুদের বাস্তত্যাগের কারণ বুঝতে সাহায্য করবে। ১৯৬৫ সনে প্রকাশিত ভারতীয় জুরিস্ট কমিশনের এতৎ- সঞন্ধীয় প্রতিবেদনে সাক্ষ্য সহযোগে প্রমাণ কর৷ হয়েছে যে “পাকিস্তান ১৯৪৮ শ্রীগ্রাব্ধের বিশ্বণীন মানবিক অধিকার ঘোষণার ১৪টি অনুচ্ছেদ ভঙ্গ করেছে এবং জাতিহত্যা (জেনোসাইড ) কনভেনশনের তৃতীয় অনুচ্ছেদে দণ্ডনীয় বলে বণিত চারটি ধার! অন্গপারে অপরাধ করেছে” (যুগান্তর, ১২ই চৈত্র ১৩৭১)। এছাড়া সংখ্যালঘুদের বাস্তত্যাগের কারণ অস্থসন্ধানের জন্য ভারত সরকার কতৃক গঠিত কমিশনের সমক্ষে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তর] সাক্ষ্যদান প্রসঙ্গে যেসব কথা বলেছেন (যাঁর সামান্য অংশমাত্র সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে) তার থেকে পুর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের যে বিভীষিকার রাজত্বে কাল কাটাতে হয়েছে তার সম্যক প্রমাণ পাওয়! যাবে।

৭৮ বাঙলা বাঙালী

|

এইবার দেখা যাক পূর্ব পাকিস্তান থেকে সংখ্যালঘুদের বান্তত্যাগের পূর্বোক্ত কারণগুলির অদূর-ভবিষ্যতে দুর হওয়ার সম্ভাবনা! আছে কিনা।

অদুর-ভবিস্ততে পাক সামরিক শাসনের চারিত্রধর্ম_সংখ্যালঘুদের উপর পক্ষপাতমূলক আচরণ করা--পরিবতিত হওয়ার বিশেষ আশা নেই। তবে একেবারে নেই ত1 নয়-ক্ষীণ আশার স্ত্রটুকু হল পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবর রহমান যদি সরকার গঠন করতে পারেন। এর কারণ সম্ভবতঃ পাকিস্তান স্ঙ্টির মূলে নিহিত। হিন্দুদের প্রতি অবিশ্বাস হিন্দুবিদ্বেষকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের জন্ম হয় এবং এক ইউনাইটেড ফ্রণ্টের কিঞ্চিদিধিক তিন বৎসরের শাসনকাল ছাড়া এযাবৎ সর্বদাই পাকিস্তানের শাসকগণ তাদের দেশের সব অভাবশ্অস্থবিধার কারণম্বরূপ ভারতের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করার প্রথা গ্রহণ করেছেন এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে পাক-শাসকদের চোখে স্বধীন ভারতবর্ষ অতীতের হিন্দু সত্তার প্রতীক ব্যাপারে আমুব ইয়াহিয়া সরকার সেকালের মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল অংশের সার্থক উত্তরসাধক।

পূর্ব পাকিস্তানে আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হবে না-__এ কথা জোর করে বলা যায় না। বরং এর উপ্টোটাই সম্ভব অর্থাৎ পাকিস্তানের শাসকবর্গ প্রয়োজন বোধ করলে খুলনার দাঙ্গার নায়ক পাকিস্তানের অন্যতম মন্ত্রী সবুর মিঞার মত কাউকে দিয়ে দাক্ষা লাগিয়ে দিতে পারেন আর স্থানীয় ছোটখাট সাম্প্রদায়িক বিবাদে শাসন কর্তৃপক্ষ যে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্্‌ করবেন কথ! বলাই বাহুল্য

অনুরূপ কারণে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালখুদের নিরাপত্তাবোধ ফিরে আসবে অথব] সম্পত্তির অধিকার ভোগ-দখল করার ব্যাপারে তাদের উপর .যেসব বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়েছে, ত। দূরীভূত হবে, এমন ভরস। হয় না

ভারত সরকার যে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য বিশেষ কিছু করতে পারবেন তার সম্ভাবনা! নেই। কারণ পাকিস্তান এক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুর। সেই রাষ্ট্রের নাগরিক বলে আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অন্ুদারে তাদের সম্বন্ধে ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ কিছুই ধরণীয় নেই। যে ভ্রান্ত ধারণাপরবশ হয়ে শ্বাধীনতার প্রাক্কালে জওহরলাল নেহরু, ব্ল্লভভাই প্যাটেল, শ্ঠামাপ্রপাদ মুখোপাপ্যায় প্রমুখ নেতৃবৃন্দ পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিলেন, তা যে কত

পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের ভবিস্তুৎ গল

অসার তা! এই দীর্ঘ কয় বছরের অভিজ্ঞতায় বুঝে নেওয়া উচিত। অবশ্ব এখনও কোন ভারতবাসী ( যদিও দায়িত্বশীল মহলের তারা কেউ নন ) মনে করেন ফে হায়দ্রাবাদের মত পূর্ব পাকিস্তানে পুলিশী ব্যনস্থা অবলম্বন কর! উচিত কিন্তু এ'রা স্বপ্ররাজ্যে বাস করছেন। কৃটনীতির কৌশলে পাকিস্তান পাশ্চাত্য সামরিক জোটের সদশ্য এবং রুশ চীনের সঙ্গেও তার গভীর আতাত। এমতাবস্থায় আমেরিকা, ইংলও, রাশিয়া চীন সবাইকে শক্র করে ভারতের পূর্ব পাকিস্থান আক্রমণ করা উচিত কিনা এবং করলেও সে প্রচেষ্টায় কতট! সাফল্যলাভ কর] সম্ভব তা সহজেই অনুমেয় এজাতীয় উন্মাদ পরিকল্পনার নৈতিক দিকের কথা না হয় ছেড়েই দেওয] হল।

ভারত পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বিনিময় এমনি আর এক উন্মাদ পরি- কল্পনা পাঞ্জাবে স্বাধীনতালাভের প্রাক্কালে রক্ত অশ্রম্োতে যা সম্ভবপর হয়েছিল বর্তমানে পাকিস্তান বা ভারতে তা সম্ভব নয়। এছাড়া ভারতে যদি একজনও যথার্থ ভারতীয় মুসলমান থাকেন (বাস্তবপক্ষে এদের সংখ্যা এক নয়, অনেক এবং পাকপ্রেমী ভারতীয় মুসলমানদের সংখ্যাই অপেক্ষাকৃত কম ) তাঁহলে তাকে পাকিস্তানে চলে যেতে ব্লার কি অধিকার আমাদের 'আছে? এছাড়। আমাদের খেয়াল রাঁখতে হবে যে যদি এই প্রস্তাব কার্ষকর করা সম্তব হয় তাহলে আমরা ৮* লক্ষের কিছু বেশী পাক সংখ্যালঘুদের নিয়ে কোটির বেশী ভারতীয় মুসলমানকে পাকিস্তানে পাঠাব। ৫২ লক্ষ সংখা।লঘু পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে আসায় আমরা যদি ত..দর জন্য পাকিস্তানের কাছ থোক জমি দাবি করার কথা ভাবি তাহলে অতিরিক্ত কোটিরও বেশী মুসলমানের জন্য পাকিস্তান আনুপাতিক হারে ভারতবর্ষের কাছ থেকে জমি দাবি করবে না? করলে ভারতের কোন্‌ অংশ আমরা নৃতন করে পাকিস্তানকে দেব-_পশ্চিমবর্গ না আসাম?

কেউ কেউ মনে করেন যে ভারতীয় মুসলমানদের জিম্মী করে রাখা, তাদের পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের প্রতিভূ বিবেচনা করা সমস্যার একটা সমাধান এই মনোভাব বলে যে নোয়াখালির দাঙ্গার জবাবে বিহারের দাঙ্গা, খুলনার দাঙ্গার জবাবে কলকাতার দাঙ্গ! এবং ঢাকার দাঙ্গার জবাবে জামশেদপুর রোৌরকেলার দাঙ্গা হল সমস্তা সমাধানের কার্ষকর নীতি। এই যুক্তি পেশকারীদের কাছে ঢাকার রহিমের অপরাধে জামশেদপুরের রহমানের গল! কাটার নীতিগত অযৌক্তিকতার কথা বল! নিরর৫থক। কিন্তু একটি কথ।

৬৪ বাঙলা বাঙালী

এদের জেনে রাখা ভাল এবং তা হল এই যে ভারতীয় মুদলমানদের সত্য বা কাল্পনিক দুঃখে অস্র বওয়ানে| পাকিস্তান শাসকদের রাজনৈতিক কৌশলের অঙ্গ, তাদের সমগ্তার পমাধানের বাস্তব ইচ্ছ! পাকিস্তান সরকারের নেই। এর জাঁজল্যমান প্রমাণ হল পাকিস্তানে ভারত থেকে যেপব মুপলমান উদ্বাত্ত গেছেন তাদের দুরবস্থা এখনও তাদের অধিকাংশ শোচনীয় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন দ্বিতীয় প্রমাণ হল এই যে পাকিস্তান স্থটি হবার পর লক্ষের বেশী পূর্ব পাকিস্তানী মুসলমান অর্থনৈতিক অন্যবিধ কারণে বেআইনীভাবে ভারতের সীমান্ত অঞ্লগুশিতে এসেছেন স্বীয় নাগরিকদের অন্নবস্্র সমস্তার সমাধানে অক্ষম সরকার অপর রাষ্ট্রে নাগরিকদের শুভাশুভের জন্য চিন্তিত হবে মনে করা বাতুলতা। আর তা ছাড়া এই মনোভাবের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘু- দের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে। একথা মনে করার সঙ্গত কারণ আছে যে গতবার খুলনার প্রতিক্রিয়ায় কলকাতায় দাঙ্গা না বাধলে ঢাকা অন্ান্ত জায়গার দংখ্যালধুদের প্রাণ যেত না এবং তাদের ধনসম্পত্তিরও ক্ষতি হত না।

মাঝে মাঝে কোন দাঙ্গার পর ভারতবর্ষে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের সপক্ষে জনমত উদ্বেল হয়ে ওঠে এবং এই উদ্বেল জনমত সময় সময় ভারতীয় মুসলমানদের উপর সমজাতীয় অত্যাচারের অনুষ্ঠান করে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবার আত্মপ্রসাদ লাভ করলেও কথা এক নিষ্টুর সত্য যে মোটামুটি ভারতবর্ষে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা খুব একটা বাঞ্চিত আগন্তক নন। এই কারণেই মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট দিতে এত কড়াকড়ি এবং বর্ডার সিল করে দেওয়। ইত্যাদি ব্যবস্থার শরণ নিতে হয়। এই কারণেই গত দাঙ্গার পর এবং ১৯৭০ সনে আগত শরণার্থাদের ভারতবর্ষের মাটিতে পা রাখামান্র হয় দণ্ডকারণ্যে যেতে বাধ্য করা হয় আর নচেৎ যাবতীয় সরকারী সাহায্য থেকে বঞ্চিত করা হয়। অবশ্ত এইসব সরকারী ব্যবস্থার সপক্ষে সত্রকারের অনেক কিছু বক্তব্য আছে এবং সেইসব বক্তব্যের অনেকটাই হয়তো যুক্তিযুক্ত তবে পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের সাধারণভাবে এদেশে অবাঞ্ছিত মনে করা হয়-_-এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারী ব্যবস্থার সমর্থনে উপস্থাপিত সুক্তিসযূহ অপ্রাসঙ্গিক |

পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে বিশেষ করে অর্থনৈতিক পুনর্বাসনে আমর! শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছি ১৯৬৪ সনের জানুয়ারির দাঙ্গার পূর্ব পর্যন্ত সর্বসাকুল্যে ৪২ লক্ষের বেশ উদ্বাস্ত এদেশে

পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের ভবিষৎ ৮১

আসেনি এ'দের মধ্যে লক্ষ কোন সরকারী সাহায্য না নিয়ে নিজেদের প্রয়াসে ভারতবর্ষে পুনর্বাসিত হয়েছেন বাকি ৩৪ লক্ষ প্রধানতঃ পশ্চিমবঙ্গ আপাম ত্রিপুরা দণ্ডকারণ্যে এবং হ্বল্পসংখ্যায় আরও কয়েকটি প্রদেশে বসতি স্থাপন করেছেন এদের মধ্যে অধিকাংশকেই কোন রকমের একটু মাথা গৌোজার ঠাই করে দেওয়া ছাড়! স্ুপরিকল্পিতভাবে আথধিক পুনর্বাসন দেওয়া সম্ভব হয়নি পুনর্বাসনের মত একটি মানবিক সমস্যা বিজড়িত কাজের দায়িত্ব একান্তভাবেই সরকারী আমলাদের হাতে ছেড়ে দেওয়। হয়েছে এবং তার ফলে পুনর্বাসন দপ্তরের কাজ আর পাচট। সরকারী দপ্তরের মত চলছে যেখানে হৃদয়বৃত্তি অথ 7 ক্ষিপ্রতার কোন স্থান নেই এবং এর চেয়েও শোচনীয় ব্যাপার এই যে বছরের পর বছর কংগ্রেস, যাবতীয় বিরোধী দল এবং তাঁবৎ সমাজ- সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এই ব্যবস্থাতে সন্তষ্ট আছেন। সংবাদপত্র জনসভা অথবা বিধানসভা ইত্যাদিতে সরকারী পুনবাসন নীতির বিকুদ্ধে অনলবর্ষী বক্তৃতা দেওয়ার কোন মূল্য নেই। উদ্বাস্তদের আথিক পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য যৌজনাবদ্ধভাঁবে তাদের সন্্রিয় নেতৃত্ব দেওয়া, তাদের নিয়ে প্রত্যক্ষভাবে কর্ষে লিপ্ত হওয়া__এ ব্যাপারে ভারতবর্ষের আমরা সবাই যে ব্যর্থ হয়েছি একথ। দিবালোকের মত ম্পষ্ট। অথচ প্রাণের টান থাকলে কেবল যে উদ্বাস্তর। এসেছেন তাদেরই নয়, পুর্ব পাকিস্তানের তাবৎ সংখ্যালঘুদের সুষ্ঠ পুনর্বাসন ব্যবস্থা অসম্ভব ছিল না। শ্রীযুক্ত অরুণচন্দ্র গুহের মতে (লোকসভার বক্তৃতা ১২২1৬৪ ) পূর্ব পাকিস্তানের তাবৎ সংখ্যালখুর সংখা! ভারতের এক বৎসরের স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধিরও কম এবং যে দেশ চতুর্থ পরিকল্পনাষ ২২ হাজার কোটি টাক] ব্যয় করবে বলে স্থির করেছে তার পক্ষে এই উদ্ধাস্বদের সুষ্ঠ পুনর্বাসনের জন্ঘ ৩৬০ কোটি টাকা ব্যয় করা খুব কঠিন ব্যাপার নয়। টাকাও বড় কথা নয়। সরকারী হিসাবে প্রকাশ উদ্বাত্ত পুনর্বাসনের জন্য ভারত সরকার এযাব ৫০ কোটি টাক খরচ করেছেন কিন্তু তাতে ফল হয়েছে কতটুকু? তো গেল সরকারী প্রচেষ্টার কথা। কেবল পশ্চিম বাঙলার জনসাধারণ ইচ্ছা করলে সমস্যার সমাধান কিভাবে করতে পারেন তার একটি আভাস দিয়েছিলেন প্রবীণ সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় 'যুগাস্তরে” প্রকাশিত তার “গ্রামের চিঠিতে পশ্চি 'বঙ্গের প্রতিটি গ্রামে কেক করে পরিবারের দারিত্ব নিলেই বেসরকারীভাবে সমশ্তার সমাধান হয়। তাই যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপানের ক্ষিপ্রগতিতে পুনর্গঠন অথবা পশ্চিম জার্মানী বা..৬

৮২ বাঙলা বাঙালী

ইজরাইল ইত্যাদি রাষ্ট্র কর্তৃক যেভাবে বহু সংখ্যক উদ্বাস্ত সমস্তার সমাধানের নিদর্শন দেখ! যায় তখন ব্যাপারে আমাদের ব্যর্থতা পর্বতপ্রমাণ হয়ে ওঠে।

তেইশ বছরে বাহান্ন লক্ষ উদ্বাস্ত নিয়ে যদি আমরা এইভাবে হিমসিম খেয়ে থাকি এবং গত এক বছরে আড়াই লক্ষ উদ্বাস্ত আসায় যদি ভারতবর্ষের মত বিশাল দেশ বিব্রত হয়ে থাকে তাহলে স্ৃপরিকল্পিতভাবে এক আধ বছরের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের বাকি আশি লক্ষ উদ্বাস্তকে ভারতবর্ষে এনে পুনর্বাসিত করা৷ কী কঠিন ব্যাপার তা। সহজেই অনুমেয় কোন যাছুমন্ত্র প্রভাবে সরকারের উদ্বাস্ত পুনর্বাসন বিভাগের আমলার অচিরাঁৎ বহুগুণ যোগ্যতা অর্জন করবেন না এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমাজসেবাযূলক প্রতিষ্ঠানসযৃহও কর্তব্য-ভাবনায় উদ্বেল হয়ে উঠবেন না এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পুর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তদের ভারতবর্ষে আসার পর পুনরায় বহু সংখ্যায় পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার কারণ বোঝা যাবে ১৯৬৫ সনের ২র] এপ্রিল বিধানসভায় তদানীত্তন মুখ্যমন্ত্রী শীযুক্ত গুফুল্লচন্্র সেন মহাশয় বলেন, “১৯৬৪-ব জানুয়ারীর দাঙ্গায় পনেরে। মাসে'-মোট প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ উদ্বাস্ত ভারতবর্ষে আমেন | ইহার মধ্যে ছিয়াশি হাজার পাকিস্তানে চলিয়া গিয়াছেন-_-ইহাই সবচেয়ে ভাবনার কথ] ।...পুনর্বাসন ব্যবস্থা সত্বেও উদ্বাত্তরা কেন গেলেন? সর্বস্বান্ত হইয়া যদি আসিয়া থাকেন, তবে ফিরিয়া যাইবেন কেন? ইজ্জত ধর্ম থাকিবে না, বাস কর] অসম্ভব, তবে ফিরিয়া গেলেন কেন ?” ( যুগান্তর ৩।5।৬৫ )

71 8

তাহলে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎ কি?

বাস্তব অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় যে আগামী কয়েক বছরে হয়তো আরও কয়েক লক্ষ সংখ্যালঘু দেদেশ থেকে ভারতবধে চলে আসবেন কিন্তু তারপরও বেশ কয়েক লক্ষ_ হয়তো বা পঞ্চাশ লক্ষ বা তারও বেশ সংখ্যালঘু নিছক পেটের দায়ে পূর্ব পাকিস্তানে থাকতে বাধ্য হবেন। ইতিমধ্যে ম্বাভাবিকভাবে তাদের জনপংখ্য। বুদ্ধি পাবে এবং কয়েক বৎসরের মধ্যেই সেই সংখ্যা ভারত বাবচ্ছেদের সময় পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের সংখ]ার সমতুল হওয়াও বিচিত্র নয়। অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের সমস্যা যথাপূর্বং রয়ে যাবে

পেটের দায়ে ধার! রয়ে ষেতে বাধ্য হবেন স্বভাবতই ধর্ম সংস্কৃতি ইত্যাদি

পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎ ৮৩

তাদের কাছে ক্রমশঃ গৌণ ব্যাপার হয়ে উঠবে। ১৯৬৪ সনের জানুয়ারির দাঙ্গ'র পর আগত যেসব উদ্বাস্ত ভারত থেকে আবার পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন তাদের অনেকের ভিতরই এই মরিয়া ভাব লক্ষিত হয়েছে। তাদের মনোভাব কতকট1 এই রকম £ শেষ আশা-ভরসার জায়গ। ভারতবর্ষেও যখন কোন ব্যবস্থা হল না! তখন ভাগ্যে বাচামরা যাই থাক তা পূর্ব পাকিস্তানেই সংঘটিত হোক। এই রকম নৈরাশ্বপীড়িত চরমপন্থী লোকদের ধর্মাস্তরিত হুওয়। মোটেই আশ্চর্যের কথা নয় পেটের দায়ে বাচার তাগিদে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে, ধর্মীস্তরিত হওয়া তে তুচ্ছ ব্যাপার। অতীতে মানুষ রকম অবস্থায় অনুরূপ আচরণ করেছে, ভবিষ্যতেও করবে ভারতবর্ষে আমাদের অনেকের অহমিকাবোধ আহত হলেও একথা সত্য যে ইতিমধ্যেই পুর্ব পাকিস্তানে এর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এবং বিচ্ছিন্নভাবে হলেও ধর্মাস্তরিত হওয়ার ঘটন! ঘটছে এই বিচ্ছিন্ন প্রয়াসে জ্যামিতিক গতিবেগ সঞ্চারিত হওয় অসম্ভব নয়৷

অবশ্ঠ ধর্মীস্তরিত হলেও বর্তমানের সংখ্যালঘুরা পুর্ব পাকিস্তানের মুসলখানদের মত সমমর্ধাদীসম্পন্ন নাগরিক হতে পারবেন এর কোন নিশ্চয়তা নেই। বরং এর বিপরীত ব্যাপার ঘটাই সম্ভব। এর] পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান সমাজের এক অপাঙ্ক্তেয় অংশে পরিণত হতে পারেন। একই ধর্মাবলম্বী হওয়। সত্বেও ভারতবধের হিন্দুদের কাছে বনুযুগ যাবৎ হরিজনর] যে ব্যবহার পেয়েছেন, আমেরিকার নিগ্রোরা শ্বেতাঙ্গদর কাছে অথবা ইরাণের বাহাই সম্প্রদায় পৃথিবীর আরও বনু দেশের ধর্ম-ভাষা-সংস্কৃতিগত সংখ্যালঘুর সংখ্যাগুরূদের কাছে যে ব্যবহার পাচ্ছেন অভাবনীয় কোন কিছু না হলে পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎ তার চেয়ে উজ্জল ক্লে মনে হয় না। খোদ পাকিস্তানেই শিয়া, কাদিয়ানী মোমিন ইত্যাদি ইসলাম ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থাও প্রপঙ্গে স্মরণীয়

কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের ললাটে কি ছাড়া অপর কোন বিধিলিপির সম্ভাবনা] নেই?

আছে-_-একটির ক্ষীণ সন্ভাবন1 দেখা গেছে এবং অপরটি প্রস্তাবমাত্র।

ক্ষীণ সম্ভাবনাটি হল পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান সমাজের ভিতর আধুনিক অর্থাৎ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিস্তুতি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কিছুদিনের মধ্যেই বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের একটি শক্তিশালী

৮৪ বাউল! বাঙালী

ংশ গণতন্ত্রের মানদণ্ডে সেদেশের সরকারী বিধিব্যবস্থাকে মেপে তার মধ্যে ন্যনতা আবিষ্কার করে এবং তারপর থেকে ক্রমশঃ গণতন্ত্র মানবীয় মূল্যবোধ প্রবর্তনের দাধি পাকিস্তানে সরব হতে থাকে ১৯৫২ খ্রীন্টাব্দের ভাষা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের আধুনিক মনোভাবনার প্রথম সফল অভিব্যক্তি। এই মনোবুত্তির ব্যাপক বিজয় ঘটে ১৯৫৪ গ্রীষ্টাব্দের পূর্ব পাকিস্তানের নিধাচবে মুদলিম লীগের শোচনীয় পরাজয়ের মাধ্যমে তারপর তিন বছর ইউনাইটেড ফ্রণ্টের শাসনের আমলে পূর্ব পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক আধুনিক মানপিকতার বিকাশ হয় এবং সামরিক শাসনের আমলে এর বাহ অভিপ্রকাশ ব্যাহত হলেও আদর্শবাদের মূল শ্োত অন্ুুগ্ন আছে। সত্য ন্যায়বিচারের আগ্রহকে পৃথিবীর সবাপেক্ষা শক্তিশালী একনায়কও চিরকাল কঠরোধ করে রাখতে পারেন না এবং পুৰ পাকিস্তানে আযুব খার বেলাতেও তার ব্যতিক্রম হখনি। সাময়িক পরাঞয়ের প্লানি মুছে ফেলে সেদেশে আধুশিক মানসিকতা, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থাপ জয় একদিন হবেই এবং তখন পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুর হয়তে। ন্যায়বিচার পাদেন

আশা বে কল্পনাবিলাস নয় তার অন্যতম প্রমাণ হল পূর্ব পাকিস্তানের বিগত দাঙ্গায় প্রাতঃম্মণীয় আমীর হোদেন চৌধুরী, কাজী রউক, এমদাদ খা তাদের মত আরও বহু (মোট ২২ জন) আধুনিক মনোভাবাপন্ন মুললমানের সংখ্যালঘুদের পিরাপন্তার জন্ত প্রাণোত্পর্গ। পুর পাকিস্তানের মুখলমান সমাজের ভিতর ক্রমশঃ পরিব্যাপ্ত এই আধুনিক মানপিকতা কেহ্ল পুরোক্ত দশ-বিশজন শহীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নগ্ন প্রাণোথ্সন না করলেও সর্ববিধ বিপদের ঝুকি নিয়ে সখ]ালঘুদের বাচা ার চেষ্রা করেছেন-_-এমন বহু মহান্থভব পুধ পাকিস্তানী মুসলমানের পরিচয় বিগত দাঙ্গার সময় পাওয়া গেছে।

ত্রেলোক্য চক্র ।তী মহাশয়ের পুবোক্ত বিবৃতি পুধ পাকিস্তান থেকে আগত বহু উদ্বাপ্তদের জবানবান্দতে এইসব সবধদেশের সবকালের মনুষাগমাজের গধ্র পাত্র মহাপ্রাণদের কার্ধকলাপের বিবরণ পাওয়া গেছে। বিগত পাক-ভারত যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের উপর তেমন কোন অতাচার অনুষ্ঠিত হয়নি--এরও অন্যতম কারণ এই নৃতন মানসিকতা প্রপঞ্ে ম্ব্গত সতীন সেন মহাশয়ের বিশ্লেষণ প্রাণিধানযোগ্য (দ্রব্য £ তার জেলের ডায়েরী শ্রীধুক্ত আশুতোষ মুখোপাধ্যায় লিখিত তার জীবনী )। এছাড়া আরও একটি প্রামাণ্য প্রতিবেদন হল শবুস্তল সেনের “পাকিস্তান ঘুরে এলাম” ১৯৭ সনের জুলাই-এ

পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের ভ্ স্বুৎ ৮৫

হিন্দুদের পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে ন1 যাওয়ার জন্য শেখ মুজিবর রহমান সাহেবের অন্রোধ এবং তার থেকেও বড় কথা মুসলমানদের এইসব সংখ্যালঘুদের দায়িত্ব নিতে তার উদাত্ত মাহবান_ পাকিস্তানের এই নৃতন মানমিকতার পরিচায়ক

এই নবীন মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার প্রয়াপ আত্মবলের সাধনা বলে পূর্ব পাকিস্তানের এই নূতন ভাবধারার সাধকদের ভারতবর্ষ থেকে কোন রকম ভৌছিক সাহায্য দান করার প্রস্তাব কর হচ্ছে না তবে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান সমাঁজের ভিতর ক্রমবর্ধমান এই আধুনিক মনোভাবকে পুষ্ট করার জন্য ভারতবর্ষ থেকে আমরাও অন্ততঃ ছুটি জিনিস করতে পারি। প্রথমতঃ ভারতবর্ষে আমাদের পূর্ব পাকিস্তানের এই নবজাগরণের স্ববপ উপলব্ধি করতে হবে_যা এযাব্ৎ বিশেষ করিনি আমাদের জানতে হবে যে পাকিস্তান সরকার পাকিস্তানের জনসাধারণ সমঅর্থছ্যোতক শখ নয়। দ্বিতীয়তঃ, পূর্ব পাকিস্তানের "অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক অংশের শক্তি খর্ব হয় এমন কিছু 'ভারতে আমাদের করা উচিত নয়। ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের প্রচার, ভার তীয় মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ অন্তায় অবিচারের অনুষ্ঠান পূর্ব পাকিস্তানে বিকাশমান অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের অন্ুশীলনকারীদের কাজকে আরও তুরূহ করে দেবে স্ৃতরাঁং আর কোন কারণে যদি নাও হয় পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের কল্যাণভাবন] দ্বারা চালিত হয়ে ভারতবর্ষের জনপাধারণ যেন তাঁদের ঘোষিত রাষ্টিচ আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষতার লক্ষ্যে অঞ্চল থাকেন

পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের মানুষের মত বাচার স্থিতীয় সম্ভাবনা_যাকে ইত্ডিপূর্বে প্রস্তাবমান্র রূপে অভিহিত কর! হয়েছে_-তা হল অহিংস সত্যাগ্রহের পন্থা ঘটনাস্থল থেকে দূরে নিরাপদ ব্যবধানে থেকে জাতীয় প্রস্তাব উপস্থাপিত করার জন্য সমালোচনার অবকাশ থাকা সত্বেও প্রস্তাবের যৌক্তিকতা হাঁস পায় না অথবা খান আন্ছুল গফুর খ। কিংবা বালুচ গান্ধী সামাদ খাঁর মত নেতার আপাত ব্যর্থতাঁও সত্যাগ্রহের বিরুদ্ধে যুক্তি হিসাবে পেশ করা যায় না আধুনিক বিশ্বে কোন সুগঠিত সরকার এবং সংখ্যাগুরু সমাজের অন্তায় সিদ্ধান্ত আচরণের প্রতিরোধ করার একমাত্র পস্থা হল অহিংস সত্যাগ্রহ। পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যদি তৎপর হন তাহলে সত্যাগ্রহের পথে তাদের মানুষ হিপাবে বিচার অধিকার ফিরে পাওয়ার পুর্ণ সম্ভাবনা আছে।

৮৬ বাঙলা বাঙালী

সত্যাগ্রহ নীতির যৌক্তিকতা সন্বদ্ধে আলোচনার স্থান বর্তমান প্রবন্ধ নয়। এখানে কেবল এইটুকু বলাই যথেষ্ট যে দফায় দফায় মরা অপমানিত হওয়ার চেয়ে একদফ] মরার জন্ প্রস্ত হয়ে বাচার প্রয়াস কেবল যে বাস্তববুদ্ধিযুক্ত তাই 'নয়, পুর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অতীতের ত্যাগ আত্মদানের এতিহের অন্থকূলও এই পৌরুষময় পন্থা আর একটি কথা। কেবল পুর্ব পাকিস্তানের মুসলমান সমাজের প্রগতিশীল অংশের ভরসায় মানমর্ধাদা নিয়ে সেদেশের সংখ্যালঘুরা কোনদিনই বসবাস করতে পারবেন না। পূর্ব পাকিস্তানের মুনলমান সমাজের মত সংখ্যালঘুদেরও আত্মনলের সাধনা করতে হবে এবং বিশেষতঃ বর্তমান পরিস্থিতিতে সত্যাগ্রহের চেয়ে শ্রেয় কোন আত্মবলের সাধনার প্রক্রিয়া নেই।

প্রসঙ্গে সবচেয়ে বড় যে সন্দেহ ব্যক্ত করার সম্ভাবনা তা হল এই যে পূর্ব পাকিস্তানে সত্যাগ্রহ করার জন্য সংখ্যালঘুদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধীর মত নেতা কই? বিশেষ করে আদর্শে বিশ্বাসী পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ নেতা কমীই আজ যখন হয় সে-দেশ ছেড়েছেন আর নচেৎ সামরিক শাসকদের কারাগারে আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে সত্যাগ্রহ মহাঁজ্ম! গান্ধী কর্তৃক প্রবতিত কোন অভিনব প্রক্রিয়া নয়_-সত্যাগ্রহ সম্ভবতঃ মানুষের সভ্যতার সমসাময়িক মহাত্মা হওয়ার অনেক পূর্বে গান্ধীজী দক্ষিণ আফ্রকা চম্পারণে পুর্ধ পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের মত অত্যাচারিত এবং ভীতসন্তস্ত মানুষদের সংগঠিত করে তাঁদের স্বাধিকার অর্জনে সহায়তা করেছিলেন অতীতের যীশ্ত চৈতন্য প্রভৃতি সার্থক সত্যাগ্রহীর উদাহরণ যি চেড়েও দেওয়া যায়, এই শতাবীতে গান্ধীজীকে বাদ দিয়ে বু কমবেশ৷ সার্থক সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দে রূঢ় প্যালাটিনেটের জার্ধানর1 ফরাসীদের বিরুদ্ধে পত্যাগ্রহ করেছিলেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ডেনমার্ক স্ক্যানডিনেভিয়ান দেশসমূহেও দখলকারী জার্মানদের বিরুদ্ধে এক জাতীয় ত্যাগ্রহ প্রযুক্ত হয়। আফ্রিকার কোন কোন দেশে স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনায় সত্যাগ্রহের প্রভৃত প্রভাব ছিল। আর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র বর্ণবিছেষের বিরুদ্ধে মার্টিন লুখার কিং তার পর তার অন্থরাগী বিশপ এভারনেথী পরিচালিত সত্যাগ্রহ কিভাবে ধাঁণে ধাপে নিগ্রো মমাজকে স্বাধিক'র অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে তার নিদর্শন তো! আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে

পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুদের ভবিস্তৎ ৮৭

বিগত পাক-ভারত যুদ্ধের পর এখন তাসখন্দ চুক্তি বা শান্তি পর্ধেব কাল। কিন্ত তাসখন্দ চুক্তির ফলে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের অবস্থার কোন ইতরবিশেষ হবার সম্ভাবনা নেই। তাদের সমন্তা। পূর্বেরই যত রয়ে যাবে। স্থতরাং তাদের সমস্যা তার সম্ভাব্য সমাধানের উপায় সম্বন্ধে আলোচনার পুর্ণ অবকাশ এখনও রয়েছে ।*

* এই প্রবন্ধ যখন লেখ! হয়, তারপর পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানের চেহারার আমুল পরিবর্তন হয়েছে৷ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ-এর জন্ম হয়েছে গণতন্ব-প্রেমিক নৃতন চিন্তাধারায় বিশ্বাসী এক নুতন প্রজন্মের আবিভ্রীব ঘটেছে। তবে মৌলবাদী কটর সাম্প্রদায়িক অংশ এখনও সেখানে সক্রিয় আগামী যুগ সাগ্রহে অপেক্ষা করছে দেখার জন্য-_ কবে গণতন্ত্র উদ্ধার মত জয়লাভ করবে সমস্তরকম প্রতিকূসতার বিকদ্ধে। এই নবজাগ্রত গণতান্ত্রিক উদার মানসিকতার সঙ্গে পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুরা কতটা কতখানি সামিল হয়ে নিজেদের শ্বাধীনতা অর্জন করতে বজায় রাখতে পাঁরে তারই ওপর নির্ভর করছে তাদের

বাঙালী মুসলমান-সমাজ

একথা হুর্ভাগ্জনক হলেও সত্য যে বাঙালী বলতে সটরাচর আমাদের চোখের সামনে মধ্যবিত্ত বাঙালী হিন্দুর চেহারাই ভেসে ওঠে বাঙালী সমাজের আবিচ্ছেগ্ অঙ্গ মুসলমান-সমাজ সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান শোচনীয় রকমের অল্প। প্রায় আটশত বছর পাশাপাশি বাস করেও বাঙালী হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়-_ বিশেষত এর শিক্ষিত অংশ পরম্পরের খুব একটা কাছাকাছি আসেনি বরং রাজনৈতিক কারণে প্রধানত এই শতাব্দীর তৃতীয় দশক থেকে উভয় সম্প্রদায় মনের দিক থেকে দূরে সরে গেছে এবং এর পরিণামে হয়েছে ভারতের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গ--বিভাগ বাঙলাদেশের ম্বাধীনতা-সংগ্রামের সময় অন্তত পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালীর মনে বেশ কিছুট। মুসলিমগ্রীতির সঞ্চার হলেও পরবর্তী ঘটনাবলীর রূঢ় আঘাতে যূলত ভাবাবেগপ্রধান সেই প্রীতি অদৃগ্ত হয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত দেশবিভাগের ক্ষত নিরাময় হয়নি এবং উভয় সম্প্রদায় পরস্পরের প্রতি একট! ুস্থ দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তুলেছে--এমন দাবি করা যায় না অথচ ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্ডের জনগণনার হিসেবে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই মুসলমানদের সংখ্যা ৯০৬৪ লক্ষ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার শতকরা ২০৪৬ ভাগ এবং আশি দশকের প্রারস্তে মুঘলমানদের সংখ্যা কোটি ১২ লক্ষ হবে অন্থমান করা অন্তায় হবে না। এই বিপুল সংখ্যক বাঙালীর মন তাদের আশা-আকাক্ষার কথা, সমস্মার কথা ন! বুঝলে বাঙলা বাঙালীর সঠিক অবস্থা হদয়ঙ্গম কর! সম্ভবপর হবে না।

১২০২ খ্রীন্টা্ে বখতিয়ার খিল্জী মহারাজ লক্ষ্মণসেনের রাজধানী নবদ্বীপ জয় করার পরই বিধিবদ্ধভাবে বাঙল!দেশে ইপলামের প্রভাব স্ুষ্টি হয। যদিও এর অনেক আগেই ইসলাম ভারতে এবং বঙ্গে এসেছে এবং প্রচলিত ধারণার বিপরীত-_রাজশক্তির সহায়তায় নয়, নিছক তার মানবীয় আবেদন প্রবর্তন। (0০151891%5 ) শক্তির গুণে এদেশে প্রসারলা'ভ করেছে আচার্য ক্ষিতিমোহন সেনের মতে, “রাজাদের আগমনে, লোক-লস্করদের তাড়নায় প্রাণভয়ে ভীত হইয়া বহুলোক ধর্মান্তর গ্রহণ করিয়াছে সত্য, তবু ভারতের ঘথর্থ জয় রাজরাজড়ারা বা সৈম্সামস্তরা করে নাই ; তাহা ঘটিগ্নাছিল কেবল মুসলমান সাধু সাধকদের আগমনে 1” আচাধ ক্ষিতিমোহনকে এই ব্যাপারে পক্ষপাতছ্্র বলা যায় না,

বাঙালী মুসলমান-সমাজ ৮৯

যেহেতু একনিষ্ঠ ধদাস্তিক বিবেকানন্দ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, "ভারতের দরিদ্রদের মধ্যে এত অধিক সংখ্যায় মুসলমান কেন? তরবারির বলে তাহারা ইসলাম গ্রহণ করিয়াছে, একথা বলা যূর্থতা। জমিদার পুরোহিতদের দাসত্ব হইতে মুক্তির জন্য ইসলামধর্ম গ্রহণ করিয়াছে” হাভেল তার হা) হি০1৩ 10 17019) গ্রন্থে সম্বন্ধে আলোকপাত করেছেন যাইহোক, ইতিমধ্যে বাঙলার ধর্ম সাংস্কৃতিক জীবনে কয়েকবার পালাবদল ঘটেছে। গ্রীনীস্ন ষষ্ঠ শতকে বাঙালী বৈদিক ধর্ম আর্ধপভ্যতায় দীক্ষিত হয়েছে তারপর এসেছে বৌদ্ধধর্মের প্রবল জোয়ার অইম শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে-_যা পাল্বংশীয় রাজাদের পৃষ্ঠপৌধকতায় ব্যাপকতম হয়েছে তারপর আবার দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যপাদে (১১৫৮-:১১৭৯) দ্নেবংশীয় রাজা বল্লালসেনের রাজত্বকালে সনাতন ধর্মের পুন-প্রতিষ্টা হয়। বৈদিক এই পুনরভ্যুখানের পর্ব আদেঁ স্বাভাবিক বা শান্তিপূর্ণ হয়নি এই পরবে রাজশক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় সনাতন ধর্মের প্রসারের জন্য নাউলাদেশের অগণিত বৌদ্ধদের উপর বনু উতৎপীড়ন- নিপীড়ন হয়েছে 'অপংখ/ বাঙালী বৌদ্ধধর্ম ছেড়ে বৈদিক ধর্ম গ্রহণে বাধ্য হলেও তাদের মধ্যে ক্ষোভ-বিরোধ-প্রতিবাদের মনোগাব থেকেই গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভিন্ন রাজশক্তির আওতায় আবির্ভাব হুল ইসল'মের বাঙালীদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যাধিক্যের মূলে কিন্তু বহিরাগত তুকি,

পাঠান অথবা মোগল জাতির মুসলমান নয়, এর মূলে রয়েছে অগণিত ধর্মীস্তরিত হিন্দু_-এ এক এঁতিহাসিক সত্য। বল। বাহুল্য হিন্ুর্ষের পুনকুথানের সময় নিপীড়িত নিগৃহীত বৌদ্ধদের একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল। বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে ইসলামধর্মের কিছু ণারোক্ষ সাদৃশ্ঠও আছে-__বিশেষ করে বৈদিক ধর্ম মৃত্তিপূজা ইত্যাদির বিরোধের ব্যাপারে রামাই পণ্ডিতের 'শূন্যপুরাণে'র কালনি্ণয়ে পণ্ডিত মহলে মতভেদ আছে কিন্তু তার রচন। যে সে সময়কার হিন্দুদের একটি অংশের মানসিকতার প্রতিচ্ছবি ভাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। ইসলামের অভ্যুদয়ে অনেক বাঙালী হিন্দুই রাঁমাই পণ্ডিতের মতো মনে করেছিলেন £

ধর্ম হেলা যবনরূপী শিরে পরে কালো টুপি

হাতে ধরে ভ্রিকচ কামান"*" ব্রহ্মা হইল] মহম্মদ বিষু হৈলা পেগম্বব মহেশ হৈল বাবা আদম-”' দেখিয়া! চণ্ডিক! দেবী তেঁহ হুইল হায় বিবি...ইত্যাদি | +

৯১৬ বাউলা বাঙালী

একথা সত্য যে রাজশক্তির পীড়নে, উচ্চপদ এবং ভূ-সম্পত্তি ইত্যাদির বিনিময়ে অভিজাত হিন্দুদের ইসলামের শরণ নিতে প্রলুব্ধ করা হয়েছিল। ভারতের আরে! অনেক এলাকার মতো বাঙলাদেশেও মুসলমানদের সংখ্যা শ্ফীত্ত করতে এইসব ঘটন। সাহায্য করলেও ইসলামের সাম্য উদাঁর মানবিকতার বাণীর আহ্বান এন: মুসলমান ধর্ম প্রচারকদের ব্যক্তিগত জীবন প্রেমের বাণীও ভিন্ন ধর্মের লোকদের ইসলামের শরণ নিতে কম অনুপ্রাণিত করেনি ভারতে ইসলামধর্মের স্থচন হয় অষ্টম শতাব্দীতে যখন আরব বণিকেরা পশ্চিম উপকূলে বর্তমানের কেরলে পদার্পণ করেন জাতিভেদপ্রথায় গীড়িত খগণ্ডবিখণ্ড হিন্দু সমাজে তখন থেকেই ইসলাম একটু একটু করে স্থান করে নিতে থাকে, যখন ঝাজশক্তির সহায়তায় ইসলা মধর্ম-প্রচার প্রায় অসম্ভব ছিল।

বখতিয়ার খিলজীর মাধ্যমে ব্ঙ্গদেশে রাজশক্তিবূপে ইসলামের যে আবির্ভাব হয় তা মাত্র দশ বছরের ব্যতিক্রম ছাড়া, প্রায় সাড়ে পাচ শত বৎসর পর্ধস্ত অন্ষুপ্ন ছিল। তবে এই দশ বছর রাজা কংস রাজা যাতমল ( ধর্মান্তরিত হয়ে যিনি জালালুদ্দিন শাহ নাম গ্রহণ করেন )__-এই ছুই হিন্দু রাজা বাউলাদেশে রাজত্ব করলেও টি ডবল আরনল্ড (119 7১:80171708 01 1519109) এবং জে এইচ র্যাভেনশ (0০981 £ [03 70175 800 [119071701075 ) প্রমুখ এতিহাসিকদের মতে এই সময় বাঙালীর ইসলামধর্ম গ্রহণ কর। হ্থাস না পেয়ে বরং অপ্রতিহত গতিতে চলেছিল

রাজশক্তি হিসাবে ইংরাজের 'ানির্ভাবের পর থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক পর্যন্ত ইসলাম যে সরকারী আন্গুকৃল্য হারাল তা-ই নয়, তদানীক্ধন শাসকরা পূর্বতন শাদক তাদের ধর্সের প্রতি স্বাভাবিক কারণেই কিছুট1 বিরূপ ছিলেন তবুও বঙ্গদেশে এই সময়ে ইসলাম ধর্মগ্রহণের আকাজ্কায় ভাট! পড়েনি ১৮৯১ খরীষ্টাব্বের জনগণনার প্রতিবেদনে দেখা যায়-_“একথা সন্তোষজনকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে ১৮৭২ খ্রীষ্টাব্খ থেকে এযাবৎ ১০,০০৭ ব্যক্তির মধ্যে উত্তরবঙ্গ বাদে ইসলামের আওতায় এসেছে ১০* জন, পূর্বনঞ্গে এর সংখ্যা ২৬২ পশ্চিমবঙ্গে ১১০ জন অর্থাৎ গড়ে সমগ্র বাঙলাদেশে ১৫৭ জন মুসলমানদের সংখ্যাবুদ্ধি বার্থ প্রভৃত। এই হাব যদি বজায় থাকে তাহলে আগামী সাড়ে ছয় শত বৎসরে সনগ্র বঙ্গে মহন্মদের ধর্মবিশ্বাস সর্বজনীন হয়ে পড়বে এবং পুর্ববর্গে অবস্থা আসতে লাগবে প্রায় চারশত বত্সর ।..-উনিশ বৃসর পুর্বে বঙ্গদেশে হিন্দর্দের সংখ্যা মুসলমানদের চেয়ে লক্ষ*বেশি ছিল, এবং কুড়ি বৎসরেরও কম

বাঙালী মুদলমান-সমাজ ৯১

সময়ের মধ্যে মুদলমানর যে কেবল হিন্দুদের সমাঁন হয়েছেন তা-ই নয়, তাদের থেকে সংখ্যায় ১৫ লক্ষ অধিক হয়ে পড়েছেন |”

ইসলামের অভিঘাতে বাঙলাদেশে হিন্ুপমাঁজের মধ্যে প্রদল আলোড়ন এবং ভাঁঙন শুরু হলেও প্রাকৃতিক নিয়মে গড়ার বা সমম্বপ্র-সাধনের একটি ধারাঁও এর পাশাপাশি জেগে ওঠে মধ্যযুগের এই ধারার উৎসসন্ধান করতে গিয়ে ক্ষিতিমোহন সেন মহাশয় দেখেছেন, “মুসলমান-সাধন1| মুসলমান-শক্তির আবির্ভাবে এই যুগ পুনরায় ভক্তি প্রেমে ভরপুর হইয়া উঠিল। নানা অন্ধতায় ধর্মের আচারের জটিলতায় ভক্তিভাবের অতি সরসতায় যে সহজ প্রেম ভক্তি চাঁপা পড়িয়াছিল তাহা এই আঘাত পাইয্বাও মুপলমান-সাধনার একেশ্বরবাদে দৃঢ় নিষ্ঠায় নতুন করিয়া জাগ্রত হইয়া উদ্ভিল...।* আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে হিন্দু- সমাজ কৃর্ম-বৃত্তি গ্রহণ করে বাচার চেষ্টা করলেও শীঘ্রই উপলব্ধি করে যে বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্মরক্ষা করা অসম্ভব এবং তাই ধর্ম সংস্কৃতি_-বিশেষ করে এর লৌকিক পর্যায়ের ক্ষেত্রে পারম্পরিক লেনদেন শুরু হয়। তদানীস্তন সমাজ ছিল মূলত গ্রামীণ তাই উভয় সম্প্রদায়ের লোককে স্থখে-দুঃখে পাশাপাশি থাকতে হত। তদুপরি অধিকাংশ ধর্মান্তরিত মুসলমানদের আচারব্যবহার, ধ্যানধারণ। অর্থাৎ সাংস্কৃতিক জীবনের মূল রেশ রয়ে গেছে হিন্দুসমাজের মধ্যে স্বভাবতই এই সমন্বয়প্রক্রিয়৷ সাধারণ্যে প্রসারলাভ করল

হিন্দুমমাজে পীরপুজা সত্যপীর বা সত্যনারায়ণের মাধ্যমে স্বীকৃতি পেল। তার পুজোপকরণ “পিক্সি” বাঙালী হিন্দুর কাছে অজ্ঞাত হলেও শ্ীপ্রই তা বহুল- প্রচারিত হুল এবং পীরফকিরের দরজায় মানত করা, সুতো-বাধা, চেরাগ জ্বালানো অথবা ওলাবিবি এবং শ্ীতলা, মনসা প্রন্তি দেবদেবীর পুজা সমানভাবে হিন্দু মুসলমান সমাজের মধ্যে প্রচলিত হল। মুসলমানদের পীরপুজা, কদম রন্থলের স্বীকৃতি, মোহরমের তাজিম্না বার করা ইত্যাদি বনু প্রথা স্থানীয় হিন্দুদের মধ্যে স্বীকৃতি পায়। সপ্তদশ শতাব্দীর পু'থিপত্র ঘে'টে ডঃ এনামুল হক্‌ প্রমাণ করেছেন বে মেকালের মুসলমান-সমাজে হিন্দুদের মতোই অন্নপ্রাশন, অধিবাস, মঙ্গলঘট, সাখীঙ্গ প্রণাম ইত্যাদি প্রথার প্রচলন ছিল। তাছাড়া স্ফী মতবাদের প্রচার এবং আউল, বাউল, কর্তাভজ। দরবেশ ইত্যাদি সম্প্রদায়ের উদার মানবিক সাধন-ভঙ্গনের পদ্ধতি জনপ্রিম্ন হওয়ার ফলে সমন্বয়ের এই প্রক্রিয়া আরও নিখিড় হল। হুলত!ন হোসেন শাহ তার পুত্র রাজ নসরৎ খাঁর অধীনে চট্টগ্রামের শালনকর্তা পরাগল খ1 ছুটি খা সর্বপ্রথম বাঙলায়

৯২ বাঙলা! বাঙালী

মহাভারত অনুবাদ করান প্রাচীন বাঙলার আলাওল, দৌলতকাজী, কোরেশী মাগন ঠাকুর, মহম্মদ খা আবছুল নবী প্রমুখ কবিদের রচনায় কেবল আরব- দেশের মরুভূমি খর্জুরবীথির পরিচয় বাঙালীর কাছে আসেনি, বাঙলার নদীনালা শ্তামলিম। থেকে স্থরু করে রাধাকুষ্জের বিরহমিলনের কথাও বাজ্ময় হয়ে উঠেছে / বাঙলাভাষা কেবল অতিসাম্্রতিক কালের “বাংলাদেশের” জন্মের মূলে নেই ; বাঙলার হিন্দু-মুদলমানের মাতৃভাষার সমম্বযকা রী শক্তির প্রাবল্য যুগে যুগে বাঙালী মুঘলমান কবি সাহিত্যিকদের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রসঙ্গে অঠাদশ শতাব্দীতে রচিত 'ন্র-নাম1'র লেখক (নোয়াখালির সন্দীপ নিবাসী ) আবছুল হাকিমের একটি কবিতায় এই বাঙালী মানসিকতার চমৎকার পরিচয় মেলে-- “যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।

সে সবার কিবা রীতি নির্ণয় না জানি

মাতাপিতামহক্রমে ঙ্গেতে বসতি

দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি

দেশী ভাষ! বিদ্যা যার মনে ন]। জুরায়__

নিজ দেশ তেয়াগি কেন বিদেশে ন] যাঁয় |” কেবল আবেগের দিক থেকেই নগ্ন, বাস্তবক্ষেত্রে বাঙালী হিন্দু-মুসলমান পাশাপ'শি থাকার ফলে একে 'অপরের উতৎসব-ব্যসনে, পাঁলপার্বণে অংশগ্রহণ করেছে। একসঙ্গে ভাটিয়ালি, জারি-সারি অথবা আলকাপ গেয়েছে পাশাপাশি বসে হিন্দু সুসলমান গ্রামাকবির ভরজা, কথকতা! কবির লড়াই উপভোগ করেছে

মুসলমান রাজত্বের স্থব্রপাতে আথিক ক্ষেত্রে যে প্রতিদবন্দিতা দেখা দেয়

এবং ইত্রাজ আমলে যার প্রপারেব ফলে হিন্দু মুসলমান সমাজের সম্পর্কে চিড় ধরে ত। কিন্তু প্রধানত অভিজাত শ্রেণীর এবং পরবর্তীকালে ইংরেজি শিক্ষ! প্রসারের কলে রাঁজ-অগ্ুগ্রহাকাজ্ী মধ্যবিত্ত সমাঁজের ব্যাপার। সাধারণ গ্রামীণ হিন্দুমুসলমান কৃৎক অথবা হস্ত্শিল্পীদের মধে) এই জাতীয় আথিক শ্বার্থদংঘাত বিশেষ ছিল না। বরং তাদের মধ্যে একট] সমম্বয়ের প্রক্রিয়া কাজ করেছিল, . যাঁর জন্য লোকপংস্কৃতি লোকধর্ম একটি নতুন সমন্বয়ীক্ূপ ধারণ করেছিল। কিন্ত ইংরেজের আগমনে উভয় সমাজের অভিজাত শ্রেণী তিন্ননুখী হওমায় এবং অপর দিকে শাসক শ্রেণীর ভেদনীতির ফলে সমন্বয়ের এই স্বাভাবিক প্রক্তিয়। বাধা পেল।

বাঙালী মুসলমান-সমাজ ৯৩

ভারতের অস্তান্য অঞ্চলের মতে! বঙ্গদেশেও মুপলঘান সমাজে দুটি স্তরভেদ দেখা যায়। এর প্রথমটি হল স্বল্পসংখ্যক বহিরাগত এবং তাদের সঙ্গে বৈবাহিক স্থত্রে আবদ্ধ অভিজাত সম্প্রদায় এবং দ্বিতীয়টি হল বহুলসংখ্যক স্থানীয় ধর্মান্তরিত মুপলমান--ধাদের অধিকাংশই খেটে-খাওয়া মানুষ অপর যে-কোন সমাজের মতোই ভারত তথা বঙ্গদেশে মুসলমান-সমাঁজের নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বপ্পসংখ্যক অভিজাত সম্প্রদায় ।* স্থতরাং ইংরেজের আগমনের পরবর্তীকালীন মৃসলমান- সমাজের ইতিহাস জানার পক্ষে এই অভিজাত সম্প্রদায়ের মানসিকতার বিবর্তন জান) অপরিহার্য ইংরেজের অভুদয়ের পুরে উচ্চতর সরকারী পদে এবং ব্যবপায়ে অভিজাঅ মুপলখানদের একরকম একচেটিয়া অধিকার ছিল-_-যা পরবর্তীকালে তারা ভ্রমেই হারালেন ইংরেজরা মুগলযান শাসকর্দের হাত

থেকে রাজশক্তি কড়ে নেন লে তাদের বিরুদ্ধে মুনলমানদের মধ্যে তীব্র স্বণ1

বিদ্বেষের ভাব ধেখন ছিল অপর দিকে তেমনই ইংরেজর। তাদের অবিশ্বাস করতেন এবং রাজদগড বজায় রাখার জন্য তাদের কাছ থেকে দূরে দুরেই থাকতেন

ইংরেজ রাজশক্তি সর্ধপ্রথম আঘাত হানলেন বাঙলার অভিজাত শ্রেণীর মুদলমানদের উপর সরকার রাজন্ব আদায়কারী রাঁজকর্মচারী হিসেবে এই সম্প্রদায়ের প্রাধান্ত প্রয়োজনীয়তা আর রইল না। ইস্ট ইণ্ডিয়! কোম্পানি নিজের শক্তি সম্বন্ধে সচেতন হতে স্থরু করার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান অভিজাতদের প্রভাব রাজন্ববিভাগে হান পেতে লাগল এবং অবশেষে ১৭৯৩ খ্রীহ্ান্দের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কল্যাণে এই ক্ষেত্রে মুনলমান অভিজাতরা চিরবিদায় নিলেন এযাঁবৎ যে হিন্দুরা ক্ষেত্রে অনুপস্থিত বা বড় বেশী হলে নগণ্য কর্মচারী ছিলেন, তাদেরই আবির্ভাব ঘটল জমিদার এবং মধ্যন্বত্বভোগীরূপে এবং রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়ায় যে অর্থ ইতিপূর্বে মুঘলমানেরা পেতেন তার অধিকাংশ থেকে তাঁর বঞ্চিত হলেন ক্রমে ক্রমে নিরাপত্তার পক্ষে বিশ্নরকর বিবেচনা করে সৈম্বাহিনীর উচ্চপদ খেকেও অভিজাত সম্প্রবায়ভুক্ত মুসলমানদের অপপারিত করল কোম্পানি

পরবর্তী আঘাত পড়ল ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা বিচার-ব্যবস্থার উপর। কোম্পানি রাজত্বের প্রথম যুগেও নবাবি আমলের ফারসি-শিক্ষাব্যবস্থা এবং বিচারপদ্ধতি কায়েম ছিল। এর মাধ্যমে যে ঘুললমান-অভিজাতদের একাংশের

পি

৯৪ বাঙলা বাঙালী

কুজিরোজগারের ব্যবস্থা! হত তা-ই নয়, তাদের একটা! প্রতিষ্ঠাও ছিল এই শিক্ষা বিচারব্যবস্থাকে অবলম্বন করে। কিন্ত কোম্পানী রাজত্বের বছর পঞ্চাশ পরে ফারপি শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটান হল এবং বাঙলার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তিত হল। বাঙলাদেশে এটা অবশ্ঠ সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত এবং হিন্দুদের কাছে অতীব বাঞ্চনীয় মনে হলেও মুসলমান"অভিজাতদের কাছে স্বভাবতই সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত ব্যাপার হয়ে দাড়াল তারা আরও একট প্রন্ধল ধাক্কা খেলেন যখন সরকারী কাজের মাধ্যম হল ইংরেজি ভাষা এর ফলে ইংরেজি ভাষার ব্যাপক প্রসার ঘটতে লাগল ১৮৩৫ খ্রীষ্টাব্বের ৭ই মার্চ মেকলের শিক্ষানীতি গ্রহণের সময় বড়লাটের পরিষদ সিদ্ধান্ত করল শিক্ষাাতে ব্যয়িত সরকারী অর্থ কেবলমাত্র ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে লাগবে এবং পপ্রাচ্যদেশীয় বিছ্যাচর্চার প্রতিষ্ঠানগুলি তুলে না দিলেও শিক্ষাকালে তার ছাত্রদের সহায়তা দেওয়ার নীতি পরিত্যক্ত হবে।” লর্ড বেন্টিস্ক ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি ঘোষণা করলেও বাঙলাদেশের নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের মনে আশঙ্কা হল তাদের খ্ীষটধর্ষে দীক্ষিত করার জন্য শাঁসককুলের এটা একট। ছল মাত্র। তাই তার! এইসব বিধিব্যবস্থাকে সযত্বে পরিহার করে চলতে লাগলেন এবং হিন্দুরা এই স্থযোগের পূর্ন সদ্ধযবহার করলেন। ন্ৃতরাং ১৯৪৪ খ্রীষ্টাব্দে যখন সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিতদের প্রাধান্য দেওয়ার নীতি গৃহীত হল স্বভাবতই হিন্দুরা আরো এগিয়ে এলেন আর মুসলমানেরা হলেন আরো কোণঠাসা ফলত নতুন বিধিব্যবস্থার প্রনর্তক ইংরেজের সঙ্গে সঙ্গে হিন্দুদের প্রতিও তারা রুষ্ট হলেন

অপরদিকে সাধারণ শ্রেণীর মুসলমান--বিশেষত কৃষকদেরও ক্ষোভের কারণ ঘটল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত অনুযায়ী সরকারকে দেয় রাজন্ব নির্দিষ্ট হলেও জমিদারের! (ধাদের অধিকাংশ ছিলেন হিন্দু) মূল্যবৃদ্ধির দোহাই দিয়ে চাষীর খাজনা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন মুসলমান-হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের চাষীর! বর্ধিত করভাঁরে পীড়িত হচ্ছিলেন। এই অসন্তোষকে ভাষ! দেবার মতো নেতৃত্ব বাঙালী হিন্দ্দের মধ্যে তখন ছিল না, যেহেতু অভিজাত শ্রেণীর হিন্দুরা নবলব্ধ ন্থুযোগন্থবিধার দরুণ শাসক ইংরাজের জয়গানে মশগুল। পক্ষান্তরে, মুদলমান অভিজাত শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে ইত্তিপূর্বেই বিক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছিল। তাই অনেকট। হতাশাপীড়িত হয়েই তাঁর! সাধারণ মুপলমানকে মুসলিম কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্তে তাদের অনুগামী হতে ডাক দিলেন।

বাঙালী মুসলমান-সমাজ ৯৫

ওহাবী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এই বিদ্রোহ মূর্ত হয়ে ওঠে বাউলাদেশে হাজী শরিয়তউল্লা তার পুত্র হছ মিঞার নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ওহাবী আন্দোলনের পূর্বগামী ছিল। ভারতে ওহাবী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন রাঁয়বেরেলির সৈয়দ আহমদ | তিনি মুসলমানদের হতমান আবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যই মুসলমান সম্প্রদায়কে একাগ্রভাবে ইসলামনি্ হতে পরামর্শ দেন। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এল্সামিক পুনরুখানের এই নায়ক তার নিষ্ঠা আদর্শের জন্ প্রায় অবতারের মর্ধা?া পান এবং তিনি কর্মান জারি” করাও আরম করেন। ন্ুদুর বাঙউলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে তার বহু অনুগামী তৈরী হয় শীঘ্রই দৈয়দ আমহদের নেতৃত্বে এক বিরাট সৈম্বাহিনী গড়ে ওঠে।

পঞ্চাবের তদানীন্তন শিখ শাপক মহারাজ রণজিৎ সিং-এর বিরুদ্ধে জেহাদ করতে গিয়ে পৈয়দ আহমদ নিহত হলেও ভারতীম্ন মুপলমানদের ভিতর ওহাবী আন্দোলনের প্রভাব বজায় রইল পরব্তীকালে সমগ্র ভারতবর্কে “দার-উল- হারব” অর্থাৎ বিধর্মী-শাসিত দেশ বলে ঘোষণা করে সাচ্চ। মুসলমানদের “দার- উল-ইসলাম” অর্থাৎ এক্সামিক দেশে যাবার জন্য হিজরৎ করার প্ররোচন] দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওহাবীরা ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে নানা জায়গায় বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে জেহাদ শুক করে। পরিণামস্বরূপ ওহাবীদের ব্যাপক ধরপাকড় এবং শাস্তি দেওয়া আরম্ত হয়। ১৮৭১ খ্রীষ্টাব্দে ওহাবী আন্দোলশের অভিযুক্তদের বিচার হয় এবং বিচার শাপ্তিদানের অন্যতম নায়ক কলকাতার তদানীন্তন প্রধান ইংরেজ বিাবপতিকে ওহাবীর। হত্যা করে।

আন্দেলনের খু'টিনাটি ব্যাপারে বিভিন্ন জননায়কদের মধ্যে যথা সৈয়দ আহমদ ব্রেলভি শাহ ইসমাইল শহীদ, রায়বেরেলির সৈয়দ আহমদ এবং তার ভাবশি্য পাটনার বিলায়ে আলি এনায়েৎ আলি এবং বঙ্গের তিতুমীর জৌনপুরের কেরামৎ আলি প্রভৃতির পার্থক্য থাকলেও তাদের উদ্দেশ ছিল অভিন্ন-_ ইসলামের শুদ্ধীকরণ ইসলামি রাজত্ব কায়েম করা। এর ফলে বাউলাদেশের মাটিতে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে যে সহজ সমন্য় ৭০* বছর পুষ্টিলাভ করেছিল তার পূর্ণচ্ছেদ ঘটল। বাঙলার মুসলমানেরা__অন্তত নেতৃস্থানীয়ের] ক্সাত্মকেন্দিক হয়ে পড়তে লাগল সামাজিক, ধর্মীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মুসলমানগণ বিচ্ছিন্নতাবাদের লে পড়ল-_যার পরিণাম পরবর্তীকালে মারাত্মক হয়েছিল।

৯৬ বাউল] বাঙালী

ইতিমধ্যে সিপাহি-বিত্রে:হ ঘটে গেছে এই বিদ্রোহে মুসলমান-হিন্দু-শিখ- মারাঠ। প্রতি সকল শ্রেণীর সৈন্ত থাকলেও শেষ মোগলসম্রাট বাহাছুর শাহকে কেন্দ্র করে এটি সংঘটিত হওয়াতে, এবং অন্যান্য বনু কারণে ইংরেজশাসককুল কেবলমাত্র মুপলমানদেরই প্রধানত বিদ্রোহের দায়ভাগী করেন। কারণ ইংরেজর] মনে করতেন পিপাহি-বিদ্রোহ মূলত মুসলমান রাজ্যের পুনঃপ্রত্ষ্ঠার প্রচেইা। তাই মুসলমানদের উপর প্রনল নির্যাতন চালান হয়। ওহাবী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের বার্থত সরকারী নির্যাতনকে জোরদার করে।

ক্রমাগত গীড়ন শোনণের দরুণ মুপলমানদের মধ্যে এক নতুন মনোভাবের হুষ্টি হয়। এই পধায়ে মুপলমানদের ইংরেজ-বিরোধিতার অবসান ঘটে, পরিবর্তে তার! সরকারী পক্ষপুটের আশ্রয়ে থেকে হিন্দুদের মতো উন্নতির পথে পা বাড়ায় এবং বিলম্বিত হলেও ঈর্ধান্থিতচিত্তে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে মনস্থ করে। এই নতুন মানসিকতার প্রতীকন্বর্ূপ কলকাতার ১৮৬৩ খ্রীস্টাব্ধে “মহমেডান লিটারারি সোসাইটি'র জন্ম হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা নবাব আছুবল লতিফ হলেও স্যার সৈয়দ আহমদ এবং কলকাতার বিচারপতি সৈয়দ আমীর আলি এর দুই দ্িকপাঁলরূপে খ্যাভিলাভ করেন

মুসলমান সমাজের পথপরিবর্তনের কথা আলোচন। করার পুর্বে একটি ঘটনার উল্লেখ প্রয়োজন এটি হল উনবিংশ শতাব্দীর সপ্তম দশকে উত্তর ভারতের হিন্দি-উর্ঘ ব্বাদ--সরকারী কাজকর্মের ভাষা উদ্ঘ হবে না হিন্দি হবে। বাঙলাদেশে এই বিবাদ একটু ভিন্ন রূপ নেয়, এখানে মুঘলমানদের দাখি__ বাঙল। ভাষ! যদি মুসলমান ছাত্রদের শিক্ষার মাধ্যম হয় তবে সেই বাঙলা ভাষ৷ সংস্কৃতের বদলে ফারসিবহুল হতে হবে। হান্টারের “ইত্ডিয়ান মুসলমানস্*-এর স্বরে স্বর মিলিয়ে ফারসি বা! উদ্ু'ভাষী অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা ১৮৮২ খ্রীঃ শিক্ষাকমিশনের কাছে দাবি পেশ করলেন যে বাঙালী হিন্দু ছাত্রদের কাছে বাঙলা ভাষার যে স্থান, মুসলমান ছাত্রদের কাছে উদ্ু সেই স্থান হতে হবে ( আমীর আলি )। নবাব আব্দুল লতিফ খান বাঙলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুর মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত হিন্দুয়ানি দেখতে পেলেন উপরন্তু হিন্দু গুরু, তাদের মতে, মুললমান কৃষকপমাজের ছাত্রদের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে অজ্ঞ স্থতরাং মুসলমান ছাত্রদের জন্ত শুধু আরবি-ফারদি নয়, ইংরেজি শেখাবার জন্যও পৃথক শিক্ষকের দাবি উঠে। পরবর্তীকালে চাকুরি ইত্যাদির সুবিধালাভের

বাঙালী 'মুসলমান-সমাজ ৯৭

জন্য এই যে ভাষাবিবাদ, তার থেকে অভিজাত মধ্যবিত্ত সমাজে ঈর্1া ছন্দ দেখা দেয় এবং পরিণামে বিচ্ছেদকামী মনোভাবের জন্ম হয়।

স্যার ৈয়দ আহমদ ইংরেজের অন্থগামী হলেও প্রথম দিকে সাম্প্রদাপ্িক ছিলেন না। বরং বহুক্ষেত্রেই তিনি হিন্দুদের সঙ্গে সহাবস্থানের পক্ষপাতী ছিলেন তবে ইংরেজ সরকার ইংরেজি শিক্ষা থেকে দূরে থাকাই মুসলমানদের অনগ্রপরতার কারণ মনে করে তিনি ইংরেজবিরোধী আন্দোলনে রাজনীতির সম্পর্ক বাচিয়ে শিক্ষাপ্রপারই মুসলমানদের একমাত্র কর্তব্য বলে বিবেচনা করতেন আলিগড়ে তিনি যে কলেজ স্থাপন করেন এবং ঘ1 পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় তার ইংরেজ অধ্যক্ষ থিয়োডর বেকের প্রভাব তার উপর গভীরভাবে পড়ে। থিয়োডর বেক এবং থিয়োডর মরিসন স্যার সৈয়দ এবং তার অন্গামীদের গোড়ায় রাজনীতি থেকে দুরে রাখা এবং পরে ভারতের জাতীষ আন্দোলনের যূল ধারা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মত কর্মস্থচী গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেন, ইংরেজ শাসককুলের হ্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্টে

পৈয়দ আমীর আলি তার "্যাশনাল মহমেডান আসোসিয়েশন” দৃশ্যত অসাম্প্রদায়িক এবং জাতীয়তাবাদী হলেও চাকুরি-ক্ষেত্রে মুসলমানদের-_ধিশেষত পশ্চিঘবাঙলার মুসলমানদের শোচনীয় অবস্থা লক্ষ্য করে কেবলমাত্র মুসলমানদেরই ভ্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীণ হন এবং মুসলমানদের জন্য চাকুরি সংরক্ষণের পৃথক নিবধাচনের দাবি করেন। এহেন পরিস্থিতিতে বাউলাদেশে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের শ্রত্রপাত হ্য়। এই নবোদ্ভূত জাতীয়তাবাদ হিন্দু, পুনরুখানের পরিবর্তে অসাম্প্রদায়িক ছিল। সরকারী কর্ষে "ভারতীয়দের ন্যায়সঙ্গত অংশ, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের অধিকার, কৃষকদের দারিদ্রযমোচন, লবণকর রদ এবং বন-আইন সংশোধন প্রভৃতি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মুখ্য কর্মস্থচী ছিল বেক মরিসনের প্রভাবপুষ্ট স্টার সৈয়দ তার আলিগড় গোষ্ঠীর মুসলমানেরা পূর্বোক্ত প্রতি দাবির পিছনে হিন্দুদের দুরভিসন্ধি দেখতে লাগলেন এবং তার! প্রধানত অভিজাত ধনিক সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন বলে কৃষকদের দুরবস্থা'মোচন, লবণকর রদ প্রভৃতি দরিদ্রকল্যাণকর কর্মস্থচী তাদের আকর্ষণ

বা.-"

৯৮ বাঙল৷ বাঙালী

করেনি সৈয়দ আমীর আলি তার অন্থ্গামীর প্রথম বৎসর কংগ্রেসের বিরোধিতা না করলেও “কংগ্রেসের কর্মনুচী মুসলমানদের রাঁজনৈত্তিক দিক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে” মনে করে দ্বিতীয় বৎসর থেকে এর বিরোধী হলেন

এতৎসত্বেও 'জাতীয়তাবাদের প্রধান বাহক হিসেবে কংগ্রেসের অগ্রগতি অব্যাহত রইল। বদরুদ্দীন তায়েবজীর মত প্রতিষ্ঠাবান একজন মুসলমান কংগ্রেসের কর্ণধারদের একজন হলেন বোগ্বাই মাদ্রাজের মুসলমান-সমাজও বহুলাংশে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ছত্রচ্ছায়ায় এল। যদিও উত্তর-পূর্ব ভারতের মুসলমানদের অধিকাংশই দূরে সরে সরে রইলেন অন্যদিকে শাসক ইংরেজ এই নবজাগ্রত জাতীয়তাবাদের গতি রুদ্ধ করতে আগ্রহী হলেন। মুসলমান সমাজকে এই কর্মকাঁও থেকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্তে জাতীয়তাবাদের গীঠভূমি বাঙলাকে ছুই অংশে-_পশ্চিমভাগ হিন্দু বাউল! পূরভাগ মুসলিম বাঙলায় বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল তদানীন্তন বড়লাট কাজনের সময়। এই চক্রান্ত বঙ্গভঙ্গ নামে খ্যাত বঙ্গভঙ্গের আদেশ সরকারী নীতির পালাবদলেরও গ্োতক কার্জন মুসলমানদের উদ্দেশে বললেন, বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলমানেরা এমন এক্য শক্তির অধিকারী হবেন যা নবাবি আমলেও ছিল না। ১৯০৫ শ্রীস্টাবের অক্টোবর মাসে বঙ্গভঙ্গ আইন হলেও ১৯*৩ গ্রীস্টাব্দেই জনসাধারণ এই দ্বৃণ্য পরিকল্পনার কথ! জানতে পারে এবং তখন থেকে কেবল হিন্দুরাই নয়, মুসলমান- সমাজের একাংশও বিদ্রোহে ফেটে পড়েন। ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের নেতাদের অন্যতম ছিলেন। পরে সম্ভবত অর্থনৈতিক চাপে পড়ে তিনি মত পরিবর্তন করেন তথাপি হিন্দুদের সঙ্গে সমভাবে মুগলমানদের অধিকাংশ বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেন এবং ১৯১১ শ্রীন্টা্ধে ইংরেজ সরকার বঙ্গভঙ্গ আইন রদ করতে বাধ্য হন

বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পন। ব্যর্থতায় পর্ধবসিত হতেই শাসকশক্তি নবতর শক্তিতে ভেদনীতির কর্মস্থচী গ্রহণে তৎপর হয়। ভারতে ঘে নতুন শক্তির জন্ম হচ্ছে তারই পরিপ্রেক্ষিতে মুপলমানদের যে-কোন উপায়ে কংগ্রেস থেকে দূরে রাখতে হবে। এই উদ্দেশ্টে ইংরেজ আমলারা ত্পর হলেন এবং তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন আলিগড় কলেজের তদানীস্তন অধ্যক্ষ আচিবন্ড। এ'দের যোগসাঁজসে আগা খায়ের নেতৃত্বে মুসলমানদের এক প্রতিনিধিদল বড়লাটের সঙ্গে দেখা করেন এবং মুললমানদের জন্য পৃথক শির্বাচন-ব্যবস্থা, সরকারি চাকুরিতে পদ সংরক্ষণ ইত্যাদি বিভেদপন্থী দাবি পেশ করেন বড়লাট তাদের

বাঙালী মুসলমান-সমাজ ৯৯

প্রতি “স্থবিচারে'র প্রতি শ্রতি দিলেন অতঃপর ভারতের ছয় কোটি মুসলমানকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করার বাবস্থা হয়েছে বলে আমলাগোষ্ঠী উল্লসিত বোধ করলেন

সিমলা দরবারে সফল আলিগড়-নেতৃত্ব সেই বছরই ৩*শে ভিসেম্বর হিন্দু- মুললমানের মিলন ছন্ৰের পীঠম্থান ঢাকায় মিলিত হলেন এবং বিভেদপন্থী রাজনীতির সফলতার উদ্দেশ নিয়ে 'মুসলিম লীগ” স্থাপন করলেন প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই সময় লীগের বিরুদ্ধবাদী হিসেবে “হিন্দু মহাসভা"র জন্ম হয়। এবং পরোক্ষে সাম্প্রদায়িক প্রিয়াকর্মের পরিবেশ ব্রমশ উত্তপ্ত হতে শুরু করল লীগ- নেতৃত্ব সরাসরি আন্দোলনের পথে না গিয়ে আবেদন-নিবেদনের পঙ্থা গ্রহণ করে, কখনো নরম কখনো ব1 গরম স্থরে কারণ, মুসলমানেরা দেখলেন, আন্দোলন করে কংগ্রেপ যা পাবে, পন্থায় তারা পাবেন তার বহুগুণ বেশি এরও ব্যতিক্রম ঘটল গান্ধীজীর নেতৃত্বে কংগ্রেস খিলাফৎ আন্দোলনে যোগ দিতে মনস্থ করলে কংগ্রেপ লীগ খুব কাছাকাছি এল এবং তার ফলে খিলাফতের প্রশ্নে রাজনৈতিক সামাজিক ক্ষেত্রেও বহুলাংশে হিন্দুমুপলমান এক্য সাধিত হুল। তবে মুসলমান ধর্মগুরু হিসেবে তুরস্কের শাসক “খলিফা"র পদ বজায় থাকবে কিনারাঁজনীতিতে এই জাতীয় ধর্মীয় প্রশ্নের আমদানি করা সমীচীন ছিল কিনা, প্রশ্ন সঙ্গতভাবে আজো করা হয়। প্রপঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের জনক জনাব জিন্নাহ খিলাফৎকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করার বিরোধী ছিলেন। বাঙলার নেতা বিপিনচন্র পাঁলও এর বিরোধী ছিলেন কামাল পাশার নেতৃত্বে তুরস্কে খলিফার পদ বাতিল হয়ে যাওয়ার সক্ষে সঙ্গে ভারতেও এই আন্দোলন নিরর্থক হয়ে গেল। এর পরপরই সাময়িক হিন্দু-মুসলমান এঁক্যে সাম্প্রনায়িক বিভেদ মাথা চাড়া দ্রিল।

এরই মধ্যে ১৯৩* সালের আইন-অমান্য আন্দোলন এসে পড়ল ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধানের কাঠামে! তৈরি করার জন্য দুটি গোলটেবিল বৈঠক অনুঠিত হল; শাসকদের নির্লজ্জ ভেদনীতিমূলক প্রতিনিধি-নিধাচনের জন্য এই বৈঠক ব্যর্থ হয়ে গেল। বুটিশ প্রধানমন্ত্রী অতঃপর সরকারি স্তর অন্থুসারে অন্যান্য সম্প্রদায়সহ মুসলমানদের জন্ত পৃথক-নির্বাচনের ব্যবস্থা, আসন-সংরক্ষণ অমুপলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলিতে জনসংখ্যার ভিত্তিতে অধিক আসন দেবার ব্যবস্থা করলেন। এই ব্যবস্থায় সব সম্প্রদায় দল পুরোপুরি সন্তষ্ট না হলেও পূর্বোক্ত বন্টনের ভিত্তিতে ১৯৩৫ শ্রীন্টাব্ধে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল তাতে

১০৪ বাঙলা বাঙালী

সব দলই অংশগ্রহণ করে। বাঙলার মুসলমান সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ যে উগ্র সাম্প্রদায়িক ছিল না তা! এই নির্বাচনের সময় প্রকাশ পায়। বাঙলার প্রাদেশিক মুসলিম লীগ কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের পৃথক নির্বাচনের দাবি অগ্রাহ্‌ করে যৌথ নির্যাচনের দাবি জানায়। এমনকি মৌলানা! মহম্মদ আলির মতে প্রবলপ্রতাপ নেতার প্রত্যক্ষ বিকুদ্ধাচরণ করে বাঙলার খিলাফৎ কমিটি (নেহেরু রিপোর্টের যৌথ-নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানায়।

১৯৩৬ সালের নির্বাচনে বাওলার ১১৯টি মুসলিম আপনের মধ্যে লীগ পায় মাত্র ৪০টি আসন নির্বাগনের প্রাক্কালে তাড়াহুড়ো করে সংগঠিত ফজলুল হক সাহেবের 'কুষক-প্রজ। পার্টির ফলাফল লীগের তুলনায় বরং প্রশংসনীয় ছিল। হক সাহেব এক সময় লীগের সঙ্গে থাকলেও পরবর্তাকালে প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে সরে আদেন এবং প্রধানত বাঙলার কৃষকদের আশা-আকাজ্ষার সঙ্গে নিজে অবিচ্ছেছ্চভাবে যুক্ত হন এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। বলাই বাহুল্য, বাঙলার কৃষকপমাজের সদস্তরাঁ অধিকাংশই ইসলাম-ধর্মীবলম্বী। ফজলুল হক সাহেব মুসলমানদের নেতা হিসাবে অগ্রগণ্য হলেও কট্টর সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। তার দলের নামেও নিছক মুসলমানী ছাপের পরিবর্তে আথিক কর্ণশীতির বলিষ্ঠ ইঞ্গিত ছিল এবং ভোটযুদ্ধেও শ্বাভাবিক কারণেই 'কষক-প্রজা পার্টি” মুসলমান সংগঠন হিসেবে ভোটারদের দ্বারস্থ হয়নি হক সাহেবের অসাশ্প্রনায়িক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রমাণ হিসেবে আর একটি রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার উল্লেগ করা যায়। ১৯৩৬ খ্রীন্টাব্জের নির্বাসনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে কোয়ালিশন রকার গঠনের জন্য ভীরা লীগের দ্াারস্থ না হয়ে কংগ্রেপের কাছে যান। কিন্তু বাঙউলাব কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দোহাই দিয়ে হক সাহেবের প্রস্তাবিত কোয়ালিশন থেকে বিরত থাকেন কতকট! ব্যক্তিগন ক্ষোভ এবং বিরক্তিবশত ফজলুল হৃক্ষ সাহেব মুসলিম লীগের সহায়তায় মন্ত্রীমগুল গঠনই যে করলেন তা নয়, সদলবলে লীগে যোগদানও করলেন কংগ্রেপ-নেতৃত্বের এই অদুরদশিতা মারাত্ম ;ঃ ভুলের দরুণ বাঙলায় লীগের প্রভাৰ নিশ্চিতভ!বে বেড়ে গেল, ফলে পরবর্তীকালে দেশবিভাগের পথ প্রশস্ত হল।

দুদলিম লীগের চরিত্রধর্মে উল্লেখযোগা পরিবর্তন না হলেও তদানীন্তন যুক্তপ্রদেশে নিবাচনেরধ& ব্যাপারে লীগ কংগ্রেণ একটা! চলনসই সমঝোতা করে, কিন্তু নির্বাচনের পর লীগকে চুক্সিমতে -মন্ত্রীঘভায় স্থান দিতে অস্বীকার

বাঙালী. মুসলমান-সমাজ ১5১

করে কংগ্রেস এবং মন্ত্রীসভায় সীমিত সংখ্যক আসনলাভের জন্য লীগের সামনে এমন সব শর্ত রাখে যা লীগের পক্ষে শুধু ক্ষতিকরই নয়, আত্মহত্যা তুল্যও বটে। অতএব লীগ এসকল প্রস্তাব অগ্রাহ্হ করে এবং কংগ্রেসের কাছ থেকে স্থবিচার পাবার আশ! ত্যাগ করে অতঃপর লীগ কংগ্রেসের প্রবলতম শত্রতে পরিণত হয় এবং কংগ্রেসকে কেবলমাত্র হিন্দুদের প্রতিষ্ঠানরূপে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্টে ধাপে ধাপে ষড়যন্ত্রযধলক কর্মে লিপ্ত হয়। কংগ্রসশাসিত প্রদেশগুলিতে মুসলমানদের প্রাতি অত্যাচার-অবিচার হচ্ছে এই সত্য-যিথ্যা অভিযোগে লীগ- নেতৃত্ব মুখর হয়ে ওঠে এবং মুপলমানদের মনে এই ধারণার স্ষ্টি করে যে কংগ্রেস তথ৷ হিন্দুর সংস্পর্শে ইসলামের সমূহ বিপদ

১৯৪০ খ্রীস্টাব্দের মার্চ মাসে লীগ ভারতের মুসলমানদের নিজস্ব পৃথক রাষ্ট্র গঠনের ডাক দেয় এবং পাকিস্তান” পঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে এবং যুছে ভারতের নেতৃবুন্দের অমতে ভারতকে যুদ্ধলিগ্ত করার প্রতিবাদে কংগ্রেস মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করলে মুসলিম লীগ তা মুক্তি- দিবস হিসেবে পালন করে। কংগ্রেসের সত্যাগ্রহ এবং আগস্ট আন্দোলনেও লীগ বিরুদ্ধাচরণ করে এবং প্রচার করে যে কংগ্রেসের এই আন্দোলন মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী মহম্মদ আলি জিন্নার কুশাগ্র রাজনৈতিক বুদ্ধির ফলে পঞ্জাব এবং সিদ্ধুপ্রদেশ কোয়ালিশন এবং দল ভাঙা-গড়ার রাজনৈতিক খেলার মাধ্যমে বিশেষ শক্তিশালী হয়ে ওঠে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষে ইংলগডে শ্রমিকদলের সরকার গঠিত হয় এখং সেই সরকার ভারতবর্ষের শাসনতাস্ত্রিক অচলারস্থার প্রাতিবিধানে উদ্ঘোগী হয় কিন্তু অধিকাংশ প্রয়াসই মুসলিম লীগের ন'নাবিধ দাবিদাওয়ার জন্য ফলপ্রস্থ হতে পারে না। লীগের অন্যতম দাবি ছিল মুসলিম লীগকে মুসলমানদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বযুলক প্রতিষ্ঠান বলে স্বীকার করা এবং লীগ-বহিভূতি কোন মুসলমানকে অস্থায়ী সরকারে প্রতিনিধিত্ব করতে ন। দেওয়া মুসলমানদের প্রকৃত প্রতিনিধি কে তা নির্ধারণ করা সরকারের পক্ষে সহজ না হওয়াতে ১৯৪৬ খ্রীস্টাৰে পুনরায় সাধারণ নির্বাচন অহুষিত হয়।

১০২ যাঙল! বাঙালী

8

১৯৪৬-এর নির্বাচনে লীগ মোট £৯২টি মুঘলমান ভোটের ৪২৫টি দখল করে মূদলমানদের প্রতিনিধিত্বযূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকুতিলাভ করে। এর প্রভাব বাঙলায়ও পড়ে বাঙলার বিধানসভার ১১৯টি মুসলমান আসণের ১১৩টিতে লীগ বিজয়ী হয় এবং বাঙলায় লীগ মন্ত্রীনভা গঠত হয়। এই সময় ' প্রশাসনযস্ত্রের মাধ্যমে মুঘলমান সাম্প্রদায়িকতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সমভাবে হিন্দু-সান্প্রদায়িকতাও গ্রমারলাভ করে

অতঃপর বুটিশ সরকারের তরফ থেকে এক মন্ত্রিমিশন ভারতে আসে এবং বিভিন্ন দল তথা গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্তরর্তী সরকার গণপরিষদ গঠন সম্বন্ধে আলোচনা করে। ১৯৪৬ সালের ১৬ই মে এই মিশন তার প্রস্তাব পেশ করে। কংগ্রেদ গণপরিষদের প্রস্তাব গ্রহণ করলেও অন্তত সরকারের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে লীগের সঙ্গে মতপার্থক্য দেখ! দেয় এবং সরকারে যোগদানের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়। পক্ষাস্তরে, লীগও মন্ত্রীমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। অনেকের মতে, বহুকাল যাবৎ মুসলমান-মানসিকতাকে হিন্দুবিরোধী এবং বিচ্ছিন্নতাকামী করে গড়ে তোলা হয়েছিল, তাকে পুনরায় এক শাসনব্যবস্থা অভিমুখী করার ক্ষমতা স্বয়ং জেহাদের জনকদের পক্ষেও সম্ভবপর ছিল না সীমিত কর্তৃত্ববিশিষ্ট এক কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকার শেষ চেষ্টাও এইভাবে ব্যর্থ হয়।

অতঃপর ভারত-বিভাজন অপরিহার্য হয়ে দাড়াল এবং এর প্রত্যক্ষ প্ররোচন। এল মুসলিম লীগের “প্রত্যক্ষ সংগ্রামের? সিদ্ধান্তের মারফ। বাঙলা হল এর প্রয়োগক্ষেত্র জিন্নার ভিন্নবূপ প্রকাশ্য ঘোষণ] সত্বেও বাঙলার লীগ স্থরাবরী সরকার ১৬ই আগস্টকে- প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসকে হিন্দুদের ওপর নুশংসতম অত্যাচারের দিনে পরিণত করলেন কলকাতায় ১৫ই আগস্ট থেকে কয়েক দিন নরকের রাজত্ব চলল আঘাতের প্রত্যাঘাত থাকে। 'তাই হিন্দুরা সক্রিয় হলে পর কলকাতায় দীর্ঘদিন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার তাণ্ডব চলল। দেখতে দেখতে পঞ্জাব শিল্পী সহু সমগ্র ভারতে সাম্প্রদায়িকতার লেলিহান শিখা প্রজ্জলিত হয়ে উঠল। কার্যত পাকিস্তান স্থ্ট হবার পূর্বেই বেসরক1রীভাবে অধিবাসী বিনিময় শুরু হয়ে গেল-_বিশেষ করে উত্তর ভারত, পঞ্জাব প্রভৃতি অঞ্চলে। ভারতবর্ষের এহেন বিভীষিকাময় পটভূমিতে বড়লাট লর্ড মাউণ্টবযাটেন ১৯৪৭ সালের ওর! জুন ভারত-বিভাগ পরিকল্পন'

বাঙালী মুসলমান-সমাজ ১০৬

ঘোষণা করলেন এই প্রস্তাব অনুসারে দেশে দুটি গণপরিষদ গঠিত হবে। পঞ্জাব বাঙলার হিন্দু মুদলমান-প্রধান জেলার বিধানসভার প্রতিনিধিরা পৃথক পৃথক ভাবে মিলিত হয়ে স্থির করবেন তারা কোন্‌ গণ-পরিষদে অংশ গ্রহণ করবেন অনুরূপ সিদ্ধান্ত নেবেন সিশ্কুর প্রতিনিধিরা এককভাবে এবং সীমান্ত প্রদেশ শ্রহটে হবে গণ-ভোট এই প্রস্তাব ঘোষিত হবার আগেই মাউন্টব্যাটেন লীগ এবং কংগ্রেপ নেতাদের অগ্রিম সমর্থন আদায় করেন। গান্ধীজীর অজ্ঞাতে তার ঘোষিত ইচ্ছার বিরুদ্ধে কংগ্রেদ নেতারা একরকম পরাজিতের মনোভাব নিয়ে ভারত-বিভাগ পরিকল্পনায় সায় দেন। ভারত তথ! বাঙলার মুপলমানদের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অধ্যায় সম্পূর্ন হয় এবং ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসের মধ্যভাগে ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রের পরিবর্তন ঘটিয়ে পাকিস্তান ভারত নামে ছুই পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

॥৫॥

মুদলঘানদের জন্য জাতীয় বাসত্ৃমির দাবিতে এইভাবে পৃথক এঙ্গামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড ম্ববিরোধও দেখা দিল ভারতে তিনকোটির অধিক সংখ্যক মুসলমান রয়ে গেলেন, ধাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুদলমানেরাও পড়েন এদের নেতৃম্শনীয় অনেকে পাকিস্তানের সক্রিয় সমর্থক এবং তাদের প্রভাবে অধিকাংশ মুসলমান লীগপস্থীদবের ভোট দেওয়৷ সত্বেও পৃথক একটি মুপলিম রাষ্ট্রের তাত্পর্য এরা বোঝেননি। প্রশ্ন দাড়াল_-এ'দের দাবিতে পৃথক একটি মুসলিম রাষ্ট্র গঠিত হবার পর ভারতে এদের স্থান কোথায়? প্রশ্ন আরো গুরুতর আকার ধারণ করল যখন এদের নেতৃস্থানীয়রা তড়িঘড়ি ভারত ত্যাগ করে পাকিস্তানে চলে গেলেন এতদিন যেসব নেতার কথা শুনে এরা চলতে অভ্যস্ত ছিলেন, তাদের অনুপস্থিতিতে সাধারণ মুপলমান সমাজ দিশেহার। হয়ে পড়ল। স্বাধীনতার পর থেকে এযাবৎ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ইত্যাদি নানা! কারণে বেশ কয়েকলক্ষ মুসলমান পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্বপাকিস্তানে চলে যায়, কিন্ত তাদের অধিকাংশেরই অবস্থা হিন্দু উদ্বান্তদের চেবে ভালে! ছিল না। আধিক পুনর্বাসন ন! পেয়ে দেশত্যাগীর। পুনরায় পশ্চিষবঙ্ষে ফিরে এসেছেন এমন ঘটনা বিরল নয়।

১০৪ বাঙলা. বাঙালী

প্রশ্ন হতে পারে এদিকে মুসলমানদের আধিক নিরাপত্তা আছে কি? ভারতের সরকারী নীতি ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ায় অন্যান্য কৃষক বা শ্রমিকদের যতটুকু আথিক নিরাপত্তা আছে, মুসলমানেরাঁও তার সমান অংশীদার, এব্ষিয়ে সন্দেহ নেই। স্বাধীনতার পর সমগ্র ভারতের অর্থনীতির, বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতির প্রয়োজনমত বিকাশ হয়নি এবং পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির বিকাশের হার অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় কম। মুসলমানদের আথিক অবস্থার বিশেষ অনগ্রসরতার কারণ হল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মুপলমানদের সংখ্যা্পতা। এই শ্রেণীর কমই বিকাশ ঘটেছে জনসংখ্যা ন্তায়*নীতির মানদণ্ডে চাকুরি-ব্যবসার ক্ষেত্রে যোগ্যমত সুযোগে এরা বঞ্চিত। পাকিস্তানের স্থষ্টি-লগ্নে মূপলমান সমাজের প্রতি একটা মানসিক অগপ্রসন্নতা বুহত্তর সমাজ প্রশাসনের বিভিন্ন পধায়ে ছিল_-একথা অন্বীকার করার উপায় নেই। ভারতের প্রশাসনযন্ত্র আরো পাচটি দেশের মতোই পক্ষপাত আত্মীয়পোষণ দোষে দুষ্ট বলে সংখ্যালঘু মুসলমানদের দাবি বিশেষ মেটেনি।

এখনও আমরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার হাত এডাতে পারিনি স্থতরাং পন্থ এলাকাতে মুসলমানদের ভয়ে ভয়ে বাস করতে হয়। একাধিক ক্ষেত্রে মুসলমানদের ধর্মস্থান এবং বাড়ি জমি পূর্বপাকিস্তান থেকে বিতাড়িত ছিন্নমূল হিন্দুর দখল করেছে এং কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে সাম্প্রদায়িকতার নাষে কায়েমী স্বার্থবিশিষ্ট লোকেরা জবরদখল করেছে এইসব ক্ষেত্রে আইনের শাসনও ব্যর্থতার শিকার হয়েছে

শিক্ষাক্ষেত্রেও এরা! অনগ্রসর তবে সেটা বহুলাংশে তাদের মানসিক জাড্যের কারণে সব মিলিয়ে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে স্বাধীনতার পর পশ্চিমবাঙলার মুসলমান-সমাজ এক কৃর্মবৃস্তি গ্রহণ করে, যা শুধু তাদের পক্ষেই ক্ষতিকারক নয়, সমগ্র ভারত্রে পক্ষে বিপজ্জনক একই রাষ্ট্রের নাগরিকদের একাংশ মদি ছুর্বল, অনগ্রলর এবং অসন্তুষ্ট থাকে তাহলে সামগ্রিক বিচারে সেই রাষ্ট্রই দুর্বল হয়। রাজনৈতিক বিভ্রান্তির শিকার মুসলমান-সমাজ যে কৃর্মবৃত্তি গ্রহণ করে তার ফলে তার! সমস্ত রাজনৈতিক কার্ধকলাপ তথ সর্বজনীন সামাজিক কর্মকাও থেকে দূরে দূরে ছিলেন পরে এই সমাজের একট! বড় অংশ কংগ্রেসকে আশ্রয় করে। কিন্তু তাদের সমস্যাবলীর যত দ্রুত সমাধান হবে বলে তার। কংগ্রেসের কাছে আশ করেছিলেন বাস্তব ক্ষেত্রে তা না হওয়ায় তারা রাজনৈতিক দলবাজির শরিক হয়ে যান এবং ্রগ্রেদি5 মুঘলিম লীগ”

বাঙালী মুসলমান-সমাজ ১৭৫.

সুষ্টি করে মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে নবকলেবর দিতে প্রয়াসী হন। একথা ঠিক যে মুসলমান সমাজ যদি সাম্প্রদায়িকতার ফাদে প1 দিয়ে মুসলমানদের জন্য পৃথক রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হন তবে তার] মারাত্মক ভুল করবেন। এতে ঘটবে শুধু ১৯৬ সাল থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত মুসলিম লীগের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি মাত্র। তবে আজ রাজনৈতিক মঞ্চসজ্জা ভিন্ন। তাই সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে মুদলমানের। যদি স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে তবে হিন্দু-সাম্প্রদায়িকত। ছিগুণ বেশী প্রভাব বিস্তার করবে এবং মুসলমানদের জীবন দুবিষহ করে তুলবে এদেশে রাজনৈতিক দলে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার বিশেষ অস্তিত্ব না থাকলেও ইদানীং নানাবিধ সাম্প্রদায়িক দলের অভ্যুদয় ঘটেছে এবং কোন কোন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়পুষ্ট হয়ে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা সম্মানজনক হয়ে উঠছে। সুতরাং আপন-্বার্থেই মুসলমানদের পক্ষে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গী পরিত্যাজ্য এবং বিশেষভাবেই অবাঞ্ছনীয়

এই প্রসঙ্গে, পাকিস্তানের বীজ যে সাম্প্রদায়িক নির্বাচন-ব্যবস্থার মাধ্যমে বপন কর] হয়েছিল, তার মনস্তাত্বিক দিক সম্বন্ধে যেন আমর] ভুলে না যাই। পৃথক নির্বাচন-্ধ্যবস্থার জন্য অমুপলমান প্রার্থীদের আর মুসলমান ভোটারদের কাছে যেতে হয়নি এরা মুদলমান ভোটার এবং মুসলমান জনসাধারণ সম্বন্ধে উদাসীন হয়ে পড়েন একই মনোভাব মুসলমান রাজনীতিকদের মধ্যেও দেখা যায় হিন্দু ভোটার এবং হিন্দু জনসাধারণ সম্বন্ধে এই উদাসীনতা থেকে জন্ম নেয় অপছন্দ, এবং অপছন্দের মনোভাব ক্রমশ পরিণত হয় বিছেষে।

অপর একটি বিষয়ও মুসলমানদের বিবেচনা করা উচিত। পৃথক পৃথক রাজনৈতিক প্রতিঠান, নির্বাচন-ব্যবস্থা এবং আসন-সংরক্ষণ ইত্যাদির যুক্তি-সিদ্ধ পরিণাম যে-পাকিস্তান, সেখানকার অধিকাংশ মুসলমানদের সমস্যার সমাঁধানই কি ইসলামী-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার ফলে হয়েছে? স্বাধীন পাকিস্তান স্ট্টি হবার কয়েক বৎসরের মধ্যেই সেখানকার অধিকাংশ মুসলমানদের মোহভঙ্গ হয় এবং তার। উপলব্ধি করেন যে, ন। তাদের ভাত-কাপড়ের সমস্যার সমাধান হয়েছে, না পেয়েছেন তার! গণতগ্রসহ সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা আমরা দেখেছি সেই ভাষা- আন্দোলন থেকে “বাংলাদেশে'র জন্য মুক্তিযুদ্ধ পর্ধস্ত পূর্বপাকিস্তানের গণতাস্ত্রিক স্বাধীনতা এবং আথিক সমতাকামী তরুণ মুসলিম-মানস “কী যন্ত্রণায় মরেছে, পাথরে নিক্ষল মাথা! কুটে”। বাঁউলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও সেই নিক্ষল মাথা কোটার শেষ হয়নি; যেমন শেষ হয়নি পাকিস্তান নামক এন্সামিক রাষ্ট্রে

১০৬ বাঙল! বাঙালী

-াদবাকী অংশের সাধারণ মানুষের মুক্তির সাধনা এক কথায়, রাষ্ট্রনৈতিক এবং সামাজিক সমস্তার সমাধানের জন্য মুসলমান সমাজকে বিভেদপন্থা এবং ধর্মীয় 'বিচ্ছিন্নতাবাদকে বর্জন করতে হবে। পশ্চিমবাউলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষের মূল সামাজিক ধারার সঙ্গে ছন্দোবদ্ধ থাকার জন্য এদেশের মুসলমান সমাজকে যে পথে এগোতে হবে তাঁতে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই। আপন অধিকার রক্ষার জন্য তাদের লঙতে হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে--সকন ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষদের দ্বারা গঠিত পরিচালিত গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক, সামাজিক আধথিক ( ট্রেড-ইউনিয়ন) প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে অধিকাংশ বাঙালী মুসলমানই কৃষক শ্রমিক অথব1 ছোটখাট ব্যবসাদার এবং তাই তাদের স্বার্থ আপামর বাঙালী কৃষক-শ্রমিকদের সঙ্গে অভিন্ন ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবাঙউলার মুসলমান সমাজকে তাই সাম্প্রদায়িকতা বর্জন করে এবং পৃথক থাকার মনো- ভাবকে বিসর্জন দিয়ে কোন না কোন ধরনের সমাজবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। বর্তমান লেখকের মতে দীনতম ব্যক্তিটির আধিক রাজনৈতিক শ্বাধীনত এবং কর্তৃত্ব পাবার সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজবাদী কর্মস্থচি হল সর্বোদয়। পশ্চিমবাঙউলার মুগলমান-সমাজ আর সকলের সঙ্গে যত শীঘ্র সম্বন্ধে অবহিত হন, ততই বাঙালীর মঙ্গল।

একথা অনন্বীকার্ধ যে বিগত দুই শতাব্দী পর্ধন্ত মুসলমান সমাজের ইতিহাস মাত্রাতিরিক্ত ধর্মান্ধতায় পুর্ন এবং এই ধর্মান্ধতা তাদের প্রগতির পথ রুদ্ধ করে যুগোপযোগী শিক্ষা-দীক্ষা, ধ্যানধারণ! থেকে দুরে রেখেছে অবশ্ঠ দুর্বল হলেও আধুনিকতার একটা ধারা পাশাপাশি প্রবাহিত হয়েছে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে জনাব আবছুল লতিফ ( ১৮২৮-৯৩ ) এবং সৈয়দ আমীর আলি ( ১৮৪৯-১৯২৮ ) বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক ধ্যান-ধারণা প্রবর্তনের চেষ্টা করলেও তাদের বক্তব্যের বাহন হিসাবে বাউল! ভাষার শরণ ন। নেওয়ায় ছুই প্রতিভাবান ব্যক্তির প্রভাব বাঙালী মুসলমান সমাঁজে ব্যাপক হতে পারেনি এই দিক থেকে মীর মশাররফ হোসেনের ( ১৮৪৭-১৯১২) ভূমিকা অদ্ভিতীয়। উদার সহনশীলতার প্রতীক মীর মশাররফ হোসেন মুসলমান সমাজের পক্ষে স্পর্শকাতর এক বিষয়--গোপালন গোজীবন সম্পর্কে পর্যস্ত লিখতে কুঠা 'বোধ করেননি হিন্দু-মুপলমান সম্প্রীতির খাতিরে মুঘলমানদের খাছ্ে গোমাংস বর্জন করার পরামর্শ দেন তিনি মশাররফ হোসেন সাহেবের 'জধিদার র্পণ” এবং "গাজী মিয়ার বস্তানী, প্রমুখ গ্রন্থও যথার্থ আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ

বাঙালী মুসলমান-সমাজ ১০৭

মানসিকতার পরিচায়ক আধুনিক মানসিকতাসম্পন্ন এইরকম আর একজন লেখিকা ছিলেন বেগম রোকেয়া হোলেন ( ১৮৮০-১৯৩২ )। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “মতিচুর'-এ (প্রথম খণ্ড ১৯০৫, দ্বিতীয় খও ১৯২১) তিনি মুসলিম সমাজে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসকে নানাভাবে সমালোচনা করার যে সংসাহসের পরিচয় দেন তার তুলনা আজও মেলে ন।। বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে এশিখা? (১৯২০-২) পত্রিকাকে কেন্দ্র করে কাজী আবদুল ওদুদ, আবছুল কাদির, আবছুল হোসেন, মোতাহার হোসেন আবুল ফজল প্রমুখ বুদ্ধিজীবী বাঙালী মূসলমান-সমাজের মধ্যে যে “বুদ্ধি মুক্তির” আন্দোলন চালান, হিন্দু মুসলমান নিবিশেষে বঙ্গ-সংস্কৃতির ইতিহাসে তা স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে আধুনিকতা যুক্তিবাদের অনুসারীদের ধার একেবারে শুকিয়ে না গেলেও একথা দুঃখজনক এক সত্য যে এখনো বৃহত্তর বাঙালী মুসলমান-সমাজের মানস, যুক্তিবাদীদের দ্বারা নয় বরং যেন ধর্মাস্ধদের দ্বারাই অধিকতর প্রভাবিত।

বাঙালী মুসলমানদের চোখের সামনে একই সময়ে খলিফার দেশ তুরস্ক কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে ধর্মীয় গৌড়ামি বিসর্জন দিয়ে কবেই আধুনিক মানসিকতায় উত্তীর্ণ হয়েছে ।/ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলি অহিতকর ধর্মাম্বতাঁকে বিসর্জন দিয়ে যুক্তিবাদপস্মত ধ্যানধারণার প্রবর্তন করে আধুনিক বিশ্বে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে সুশৃঙ্খল শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে! অথচ এদেশে আজো এন্সামিক ব্যক্তিগত আইনের যুগোপযোগী সংস্কার সাধন করে নারীদের গ্চায়সঙ্গত অধিকার দেবার প্রস্তাবকে “তমুদ্দ,ন* আর “তহজীবের' দোহাই দিয়ে পন্াৎ কর!র জন্য সর্বরকমে চেষ্টা করা হয়। ধর্থীয় গৌড়ামির পীকে বদ্ধ পাকিস্তানে পর্যন্ত মুঘলমানের৷ আত্মস্থ হয়ে উঠছেন ধীরে ধীরে এবং আধুনিক বিশ্বে নিজেদের স্থান করে নেবার জন্য তাঁর] প্রবল বেগে অগ্রসর হচ্ছেন। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ” সধ্ধদ্ধেও এই কথা খাটে। “কি, পশ্চিমবাঙলার মুঘলমানদের বড় একটা অংশ যেন এখনও সেই অর্ধশতাব্দী পূর্বেকার মানসিকতায় আচ্ছন্ন এর একট] বড় প্রমাণ বাঙালী হিসেবে পরিচয় দেবার বদলে এখনও অনেক মুসলমানই নিজেদের পশ্চিমা বলে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করেন এদিক থেকে নজকুলের সার্থক উত্তরস্থরী হিসেবে সৈয়দ মুজতবা 'আ'লীদের প্রভাব পশ্চিমবাউলায় বেশ ক্ষীণ। ডঃ শহীহুল্লাহর মতো কয়জন মুসলমান বুদ্ধিজীবী সগর্বে বলতে পারেন £ “আমর! হিন্দু বাঁ মুসলমান একথা যেমন সত্যঃ তার চেয়ে বেশী সত্য আমর! বাঙালী এটি কোন আদর্শের কথা

১৯৮ বাউল! বাঙালী

নয়; এটি বাস্তব কথা৷ মা! প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ভাষায় বাঙালীত্বের এমন ছাপ মেরে দিযনেছেন যে, তা মালা-তিলক-টিকিতে কিংব1 টুপি-লুঙ্গি-দীড়িতে ঢাকবার জো-টি নেই ।, উল্লেখ করা যেতে পারে বহু তিক্ততা রক্তপাতের পর পাকিস্তীনের জন্ম হলাঁর পর মাত্র দেড বৎসরের মধ্যে অনুষ্ঠিত পূর্বপাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের সাহিত্য শাখার সভাপতি হিসেবে ডঃ শহীছুল্লাহ স্পষ্টোন্তি করেন “যে মিথ্যা আভিজাত্যের মোহে পশ্চিমবঙ্গে এক শ্রেণীর মুসলমানেরা ছেলেমেয়েদের বাঙলা পড়ান না বা আধুনিক শিক্ষালাভের জন্য স্কুলে পাঠান না, বদলে মাদ্রাসা মক্তবের শিক্ষা-গ্রণালীকে অশাকড়ে ধরতে চান, তা আর যাই হোক, তাঁদের উন্নতির সহায়ক নয়। এতে তাদের “নিজ ভূমে পরবাসী” করার পথ প্রশস্ত কর হয় মাত্র। বলাবাহুল্য, মাতৃভাষা প্রাদেশিক ভাষার মাধ্যমে শিক্ষালাভ না করে কেবল মাত্র উ্্ঘু বা আর্বী-ফারসী ভাষার মাধ্যমে শিক্ষালাভের প্রয়াসের ফলে এসব মুসলমান ছাক্র- ছাত্রীর বৌদ্ধিক বিকাশ কু্ঠিত হয়। এদেশে একজন মুসলমান ছাত্র বা ছাত্রী উচু” আরবী অথবা ফারসী ততটুকুই শিখুক একজন হিন্দু ছাত্র বা ছাত্রী সংস্কৃত যতটুকু শেখে ' ধর্মনিবিশেষে বাউল! বাঙালীর মাতৃভাষা "দাই পশ্চিমবাউলার মুসলমানদেরও বাউলা ভাষা শিখতে হবে, চগ করতে হবে সগৌরবে বাঙলা- ভাষা সাহিতো এরক্গামিক উপাদান বিরল নয়__বরং চেষ্টা করলে আর বাড়তে পারে

॥৬॥

“যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাধিবে যে নীচে,

পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে | কবিগুরুর এই আর্য দৃষ্টিলক সত্য সনাতন শাশ্বত। সুতরাং আর কোন কারণে যদি না-ই-হয়, নিছক আপন আপন মঙ্গলের জন্যই পশ্চিমবাউলার হিন্দুদের প্রদেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের শুভাশুভ সম্বন্ধে অবহিত হুওয়া প্রয়োজন হিন্দুদের যে মানসিকতা পশ্চিমবাঙলার মুসলমানদের সবচেয়ে বেশী পঙ্গু করে রেখেছে তা হল তাদের আম্ুগত্য সন্বন্ধেই ংশয়। একথা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, পশ্চিমবাঙলা তথ সমগ্র ভারতবর্ষ কিছুট। সহদয়তা এবং সংব্দেনশীলতার পরিচয় দিলে স্বাধীনতা-উত্তণ ভারতে

বাঙালী মুসলমান-সমাজ ১০৯

মুসলমানেরা কৃর্মবৃত্তি পরিহার করে জাতীয় জীবনের মুল ধারার সামিল হতে পারতেন। পরম্পরের প্রতি অবিশ্বাস উভয় অন্প্রদায়কে বারবার আত্মঘাতী ক্রিয়াকলাপে উদ্ধদ্ধ করেছে। বহু মুলমান এবং তাদের নেতৃবৃন্দ লীগের সমর্থক ছিলেন এবং পরবর্তীকালে অমুসলমানপ্রধান রাষ্ট্র ভারতে থাকতে বাধ্য হওয়াকে ভালো মনে নিতে পারেননি যেমন পারেননি পাকিস্তানে বসবাসকাগী হিন্দুরা এমনকি “বাংলাদেশে”র অভ্যুদয়ের পরও সেখানকার হিন্দুরা মানসিক অস্বস্তির হাত থেকে রেহাই পাননি আসলে এটা অন্বাভাবিক দেশ-বিভাজনের যুক্তিসঙ্গত পরিণতি মাত্র। পাকিস্তান, 'বাংলাদেশ” সহ ভারতেও এর প্রভাব কাটতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে তবে সঙ্গে সঙ্গে একথাও সতা যে স্বাধীনতার সর্ববিধ আন্দোলনে শত শত মুঘলমান অংশগ্রহণ করেছেন এবং এ'র] অন্তান্ত স্প্রদারের স্বীধীনতা৷ সংগ্রামীদের মতো কেবল সাম্রাজ্যবাদী শাঁসকদেব মারই খাননি, স্বীয় সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়াশীল- দের প্ররোচনায় স্বধর্মীদের হাতেও মারাত্মকভাবে নিগৃহীত হয়েছেন জাতীয়তাবাদী মুললমানেরা এই যে ছু-তরফা লাঞ্ছনা সহ করেছেন তার গভীরতা অন্ত মম্প্রণায়ের লোকেরা অন্ুভবও করতে পারেন না। অথচ ছুঃখের কথা স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে এইসব জাতীয়তাবাদী মুসলম!নদের কথা বিশেষ স্মরণ কর] হয় না। পক্ষান্তরে সব মুসলমানই লীগের সমর্থক ছিলেন মনে করে তাদের বংশধরদের এখনে ভারতে অবাঞ্ছিত জ্ঞান করা হয়।

পাকিস্তানের সঙ্গে বিগত যুদ্ধগুলির সময় ভারতের মুঘলমানের। বুকের এক্ত দিয়ে এদেশের প্রতি তাদের আন্বগত্যের পরিচয় দিয়েছেন ভারতীয় সামরিক বাহিনীর বু মুসলমান সৈনিক উচ্চপদস্থ কর্মচারী মুসলিম রাষ্ট্র বলে আত্মপরিচয়দানকারী পাকিস্তানের মুসলমান সৈনিকদের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতি পুর্ণ আনুগত্য সহকারে লড়াই করেছেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণও দিয়েছেন এই- ভাবে এযুগের ভারতীয় মুদলমান যুবকেরা শুধু লাজপত রায় তার মতো! আরো! অনেকের সংশয়েরই জবাব দেননি, এমনকি রবীন্দ্রনাথের মতো! উদার যানবিকতাবাদীর মনেও যে সন্দেহ ছিল_-ভারতীয় মুসলমানর] মুসলিম রাষ্ট্রের আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়বেন কিনা--সে সন্দেহেরও নিরসন করেছেন এর পরও পাইকারী হারে ভারতীয় মুসলমানদের আল্গত্য সম্পর্কে সন্দেহ করা শুধু নিষ্টরতা নয়, আত্মঘাতী নীতিও বটে।

ভারতীয় মুসলমানদের পাকিস্তান বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রতিভূরূপে

১১০ বাঙল! বাঙালী

ভাবার প্রবণতাটি ভারতীয় অমুসলমানদের মনে ক্রিয়া করে এবং এসব দেশে হিন্দুর! নিগৃহীত হলেই এদেশের মুসলমানদের টু'্ট লক্ষ্য করে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্ররোচিত করেঃ পাকিস্তান বা বাংলাদেশের রহিমের দোষে ভারতের, রহমানের গলা কাটা বা ঘর-বাড়ি জালানোর মতে নিষ্টর বর্বরতা সহজেই ঘটে যায়। অথচ এসব দেশের সাম্প্রদাধ়িকতাবাদীদের কুকীন্তির অন্থকরণ করলে বাঙালী বা ভারতীয় হিন্দুসমাজের শল্তি, বা গৌরব বৃদ্ধি তো হয়ই না, উপরন্ত এদেশে নিরপরাধ স্ংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হলে তা পশ্চিমবঙ্গ ভারতকেই দুর্বল বিশ্বসভায় ধিক.ত করে

প্রতিভূ মনে করার মধ্যযুগীয় বর্র মনোবৃত্তির আরও একটি কপ আছে। দেশের যেকোন জারগায় ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছুই দশ জন দৃবুনত্তের অপরাধে সমগ্র মুসলমান-সমাজকেই নিগৃহীত করার মনোবৃত্তি। বিশেষ করে নারী- নির্যাতনের ঘটনাকে হিন্দুদের মধ্যে প্রবল আবেগ ক্ট্টির কাজে লাগানে হয়। নারী-নিগ্রহ অবশ্যই নিন্দনীয় এবং এই ধরনের ছুদ্ভৃতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দেশের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজ] পাওয়া উচিত কিন্তু খবরের কাগজ এবং অতীত ইতিহাস, ছুই-ই কথার ভূরি তৃরি সাক্ষ্য দেবে যে, সকল সম্প্রদায়ের নরপশুদের মধ্যেই এই পাশব বৃত্তি বর্তমান আর ঘটনাচক্রে এক বা একাধিক নরপণ্ড বিশেষ কোন ধর্মাবলম্বী হুলে, সেই ধর্মাবলম্বী সকলকেই শান্তি দিতে হবে কোন্‌ যুক্তিতে? এই জাতীয় হিন্দু ছুন্ধতকারীদের অপরাধে সমগ্র হিন্দুপমাজকে পীড়ন করার কথ! আমরা ভাবতে পারি কি? তাই মুসলমানদের বিচারের ক্ষেত্রেও অন্ত মানদণ্ড রাখ! উচিত নয়।

হিন্দুদের আর একটি কুসংস্কার হুল, মুসলমানর। নিষ্টুর এবং ক্ষমতার লোভে ভ্রাতৃহত্যা অথবা পিতৃহতা। করতেও তাদের বাধে না। এই সঙ্গে অকথিত যে বক্তব্যটি রাখা হয় ত] হল মুসলমানদের তুলনায় হিন্দুর! অনেক বেশী মানবীয় গুণের অধিকারী কিন্তু এইসব ইতিহ1সনিষ্ঠ ব্যক্তিদের উরঙ্গজেবের সঙ্গে সঙ্গে চণ্ডাশোক, অজাঙশক্র অথব! এরকম আরও অনেক এতিহাসিক চগ্িত্রের কথা মনে পড়ে না। অর্থ প্রতিপত্তির লোভে কিছু কিছু মানুষ পশু হয়ে যাচ্ছে, সব ধর্মেই এমন কিছু কিছু লোকের সাক্ষাৎ আমরা দৈনন্দিন জীবনে পাই। বস্তত সমস্যাটি ধর্মভিত্তিক নয়, মনুষ্ক-প্রবৃত্তিগত। পাকিস্তানেই, প্রথমত হিন্দু-নিগ্রহের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সুক্রপাত হয়, পরে ভারতে তাঁর প্রতিক্রিয়। ঘটে--এ-ও এক অনৈতিহাসিক উক্তি যাটের

বাঙালী মুসলমান-সমাজ ১১১,

দশকের মাঝাযাঝি থেকে বেশ কয়েক বছর পাকিস্তানে কোন বড় রকমের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি, অথচ সময় ভারতে আহমেদাখাদ, ভিয়্া্ডি, চাইবাসা থেকে শুরু করে আমাদের ঘরের কাছে চন্দননগরের আশেপাশে কীাচড়াপাড়া, ভাটপাড়৷ প্রভৃতি ২৪-পরগণার শ্রমিক এলাকায় যেসব দাঙ্গ৷ হয়, তা যেন আমাদের বাস্তব সত্য সম্বন্ধে সচেতন করে তোলে এপব জায়গার দাঙ্গ। ছাড়াও ১৯৬৪ সালের গোড়ার দিকে রাউরকেলা, জামসেদপুর* রাচি ইত্যাদি জায়গার দার্গায় হিন্দুরা যে নারকীয় অত্যাচারের নজির রেখেছেন, তাতে তাঁদের মহত্বের অহমিকা কোন মতেই পোষণ করা চলে না। মানবিকতার মানদণ্ডে ভারতের হিন্দু মুসলমান মোটামুটি সমভাবে উত্তীর্ণ বা ব্যর্থ। ১৯৬৪ সনের দাঙ্গার মেঘের ঘনঘটার মধ্যে একমাত্র আলোকরেখা ছিল জয়প্রকাশ নারায়ণ, অন্নদাশংকর রায়, নবকৃষ্ণ চৌধুরী, মনোমোহন চৌধুরী চাকুচন্দ্র ভাগ্ারী প্রমুখ কয়েকজন অসাম্প্রদায়িক জননেতা বুদ্ধিজীবীর এঁতিহাসিক বিবৃতি, যার মাধ্যমে ভারতবর্ষের বিবেক মুখর হয়ে উঠেছিল কিন্তু তাদের সেই সত্য ভাষণকে স্বীকার করে নেবার সৎসাহস সাধারণভাবে হিন্দুসমাজ দেখাতে,পারেনি |

দাঙ্গা প্রসঙ্গে আর একটি কথা কয়েক বছর আগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সম্বন্ধে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়েছিল; তার রায় ছিল, এইসব দাঁঞগার প্রথম প্ররোচনা এসেছিল মুসলমানদের কাছ থেকে এর স্ত্র ধরে অনেকে মুসলমানদের আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করাতে চান। ব্যাপারে জয়প্রকাশের অভিমত প্রণিধানযোগ্য। তার প্রশ্ন__সংখ্যালঘু মুদলমানর1 যখন ভালোভাবেই জানেন যে সাম্প্রনা্িক দাঙ্গার শেষ পরিণতি তাদের বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য এবং শেষ অবধি তাদেরই বেশী মার খেতে হবে, তাহলে তীর দাঙ্গার প্ররোচনা দেবেন কেন? তাই জয়প্রকাশজীর ধারণা, সাধারণ ভারতীয় মুসলমান দাঙ্গার প্ররোচনা দেন না।। কাজ করেন পাকিস্তানী এজেন্ট এদেশের পাকিস্তান- প্রেমী লোকের!, যাদের মধ্যে হিন্দুরাও থাকতে পারেন পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী (সাধারণ মানুষ নয়) ভারত এবং বিশেষ করে তার ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরুদ্ধে। কারণ, ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতে দৃঢ়মূল হলে পাকিস্তানেও তার প্রভাব পড়বে (মুজিব প্রভাবিত “বাংলাদেশে” যেমন পড়েছিল) এবং তার ফলে ধর্মীয় রাষ্ট পাকিস্তানের ভিত্তি শিথিল হবার আশঙ্কা]

ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি পাক শাসকদের দরদ যে কত অগভীর তার,

১১২ বাঙলা বাঙালী

প্রমাণ “বাংলাদেশের “বিহারী*-সহ পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ মুসলমান উদ্ধাস্তর শোচনীয় দশা এবং তাদের মধ্যে ধারা আবার ভারতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের সাক্ষ্য সরকারের কর্তব্য পাকিস্তানের চর অনুগামীদের ষড়যন্ত্র আগাম ব্যর্থ করা শাস্তি দেওয়া কিন্ত গ্রশাসন- যন্ত্রের ব্যর্থতার জন্ত ভারতের সাধারণ মুসলমানকে শাস্তি পেতে হবে কেন? আর একটি কথা। ভারতের হিন্দুরা কি ভেবে দেখেছেন যে এইভাবে সাধারণ মুপলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে তারা পাকিস্তানের শাসক- সম্প্রদায়ের গ্র্যাণ্ড ডিজাইন বা স্থতুর অভিপদ্ধির অঙ্গ হয়ে পড়েছেন?

কিছুদিন ধরে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাবাদীরা মুসলমানদের “ভারতীয় করণ”-এর কথাও বলছেন কথাটি বলতে তারা ঠিক কী বোঝেন তা এখনও খুলে না বললেও, আভাষে-ইঙ্ষিতে যা বলেন তাতে মনে হয় যে, সবাইকে হিন্দু-সংস্কৃতির অগীভৃত করতে চান তারা কারণ, তাদের কাছে ভারত হিন্দু প্রায় সমার্থব্যগ্তক। জাতীয়করণের এই দাবি মেনে নিলে শুধু মুপলমান নয়, শিখ পা্শী খ্রীষ্টান বৌদ্ধ ইহুদী, তাবৎ সংখ্যালঘুদেরই এইভাবে “হিন্দু করতে হয়। কিন্তু কোন্‌ হিন্দু? বৈষ্ণব হলে শৈব শাক্ত জৈন প্রভৃতি হিন্দ- সমাজের অন্যান্য শাখাকেও এই একই মতবাদের হিম রোলারের নীচে পিষে সমান করতে হয়। আবার বৈষ্ণবরাও এক মত পথের অন্থুগামী নন। তাহলে শেষ পর্যন্ত কি থাকবে? “ভারতীয়করণে'র কথ! যার। বলেছেন, ধর্ম সংস্কৃতি সম্থক্ধে তাদের বিশেষ মতবাদটির সঙ্গে হিটলার বা স্ট্যালিনের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য কোথায়? এই লৌহ-কঠিন এঁক্যের পরিণামে ভারতীয় সংস্কৃতির যূল ধারাটিই-_যার মূল কথ! হল যত মত তত পথ বা! সমন্বয়-_ হারিয়ে যাবে।

বিজ্ঞান শিক্ষার গ্রপারের ফলে পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে, এমনকি অন্ত গ্রহ উপগ্রহও আর রূপকথার দেশ নয়। মানুষকে তাই তার সন্ধার ভাষা ধর্ম সংস্কৃতির রাজনীতি ভৌগোলিক সীমার গণ্ডি কেটে বিশ্ব-মানব হতে হবে। সমগ্বয় ছাড় আর যে বিকল্প মানুষের সামনে রয়েছে, তা হল সংঘধ সবনাশ সত্য বিশ্বের আর সব দেশের মাসষের মতো ভারত পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুমুদলমানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাঙালী হিন্দুমুসলমান যত শীঘ্র সত্য উপলব্ধি করে তদমুযায়ী মানসিকতা জীবনযাত্রা! গড়ে তোলেন, ততই শুধু তাদেরই মঙ্গল নয়, বিশ্ববিধানও ত্বরান্বিত হবে।

পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী-সমাজ

যুগ যুগ ধরে পাশাপাশি থেকেও বাঙালী সমাজের যে অবিচ্ছ্ছে অঙ্গ সম্বন্ধে আমরা বিশেষ খবর রাখি না তা হল আমাদের উপজাতি বা আদিবাসী সম্প্রদায় হাঁটে, মাঠে. অথব। মেলায় কর্মরত অথবা উৎসবের আননে মত্ত আদিবাসী নর-নারীর দল আমাদের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও সাধারণভাবে শিক্ষিত বাঙালীদের মধ্যে তাদের আশা-আকাজ্ষ। অথবা সমস্যা সম্বন্ধে খুব একটা চেতনা নেই হতরাং এই সব্প্রাচীন বাঙালী, পশ্চিমবঙ্গের জীবনকে ব্ুপ রস বর্ণাঢ্য বৈভবে সমৃদ্ধ করার ব্যাপারে ধাদের ভূমিক1 অদ্বিতীয়, তাদের বর্তমান অবস্থা ভবিব্যৎ সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ বিশদ আলোচনা বাঞ্ছনীয়

১৯৬১ সনের জনগণনার বিবরণ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে আদিবাসীর সংখ্যা হল ২০ লক্ষ ৫৪ হাজার ৮১ জন আদিবাসী জনসংখ্যার দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ ভারতে অষ্টম স্থান অধিকার করেছে পশ্চিমনক্ষের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫*৮৮ "ভাগ আদিবাসী এবং সমগ্র ভারতের আদিবাসীদের শতকরা ৬৮২ ভাগ পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায় আদিবাসীদের সংখ্যাধিক্য লক্ষ্য করা যায়। এগুলি জলপাইগুড়ি, পুরুলিয়া, দাজিলিং, পশ্চিম দিনাজপুর, বাকুড়া, মালদা, মেদিনীপুর বীরভূম জেলার থোট জনসংখ্যার অনুপাতে আদিবাসীদের শতকর! হার এসব জেলায় যথাক্রমে ২৬১০, ১৯ ৫৩, ১৫"৪৪, ১২-৮৫১ ১৪৪২১ ৮১৪, ৭৫৯ ৭৩৯1 আদিবাসীদের অল্প সংখ্যক অর্থাৎ মাত্র ৪৮ হাজার ১১৬ জন থাকেন শহরে এবং বাদবাকী সবার নিবাস গ্রামাঞ্চলে সুতরাং পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসীর! যূলত গ্রামীণ সম্প্রদায়

পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসীদের মধ্যে সর্ববৃহৎ সম্প্রদায় হলেন সাওতালেরা মোট আদিবাসীদের শতকর1] ৫৮:৪২ ভাগই এ'রা। এর পর যথাক্রমে .ওরাও ( ১৪-৪৮% ), মুণ্ডা *৮০% ), ভূমিজ (৪"৪৪% ), কোরা (৩২০০), লোধা বা খাড়িয়া (১:৯৯), মাহালি (১৩৭) ভুটিয়া (১১৫০) ইত্যাদির স্থান। পশ্চিমবঙ্গের একচল্লিশটি উপজাতীয় সম্প্রদায়ের ভিতর গুরুত্পূর্ণ বাকংগুলির নাম হল বাইগা, বেদিয়া, বীরহোড়, চাকমা, ছেরো, গারো, গো, গোরাইত, হো, হাজং, কর্মালী, খারওয়ার, খোন্দ, বিষাণ, কোরওয়া,

ব।.”৮

১১৪ বাঙলা! বাঙালী

লেপচা, লোহরা, মালপাহাড়িয়া, মাঘ, মেচ, মরু, মাহলি, নাগেসিয়া, পাহাঁড়িয়া, রাভা, সাউরিয়৷ পাহাড়িয়া, শবর টোটো

সাওতালের৷ পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই ছড়িয়ে আছেন। তবে মেদিনীপুর, বর্ধমান, বীরভূম, বীকুড়া, হুগলী, মালদা, পুরুলিয়া পশ্চিম দিনাজপুর জেলাতেই এদের সংখ্যাধিক্য। ওরাগুরা প্রবল জলপাইগুড়ি, দাজিলিং, চবিবশ পরগণ] পশ্চিম দিনাজপুর জেলায়। জলপাইগুড়ি, চব্বিশ পরগণা, মেদিনীপুর পশ্চিব দিনাজপুরে মুগ্ডাদের. ঘনবসতি। পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, চব্বিশ পরগণা হুগলী- প্রধানত এই চারটি জেলায় ভূমিজদের বাস কোরাদের বাস বর্ধমান, মেদিনীপুর, বাকুড়া পুকুলিয়। প্রভৃতি পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম সীমান্তবর্তা এলাকায় লোধারা থাকেন জলপাইগুড়ি মেদিনীপুর জেলায় মাহালিদের নিবাস বর্ধমান জলপাইগুড়ি জেলায় ভুটিয়ারা দাজিলিং জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যান্য আদিবাসীদের নিবাস সাধারণত একটি বা ছুটি জেলার মধ্যেই আবদ্ধ। মেদিনীপুর, বাকুড়া, বর্ধমান পুকলিয়া প্রভৃতি জেলায় যেসব আদিবাসীদের ( প্রোটো-মস্্ীলয়েড ) মূল নিবাস তাদের জলপাইগুড়ি, পশ্চিম দিনাজপুর অথব! দাজিলিং-এর মত জেলাগুলিতে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ চা বাগান কৃষিক্ষেত্রের শ্রমিক হিসাবে এসব জেলায় গিয়ে সেখানে পরে স্থাধীভাবে বসবাপ করা অস্ু্ূপ কারণে চব্বিশ পরগণা এবং এমনকি সুন্দরবন অঞ্চলেও জমি হাসিল আবাদ করার জন্য পশ্চিমাঞ্চলের আদিবাসীর] এসে স্থায়ী বসতি গড়েছেন

পশ্চিমবঙ্গের আদিবাপীদের মধ্যে মোট লক্ষ হাজার ৭* জন কৃষক যাদের মধ্যে অর্ধেকেরও উপর অর্থাৎ লক্ষ ৯২ হাজার ৪২১ জন হলেন কৃষি- শ্রমিক এবং এদের অধিকাংশেরই আবার জমিজম। নেই বললেই চলে খনিতে কাঁজ করেন লক্ষ ৩৯ হাজার ৩৪৮ জন। উৎপাদক গৃহশিল্পতে নিযুক্ত আছেন ৩২ হাজারেরও কিছু বেশ সংখ্যক নর-নারী। নির্মাণকার্ধ পরিবহনে যথাক্রমে ৩,৩৮৯ ৩,৫৫১ জন, ব্যবসা-বাণিজ্যে মাত্র ৩,৭৯৬ জন অন্যান্ পেশায় রত ৫২,৭৫২ জন নর-নারী।

পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী পুরুষদের মধ্যে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন পুরুষ নারীদের সংখ্য। যথাক্রমে শতকর। ১১২ জন ১৮ জন। পুরুষ নারী মিলিয়ে শতকরা মাঝ ৬৫ জন আদিবাসী অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। সমগ্র ভারতবর্ষের আদিবাসী-সমাজের ভিতর অক্ষরজ্ঞানসম্পন্গের হার কিন্তু শতকর! ৮৫ ভগ।

পশ্চিমবঙ্গের আদিনাসঈ-সমাজ ১১৪

অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সম্প্রদায় এবিষয়ে অন্যান্য অনেক রাজ্যেপ তুলনায় পিছিয়ে আছেন পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক শিক্ষার পর্যায়ে বিদ্ালয়ে যাবার উপযুক্ত' আদিবাসী ছাত্রদের মধ্যে মাত্র ৮*৫৮% বিদ্যালয়ে যান। অন্যান্তদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা কিন্তু ৪**৯৪% এবং এমনকি তপশিলীতুক্ত জাতিদের ক্ষেত্রেও এই ংখ্যা ১৪*"১%। স্থতরাং আদিবাসী-সমাজের মধ্যে শিক্ষার মান যে শোচনীয় রকমের নিন এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই এই রাজ্যের অন্যান্য অধিবাসীদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের উপজাতীয়দের 10098186107. বা সংহতিপর্ব অনেকট। অগ্রসর হয়েছে ছুই-চারটি আদিবাসী সম্প্রদায় ছাড়া আর সবাই একই গ্রামের বাসিন্দা, যদিও ভিন্ন পাড়। বা টোলায় হতে পারে সুতরাং দেখাশুন। পারস্পরিক আদান-প্রদানের যথেষ্ট অবকাশ আছে এবং এর কারণ বিশেষ করে ইদানিং আদিবাসী-সমাজের ভিতর আধুনিক শিক্ষা-দীক্ষার সঙ্গে আধুনিক ধ্যান-ধারণা, পোশাক-পরিচ্ছদ জীবনযাত্রার অন্যান্ত পদ্ধতিও প্রসারলাভ করেছে আদিবাসী-সমাজ আধুনিক ধর্মের দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছে বহু বৎসর পাশাপাশি থাকার কারণ বেদিয়া, অভিজীত ভূমিজ, গোন্দ, বীরহোড় (অংশত), খারওয়ার, লোধা, মাহালি, ওরাও", রাভা, শবর প্রমুখ উপজাতীয়ের! হিন্দুধর্ম দ্বারা বিপুলভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। এদের মধ্যে কোন কোন সম্প্রদায় সামগ্রিকভাবে বা অংশতঃ হিন্দু ধর্ম, পূজা-পদ্ধতি, দেব-দেবী,. আচার-ব্যবহার গ্রহণ করেছেন কোন কোন সম্প্রনায়ের ভিতর উপঞ্জাতীয়, ধর্ম এবং হিন্দুধর্ন__উভয়েরই প্রভাব বিদ্যমান অন্যপিকে শ্রীষ্টীয় মিশনারীদের প্রভাবে সীণ্ততাল গারে। প্রমুখ আদিবাসী সম্প্রদায়ের কেউ কেউষ্রীই্ধর্ম গ্রহণ করেছেন উত্তরবঙ্গের ভূটিয়া, চাকমা লেপচা (অংশতঃ) প্রমুখ মক্ষোলয়েড উপজাতীয়দের ভিতর বৌদ্ধধর্মের প্রাবল্য-__যদিও তাদের ভিতরও কিছু কিছু খ্ীষ্টধর্ষের অস্থপ্রবেশ ঘটেছে। তবে পশ্চিমবাঙলার আদিবাপীদের একটা বিপুল অংশই এখনও পর্বস্ত ৪1$5115 বা তাঁদের সনাতন আদিবাসী-ধর্মের অনুগামী অনেকে তাদের পূর্বপুরুষের পুজ। করেন। অনেকের উপান্ত, বোঙ্গ। (সুর্য বা পৃথিবী ), ধরম ঠাকুর ইত্যাদি প্রতিটি উপজাতীয়েরই এক সময় নিজন্ব ভাষা! ছিল এবং একমাত্র সেই ভাষাতেই তার1 কথাবার্তা বলতেন কিন্তু "দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে” নীতি অনুসারে চলতে চলতে পশ্চিমবঙ্গের তাবৎ আদিবাসী-সমাজই আজ ছ্বিভাষী এবং এই দ্বিতীয় ভাষা বাঙল] তবে এই বাঙলা আমাদের মত শহুরে

১১৩ বাঙলা বাঙালী

বাঙালীদের বাঙলা নয়। প্রতিট উপজাতীয় তাদের নিজন্ব বৈশিষ্ট্য, উচ্চারণ- ভঙ্গী এবং শব্দপস্তার ইত্যাদি এর সঙ্গে যোগ করেছেন কোন কোন আদিবাপীরা পূর্ণ মাত্রায় বাওলাভাষী হলেও অধিকাংশই কিন্তু নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলার সময় নিজেদের বিশিষ্ট উপজাতীয় ভাষার শরণ নেন। ভিন্ন উপজাতীয় নন্যান্ত বাঙালীদের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যম হল বাঙলা ভাষা। বিহার থেকে আগত পুরুলিয়ার অংশবিশেষের আদিবাসীদের একাংশ উত্তরবঙ্গের ভুটিয়া, লেপচা ইত্যাদি কয়েকটি আদিবাশী সম্প্রদায়ের লেখাপড়ার ভাষা হিন্দি। বাদ বাকী অধিকাংশ আদিবাঁপীর লেখাপড়ার ভাষা ছল বাউলা

|

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে পশ্চিমবঙ্গের আদিবাশীদের মধ্যে বহু বৈচিত্র্য প্রগতির দিক থেকে স্তরভেদ বিদ্যমান এদের একদিকে রয়েছেন বীরহোড়, শবর, লোধা অথবা টোটোদের মত আদিবাপী সম্প্রদায়, এখনও ধাদের ভিতর আধুনিক জীবনযাত্রা! পদ্ধতি বা! ধ্যান-ধারণাঁর বিশেষ অনুপ্রবেশ ঘটেনি | এদের বড় একট! অংশই যাঁয।বর, অরণ্যচারী এখং অরণ্যসম্পদ সংগ্রহ, শিকার অথব। বড় বেশী হলে হুম (নিত্য নূতন অরণ্যাঞ্চলে ) চাষ করে এর! ক্ষুন্িবৃত্তি করেন। শিল্প "লতে এদের ভিতর বনজ লতাপাতা দিয়ে দডি অথবা ঝুড়ি চুবড়ি তৈরী করা এবং এজ্জাতীয় 'আরও ছুই একটি আদিম শিল্প ছাড়া অপর কোন কারিগরী বি্যার প্রপার ঘটেনি! এদের মধ্যে আবার লোধ! অপর ছুই একটি সম্প্রদায় যুগ যুগ্ন ধরে অপবাধপ্রবণ ( 071071081171)95 ) বলে নিন্দিত, যদিও স্বাধীনতার পর আইন প্রথা-বলে তাদের সেই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি দেবার চেষ্টা চলছে তবুও সংস্কার এবং বিশেষ করে কুসংস্কার সহজে যায়না তাই এমনকি বছর কয়েক পূর্বেও গিধনী-ঝাড়গ্রাম অঞ্চলের এই লোধাদের মধ্যে কয়েকজনের অপরাধে সমগ্র সম্প্রদায়ের উপরই এক বীভৎস অজ্ঞাচারের পন্তা নেমে এসেছিল তারা অপরাধপ্রবণ উপজাতীয় বলে। আর এই অত্যাচার চালান অপর একটি আদ্বাপী সম্প্রবায়ের নর-নারী। সংবাদটি অণশ্ত আমাদের মত শহুরে বাঙালীদের কাছে খুব একটা পৌঁছায়নি এবং

পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী-সমাজ ১১৭

ভিয়েখ্নাম-কঙ্গো নিয়ে মাতামাতি করা আমাদের রাজনৈতিক কর্মী সংবাদপত্রের কাছে আদে" সংবাদ বলে বিবেচিত হয়নি

যাই হোক, মেকর অপর প্রান্তে রয়েছেন সাঁওতাল ওরাগুদের মত আদিবাসী, শহর ব] গ্রামাঞ্চলে ধাদের জীবনযাত্রা, পেশা ধ্যান-ধারণার সঙ্গে ব্রাহ্মণ কায়স্থ অথবা তপশীলী জাতিততুক্ত অন্যান্য বাঙালীদের খুব একটা পার্থক্য নেই। অর্থাৎ এদের ভিতর আধুনিকতার প্রবল প্রভাব পডেছে। এ'দের মেয়েমহলে ইদানিং এবং বিশেষ করে স্বাধীনতার পর শাড়ি, ব্লাউজ, অন্তর্বাস অন্যবিধ প্রসাধনদ্রব্যের ব্যাপক প্রচলন হযেছে, পুরুষেরা আধুনিক বাঙালীর মতই শার্ট প্যাণ্ট ছু'চলে৷ জুতো পরেন অর্থসঙ্গতি থাকলে ট্রানজিঘটার রেডিও হাতে বা কাধে ঝোলে। এদের ছেলেখেয়ের] অন্ঠান্য বাঙালীদের মতই স্কুল-কলেজে পড়েন এবং বড়র] হয় চাষ করেন, নচেৎ কলকারখানায় কাজ করেন এবং কেউ কেউ ডাক্তার নার্স উকিল মোক্তারও হন। বহু আদিবাপী সম্প্রনায় আবার দুয়ের মাঝামাঝি অবস্থায় আছেন

পশ্চিমবাঙলাঁর আদিবাসী সমাজের বিবর্তনের স্বাভাবিক গতি-প্রকুতি যদি লক্ষ্য করা যায় তবে বোঝা যাবে যে অন্যান্য বাঙালীদের মত এদের ভিতরও আধুনিকতার প্রসার ঘটেছে এবং ঘটবে ! পুরাতন আরণ্য জীবন, সভাতা অর্থব্যবস্থা যত সরল শান্তিময় সংঘাতরহিত হোক না কেন এবং সভ্যতা-গীড়িত কারও কারও কাছে যতই তা বাঞছনীগ্ বলে মনে হোক, আদিবাপীপমাজকে আর তাদের পুরাতন অবস্থায় রাখ! যাবে না এবং তাদের এগভাবে “জাদুঘত্রের নমুনা” করে রাখা তাদের দেশের পামগ্রিক স্বার্থের দিক থেকে আদে কাম্য নয়। কুড়ি লক্ষের উপর বাঙালীকে অর্থনীতি মানসিকতার দিক থেকে উনবিংশ শতাব্দীতে রাখার চেষ্টা করলে তার পরিণাম প্তুমি যারে নিচে ফেল সে তোমারে বাধিবে যে নিচে, পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে 1” সুতরাং পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসীদের সামনে মাজ্র একটিই পথ আছে এবং তা হল আধুনিক জীবনের উপযুক্ত হয়ে ওঠা শুধু দেখতে হবে যে মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে এই উত্তরণ যেন যথাসম্ভব বেদনারহিত হয়।

ব্যথা-বেদনারহিতভাবে আধুনিক যুগে উত্তরণের উপর একটু বিশেষ জোর দেবার প্রয়োজন আছে কারণ সমাজ-বিজ্ঞান বলে এজাতীয় পরিবর্তন এবং বিশেষ করে অতি ভ্রু, অল্প সময়ের মধ্যে যেখানে দুই-একটি শতাব্দীর অভিজ্ঞতাকে এক লাফে অতিক্রম করতে হয়, সেখানে ব্যথা-বেদনা এক রকম

- ১১৮ বাঙলা বাঙালী

অপরিহার্ষ। তবে একে এড়ানোর উপায় যে নেই তা নয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রগতির ফলে মানুষ পুরাতন অভিজ্ঞতার আলোকে নূতন পথ করে নিতে পারে সচেতন প্রয়াসের দ্বারা এক্ষেত্রেও সেই উদ্ভাবনী প্রতিভার পরিচয় দিতে পারলে আধুনিক যুগে উত্তরণের ব্যথা বেদনাকে একেবারে এড়াতে ন৷ পারলেও হয়ত অনেকট] লাঘব কর! সম্ভবপর হতে পারে

স্থপরিকপ্পিতভাবে এই প্রয়াস না করে অপেক্ষাকৃত স্থির অচঞ্চল কোন সমাজকে হঠাৎ আধুনিক অর্থনীতি সমাজব্যবস্থার ঘৃিপাকে এনে ফেললে তাদের যেসব সমস্তার সম্মুখীন হতে হয় এই পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসীদের মধ্যেই তার কিছুটা সমীক্ষা হয়ে গেছে। প্রধানত তারই ভিত্তিতে ( [10090 01 [00050118115701010 018 1179 1109 01 07971710215 01 ৬/০5৫ 13917591 £ অমলকুমার দাঁস স্বপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপজাতীয় উন্নয়ন বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ) আমাদের পরবর্তী বক্তব্য উপস্থাপিত করা হচ্ছে এই সমীক্ষা চালান হয় বর্ধমান জেলার চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস, হিন্ুস্থান কেবল ফ্যাক্টরী, ঝিমেরী কোলিপ্নারী এলাকায়, চব্বিশ পরগণার কাচরাপাড়া লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপ এবং নদীয়ার হরিণঘাটা মিক্ক ফ্যাক্টরী সংলগ্ন এলাকায়

আধুনিক জীবনের এক অপরিহার্য অঙ্গ এইসব বুহৎ যন্ত্রশিল্পে দামোদর উপত্যকার বাধ তৈরী করতে বিপুল সংখ্যক আপিবাসীকে তাঁদ্রে জীবিকার সাধন জমি বপতবাটি থেকে উৎখাত করতে হয়েছে একমাত্র হিন্দুস্থান কেবলস্-এর এলাকাতেই কারখানা স্থাপনের কারণে পরিবার পিছু জমির পরিমাণ ১৩.৪৫ একরের বদলে মাত্র ৫.১২ একরে দাড়ায় স্থানীয় অধিবাঁপীদের 'আঘিক ক্ষতি ছাড়াও যে মানসিক সামাজিক ক্ষতি হয় তা অপূরণীয় অথচ কারখানার যন্ত্রপাতির সঙ্গে অপরিচিত হবার ফলে জমি থেকে বঞ্চিত এইসব আদিবাঁপী নর-নারী সর্ধনিয় বেতনের অদক্ষ শ্রমিকের কাঁজ ছাড়া অপর কোন কাজ পাননি এবং তাও সবাই নয়। কিন্তু এই অদক্ষ শ্রমিকের আয়ও কৃষকের তুলনায় লোভনীয়-__বিশেষ করে তাব নিশ্চয়তা আছে বলে এবং নগদ টাকার একটা দুর্বার আর্কষণ বিছ্ধমান স্থতরাং এসব এলাকায় ধারের বাধ্য হয়ে কৃষি কার্ধে থাকতে হচ্ছে তাদের মধ্যে এবং বিশেষ করে আদিবাপী যুবকদের মধ্যে তাদের বর্তমান অবস্থার প্রতি তীত্র অসন্তোষ বিদ্যমান। আবার কারখানায় যারা কাজ করছেন তাদেরও শাস্তি নেই। কারখানার বাঞ্জারে অগণিত

পশ্চিমবঙ্গের আনিবালী-সমাজ ১১৯

ভাগ্যপণ্য তাদের নয়নলোভী আকর্ষণ নিয়ে হাতছানি দিচ্ছে হাতে নিয়মিত- ভাবে নগদ টাকা পাওয়া গেলেও তাদের সঙ্গতি অসীম নয় ফলে ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় হওয়৷ তে৷ দূরের কথা, তাদের অনেককে খগগ্রস্ত হতে হচ্ছে।

সমাজ এবং সভ্যতা-সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু হল পরিবার। অপরিকল্পিত আধুনিকীকরণের ফলে এঁ্পব এলাকার আদিবাসীদের পরিবার প্রথাতেও গুরুতর পরিবর্তন ঘটেছে কেরল যে যৌথ পরিবারই ভেঙে পড়েছে তা নয়, বনু ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী সন্তানের ছোট (01691) পরিবারও আঘাত পাচ্ছে এর কারণ হল নগদ মঞ্জুরী প্রাপ্তি তার সঙ্গে সম্পকিত স্ব-স্ব-প্রধানতার মানসিকতা, কারখানা থেকে বাড়ির দুরত্ব, কারখানা শহরের নাগরিক জীবনের সথখ- শ্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি আকর্ষণ ইত্যাদি ফলে আদিবাসী-সমাজের ভিতর যে চিরাচরিত পারম্পরিক সহযোগিতা সমবায়মূলক সম্পর্ক ছিল এবং যা ছিল প্রত্যুত তাদের সামাজিক নিরাপত্তার অন্যতম প্রধান সাধন, দ্রুত তার অবক্ষয় ঘটছে। এর স্থান নিচ্ছে ব্যক্তিম্বাতন্ত্য আত্মকেন্দ্রিকতা এবং এর ফলে এইসব এলাকার আদিবাপী পম্প্রদ্দায় আধুনিক ভারতের সামাজিক নিরাপত্তার অপ্রতুল রাস্্ীয় ব্যবস্থার কারণে জীবনে নিদাকণ নিরাপত্তার অভাবের সম্মুখীন হচ্ছেন। একটিমাক্স দিকে এই নিরাপত্তার অভাব যে মারাত্মক সমস্যার স্থি করছে, তার প্রাতি নজর দিলেই নূতন পরিবর্তনের গুরুত্ব অনুধাবন কর! যাবে। মগদ ম্জুরীর আকর্ষণে আদিবাসী যুবতীর] বিহারের মুসলমান অথবা শিখ ঠিাদার দৌকানদারদের কাছে কাজ করতে শাঁসেন এবং এইসব আধুনিক মানুষের তুলনায় তারা অনেক সরল বলে তাদের মধ্যে অনেকে এদের প্রলোভনের ফাদে পড়ে এদের শধ্যাপঙ্গিনী হয়ে পড়েন কিন্তু বিবাহিত স্ত্রীর মর্ধাদ1 এরা কদাচিৎ পান ফলে এইসব বহিরাগত ঠিকাদার বা দোকানদারেরা চলে গেলে অথব। তাদের আকর্ষণ ফুরিয়ে গেলে অবাঞ্ছিত সন্তানসহ এইসব আদিবাসী যুবতীদের নারকীয় জীবনযাপন করতে হয়। কারণ তাদের পূর্বতন সমাজ তাদের আর গ্রহণ করে না। নাগরিক জীবনগ্রহণকারী এইসব আদিবাসী পুরুষ রমণীদের মধ্যে গ্রামীণ আদিবাসীদের তুলনায় সব রকম নেশার পরিমাণই বেশী স্বভাবতই নেশার আনুষঙ্গিক ব্যাপারও এদের মধ্যে জআধিকমান্ায় প্রকট হয়েছে।

এইসব এলাকার শ্রমিক সঙ্ঘগুলি যদি আদ্িবাপীদের সক্ষে অপরাপর সম্প্রদায়ের সংহতির কাজ করতেন তাহলেও এইসব ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে

১২৯ বাঙল৷ বাণ্ালী

যেত। কিন্তু আদিবাসীদের মধ্যে শতকরা ছয় ভাগের বেশী শ্রমিক সঙ্ঞ্বের সঙ্গে যুক্ত নন। কারণ অন্য সম্প্রদায় ভিন্ন প্রদেশাগত শ্রমিকদের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে প্রথমত তারা শ্রমিক সজ্বের মধ্যে মানসিক সাযুজ্য বোধ করেন না। দ্বিতীয়ত এইসব শ্রমিক সঙ্ঘের নেতৃবুন্দও তাদের আপন করার চেষ্টা করেন না। শুধু তাই নয়। শ্রমিক সঙ্ঘ যেখানে প্রবল, নূতন শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রেও তার। স্থানীয় আদিবাসীদের পরিবর্তে বহিরাগত নিজেদের সম্প্রদায়ের লোকেদের প্রতি পক্ষপাত দেখান স্থতরাং আদিবাসীরা মালিক শ্রমিক সঙ্ঘ--উভয়ের দ্বারাই পীড়িত। এইসব কারণের জন্ত আকম্দিকভাবে আধুনিকতার ঘূর্ণাবর্তে শিক্ষিপ্ত আদিবাসী সম্প্রদায় বিস্ফোরণের এক অতীব অন্থকূল উপাদান

স্থতরাং পশ্চিষবঙ্গের আদিবাসীদের আদিম অবস্থায় রাখ! উচিত বা সম্ভব নয় এবং তাদের আধুনিক যুগে আনতে হবে সুপরিকল্পিত উপায়ে যাতে প্রচলিত আথিক সামাজিক ব্যবস্থার রূপান্তর আকম্মিকভাবে ঘটাতে গিয়ে তাদের অনাবশ্যক আঘাত বেদন1 না সইতে হয়। এর অন্যতম প্রধান উপায় হল তাদের ভিতর জ্ঞান শিক্ষার আলে! প্রসারের সর্ধবিধ প্রয়াস করা এবং এর জগ্ প্রয়োজন বুঝলে অপরের তুলনায় বেশী ন্থযোগ-স্থবিধা দেওয়া তবে এই শিক্ষা বর্তমানের কেতাবী শিক্ষা! মাত্র নয় যার ফলে বাঙালী বেকার সমস্যায় জর্জর | বর্তমান অবস্থা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে আদিবাসীসহ বাঙালীর শিক্ষাপদ্ধতিকে উৎপাদনমূলক কর্মকেন্দ্িক করতে হবে

|

আধুনিক যুগে আনার এই সমস্যা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসীদের অন্য কোন বিশেষ সমস্তা আছে কি যার পীডন কেবল আদিবাশী বলেই তাদের সহ! করতে হয়?

একথা সত্য যে বর্ণহিন্দু অথবা তপশীলভুক্ত জাতির বাঙালীদের মধ্যে সাধারণভাবে আদিবাশীদের সম্বন্ধে একট! প্রচ্ছন্ন উপেক্ষা উন্নাসিক তার ভাব ছিল য। সমগ্র বাঙালী জাতির সংহতির পক্ষে ক্ষতিকারক মুদ্রার অপর দিক, আদিবাসীদের মধ্যে অন্তান্ত বাঙালীদের থেকে দুরে থাকার একট। মানপিকতা!

পশ্চিমবঙ্গের আদিবালী-সমাজ ১২১

--একটা হীনতা'ভাবেরও (10651101169 00101)19%) অস্তিত্ত ছিল একদা তপশীলভুক্ত জাতির সম্বন্ধে বর্ণহিন্ুদেরও এই জাতীয় মনোভাব ছিল যা বর্তমানে এবং বিশেষ করে বঙ্গ বিভাগের পর যে প্রচণ্ড সামাজিক আলোড়ন হয় তার কারণে প্রায় অদৃশ্ঠ আদিবাপী-সমাজের ভিতর শিক্ষার প্রসার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তারা যখন আরও বেশী করে আধুনিক জীবনযাত্রা গ্রহণ করবেন তখন অন্যান্য বাঁডালীদের সঙ্গে অবাধ মেলামেশার স্থযোগই বুদ্ধি পাবে এবং এই ভাবে হিন্দিতে যাকে “রোটি ওঁর বেটির” সম্পর্ক বলে-_অর্থাৎ একসঙ্গে খাওয়া- দাওয়া টৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে উঠে পংহতির গতিকে ত্বরান্বিত করবে। সুতরাং বর্ণ বা অবর্ণহিন্দুদের উন্নাসিকতা৷ আদিবাসীদের হীনতাভাব প্রধানত আধুনিকীকরণের সমস্ত

পৃথক থাকার মানপিকতা রাজনীতিতে প্রযুক্ত হওয়ার ফলে কেবল আদিবাপীদের জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে পৃথক আদিবাসী রাজ্য ইত্যাদি সব কিহর জন্যে দাবি উঠতে পারে প্রতিবেশী রাজ্য বিহার, ওড়িস্া আপামে স্বাধীনতার পর থেকেই জাতীয় বিচ্ছিন্নতাকামী এনং সেই কারণে আধুনিকতার মানসিকতাবিরোধী দাবি স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠলেও পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী-সমাজ সৌভাগ্যক্রমে এতদিন সন্কীর্ণ মানসিকতার শিকার হননি কিন্তু ১৯৭১ সনের মধ্যবর্তী নিধাচনে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম সীমাস্ত অঞ্চল থেকে ঝাড়খণ্ড পার্টির দুইজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় এবং আরও কয়েকটি নিরাচনক্ষেত্রে কেবল আদিবাসীদের এই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা বেশ কিছু সংখ্যক ভোট পাওয়ায় বোবা যায়, যে পশ্চিমবঙ্গের আদ্দিবাপী সমাজের একাংশের ভিতর পুথক থাকার মনো বৃত্তি কাজ করছে। উত্তরবঙ্গেও ইদানিং মাঝে মাঝে “উত্তরা” নামক পৃথক আদিবাসীন্প্রধান (1) রাজ্যের সম্বন্ধে কানাঘুষে| চলছে আদিবাসী সমাজের পৃথক জনপ্রতিনিধিত্ব এবং পৃথক রাজ্য সম্পকিত আপাত শ্রতিন্থথকর দাবি ছুটি কতট1 আদিবাসী সমাজের কল্যাণসাধনে সক্ষম সে সম্বন্ধে আলোচন] হওয়া বাঞ্চনীয়

পশ্চিমবঙ্গের তাবৎ আদিবাসী যদি কোন দিন কোন জাদুমন্ত্র প্রভাবে সম্প্রদায়গত বৈশিষ্ট্য লা পার্থক্য ভুলে কেবল আদিবাসী হিসাবে এক রাজনৈতিক ছত্রতলে সমবেত হন তবুও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকে তারা একক- ভাবে নিয়ন্ত্রিত করতে পারবেন না। কারণ বড় বেশী হলে তাদের তরফ থেকে

১২২ বাঙলা বাঙালী .

বিধানসভায় বিশ-বাইশ জন (জনসংখ্যার ভিত্তিতে ) সদন্ত নির্বাচিত হবেন। কিন্তু এরও কোন সম্ভাবনা নেই কারণ পশ্চিমবঙ্গের তাবৎ আদিবাসী একটিমাত্র এলাকায় থাকেন না, যুগ যুগের স্বাভাবিক বিবর্তনের কারণে তারা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে আছেন স্থতরাং পৃথক থাকার দাবি নিয়ে নির্বাচনে দাড়ালে এবং তাবৎ আদিবাসীদের সমর্থন পেলেও চার-পাচজনের বেশী আদিবাসী এইভাবে বিধানসভায় নির্বাচিত হতে পারবেন নাঁ। রাজ্যের রাজনীতি প্রশাসনে কোন ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে হলে এদের অন্ত দলের সঙ্গে হাত মেলাতেই হবে। কিন্তু পৃথক থাকার মনোবৃত্তির ভিত্তিতে কয়েকজন বিধানসভার সদন্ত নির্বাচিত হলে তারা অন্যান্য বাঙালীদের শক্রভাবাপন্ন করে তুলবেন যাঁর ফলে পরে অন্যান্ত দলের বিধানস'ভার সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অধিকতর প্রভাব বিস্তার কর দুরূহ হবে। এর বিরুদ্ধে হয়ত বিগত মধাবর্তা নিবাচনে মুসলিম লীগের ভূমিকার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। কারণ তাদের ক্ষেত্রে অন্তত সামাজিকভাবে পৃথক থাকার রাজনীতি সফল প্রপব করেছে। কিন্তু ইতিহাসে বর্তমানের দুই চার মাস বা বছর কিছু নয় এবং ইতিহাসের বিধাত! শেষ হাসিটুকু নিজের জন্য সংরক্ষিত রাখেন স্থৃতরাং মুদ্লিম লীগের আপাত লাভে উত্তেজিত হবার কিছু নেই

যদি ধরা যায় যে এইভাবে অনেকগুলি অথবা সবগুল আদিবাসীদের আসনই পৃথক থাকার অনুগামী আদিবাপীরাই পেলেন তবু সমগ্র আদিবাসী- সমাজের তুলনায় তারা কতটুকু? পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার সদণ্ত, মন্ত্রী এবং সরকারী কর্মচারীদের বড় একটা অংশ ব্রাঙ্গণ, কায়স্থ অথবা! ব্ছার] দীর্ঘকাল যাবৎ অধিকার করে আপছেন। সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারার পর থেকে মুদলমান তপশীলভুক্ত জাত্ররাও এইসব সরকারী স্থযোগ-স্থবিধার যথেষ্ট অংশ পেয়েছেন কিন্তু সাধারণ ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য অথবা মুসলমান অবর্ণহিন্দুদের তাতে কোন্‌ চতুবর্গ লাভ হয়েছে? তাঁদের অধিকাংশই কুষক, শ্রমিক অথব! নিম্ন আয়ের কর্মচারী বিশ-পঞ্চাশ জন বন্দ্যোপাধ্যায়, ঘোষ, সেনগুগ্ত অথবা সৈয়দ কিংবা মণ্ডল পদবাধারা ব্যক্তি এসব উচ্চপদে অধিষ্ঠিত থেকে শিজেদের কিছু স্থবিধা করে নিলেও বাদবাকী সেইসব পদবীধারী লক্ষ লক্ষ বাঙালীর কি স্থবিধা হয় তাতে? নাগাতভৃমি মেঘালয়ে পৃথক পার্বত্যরাজা হবার ফলে সাধারণ নাগ! অথবা খাসিয়া চাষী, মুর অথবা! নিম্নবিত্ত কর্মচারীর হৃখ-্থাচ্ছন্দ্য পূর্বের তুলনায় কতটুকু বেড়েছে? বিচ্ছিন্নতার মনোবৃত্তিকে একেবারে শেষ সীমা পর্যস্ত টেনে

পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী-সমাজ ১২৩

নিয়ে পূর্ববঙ্গের মুসলমানের] যে পাকিস্তানের সৃষ্টি করেছিলেন তার ছারাই বা সেখানকার কৃষক শ্রমিকের কতটুকু উপকার হয়েছে? জনপ্রতিনিধি অথবা মন্ত্রী কিংবা সরকারী কর্মচারীর সংখ্যা দশ-বিশ জন বাড়লেও পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসীদের অবস্থার বিশেষ কোন হেরফের হবার সম্ভাবনা নেই। রাজনীতিতে এই জাতীয় পৃথক থাকার বিচ্ছিন্ততার মানসিকতা বরং আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়াকে বিলপ্ষিত করে এবং বিশেষ করে সেই সমাজের নবস্ষ্ট অভিজাতদের (০1199) অনগ্রসর সম্প্রদায়কে টেনে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত করার বদলে নৃতন স্থবিধাভোগী গোষ্ঠীতে পরিণত করে স্বীয় সমাজের বুহত্তর অংশ থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে দেয়। স্বাধীনতার পর আদিবাসী সমাজ থেকেও যে দলেরই হোক ন। কেন, বেশ কিছু সংখ্যক বিধান- সভা লোকসভার সদশ্ত, মন্ত্রী উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী হয়েছেন কিন্তু একথ! ছুঃখজনক হলেও সত্য যে তাঁদের সধিকাংশই শী ভিন্ন সম্প্রদায়ের বিধানসভা লোকসভার পদণ্য এবং মন্ত্রী পদস্থ কর্ষগারীদের ঝাঁকে মিশে গিয়ে সেই বিশেষ স্থবিধাভোগী শ্রেণীকে (০1539) পুষ্ট করেছেন, তাদের পোশাক- পরিচ্ছদ, আচার-ব্যবহার, খানা-পিনা জীবনযাত্রা পদ্ধতি গ্রহণ করে তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছেন নিজেদের আদিবাসী-সমাজের কাছে তার এক রকম হারিয়ে গেছেন বললেই চলে

স্থতরাং আদিনাপী-সমাজের আথিক অনগ্রসপরতার চিকিতস। পুথক থাকার রাজনীতি নয়--পশ্চিমবঙ্গের আর সবার সঙ্গে কদম মিলিয়ে এমন এক সমাজ- তান্ত্রিক কর্মস্ছচী গ্রহণ কর] ধার ফলে কৃষি, সেচ শিল্পের ব্যাপক উন্নতি ঘটানে। সম্ভব-প্রতিটি কর্মহীনের জন্য উৎপাদনমূলক কর্মের সংস্থান করা সম্ভব বর্তমান লেখকের মতে দর্বোদধ্ের পরিকল্পনাই সেই আদর্শ সমাজতান্ত্রিক কর্মস্থচি যাতে পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসীদের পুর্বোক্ত চাহিদা মিটবে এবং যথাসম্ভব অল্প ব্যথা-বেদনায় তারের ভিতর আধুনিক যুগের আবির্ভাব ঘটাবে এক্ষেত্রে আদিবাপী-সমাজের কোন পৃথক সমস্যা নেই, সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের সমস্তার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ তাদের সমন্ডা!

প্রবাসী বাঙালীর কথা

অদূরে ক্রীড়ারত ছেলেমেয়েদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে আমি প্রশ্ন করলাম, থাক তো যধ্যপ্রদেশের এই ছোট্ট শহরে ওদের লেখাপড়ার কি ব্যবস্থা এখানে ?

আমি ছুটিতে বন্ধুর ওখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম অনেক দিন পর দেখা তাই খুঁটিয়ে খবরাখবর নেবার পালা আরম্ভ হল।

বন্ধু বললেন, কেন- এখানে একটি হাইস্কুল হয়েছে সেখানেই পড়ে ওরা

বিশ্মিত কে আমি বললাম, এত দূরেও তোমরা বাঙলা স্কুল করেছ

একটু হেসে বন্ধু বললেন, নানা বাঙলা স্কুল নয়। বাঙালী ছাত্র এখানে আর ক'জন? হিন্দির মাধ্যমে পড়ানে| হয় এখানে

হিন্দি! আমার মুখ বেজার হয়ে উঠল বাঙালীর ছেলে শেষকালে হিন্দি পড়ছে?

বন্ধু তাড়াতাড়ি বললেন, কি করি ভাই-_তিনটি ছেলেমেয়েকে বাঙলাদেশে হস্টেলে রেখে পড়াবার সামর্থ্য কই?

আমি বললাম, কেন--কোন আত্মীয়স্বজনের ওখানে তো রাখতে পারতে

কৈফিয়তের স্থরে বন্ধু জানালেন, সে সুবিধা নেই ভাই। তারপর একটু থেমে আবার বললেন, আর থাকলেও এই বয়সের বাচ্চাদের বাবা-মায়ের সাহচর্য থেকে বঞ্চিত করাটা! ওদের বা বাবা-মা-_কারও পক্ষেই শুভ হবে না। সুতরাং আমর। নিজেদের কাছে রাখাই স্থির করেছি

আমি তবু সন্তষ্ট হলাম ন!। বললাম, তা যেন হল। কিন্ত বাঙালীর ছেলে ধাঙল। শিখবে নাঁ-এ কেমন কথা হল?

বন্ধু বললেন, কেন বাউলা তো ওরা জানে বাঁড়িভে বাগলায় কথাবার্তা বলছে আর ত৷ ছাড়া মায়ের কাছে ওরা বাঙলা শেখেও বাঙল! গল্পের বই পড়ছে ওদের জন্য একটি পত্রিকাও আসে বেশ আগ্রহ করে পড়ে ওরা সেটি।

একটু অবিশামের হাসি হেসে আমি বললাম, এতে কি আর বাঙালীর ছেলের যথেষ্ট বাঙলা-জ্ঞান হয়?

প্রবাসী বাঙালীর কথ! ১২৫

বন্ধু বললেন, নাই ব! হল বাঁওলাদেশের বাঙালী ছেলের মত বাঙল! ভাষার জ্ঞান। ক্ষতি কি তাতে?

বলকিহে! আমার বিস্মগ্রমিশ্রিত প্রশ্ন |

বন্ধু বললেন, হ্্যা। দেখ একটা স্পষ্ট সত্য তোমাকে বলি। বাঁওলাদেশে আমাদের পেটের ভাত জোগাড় করতে পারিনি বলেই না আমরা প্রবাসে আসতে বাধ্য হয়েছি। আর ক্রমশ বাউলাদেশ থেকে আরও অনেক বাঙালীকে এইভাবে অন্ত রাজ্যে চলে আসতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে সব বাঙালীর অন্নসংস্থান হওয়া সম্ভব নয় আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে কদাচিৎ কেউ বাঙলাদেশে কিরে গেলেও এদের মধ্যে অধিকাংশকেই ভিন্ন প্রদেশে থাকতে হবে। স্থতরাং আমরা যে প্রদেশে থাকব সে প্রদেশের ভাষা না শিখলে

রোজগার করে খাব কি করে?

তা বলে হিন্দি? হিন্দি নয় কেন টা বাট আর 74৫-এর ধশাধা ভেদ করে যদি আমরা

ইংরেজি শিখে থাকি, তাহলে হিন্দিকি দৌষ করল? আর বাঙালীর পক্ষে ইংরেজির তুলনায় হিন্দি শেখা যে অনেক সহজ-_-এটা তোমাকে মানতেই হবে। শুধু হিন্দি কেন, সংস্কৃতের সঙ্গে সম্বদ্ধিত হবার জন্য গুজরাতী, মারাঠী, ওড়িয়া, অলমীয়। ইত্যাদি যে-কোন উত্তুরভারতের ভাষা শিখতে বাঙালীর কষ্ট হবার কারণ নেই।

কিন্তু বাঙালীর সংস্কৃতি থাকবে না? আমি "বার আমার যুক্তি-তৃণের সবচেয়ে শক্তিশালী শর নিক্ষেপ করলাম

বন্ধু বললেন, তোমার প্রশ্নের জবাব দেব ছুই ভাগে। এর প্রথম ভাগের জবাব আমার একটি প্রশ্নের মারকত পাওয়া যাবে বাঙালীর ছেলে অন্য কোন ভারতীয় ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা! পেলে তোমাদের ভ্রকুঞ্চিত হয়; কিন্তু বাঙলা- দেশেই দেখছি কনভেপ্টে ছেলেমেয়েদের পাঠানোর রেওয়াজ ক্রমশ বাড়ছে অভারতীয় পরিবেশের মধ্যে ইংরেজির মাধ্যমে শিক্ষা নেবার এই ফ্যাশনের বিরুদ্ধে তোমরা তো! কই কেউ কিছু বল না

আমি খানিকক্ষণ গুন্‌ হয়ে রইলাম তারপর বললাম, একটা অন্তায় দিয়ে আর একট। অন্তায়ের সমর্থন করা যায় না।

বন্ধু বলতে লাগলেন, আমার জবাবের দ্বিতীয় অংশ হল এই যে ভাঁষ সংস্কৃতির অন্যতম বাহ শিদর্শশ হতে পারে কিন্ত একমাত্র নিরিখ নয়। তাযদি

১২৬ বাঙল! বাঙালী

হত তাহলে প্রথম যৌবন পর্যন্ত বাঙলা তো দুরের কথা কোনরকম ভারতীয় ভাষা: অথবা আচার-ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কবিহীন অরবিন্দ ঘোষ শ্রীঅরবিন্দ হতেন না। সংস্কৃতির যূল ধর্মেরই মত গুহায়াম্‌ নিহিতম্‌্। আর তা৷ ছাড়া জানই তো! আমি একথ বিশ্বাস করি ন! যে ভারতসংস্কৃতি ছাড়া বাঙালীর পৃথক কোন সংস্কৃতি আছে ভারতবর্ষের সংস্কৃতি এক এবং অবিভাজ্য-_বাঙালীর বড় বেশী হলে কিছু বৈশিষ্ট্য আছে

আমি বললাম, বেশ তুমি যদি বৈশিষ্ট্য বলে আনন্দলাভ করতে চাও আমি তাতে বাধ! দেব না। বাঙালী তার বৈশিষ্টা বজায় রাখবে না?

বন্ধু বললেন, পারলে অবশ্যই রাখবে তবে না পারলে একটা মহা সর্বনাশ হয়ে গেল মনে করার কারণ নেই

নেই?

ন', নেই। কারণ এই নৈশিষ্ট্য যুগে যুগে বদলেছে পঞ্চষশ শতাব্দীর বাঙালীর সঙ্গে ন! হয় না-ই তুলনা করলাম কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালীর বৈশিষ্ট্যের কতট্রকু আজ অবশিষ্ট আছে? হুতোম বণিত বাঙালীবাবুকি আজ

আমরা কোথাও দেখতে পাই ? আমি হতাশার ভঙ্গিতে বললাম, তুমি তে! সব গুলিয়ে দিচ্ছ হে। তোমার

কাছে সবই তো! শৃন্

শৃন্য নয়__পূর্ণের প্রন্থতি। যুগে যুগে বাঙালীর ভাষা, আচার-ব্যবহার, ধ্যান-ধারণা-_সব বদলেছে বদলাচ্ছে যেমন বদল!চ্ছে ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশের লোকেদের মূল্যবোধ বদলে বিশ্বমানবতার পূর্বপ্রস্তুতি স্বর্ণ এক মহাভারত গড়ার অভিদুখে চলেছি আমরা এই মহান্‌ শাশ্বত প্রবাহের সঙ্গে একাত্ম হলেই আমাদের মত প্রবাসী বাঙালী বাঁচবে নচেৎ বিবর্তনের পথে অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় প্রকৃতি আমাদের আপনিই ঝেড়ে ফেলে দেবে

বাঙলাদেশের হৃদয় হতে

পূর্ব পাকিস্তানে এই সর্বপ্রথম পাকিস্তানের শ্রী স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আলী জিন্না আসছেন বলাবাহুল্য ঢাক শহরে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। পাকিস্তানই নয়--একদিকে মধ্যপ্রাচ্য অন্যদিকে দক্ষিণ-পুব এশিয়ার মুসলিম রাষ্ট্রসমূহে কায়েদ-এআজম জিন্নার দোর্দও প্রতাপ। ইংলগ আমেরিকার রাষ্ট্রনায়করাও তাকে যথেষ্ট সমীহ করেন

১৯৪৮ সালের ২৪শে মাচ কায়েদ-এ-মাজম ভাষণ দেবেন ঢাকার কাঞ্জন হলে। তিল ধারণের স্থান নেই সেই হলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতির ফলে। বাইরেও বিরাট জনসমুদ্র অপেক্ষমাণ পাকিস্তানের এই জনপ্রিয় নেতার শুধু একটু দর্শনলাভের আশায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে জিনা সাহেব সেদিন স্বাধীন দেশের রাষ্ট্র ভাষার সম্বন্ধে বলা আরম্ভ করলেন, যা নিয়ে স্বভাবতই কিছুদিন ধরে পাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজে আলোড়ন চলছিল ! কায়েদ-এ-আজম তার স্বভাব- স্থলভ কর্তৃত্বের ভঙ্গীতে নিজের অভিমতের কথা বলছিলেন এই কর্তৃত্পরায়ণ ব্যক্তিত্বের প্রয়াসেই কবিকল্পন! থেকে তিলে তিলে পাকিস্তান বাস্তবে পরিণত হয়েছিল। এই কর্তৃত্পরায়ণ ব্যক্তিত্বের কাছে নিধিচারে মস্তক অবনত করেই পাকিস্তানের শত শত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি তাদের ক্ষমত। আধিপত্যের পথ স্গম করেছিলেন

কায়েদ-এআজম ভার স্বাভাবিক আত্মপ্রত্যয়ের সরে বলছিলেন, স্বাধীন পাকিস্তানের রাট্রভাষ। হবে উদ্দ--একমাত্র উদ্ছু। হঠাৎ হলের এক প্রান্ত থেকে আওয়াজ উঠল না_কখনই না। এক মুহূর্তের জন্য হলে স্থচিভেগ্ নীরবতা ছেয়ে পড়ল। কে এই ছুঃসাহসী যার কায়েদ-এ-আজমের কথার উপর এভাবে কথ। বলার আম্পর্ধ

ছুঃসাহসী তরুণটির নাম শেখ মুজিবর রহমান অখণ্ড বাংলার এককালীন প্রধানমন্ত্রী মুসলিম লীগের নেতা শহীদ সুরাবর্দী সাহেবের অনুগামী মুসলিম ছাত্র প্রতিষ্ঠানের নেতা

অথচ এমন মধ্যান্ছে আধারের স্চন। দেখ। দেবার তো! কথা নয়। আর সব অঞ্চলের মুসলমানদের মত পুর্ব পাকিস্তানের ( তদানীস্তন পূর্ববাংলার ) অধিকাংশ

সি

১২৮ বাউল] বাঙালী

অধিবাসীই তো পাকিস্তান তার জনক জিন্না সাহেবের সপক্ষে রায় দিয়েছেন ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে | মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্মকেও পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম জনসাধারণ হৃদয়ের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছেন নৃতন রাষ্ট্রের বনিয়াদ হল ইসলাম আরবের মক্ুপ্রান্তরে যে ধর্মের জন্ম হয়েছিল এবং অস্তনিহিত প্রবল শক্তির জন্য যা! ইউরোপের স্পেন থেকে আফ্রিকা মধ্য এশিয়! হয়ে সুদূর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এই তের বছরের মধ্যে, তারই সমতাকারী প্রভাবের দ্বারা সহজেই পশ্চিম পাকিস্তানের উচ্চাবচ বন্ধুর পর্বত পূর্ব পাকিস্তানের মেঘন1-পদ্মা-বুড়িগঙ্গী-শীতলক্ষার “আপাত পার্থক্য" মিটিয়ে ফেলা যাবে হিন্দুদের আথিক কর্তৃত্ব রাজনৈতিক প্রভাব বিদুরিত হলে লাহোর-কোয়েটা-করাচী আর ঢাকা-রাজসা হী-চট্টগ্রামের সুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য থাকবে না। কিন্তু সে বিশ্বাস তো৷ টিকল না। পাকিস্তানের জন্ম হতে না হতেই তার কোণে কোণে অসন্তোষের যে চাপা গুঞ্নধ্বনি শোন] যাচ্ছিল, ছয় মাস যেতে না যেতেই তার জনক কায়েদ-এ- আজমের বক্তৃতার প্রকাশ্ঠ প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে নৃতন মুসলিম রাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে তা মুখর হয়ে উঠল। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গ ব্যবচ্ছেদের ফলে বাঙলা বাঁডালীর ইতিহাস যে নৃতন মোড় নিয়েছিল ছয় মাসের মধ্যে আবাঁর সেই ইতিহাস নৃতন মোড় নেবার উপক্রম করল।

কিন্ত কেন এমন হল?

ভূগেলের মধ্যে এর অন্যতম প্রধান কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। দেশের দুটি অংশের মধ্যে এক হাজার মাইলেরও বেশী ব্যবধান এবং মাঁঝধানে ভারতের মত অপর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এমনকি বিমানের সাহায্যেও পাকিস্তানের ছুই অংশের মধে যোগাযোগ রাগা সহজ নয়। কারণ ভারতের অনুমতি ব্যতিরেকে তাঁর বিষানাকাশ ব্যবহার করা সম্ভব নয় এবং অপর একটি স্বাধীন দেশ পিংহলের অনুমতি: ছাড়া কলম্বোতে বিমানযাত্রার প্রয়োজনীয় সাময়িক বিরতি করা যাবে , না। সমুদ্রপথে যোগাযোগ বহু সময়সাপেক্ষ।

দ্বিতীয় কারণ ইতিহাসের গণ্ডির মধ্যে পড়ে বাঙালীর ইতিহাসের ছাত্ররা £জানেন যেঃবাঙালী হিন্দুদের সঙ্গে মুদলমানদের জাতিগত বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। বাঙালী মুলমানদের প্রায় সবাই ধর্মান্তরিত হিন্দু বা বৌদ্ধ। বাঙালী ব্রাহ্মণ কায়স্থের মধ্যে আর্ধরক্ত যতটুকু বাঙালী মুললমানদের মধ্যে আরব বা ইপ্ানের.রক্তও ততটুকু-_ একথ। বললে সম্ভবত অতিশয়োক্তি হবে না।

বাঙলাদেশের হদয় হতে ১২৯

বিদ্যার সঙ্গে সংস্কৃতির অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক সংস্কৃতির একটা বড় উপাদান 'হল মানসিকতা বাঙালী হিন্দু-মুদলমাঁনের মানসিকতার সাধুজ্যের জন্য একই যাত্রা, ঢপ, জারি, বাউল ভাটিয়ালী গান উভয়ের মনোমত পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাকামী দাবি প্রবল হবার পূর্বে হিন্দুদের দুর্গাপুজা কালীপুজায় বাঙালী মুসলমানরা যোগ দিতেন এবং মুসলমানদের মহররমের তাজিয়ায় বাঙালী হিন্দুদের যোগদানি করাও বহুল প্রচলিত ছিল। এই একই মানসিকতা রাজনৈতিক কারণে ভেদবুদ্ধি প্রবল হবার পূর্বে প্রান্ম সাতশত বৎসরের যুক্ত- সাধনায় সত্যনারায়ণ বা সত্যপীরের মত সমন্বয়ের দেবতার জন্ম দিয়েছিল ধর্মের ক্ষেত্রে এই জাতীয় সমগ্র বঙ্গব্যাপী সমন্বয়ের নিদর্শন ছাড়াও এমন বহু স্থানীয় আঞ্চলিক দেব-দেবীর উপাসনার প্রবর্তন হয়েছিল (দক্ষিণ রাঁয়, ওলাবিবি আরও কত শত ) যা এই সমমানসিকতার নিদর্শন নীট কথা হল এই যে মনের দিক থেকে পূর্ববঙ্গের মুপলমান পঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিজান এবং এমনকি আরও কাছের বিহীর বা উত্তরপ্রদেশের মুসলমানের চেয়ে পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের অধিকতর নিকটবর্তী এরই কারণে পাক সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা সত্বেও উভয় অংশের মুসলমানদের মধ্যে পারম্পরিক বিবাহ আদেখ জনপ্রিয় হয়নি চরম রাজনৈতিক উত্তেজনার মুহূর্তেও লোকচক্ষুর অন্তরালে লোকপংস্কৃতির স্তরে এই সমমানসিকতা ক্রিয়া করেছে এবং পাকিস্তান অর্জনের প্রথম উৎসাহে ভাটা পড়ার পর তা৷ আরও প্রবলভাবে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই একই কারণে বনু ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাক্ষামার চরম উত্তেজনার এময়েও বাঙালী হিন্দু মুললনান ভিন্রধর্ষের বাঙালীকে আশ্রয় দিয়েছে_-রক্ষা করেছে কিঞ্চিৎ অপ্রাসঙ্গিক হলেও উল্লেখ কর। যেতে পারে যে এমনকি ১৯৬০ সালের আসামের দাঙ্গার সময়ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসামে গিয়ে বসতি স্থাপনকারী মুঘলমানরা অসমীয়। হিন্দুদের আক্রমণের হাত থেকে বাঙালী হিন্দুদের রক্ষা করেছেন, তাদের আশ্রয় আহার্ধ দিয়েছেন-__এমন বহু ঘটনার কথ! জানা! গেছে।

অনুরূপভাবে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরাও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সর্বপ্রকাবে সাহায্য করেছেন এর চেয়েও বড় কথা হল এই যে পশ্চিমবঙ্গে পূর্ন পাকিস্তানের মুদলমানর্দের অপমান পীড়নের কারণে উদ্ধাত্ত বহু লক্ষ হিন্দুধাও অতীতের তিক্ততা বেদন! ভুলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শুধু সাহাব্য করেননি, সাময়িক 'ভাবে উদ্বাপ্ত দেশের নুঘলমানদেরও সাধ্যমত আশ্রয় দিয়েছেন _-মাপামন

করেছেন বা."

১৩, বাঙল! বাঙালী,

এই প্রসঙ্গে স্বভাবতই সংস্কৃতির অপর এক প্রঘুখ উপাদান ভাষার কথাও: এসে পড়ে হিন্দুংমুসলমান নিধিশেষে প্রায় সব পূর্ব পাকিস্তানীর মাতৃভাষা ছিল বাঙলা ভিন্ন প্রদেশাগত যেসব পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান অথব। নবাব-জমিদার শ্রেণীর মুপলমান ইরান-তুরানের সঙ্গে নৈকটায প্রমাণের এক অলীক আভিজাত্য- বোধে চালিত হয়ে বাঙলার বদলে উদ্ঘ বলা পছন্দ করতেন ( অথচ উর্দু আদৌ মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশের ভাষা নয়-_নিছকই এক ভারতীয় ভাষা) তাদের সংখ্যা আঙ্লে গোনার মত। হ্থতরাং ভাষার দক থেকেও পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের সঙ্গে পঞ্জাবী, পুস্ত অথব! সিশ্ধীভাষী পশ্চিম পাকিস্তানীদের কোন মিল ছিল না।

ভাষার সঙ্গে সাহিত্যের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙলাভাষী মুদলমানদের পঞ্ষে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বেকার বাঙল! সাহিত্যের এঁতিহথ বর্জন কর] সম্ভব নয় এবং এর কোন যৌক্তিকতাও নেই কারণ পূর্বেই আমরা দেখেছি: ( প্রথম প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য ) যে বাঙল] সাহিত্য এই অঞ্চলের হিন্দুমুসলমানের মিলিত সাধনার ফল। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের তাই এই অত্যন্ত সমুদ্ধ সাহিত্যের অবদান বিগ্ভাসাগর, মাইকেল, বঙ্ছিম* রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র অথব1। নজরুলের রচনাবলীর থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে বলার অর্থ তাদের সাংস্কৃতিক আত্মহত্যা করতে বলার মত। বল! বাহুল্য অতীব সঙ্গত কারণে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানেরা এই সাংস্কৃতিক আত্মহত্যা করে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক সম্প্রদায়কে বাধিত করেননি

ভূগোল, ইতিহাস সংস্কৃতির মধ্যে এই যে প্রচণ্ড পার্থক্য তার আপাত বিলোপ করা হয়েছিল ধর্ম সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুপে। ফলে পশ্চিম পাকিস্তানী শাপক সম্প্রদায়-_পাকিস্তানের জন্মলগ্নে ধাদের কাছে ক্ষমতা হস্তাত্তরিত হয়েছিল-_ প্রথম থেকেই পুব পাকিস্তানের অধিবাসীদের নিজেদের সমান মনে করেননি যেহেতু ওদের ভাষা, সংস্কৃতি এঁতিহ ভিন্ন সেই কারণে ওরা আমাদের থেকে হীন-_এই জাতীয় একট] অহংমন্যতায় তাঁরা প্রথমাবধি ভুগছিলেন ( এবং দোষ কেব্ল পশ্চিম পাকিস্তানের অভিজাত সম্প্রদায়েরই নয়। সব দেশে সব যুগে শাসক সম্প্রায় কর্তৃক এভাবে ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের হেয় জ্ঞান করার উদাহরণ খুজে পাওয়া যাবে )

অপরকে হেয় জ্ঞান করার মধ্যে তাদের আধিক শোষণ করার প্রবৃত্তির বীঙ্জ লুকিয়ে থাকে ক্রীতদাস প্রেবিয়ানদের শোষণের উপর রোমান সভ্যতা এনং.

বাঙলাঁদেশের হদয় হতৈ ১৩১

এশিয়৷ আফ্রিকার কষ্ণকায়দের শোষণের উপর যন্তরবিগ্রবের পরবর্তী ইউরোপীয় সমবদ্ধি সভ্যতার সৌধ নির্মিত হয়েছিল। শিল্প শ্রমিক বা প্রোলিটারি ঘ়েটদের, ভৃ্বর্গ সোভিয়েট রাশিয়ার প্রথম দিকের সমৃদ্ধির অন্তরালে ছিল কুলাক বা. মাঝারি ছোট খামারের মালিক কৃষকদের শোষণ। শূদ্র অস্তাজের ব্রাহ্মণ সংস্কৃতির পৃজারীদের কাছে ব্রাত্য হলেও উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সেবা” করতে বাধ্য ছিলেন। স্থতরাং এই একই বিধান চালিত হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক সম্প্রদায় পূর্ব পাকিস্তানীদের আথিক শোষণের ব্যবস্থা গড়ে তুললেন

সংঙ্গিপ্ত প্রবন্ধের আয়তনে এই শোষণের পরিণামস্বরূপ বৈষম্যের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন উদাহরণের এখানে উল্লেখ কর] যেতে পারে £

(১) ১৯৬৯-৭০ শ্রীস্টাবে পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় পুর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের মাথাপিছু আমনের শতকরা ৬১ ভাগ বেশী ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় তার পূর্ববর্তী দশ বছরে ছিগুণ হয়েছিল

(২) ১৯৫০-৫৫ খীন্টাবে যেখানে পাকিস্তানের উন্নয়নমূলক ব্যয়ের শতক" ৮* ভাগ হয়েছে পশ্চিম অংশে, পূর্ব অংশের ভাগে (জনসংখ্যা অধিক হওয়া সত্বেও) জুটেছে মাত্র শতকরা ২০ ভাগ। কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্য দূর করার বহু প্রতিশ্রাতি সত্বেও ১৯৬৫-৭* সনের মধ্যে এর অংশ শতকরা ৩৫ ভাগের বেশ হয়নি

(৩) শেষের দিকে পশ্চিম পাকিস্তানের রপ্তানী বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেকই হত পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে এবং পুর্ব অংশকে চড়া দামে পশ্চিম অংশের নিকৃষ্ট পণ্যরাজি কিনতে বাধ্য করা হত

(৪) পু পাকিস্তানের রপ্তানী বাণিজ্যের উদ্বত্ত কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমাংশের ঘাটতি পুরণের জন্য নিয়োগ করেন এবং এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ, পশ্চিম পাকিস্তানের কাজে লাগানো! হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৯ থ্রীপ্টাব্ধের মধ্যে কুড়ি বছরে এইভাবে কোটিরও বেশী টাঁকা পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে স্থানাস্তরিভ হয়েছে বলে অন্মিত হয়।

(৫) সরকারী ভাষ মতে পূর্ব পাকিস্তানের অপেক্ষাকৃত শ্বল্প উন্নয়ন হারের কারণ বাড়তি জনসংখ্যা হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখা বৃদ্ধির হার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কম।

(৬) পশ্চিমের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানে আধুনিক শিল্পবাণিজ্য বিশেষ গড়ে

১৩২ বাঙল! বাঙালী

ওঠেনি | যেটুকু হয়েছে তার মালিক পশ্চিম পাকিস্তানের ২২টি একচেটিয়া পরিবার এবং তার লাভের কড়িও সেখানেই যায়

(৭) রাজধানী পশ্চিম পাকিস্তানে হবার জন্য সরকারী ব্যয়ের (আধুনিক কালের অর্থনীতিতে যার ভূমিকা অতীব গুরুত্বপুর্ন) অধিকাংশ হয়েছে অঞ্চলে এবং তার দ্বারাও পরোক্ষভাবে পশ্চিম পাকিস্তানই সমৃদ্ধ হয়েছে যদিও জনসংখ্যার ভিত্তিতে সরকারী আয়ের অধিকাংশের উৎস পুর্ব পাকিস্তান

(৮) সরকারী চাকুরির ক্ষেত্রেও পূর্য পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্য কর! হয়। অনেক আন্দোলন প্রতিবাদ সত্বেও কোন সময়েই উচ্চতর প্রশাসনিক পদে পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দাদের হার শতকরা ৩৬ জনের বেশী হয়নি এমন কি ১৯৬৯ খ্রীস্টাবেও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া! তার ১৯ জন সেক্রেটারীর মধ্যে জনের বেশী বাঙালী খুঁজে পানশি। সামরিক বিভাগেও পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের প্রবেশাধিকার সীমিত ছিল। ১৯৭* খ্রীস্টাব্দে পাকিস্তানের স্থলবাহিনীতে মাত্র একজন লেকটেন্যপ্ট জেনারেল ছিলেন যিনি পূর্ব পাকিস্তানী বিমানবহর বা নৌসেনাবাহিনীতে জাতীয় পদে কোন দিনই কোন পূর্ব পাকিস্তানী উঠতে পারেননি

এর অপর গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল রাজনৈতিক নেই সশস্ত্র বিপ্লবের কাল থেকে পূর্ব পাকিস্তান (তখন পূর্ববঙ্গ) রাজনৈতিক কার্যকলাপের লীলাভূমি ফলে বহু অঞ্চলের তুলনাম্ব (পশ্চিঘ পাকিস্তানের তুলনায় তো৷ বটেই) পু পাকিস্তানের জনসাধারণ এং বিশেষ করে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মহলে রাজনৈতিক সচেতনতা অনেক দেশী হিল। এর উপর পূর্ব পাকিস্তানের তিন দিকেই 'ভারতবর্ধ এবং অদূরে চীন ভারতের সঙ্গে প্রথমাবধি পাকিস্তান সরকার শক্ত! করলেও এবং ভারতের সংপর্গ বিষবৎ পরিহার করলেও আধুনিক যুগের কল্যাণে তার সংসদীয় গণতন্ত্রেধ যোটামুটি সাফলাজনক পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিবরণ পূর্ব পাকিস্তানে না পৌছে পারেনি | প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীদের সার্বজনিক ভোটের অস্ত্রে সাধারণ মানুষ শাসক বদলাতে পারে আথিক সামাজিক ক্ষেত্রে প্রগতিমূলক বিধি-বিধান রচন। করে তাকে কাজে পরিণত করার প্রয়াস করতে পারে-_সাগ্রহে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় তা লক্ষ্য করেছেন অনুরূপভাবে চীনের সাম্যবাদী ব্যবস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষাও পূর্ব পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীদের একাংশকে অন্প্রাণিত করেছে। বিশেষ করে ভারতের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট চীনের সঙ্গে মাখামাখি করার পাকিস্তানের সরকারী

বাঙলাদেশের স্বদয় হতে ১৩৩

নীতি পূর্ব পাকিস্তানের মা্ষদের চীনের কাছাকাছি আসার স্থযোগ দিয়েছিল।

একদিকে গণতন্ত্র এবং অপরদিকে সাম্যবাদ--এই ছুই প্রবল রাজনৈতিক আদর্শের মধ্যে পাকিস্তানের অবদান কি? তার নাম এল্সামিক গণতন্ত্র স্বভাবতই এই সোনার পাথরবাটি তত্বের অকিঞ্চিংকরত! ধরে ফেলতে রাজনীতি- সচেতন পূর্ব পাকিস্তানের বেশী বেগ পেতে হয়নি প্রকাশ্তে স্বীকার করতে কু থাকলেও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এযুগের কোন বুদ্ধিজীবীর পক্ষে এঙ্নামিক অর্থাৎ আগ্যন্ত শরিয়তী শাপনব্যবস্থায ফিরে যাওয়ার কথা ভাব! অগস্তুব। আর গণতন্্ব? পাকিস্তানে গণতন্ত্রেরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ইতিহাস অতীব বেদনাদায়ক

গণতন্ত্রের এক প্রধান শর্ত-সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন কোন দিনই পাকিস্তানে স্বীকৃতি পায়নি কারণ তাহলে সংখ্যাগরিষ্ট পূর্ব পাকিক্ঞানীদের হাতে দেশের কর্তৃত্ব চলে যাবে যা পাকিস্তানের আসল কর্ণধাঁর ব্যবপায়ী-উচ্চপদস্থ আমল! সমরনায়কচক্রের আদ অভিপ্রেত নয়। পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান রচনা করতে স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সাড়ে আট বছর সময় লাগে এর মধ্যে পূর্বোক্ত শাপকচক্রের ইঙ্গিতে পরিগলিত পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবর্গ ছলে বলে কৌশলে পূর্ব অংশকে তার ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত করার যাবতীয় প্রয়াপ করেছেন

পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকং আলী খ| কেন্দ্রে ছুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করেন যাতে পূর্ব পশ্চিৰ অংশের সমান সংখ্যক প্রতিনিধি থাকবে। অথচ পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা! তখন পাকিস্তানের লোকসংখ্যার, শতকর] ৫€৬ ভাগ অর্থাৎ প্রথম থেকেই কি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি আর কি পুর্ব পাকিস্তানীদের প্রতি পশ্চিমের শাসক সম্প্রদায়ের আস্থা ছিল না। অবশ্ পুর্ব পাকিস্তানের প্রবল বিরোধ এবং পরবর্তী কালে লিয়াকৎ আলী খ্বার মৃত্যুর জন্য ফরমুল! কার্ধে পরিণত হয়নি

১৯৫২ সনে তদানীস্তন প্রধানমন্ত্রী খাঁজ] নাজিমুদ্দিনকে নিয়ে পুর্বোক্ত ধরনের এক ফরমূলা পেশ করা হয়। বলা বাহুল্য পূর্ব পাকিস্তান থেকে এই প্রস্তাবেরও প্রবল বিরোধিতা হয়। আপল শাসকচক্র কর্তৃক তিনি পদচ্যুত হলে তার স্থলাভিষিক্ত বগুড়ার মহম্মদ আলী তৃতীয় এক পরিকল্পনা! পেশ করেন যার, বাহ্‌রূণ ভিন্ন হলেও আসলে একই এতে ছুই সভার নিম্ন সভায় পুর্ব পাকিস্তানকে সংখ্যান্ছপাতিক প্রতিনিধিত্ব দেবার কথ! বললেও উচ্চ সভায় তার থেকে বঞ্চিত,

- ১৩৪ বাঙলা বাঙালী

করে সংখ্যালঘু করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। মহম্মদ আলী পদচাত হলে তার পরিকল্পনাও পূর্বের ওই পরিকল্পনার দশা ঘটে।

অবশেষে এক কক্ষবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় বিধানসভার দুই অংশের সমান সংখ্যক সদন্য থাকবে (19811'% )-_এই ভিত্তিতে, প্রতিনিধিত্বের সমস্যার একটা সমাধান হল। ১৯৫৬ ১৯৬২ সালের সংবিধানে এই বিধান লিপিবদ্ধ হল। কিন্তু এই বিষয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সম্মতি পাবার জন্ট বল হল যে সরকারী চাকুরির ক্ষেত্রেও পূর্ব পাকিস্তানীরা সমান আসন পাবে তবে এই শর্তযে কোন দিনই পালিত হয়নি, তা৷ পূর্বেই বলা হয়েছে

তবে গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থার এই বাহ অনুষ্ঠানটুকুও ১৯৫৮ খ্রীপ্টাবে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পর লুপ্ত হয়। এবং সেই অবস্থা ১৯৭১ সনের ১৬ই ডিদেম্বর পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিন পর্যস্ত চলে। ১৯৭০ সনের ডিসেম্বরে প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়ার ব্যবস্থাপনায় প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে যে নির্বাচন হয় তার মাধ্যযে জনসাধারণের নিরাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তাস্তরিত হুবে বলে অনেকে আশা করলেও পাক শাকচক্রের আদে তা কাম্য ছিল না। তাই কোন না কোন ছুতানাতায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনকে বিলম্বিত করা হল। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবরের হাতে ক্ষমত! অর্পণ ন। করে তাকে অপর এক সংখ্যালঘু দলের নেতা জনাব ভুট্টোর সঙ্গে একট বোঝাপড়ায় আপার জন্য চাপ দেওয়া হতে লাগল এবং বল! হল প্রস্তাবিত পংবিধান স্বীকার বা অগ্রাহ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির, যিনি আদে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও নন। অর্থাৎ আইয়ুব থেকে এয়াহিয়া- সেই একই শ্বৈরত্তরী র্যবস্থার নিদর্শন

আর সামরিক শাপনের পুর্বে গণতান্ত্রিক শাপনব্যবস্থার মর্যাদা? জনৈক (বিশেষজ্ঞের হিসাব অনুযায়ী ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে (যখন পাকিস্ত।নে সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্তত কাঠামোটুকু বজায় ছিল) জাতীয় পরিষদ বা পার্লামেন্টের অধিবেশন বসেছে মাত্র ৩৩৮ দিন অর্থাৎ বৎসরে মাত্র ৩* দিন হিসাবে এই সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিষদে মাত্র ১৬০টি আইন বিধিবদ্ধ হয়েছিল, অথচ এঁ একই সময়ে গভর্নর জেনারেল বা রাষ্ট্রপতি ৩৭৬টি গুরুত্বপূর্ণ 'ডিন্যান্ম জারি করেন

সংক্ষেপে পাকিস্তানের এন্ামিক গণতন্ত্রের এই হল চিত্র

বাঙিলাদেশের হৃদয় হতে ১৩৫

১৯৪৮ সনের ২৪শে মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যবসায়ী-আমলা-সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মচারী তাদের অঙ্গুলি হেলনে পরিচালিত রাজনৈতিক 'নেতৃবুন্দের শানকচক্রের বিরুদ্ধে বাউল ভাষাকে কেন্দ্র করে বাঙালীর যে বিদ্রোহ আত্মপ্রকাশ করে ধাপে ধাপে তা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে হতে অবশেষে ১৯৭১ খ্ীস্টাব্ধের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানী সৈশ্বাহিনীর বাঙালী নিধন যজ্ঞের স্ৃচনার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতার যুদ্ধে পরিণত হম্ন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম আরম হবার, সাত কোটি ওপার বাংলার মানুষের এই গৌরবোজ্জল গাথা, আজ সর্বজনবিদিত কাহিনী তাই তার বিস্তারিত বিবরণ দেবার প্রয়াপ এখানে করা হবে না।

তবুও মানবীয় আশা-আকাক্ষার পরিপৃতির এই মহাকাব্যের কয়েকটি দিক- চিহ্ের উল্লেখ এখানে করা হবে এই মহান্‌ সংগ্রামের গতিবিধির মূল্যায়নের জন্য ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বের জন্য শেখ মুজিবর রহমান গ্রেপ্তার হন। ১৯৫০ সনের ২৪শে নভেম্বর মুসলীম লীগ পরিষদীয় দলের ১৩ জন সদস্য এক যুক্ত বিবৃতির মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বায়ত্তশাসন দাবি করেন ১৯৫২ সনের ফেব্রুয়ারী মাসে ভাষা! আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তান চঞ্চল বেসিক কমিটির প্রতিবেদনে বাঙলাকে সরকারী ভাষার মর্ধাদা না দেওয়া প্রবল বিক্ষোভ বিক্ষোভকারীম্দর উপর পুলিসের গুলি- চালনায় ২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯ জন ছাত্র সহ বহু নর-নারী হতাহত। ফলে বিক্ষোভ আন্দোলন আরও উত্তাল হয়ে উঠল

১৯৫৪ সনের ১৯শে মার্চ সাধারণ নির্বাচনে মুদলিম লীগকে প্রচণ্ডভাবে পযুদস্ত কবে জনাব শহীদ স্থবরাবদর্ণ জনান ফজলুল হকের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তফ্রণট সরকার গঠিত হল। ২৯শে মে কেন্দ্রীয় পাক সরকার যুক্তফ্রণ্ট সরকারকে বরখাস্ত করে রাজ্যপালের শাসন প্রবর্তন করলেন

১৯৫৮ সনের ৭ই অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হল যাবতীয় রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হল। ১২ই অক্টোবর শেখ মুজিবর মৌলান। ভাসানী ইত্যাদি নেতৃবুন্দ গ্রেপ্তার হলেন

১৯৬২ সনের এপ্রিল মাসে বিগত বৎসরের আইঘুব বিরোধী আন্দোলনের জের চলতে থাকে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নিরম্ত্র মানুষদের গুলি করে হত্যা কর! হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার চারজন বাঙালী সর্দশ্ত পদত্যাগ করেন

১৩৬ বাঙলা বাঙালী

৯ই জুন আন্দোলনের ফলে সামরিক আইন প্রত্যাহার কর] হয়। “বুনিয়াদী, গণতন্ত্র ভিত্তিতে নৃতন সংবিধান প্রবন্তিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান এতে সন্তুষ্ট নয়-_ পূর্ণ গণতন্ত্র চায়

১৯৬৬ সনের ফেব্রুয়ারী মাসে শেখ মুজিবর রহ্মান পূর্ব পাকিস্তানের, শ্বায়ত্তশীসনের জন্য তার ছয় দফ। প্রস্তাব পেশ করলেন। ২*শে মার্চ তিনি তার সহকর্মীরা গ্রেপ্তার হলেন ৭ই জুন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র পপ্র5গু আইয়ুব বিরোধী বিক্ষোভ শত শত নিরস্ত্র বিক্ষোভকারী নিহত কখনও প্রবল কখনও বা! মুছ্ভাবে ১৯৬৭ সনেও এই আন্দোলন চলতে থাকে

১৯৬০ সনের ৫ই জানুয়ারী ঢাক! বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পূর্ব পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে আঞ্চলিক বৈষম্যের নিদর্শন তুলে ধরার জন্য একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে পৃথক করার অভিযোগে, সামরিক অফিসার সহ আঠাশ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি কারারুদ্ধ। আগরতলা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১৮ই জানুয়ারী মুজিবর রহমান গ্রেপ্তার *ই ডিসেম্বর প্রচ আইয়ুব বিরোধী বিক্ষোভ। বনু হতাহত 'ও কারারুদ্ধ। ১৪ই ডিসেম্বর আন্দোলনের ফলে আঘুবের পতন |

১৯৬৯ সনের ২৫শে মার্চ প্রেমিডেন্ট ইয়াহিয়। কর্তৃক সামরিক শাসন জারি ২৬শে মার্চ “অবস্থা শ্বাভাবিক* হলে জনসাধারণকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি ২৮শে মার্চ মুজিবর রহমান কর্তৃক ফেডারেল সরকারের পরিকল্পন। পেশ।

১৯৭* সনের ১ল! জানুয়ারী রাজনৈতিক দলসমূহের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহ্হত। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পূর্ব পাকিস্তানে প্রচণ্ড ঘূর্ণীবাত্যার ফলে বহু সহমত ব্যক্তি মৃত বহু ক্ষয়ক্ষতি ৭ই ডিসেম্বর নির্বাচন সম্প্স, এবং মুজিবের আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম পাকিস্তানে জনাব ভুট্টোর পিপলস পার্টি সংখ্যাগরিষ্ট। ৯ই ডিসেম্বর তাঁর ছয় দফার ভিত্তিতে মুজিব কর্তৃক নৃতন সংবিধানে স্থায়ন্তশাসনের দাবি। ১*ই ডিসেম্বর মৌলানা ভাপানী কর্তৃক দ্বাধীন সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তানের দাবি। ১২ই ডিসেম্বর পৃধ পাকিস্তানের আরও তিনটি রাজনৈতিক দল কর্তৃক স্বাধীনতার দাবি সমর্থন

১৯৭১ সনের ১৬ই জানুয়ারী প্রেসিডেন্ট: ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবর রহমানকে পাকিস্তানের ভবিষ্তুৎ প্রধানমন্ত্রী বলে ইঙ্গিত করেন। ২৯শে আহুয়ারী শ্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে ঢাকায় ভুট্ো-মুজিবের সংবিধান সংক্রান্ত)

বাঙলাদেশের হৃদয় হতে ১৩৭"

আলোচনা ভেঙে যাঁয়। ১৮ই ফেব্রুয়ারী মুজিব ঘোষণা করেন যে বাঙালীর" সংস্কৃতিকে নষ্ট করার জন্য ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করা হবে নাঁ। ১লা মার্চ ইয়াহিয়া ভুট্টোর দাবির কাছে নতিম্বীকার করে জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিত করেন দৌপরা মার্চ ঢাকা অন্থাত্র প্রবল গণবিক্ষোভ, সৈন্যবাহিনী তলব সাম্ধা আইন জারি। তেসরা মার্চ আওয়ামী লীগ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। €ই মার্চ সৈম্যবাহিনী কর্তৃক ৩০০ আন্দোলনকারীকে হত্যা ৭ই মার্চ মুজিব জনসাধারণকে কর দিতে নিষেধ করেন সরকারী কর্মচারীদের তার কাছ থেকে নির্দেশ নিতে বলেন। ইস্ট পাকিস্তান রাই- ফেলপের সৈন্তরা নিরস্ত্র বাঙালীদের উপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে। ৮ই মার্চ আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়। ৯ই মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের বিচার- পতির। নৃতন গভর্ণর সামরিক প্রশাসক টিক্কা খানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে অস্বীকার করেন। ১৫ই মার্চ মুজিব একত্রফ] ্বায়ত্- শাসনের ঘোষণা প্রচার করেন পূর্ব পাকিস্তানবাপীকে ৩৫টি নির্দেশ দেন। ইতিমধ্যে ইয়'হিয়া মুজিবের সঙ্গে সাংবিধানিক আলোচনা চলছে যাঁতে ২১শে মার্চ ভুট্টোও যোগ দেন। ২৫শে মার্চ আওয়ামী লীগ সুত্রে প্রকাশ যে বার্তালাপে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে ইতিমধ্যে সৈম্দল কর্তৃক নিবস্ত বাঙালীকে হত্যা করার আরও খবর আসে। আরও সৈম্ত পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসছে ইয়াহিয়া, ভুটো! অন্য সব উচ্চপদস্থ পশ্চিম পাকিস্তানীদের ঢাকা ত্যাগ রাত্রি থেকে সৈন্যবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা শুরু এবং বাংলা- দেশের জন্ম।

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম সমগ্র পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গে স্বভাবতই ' তার নিকটতম প্রতিবেশী তার স্থখ-ছুঃখের ভাগীদার ভারতবর্ষে এবং বিশেষ করে যার সঙ্গে তার নাড়ির টান সবচেয়ে বেশী সেই পশ্চিমবঙ্গে নৃতন আশা". আকাঙ্ার হটি করেছে বিশেষ করে বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছেন যে এই নৃতন রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ব, সমাজবাদ ধর্মনিরপেক্ষতা তাই স্বভাবতই প্রতিটি প্রগতিশীল মানুষের মনোজগতে বাংলাদেশ এক বিশেষ; স্থান অধিকার করেছে।

১৩৮ বাঙলা বাঙালী

বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্রের পথ গ্রহণ করেছে এবং স্বাধীনতার পর ক্রুত এক সংবিধান রচনা করে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নৃতন নির্বাচনের ব্যবস্থা করছে বলা বাহুল্য যুদ্ধ তার আনুষঙ্িক দু্তিক্ষাবস্থা মহামারী ইত্যাদিতে ক্ষতবিক্ষত এক নবীন রাষ্ট্রের পক্ষে এক বিরাট কত্তিত্ব। তবে শেষ অবধি সশস্ত্র সংগ্রামের পথে স্বাধীনত! অর্জন করার দামও বাংলাদেশকে দিতে হবে ! একবার বুলেটের প্রাধান্য সমাজে স্বীকৃত হবার পর আবার ব্যালটের প্রাধানো প্রত্যাবর্তন করা সহজ নয়--বিশেষ বাংলা- দেশের মত যেখানে পাঁভায় পাড়ায় এখনও ভূরি প্রমাণ বেআইনী অক্বশস্ত্ লুকায়িত রয়েছে আইনের রাঁজত্ব বাংলাদেশের ঘোষিত লক্ষ্য হলেও সমস্থ স্বাধীনতা যুদ্ধের রতিহোর কারণে & লক্ষের সাধন খুব সহজ হবে না। বাংলা- দেশের নেতৃত্বের অগ্রি-পরীক্ষা নিহিত এইখানে

বাংলাদেশ সংসদীয় পদ্ধতিতে অর্থাৎ আইনসভায় আইন প্রণয়ন করে এবং প্রশাপনযস্ত্রের মাধ্যমে তাকে কার্ধকর করে সমাজবাঁদ প্রতিষ্ঠার নীতি গ্রহণ করেছে সমাজবাদের বহুবিধ ব্যাখ্যা ভাষ্য সত্বেও কয়েকটি সর্জন- ম্বীকত মানদণ্ড আছে যার অনাতম হল দরিদ্রুতম ব্যক্তিদের আধিক সামাজিক উন্নয়নের ব্যবস্থা একমাত্র ভবিষ্তেই একথা বলা সম্ভব হবেযে বাংলা- দেশের নেতৃত্ব কতটা এই লক্ষ্যের পরিপুত্তিতে সমর্থ হয়েছে। তবে একথা অন্রমান করা অসঙ্গত হবে না যে যথাযথভাবে সংসদীয় পদ্ধতি অনুসরণ করলে এই দিকে তার অগ্রগতির হার ভারতের চেয়ে বেশী হবে নাঁ। অর্থাৎ দরিদ্রতম বাক্তিদের কল্যাণ সাধন প্রয়াস এক যিলম্বিত গ্রত্রিন্যা হবে বাংলা দেশের জনসাধারণ ততদিন এই জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে থাকবে অথবা 'গণতান্ত্রিক সমাজবাদের পথ ছেড়ে শ্বৈরতস্ত্রী সমাজবাদের পথ ধরবে কিন1_-তা বর্তমানে অনুমান কর। সম্ভব নয়।

প্রভূত পরিমাণ অশ্রু রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ার 'শিক্ষা পেয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানী মুসলিঘ বণিকচক্রের আধিক শোষণ অবশেষে ইসলাম ধর্মাবলম্বী সৈন্যবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের মুপলমান কষক-শ্রমিক-বুদ্ধিজীবী ছাত্রদের পাইকারী হারে হত্যা লুণ্ঠন এবং এমনকি 'সহ্ম্র সহ্র মুপলিম নারীর সম্রম নাশ বাংলাদেশকে এই শিক্ষা দিয়েছে যে 'প্লাজনীতির সঙ্গে ধর্মের সম্বন্ধ নেই এই শিক্ষার বলে বাংলাদেশ রাজনীতির ক্ষেত্রে মধ্যযুগ ছেড়ে এক লাফে আধুনিক যুগে উপনীত হয়েছে তবে

বাউলাদেশের হৃদয় হতে ১৩১

"আওয়ামী লীগ তার নেতৃবৃন্দ এবং প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় 'ফুক্তিবাদের সহায়তায় সাম্প্রদায়িকতা বর্জম করলেও বাংলাদেশের আপামর 'মুসলমান জনসাধারণ হযে ইতিমধ্যে এতদিনের পরিবেশিত বিষের প্রভাব সম্পূর্ণ বর্জন করতে পেরেছে বা পারবে__এই উচ্চাশা পোষণ করার কোন কারণ নেই। কারণ ব্যাধি এত সহজে যায় না, এর জন্য দীর্ঘ অঙ্ুশীলন করতে হ্য়। ভারতরাষ্ট্রী অথবা তার নেতৃত্ব যে রাজনৈতিক দলের হাতে সেই কংগ্রেস কোন দিনই সঙ্ঞানে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্রয় না দিলেও ভারতে এখনও এই বিষের রেশ রয়েছে--এ আমর অস্বীকার করতে পারি না। স্থতরাং জনসাধারণের মনের থেকে সাম্প্রনীয়িকতাকে সম্পূর্ণভাবে দূর করার জন্ম বাংলাদেশের নেতৃত্বকে এখনও অনেক পরিশ্রম করতে হবে। এবং যতদিন না সেই বাঞ্ছিত লক্ষ্যে পৌছান যাচ্ছে বাংলাদেশের হিন্দুরা যে বিচ্ছিন্নভাবে (এবং হয়ত বা ব্যাপকভাবেও_যদি বিবোধী রাজনৈতিক নেতৃব্ন্দ এর দ্বার স্থীয় লক্ষ্যসাধন লন্তন্ব বলে মনে করেন) বৈধম্য নিপীড়নের শিকার হবেন তার আশঙ্কা আছে।

এধার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের কথা আসে ভারত বাংলাদেশের জন্ত বা করেছে নিঃনন্দেহে বাংলাদেশ তার জন্ত কৃতজ্ঞ এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সমাজবাদী বাংলাদেশ প্রতিবেশী হিসাবে ভারতের পক্ষেও অত্যন্ত বাগ্নীয়। এই জন্য ভারতের ন্বার্থেও বাংলাদেশের এই নূতন যুগের আবাহন ক্রিয়াকে এদেশের সহাযতা করা উচিত। কিন্ত এর অর্থ এই নয় যে ভারত সরকার অথবা ভারতীয় বণিকসমাজের কোন রকম মাঁতব্বরী শোষণ-প্রয়াস বাংলাদেশ বরদাস্ত করবে। বাংলাদেশ যেমন পশ্চিম পাকিস্তানের সক্ষে এতদিনের সম্পর্ক এবং বিশেষ করে ইসলামের মত আবেগের ক্ষেত্রস্থ গভীর বন্ধনও ছি'ডে ফেলেছে প্রয়োজনে তেমনি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব- বন্ধনও ছিন্ন করতে পারে। বিশেষ করে বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশের চারপাশে এখন বিশ্বরাজনীতির অনেক মৎস্যশিকারী টোপ ফেলছে এবং বাংলা- দেশের ভিতরেও রাজনৈতিক ক্ষমতা পেতে আকাজ্জী এমন দলের অভাব নেই 'যারা জনপাধারণকে নিজেদের পক্ষে আনার জন্য ভারতের সত্য বা কল্পিত শোষণের ভূতকে চাঙ্গা করতে চায়। সুতরাং ভারত বিশেষ করে তার অধিবাসীদের বাংলাদেশের সঙ্গে অত্যন্ত সংযত সন্ত্রনপূর্ণ ব্যবহার করতে হবে বাংলাদেশ যে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র নিজের ভালো-মন্দ নির্ধারণের

১৪৪ বাঙল! বাঙালী

সম্পূর্ণ অধিকারী একথা এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে গেলে চলবে না

এই একই কথা পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও খাটে আর বিশেষ করে এপার বাঙলার অধিবাসীদের বাংলাদেশের স্বাধীন সার্বভৌম ভূমিকা সম্বন্ধে আরও বেশী করে সচেতন থাকার প্রয়োজন আছে কারণ এপার বাঙলা ওপার বাঙলার মধ্যে স্বভাবতই যতট। পারম্পরিক দরদ, প্রয়োজনে তা ততটাই বিরূপতাতে পরিণত হতে পারে। আত্তীয়-কুটুম্বের মধ্যে যখন শক্রুত' হয় তখন তা৷ অনাত্মীয়ের শক্রতার তুলনায় 'ভীষণতর হয়ে থাকে। সৌভাগ্য ক্রমে ছুই বাঙলার সংযুক্তির প্রশ্ন কোন বাওলারই যুক্তিশীল মানুষের সামনে নেই। বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিপাবে তার ভাগ্য গঠন করবে এবং পশ্চিবাঙলার কল্যাণ নিহিত বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাজ্য ভারতবর্ষের অঙ্গরাজ্য হিসাবে

কিন্ত রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র হলেও ছুই বাঙলার মধ্যে সংস্কৃতি-সাহিত্য মনের লেন-দেনের অবকাশ উত্তরোত্তর বুদ্ধি পাবে-_-এমন আশ] পোষণ' করার সঙ্গত কারণ আছে। ইংলগু আমেরিকা একভাষাভাষী রাষ্ট্র হলেও. স্বতত্ত্র। এর আরও কাছের উদাহরণ অস্ট্রেলিম্তা নিউজিল্যাণ্ড। ইউরোপেও জার্মান, ফরাপী ইটালিম্বান ভাষাভাষীরা একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত কিন্ত তার জন্য সংস্কৃতি মানসিকতার জগতে তাদের আত্মীয়তাবন্ধন ছিন্ন হয়নি। ইংরেজ আমলের পুর্বে বঙ্গদেশ বলতে আমাদের মনশ্চক্ষুর সামনে থে ভাবযৃতি ভেসে গুঠে, তা রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক কাঠামোর অধীন ছিল না। এ্তরাং বাঙালী ছুই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিবাসী হদেও তাদের হৃদয় বিচ্ছিন্ন থাকবে একধ| মনে করার কোন কারণ নেই।

পশ্চিমবঙ্গের সমাজ 2? আজ এবং আগামীকাল

সমাজ আর জনতার ভীড় যে এক নয় একথা খুব একটা ;বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না রেলস্টেশন, খেলার মাঠ অথবা হাটে-বাজারের ভীড় কিন্তু সমাজ নয়। কারণ সম উদ্দেশ্টে চালিত হয়ে পরম্পরের সঙ্গে জৈব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে কাজ করা বা সংবেদনশীলতা সহকারে ' চলাফেরার স্থিতি সেখানে নেই। বড় জনসভায় অথবা রেলস্টেশনে মাহুয একটা সাধারণ উদ্দেশ্ট নিয়ে হয়ত সমবেত হয়-_কিন্তু উপস্থিত মান্ুষর পরস্পরের সঙ্গে জব বন্ধনে আবদ্ধ নন এবং পারম্পরিক কার্ধ-কলাপের দ্বারাও যুক্ত নন। কিন্তু কোন ধর্মীয় সমাবেশে অথব। ধর্মগুরুকে কেন্দ্র করে যে জনসমাবেশ হয় গুরুভাইদের মধ্যে সেখানে একটা আত্মিক সম্বন্ধ থাকে সম্মেলনের বাইরেও যা প্রতিষ্ঠানের কাজেকর্জে প্রতিফলিত হয়, তাই এই জাতীয় সমাবেশের একটা সামাজিক ভূমিকা থাকে

সমাজ জনতার ভীড়ের পার্থক্য এই সামান্ত ধারণ! মনশ্ক্ষুর সামনে থাকলে আজকের “সমাজেশ্র স্বরূপ সম্বন্ধে ধারণ করা সহজ হবে। কলকাতা শহরের কথাই যদি ধরি তবে দেখব যে বাড়ি থেকে বে।রয়ে পথে বেরোন মাত্র আমরা সবাই যেন সবার প্রতিছন্ী। কিভাবে আর সবাইকে কহুই-এর গুঁতোয় সরিয়ে দিয়ে অথবা পায়ের চাপে পিষ্ট করে আমি বাস-উ্রামে উঠে গন্তব্য- স্থলে যাব, অথব1 চাল-চিনির লাইনে এবং এমনকি বাজারে মাছ-তরকারী কেনার সগয়ে আর সকলকে এড়িষে আমি আগে অথবা সন্ত! দামে কিংবা তাজ! জিনিসটি পাব--এ মানসিকতা অল্পবিস্তর আমাদের সবার মনেই থাকে কর্মক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্বিতার কথা উল্লেখ কর! নিরর্থক অফিস বা কারখানার পলিটিকস্‌--এখন শ্রীয় সর্বজনন্বীকৃত ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে স্কুল- কলেজের অধ্যাপকবর্গ অথবা হাসপাতালের চিকিৎসকবর্গও এই পলিটিকসের 'আ৬্তার বাইরে নন অর্থাৎ এইসব ক্ষেত্রে সমাজের অস্তিত্ব বিশেষ নেই

আমাদের মত নাগরিক মানুষদের পমস্ত দিনের বড় একট সময় বাড়ির বাইরে কাটাতে হয়। তাই বাঁসস্থানকে কেন্দ্র করে যে পাড়া তার “সমাজ*

১৪২ বাঙল! বাঙালী

_--তাও হৃতগৌরব ক্ষীণবল। বছর চল্লিশ পূর্বেও কলকাতায় শ্ামবাজার;, বাগবাজার, কালীঘাট, ভবানীপুর অথবা তার উপৰ্ঠে বেহালা বা ঠাকুরপুকুরে" যে সমাজ ছিল তা আজ অদৃশা। একদিকে কলকারখানার সম্প্রপারণের ফলে' মানসিক দিক থেকে ছিন্নমূল বাইরের মানুষেরা এসব এলাকায় এসেছেন, এখনও ধাদের মনের শিকড় নিজ নিজ এলাকায় ঢুকতে পারেনি। অন্যদিকে বঙ্গবিভাগ জনিত রাষ্ট্রবিপ্নবের ফলে আর এক শ্রেণীর ছিন্নমূল মানুষ এসেছেন ওপার বাঙলা থেকে “এদেশী মানুষদের” সঙ্গে ধাদের মানসিক ব্যবধান এখনও রয়ে গেছে। ফলে কি শহর কলকাতা অথব! তার উপকঠ আর কি আসানসোল, হূর্গাপুর, খড়্গাপুর অথবা শিলিগুড়ির মত কলকারখানা অথব| ব্যবসা-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠ| শহর--সমাঁজ আজ কোথাও নেই। সেই কারণেই নেই সমাজপতি অথন। সামাজিক শাসন।

গ্রামাঞ্চলের অবস্থাও খুব একটা ভরসাঁজনক নয়। যৌথ পরিবার প্রথা ভেঙে গেছে বললেই চলে এবং পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের একটা বড় 'অংশ কলকাতা, আপগানসোল, দুর্গাপুর, বর্ধমান, খড়গপুর, শিলিগুড়ি শহরগুলির মানপিকতা দ্বার! প্রভাবিত | এর আশে-পাশের বড় একটা এলাক। থেকে যেসব মানুষ অন্নসংস্থানের জন্য এই শহরগুলিতে আসেন, এখানকার মানসিকতা বহুলাংশে তারা বহন করে নিয়ে যান নিজেদের গ্রামে আমাদের প্রাচীন গ্রাম-বাংলার কুষি- কেন্দ্রিক সমাজে পরিবারের কর্তার জীবনের শেষ দিন অবধি জীবিকার সাধন জমির মালিকানা থাকত তার নামে। পরিবারে আর সবার আর্থিক স্বাতন্ত্া না থাকায় বাধাতাযূলকভাবে একটা পারিবারিক আনুগত্য থাকত পরিবারের সব সদস্যদের মধো এবং পরিবারের কর্তারা চণ্ডীমগ্ডপ অথবা জাতীয় সাধারণ মিলনের স্থানকে ( একালের ক্লাব) কেন্দ্র করে সামাজিক সংহতি শাসন বজায় রাখতেন আথিক শ্বাতন্ত্রের হাঁওয়াষ পে সংহতি শাসন আজ একরকম শিথিল। এছাড়া রাজনৈতিক আঘথিক ম্বাধিকারের ভাবনাও গ্রামাঞ্চলে স্বাভাবিকভাবে ছড়িয়েছে স্বাধীনতার পর। এর ফলে জমির মালিক ভাগচাষী বা ভূমিহীন মজুরের সম্পর্কও অনেক বেশী প্রতিদ্বন্থিতামূলক হয়ে উঠেছে ভাগচাষী ভূমিহীন কৃষিমজুরেরা এই প্রতিদন্থ্িতায় এখন দূর্বল পক্ষ হিসাবে থাকতে বাধ্য হলেও তাঁদের অনেকেই মনে মনে অন্ততঃ নিজেদের' দুঃখদুর্দশার "মূল কারণ যে জমির মালিক সম্প্রদায় একথা বুঝে তাদের প্রতি মানসিকতাতেও প্রয়োজনীয় রূপাস্তর ঘটিয়েছেন এবং একে যদি শ্রেণী-

পশ্চিমবঙ্গের সমাজ £ আজ এবং আগামীকাল ১৪৩:

সংগ্রামের মানসিকতা বল৷ হয়, তবে এই মানসিকতা আরও সংগ্রামশীল হবে বলাবাহুল্য সংগ্রাম বা যুদ্ধের মানসিকতা! সমাজ গঠনের অনুকূল নয়--যার যুল ভিত্তি হল সহযোগিতা

তাহলে এই সংক্রান্তিকালে “সমাজের” ম্বূপই বাঁ কি আর “সযাজপতিই* বাকারা?

আজকের সমাজ মরুভূমির বালুকণার মত বিচ্ছিন্ন,পরস্পর অসম্প-স্ত মানুষের সমষ্টি এখানে পথের পাশে নিরন্ন মাধ তার স্্রীপুত্র-কন্যা নিয়ে পরলোকে যেতে উদ্ত হলেও দেখার কেউ নেই, কোন দুর্ঘটনায় কেউ আহত হয়ে মরণোম্মুখ হলেও কর্মস্থল অভিমুখে ভ্রোতের মত ধাবিত নর-নারীপ্রবাহের গতি কদাচিৎ রুদ্ধ হয়, মানুষের নিতাপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নিয়ে মজুতদারী মুনাফাঁবাজী লেগেই আছে খগ্যবস্ততে ভেজাল দিতে হাত কাঁপে না এমনকি রোগীর ওষুধ শিশুখাছেও বাড়তি পয়সা রোজগারের জন্য ভেজাল দেওয়া হয়। আরও আধুনিক সমাজে ডক্টরেট ডিগ্রীধারী বৈজ্ঞানিকেরা এইসব ভেজাল দেবার প্রক্রিয়া আবিষ্কারে নিজেদের প্রতিভা নিয়োগ করেন অথবা আরও অধিক সংখ্যক নর-নারী-শিশুকে আরও তাড়াতাড়ি, স্বল্পব্যয়ে সুচারুরূপে হত্যা করার মারণাস্ত্র আবিষ্কারের জন্য দিবারাত্র তাঁদের ডাকিন*তত্ত্রের সাধনা চালিয়ে যান। ইউরোপ, আমেরিকার দেইসব আধুশিক সমাজে-_যেখানে ভোগের উপকরণের অভাব নেই বললেই চলে--দিনের পর দিন বৃদ্ধ-ৃদ্ধারা একাস্তে চোখের জল মুছে মুখে লোকদেখানে। পাওুর হাসি ফুটিয়ে তোলেন কারণ বছরের পর বছর তাদের ছেলেমেয়ে বা অপর কোন আপনজন তাদের দেখতেও আসে না।

আর সমাজপতি? যে কারা তার জবাব দেবার প্রয়োজন হবে না। চক্ষম্মান ব্যক্তিরা নিজের চারপাশে তাকালেই নজরে পড়বে পাড়ার ছেলে. নামে এর রোয়াক, সামনের চায়ের দোকান অথবা] মোড় আলোকিত করে যে-কোন একট! সর্বজনীন পূজা অথবা আর কোন অজুহাতে চাদার রসিদ বই হাতে নিয়ে সংসার চালাতে উদয়াস্ত নাকের জলে চোখের জলে একাকার গৃহকর্তা অথব! গৃহিণীর ধরায় বারো মাপই হাজির এবং কত “্টাদা” দিতে :

:১৪৪ বাঙলা বাঙালী

হবে তাও এ'রা আদেশ করে দেবেন নিয়ে-ধার পকেট থেকে এটা যাবে-- তিনি যদি বিশেষ বাক্যব্যয় করেন, তাহলে শুধু তারই নয়--ঠার গোঠী-গোত্রের কপালে বিশেষ দুঃখ আছে। অতঃপর সেই টাদার টাকার কতটুকু দেবতা পান আর কতটুকুই বা তাঁর “ভক্তদের” পঞ্চ না হলেও অন্ততঃ দ্বিবিধ “ম”-কার সাধনার উদ্দেশ্যে ব্যয়িত হয়_-তা কেবল সেই দেবতাই জানেন চাদা ধার! ধারা দেবেন তারা অন্তত জানেন না! ইদাঁনিং পাভায় কোন বাদ-বিসংবাদ হলে এ'রাই তার বিচারক, ফরিয়াদী আসামী পক্ষ উভয়ই এদের “ফি” দিতে বাধ্য ডান-বাম নিধিশেষে রাজনৈতিক দাদাদের পৃষ্টপোষকতাধন্ হয়ে এরা আরও মানমর্ধাদ1 বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। কারা ক্ষমতাসীন বুঝে এরা মাঝে মাঝে দল বদল করলেও মূলত নিমকহারাম নন। যখনই যে দলের অন্থগামী থাকলে পুলিশ প্রশাসনযন্ত্রেরে আড়াল পাওয়া যায় একান্ত অন্থগতের মত সেই দলের হয়ে ভোটারদের সামনে ছুরি বা পাইপগান নাচিয়ে ভোট দিতে “অনুরোধ” করে আসেন, তেমন বুঝলে অবোধ ভোটার অথবা পোলিং অফিপারদের “নিরাপত্তার” জন্য তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে ব্যালট বাক্স বা ব্যালট পেপারের সদ্গতি করেন

নৃতন যুগে যে “সমাজ” গড়ে উঠেছে, তাকে সমাজের বদলে বরং ৪11 বা 999০9018101) নামে আখ্যা দেওয়াই অধিকতর সঙ্গত। এটা প্রধানত পেশাভিত্তিক। সমাজের প্রধান একটা বনিয়াদ_-একট। নির্দিষ্ট এল|কা অথবা ধর্মীয় গোষ্ঠী বা উপগোষ্ঠীর মধ্যে এর কর্তৃত্ব চলে না। নাগরিক মানুঘদের জীবনের বড় একটা অংশই বাড়ি অথবা নিবাসের এলাকার বাইরে কাটাতে হয় বলেই বোধহয় পেশাগত এইসব £৭110-এর শক্তিবৃদ্ধি। কল-কারখানার অথবা অফিস-আদালতের শ্রমিক সংঘ অথবা ক্লাব-আলসোসিয়েশন এই পর্যায়ে'পড়ে ক্যালকাটা বা রোটারী কিংবা লায়ন্স অথবা জাতীয় সম্পন্ন [মানুষদের ক্লাব থেকে শুরু করে অফিসের নাটক অথবা সাহিত্যচর্চার সমিতিগুলিও মোটামুটি এই জাতীয় সমান সাংস্কৃতিক স্তর আধিক আয়- বিশিষ্ট মানুষের মিলনভূগি

অপর এক ধরণের সামাজিক পংগঠনও আজকের পশ্চিমবঙ্গে প্রবল এবং তাহ'ল রাজনৈতিক মতাদর্শভিত্তিক পার্টি বা দল। অবশ্ত উপরের দিকে বিভিন্নঠরাজনৈতিক দলের পার্ধক্যের পিছনে অংশত ভিন্ন ভিন্ন দর্শন থাকলেও নিচের দিকের পার্থক্য প্রধানত ব্যকিকেন্দ্রিক ব্যক্তিগত শ্বিধাভিত্তিক।

পশ্চিমবঙ্গের সম্গাজ : আব্দ এবং আগামীকাল ১৪৫

তবে রাজনৈতিক মতভেদের কারণ বিশ্লেষণ আমাদের বর্তমান আলোচনার পরিধির মধ্যে পড়ে না।

বাতিক্রম কি নেই? অবশ্ঠই আছে। নইলে ভদ্রলোকেরা এখনও মোটামুটি বেচে আছেন বা চলাফেরা করছেন কিভাবে ? তবে তার। নেহাৎ্ই ব্যতিক্রম সমাজ-মানসিকতার বৃহত্তম অংশের গতি অসামাজিকতার দিকে পাড়ার শিক্ষিত সচ্চরিত্র নিরপেক্ষ বা আদর্শবাদী মান্ছষের হাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমাজের নৈতিক নেতৃত্ব নেই। মেকি মুদ্রার প্রবল-প্রাবল্য খাটি সুদ্রাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে সরিয়ে দিচ্ছে

|

উপরের আলোচনা থেকে একথা নিশ্চয় স্পষ্ট হয়েছে যে আজকের পশ্চিমবঙ্গে যা চাই তা হুল উদার মানবতাভিত্তিক এক সমাজ-ব্যবস্থা। কিন্তু একথ! উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই সমালোচক বলে উঠবেন যে, চাই বললেই কি পাওয়া যায অথবা যে সোনার হরিণ চাওয়ার মত ব্যাপার

সমালোচকের বক্তব্য মিথ্যা নয়। একপিকে পুঁজিবাদ এবং অপরদিকে মানবীয় সংবেদনাহীন কেবল অর্থনর্বস্ব অপসংস্কৃতির সশড়াশী আক্রমণে ভারত বিশ্বের অনেক দেশের সমাজের মতই পশ্চিমবঞ্ষের শশাজব্যবস্থার বর্তমানে যে হাল তার হাত থেকে মুক্তি পাওয়৷ সহজ কথ! নয়। দ্িবিধ পেষণের এই জ'তাকল থেকে নিঞ্চৃতিলাভ করে উদার মানবিক সম্বদ্ধ আবার পুনঃপ্রতিষ্রিত হওয়া এক দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রামের ব্যাপার এবং বর্তখান প্রবন্ধের ক্ষুদ্রায়তনের মধ্যে এই সংগ্রাম-পন্ধতির বিশদ আলোচনা করা সম্ভবপর নয় ( সম্বন্ধে বিস্তানিত আলোচনার জন্য লেখকের “পবোদয় শাসনমুক্ত সমাজ, দ্রষ্টব্য |)

দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রাম-পদ্ধতি সম্বন্ধে এখানে ইঙ্গিতম্বর্ূপ কেবল এইটুকু বলা হবে যে মানষের সম্বন্ধের একটা বড় নিরূপক্ হুল ভোগ্য উপকরণসমূহের উৎপাদন বণ্টনব্যবস্থ৷ মানুষের পারম্পরিক সম্বন্কে মানবীয় এবং অর্থপূর্ন করতে হলে তাই উৎপাদন বণ্টশব্যবস্থার বর্তমান অতিবৃহৎ পেই কারণে নৈর্যক্তিক পদ্ধতি পরিহার করে এদের সাধারণ মানুধ তাদের স্বয়ং পরিচাপিত

বা..১*

১৪৩ বাঙল! বাঙালী

কষপ্র ক্ষুদ্র গোঠীর বুদ্ধি পরিচালনাব্যবস্থার আয়ত্তাধীন করতে হবে। অর্থাৎ উৎপাদন বণ্টনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ চাই, যাতে তা সাধারণ মানুষের আয়ত্তে আসতে পারে। যাতে তার পদে পদে মানবিকতার স্পর্শ লাগতে পারে।

বর্তমান সমাজের অতি ক্ষুদ্র একটা অংশ যে বিপুল ভোগের অযৌক্তিক সুযোগ পায় এর জন্য তা ছাড়তে হতে পারে কিন্তু সকলের বেঁচে থাকার উপযুক্ত মোটামুটি উপকরণ পাওয়া এবং এই পদ্ধতিতে পরম্পরের মধ্যে ষে জীবন্ত মানবীয় সম্পর্ক গড়ে উঠবে, তার ফলে পুর্বোক্ত লোকসান পুষিয়ে যাবে

কিন্ত তো গেল দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা-_-ইউটোপিয়াতে পৌছানোর পর যা হতে পারে। হয়ত বা আমাদের এল-ডোরাডোতে যাবার পথে দুই-এক তাল সোন। পাবার মত ব্যাপারও ঘটতে পারে অর্থাৎ অস্ভিম লক্ষ্যে অগ্রসর হবার পথে একটু একটু করে কোন কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে। তবে তার চেয়েও বড় কথ! এখনই এই যৃহূর্তে আমরা কি করি তাই। কারণ বর্তমানের উপরই ভবিষ্তের ভিত্তি।

আজকের পরিবর্তনকামীদের একথ! বলে নিশ্ে্ট থাকলে চলবে না যে ইউটোপিয়াতে পৌছালে সব ঠিক হয়ে; যাবে এবং তাই এখন যেন-তেন* প্রকারেণ দাদাদের নির্দেশিত পথে সেইদিকে অন্বগতিতে দৌড়ে যাওয়া ছাড়া! আর কিছু করণীয় নেই। অথবা হতাশার এই কান্াকটি চলবে না, যে বর্তমান অবস্থায় নৃতন মূল্যবোধের অনুশীলন--হতেই পারে না। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে ইউটোপিয়াতে কোনদিনই পৌছানে। যায় না, তার দিকে যতটুক্ এগোনে। যায়, ততটুকু নগদ প্রাপ্তি শাস্ত্কারের! তাই বলেন, শচরৈবেতি, চরৈবেতি* আমাদের ভুললে চলবে না যে কংসের কারাগারে কৃষ্ণের জন্ম এবং কংসের প্রবল প্রতাপের মধ্যেই গোকুলে তার বৃদ্ধি। পুরাণকে যদি 'আধুনিক পরিভাষায় ব্যক্ত করতে হয় তাহলে+বলা যায় যে জার্ানী ইংলগে পুঁজিবাদের জঠরেই মার্কপের বিকাশ, জারের শ্বৈরতন্ত্রেরঠমধ্যেই লেনিন স্ট্যালিনের আবির্ভাব, দেশী-বিদেশী শোষণের মধ্যোমাণ্-সে-তুংএর আত্মপ্রকাশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতের শ্বেতাঙ্গদের মেরুদণ্ডতঙ্গকারী শাসনের মধ্যেই মুক্তিকামী মানবাত্মার শাশ্বত নিদর্শন গান্ধীর উদয়।

আমাদের অর্থাৎ যারা মানবীয় ধরণের সমাজের নব-রূপায়ণ চাই, তাঁদের : 'তাই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অপেক্ষায় না থেকে; এইখানে এখনই কর্মে প্রধৃত্ত হতে

পশ্চিমবঙ্গের সমাজ : আজ এবং আগামীকাল ১৪৭

হবে। কোন লোভ ব! ভয় যেন আমাদের পথভ্রাত্ত করতে না পারে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটিঃচিস্তায় কর্মে আমরা যেন আমাদের অস্তিম লক্ষ্যের প্রতিফলন করতে পারি। প্রতি মৃহূর্তে ঘোষিত আদর্শের মানদণ্ডে নিজের চিন্ত -ভাবনা আচরণকে! বাজিয়ে :. নেওয়া দুরূহ সন্দেহ নেই। কিন্তু সমাজ পরিবর্তনের মত মহৎ আদর্শের কোন শর্টকাট নেই।

বাঙালীর সংস্কৃতি_ভিন দৃষ্টিতে

“ই হারা অত্যন্ত ছত্মার্গগামী, ই'হাদেব দেহ ক্ষীণ, কঙ্কালসার এবং একটু ধান্ক। লাগিলেই ভাঙ্গিয়া পড়িবেন এই আশঙ্কায় সকলেই ইহাদের নিকট হইতে দুরে থাকেন এইসব বিদ্যার্থাদের মুখে পান,."বাবরী চুল স্বন্ধে লপ্দিত--" | ইহার] ধীরে ধীরে পথ চলে, থাকিয়া থাকিয়া দপিত মাথাটি এদিকে ওদিকে দোলায় হাটিবার সময়ে ইহাদের মযুরপঙ্ধী জুতাঁয় মচ. মচ, শব্ধ হয়, মাঝে মাঝে নিজেদের ন্থবেশ স্থবিন্তস্ত চেহারাটির দিকে তাকাইয়া দেখে তাহাদের নিকট হইতে অর্থ আদায়ের জন্য ভিক্ষুক অন্যান্য পরাশ্রয়ী লোকের তাহাদের তোষামোদ করিয়া গান ছড়া বাধে কৃষ্ণ বর্ণ শ্বেত দন্তপউ,ক্কতিতে তাহাকে দেখায় যেন বাদরটি ।-.-্বল্প মাত্র অজুহাতেই তিনি রোষে ক্ষিপ্ত হইয়া ওঠেন, সাধারণ একটু কলহে ক্ষিপ্ত হইয়! ছুরিকাঘাতে নিজ সহ-আবাপিকের পেট চিরিয়া দিতেও দ্বিধা বোধ করেন না। কম দাম দিয়া বেশী জিনিস দাবি করিয়া দোকানদাঁরদের উত্তাক্ত করেন |”

“তাদের (বৈষ্ণব সহজিয়াঁদের ) ধমীয় আচারের একটি বিশেষ দিক পরকীয়া সাধন। অর্থাৎ প্রচলিত ভাষায় যাকে বাভিচার বলে। স্থরুচি বিসজন না দিয়ে আচার সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা কর] যায় ন1।....নিজের স্ত্রী নয় এমন নারীর সঙ্গে প্রেম যে শ্রেরতর একথা এদেশে প্রমাণিত .হয়েছিল। এবং এরপর উনবিংশ শতাব্দী পর্যস্ত কর্তাভজার মত অসংখ্য বৈষ্ণব সম্প্রদায় এই মতের সমর্থক ছিল কিশোরী ভজনের (নাবালিকাদের সঙ্গে অবাধ সন্তোগ ) মত অনেক প্রথার প্রবর্তন বঙ্দেশে হয়েছিল। স্ুকুচির খাতিরে সেসব সম্বন্ধে বিস্ত[রিত আলোচন। সম্ভব নয় 1”

«....এ বিকার কেবল সহজিম্বা বা বৈষ্্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না এই সব জঘন্য প্রথ। তন্ত্রান্সসারী ধর্মাচরণের মধ্যে চরমে পৌছালেও এর প্রভাবে ্রাহ্মণ্য ধর্মের বিকার দেখা দিয়েছিল দেবী ছুার মনোরঞ্জন হবে--এই কারণে বৃহন্র্ম পুরাণে দুর্গা পুজার সময় নর-নারীর অঙ্গের নাম-স্থচক অভব্য শব্ধ উচ্চারণ করার বিধান দেওয়া হয়েছে কালবিবেক কাম উত্সবের সময়

বাঙালীর সংস্কতি__ভিন্ন দৃষ্টিতে ১৪৯

অঙ্সীল শব্ধ উচ্চারণ করার নির্দেশ দেয় দুর্গাপূজার বিবরণ দেবার সময় এই গ্রন্থে নর-নারীদের এমন সব কৌতুক ক্রীড়া শব্দোচ্চারণের স্থপারিশ করে-__ বর্তমানে যা আমরা অন্ুচ্চারণীয় বলে মনে করি কিন্তু কালবিবেকের মতে দেবী দুর্গার প্রীত্যর্থে এসব বাঞ্ছনীয় গীতগোবিন্দ শ্রীকষ্ণকীর্তনে যৌনসম্ভোগের নগ্ন চিত্রায়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে পরবর্তী কালের বহু পদ্াবলীতে এর অন্থকরণ কর] হয়েছে বিন্দুমাও দ্বিধা না করেই একথা বলা চলে যে বর্তমান সমাজে যেসব সামাজিক সাহিত্যের ক্ষেত্রস্থ অশ্লীলতা ছুষ্ত আইন অনুসারে দণ্ডাহ মধ্যযুগে সেসব ধর্মের ক্ষীণ আবরণের অন্তরালে আচরণ কর! হত এবং তাদের আপত্তিকর বিবেচনা করা হত না”

“সমস্ত দিনের পুজা শেষ হয়ে যাবার পর একদল বাইজী দেবী বিগ্রহের সামনে নৃত্য গীত আরম্ভ করে তাদের পরিধেয় বস্ত্র এত স্ুক্্ম যে ত1 আদৌ দেহের আবরণ নয়। যে গান তারা 'গায় তা অশ্লীল এবং নাচের মুদ্রা অঙ্গভঙ্গীও স্ুল। এসব নাচ-গানের কথা বর্ণনা করার অন্থুপযুক্ত। কিন্তু দর্শকেরা এট! বেশ উপভোগ করেন এবং আদৌ বিব্রত বোধ করেন ন1।”

| |

আপাত দৃষ্টিতে উপরোক্ত চারটি উদ্ধৃতিই বর্তমানের বাঙালী সমাজের এক একটি দিকের পরিচায়ক মনে হলেও আসলে কিন্তু এগুলি এক একটি যুগের নিদর্শন |

প্রথমটির কাল দশম একাদশ শতাব্দী নায়ক গৌড় বা বঙ্গদেশীয় ছাত্র- সমাজ, ঘটনাস্থল সুদূর কাশ্মীর বাঙালী ছাত্রদের প্রথমোক্ত বর্ণনার লিপিকার কাশ্মীরী কবি ক্ষেমেন্দ্র “দশকুমার চরিত গ্রন্থ থেকে ডঃ নীহাররঞন রায় মহাশয় তাঁর 'বাঙালীর ইতিহাস--আদিপর্বের ৫৫১-৫৫২ পৃষ্ঠায় বাংলায় অন্বাদ করে উদ্ধত করেছেন বঞজজিত অংশে বাঙালী ছাত্রদের পোশাক, হস্তধুত ছত্র নখ রঞ্জিত কর! এবং নারীন্ুলভ প্রসাধনদ্রব্য ব্যবহারের মনোরগ্ুক বর্ণনা ছিল।

দ্বিতীয় তৃতীয় উদ্ধৃতিটি পঞ্চদশ ষোড়শ শতাব্দীর বাঙালীর সাংস্কৃতিক জীবনের একটি বর্ণনা উৎস--ডঃ রয়েশচন্দ্র মজুমদারের 1719075 ০? 7/501965%21 73611821, পৃষ্ঠা ২৬২০৭ |

১৫৪ বাঙল! বাঙালী

“চতুর্থ উদ্ধাতিতে বণিত বিবরণের কাল উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদে অর্থাৎ

-১৮*৬ শ্রীষ্টা'। ঘটনাস্থল সেকালের কলকাতার এক বিশিষ্ট বাঙালী রাজা

রাজকুষ্ণের বাড়ি এর সাক্ষী জনৈক বিদেশী লেখক উদ্ধৃতি দিয়েছেন ডঃ মেশচন্দ্র মজুমদার মহাশয় তার পূর্বোক্ত গ্রন্থের ২২১ পৃষ্ঠায়।

'অবশ্ঠ উনবিংশ শতাব্দীর কলকাতার বাবু কালচারের আরও অনেক দিকের বর্ণনা পাওয়া যায় "ছুতোম প্যাচার নক্সা, “হিকি সাহেবের গেজেট” এবং আরও নান গ্রন্থে। বাবু কালচারের মোদ্দা কথা হল-_মদ, বারনারা, পায়র] ওড়ানো থেকে শুরু করে বিড়ালের বিয়ে পর্যস্ত নানা বাতিকের পিছনে টাকার শ্রাদ্ধ, পুজা বিবাহ শ্রাদ্ধ ইত্যাদি সামাজিক অনুষ্ঠানের নামে অর্থের কুৎসিত প্রদর্শন ইত্যাদি ইত্যাদি বলা বাহুল্য বাবুদের এসব খেয়াল মেটাবার জন্য অর্থ জুগিয়েছেন অভুক্ত নগ্ন থেকে বাংলার সাধারণ চাষী _বস্কিমচন্দ্রের ভাষায় হাসিম শেখ আর রাম। কৈবর্ত।

আর সাহিত্য যদি সমকালীন সমাজের দর্পণ হয়, তবে “শ্রীমঙ্গল” থেকে সুরু করে “অন্নদামঙ্গল পর্যস্ত নানা মঙ্গলকাব্য, গোঁড়ীয় বৈষ্ণব সাহিত্য এবং বিশেষ করে “চৈতন্য ভাগবত” “চৈতন্য চরিতামৃত” এবং ধোয়ীর “পবনদূতে মধ্যযুগের বাঙালীর সমাজচিত্রের প্রভৃত বর্ণনা পাওয়া যায় যা তার সাংস্কৃতিক পরিচয় পেতে প্রৃত পরিমাণ সাহায্য করে

এইসব সাক্ষ্য-প্রাণ থেকে তদানীন্তন বাঙালীর সাংস্কৃত্তিক যে পরিচয় পাওয়া যায় তার সঙ্গে আজকের সমাজ-জীবনের খুব একট! পার্থক্য নেই। পুজাপার্ধণের নাম করে অর্থের স্থুল প্রদর্শন, নানা খেয়ালে গরীবকে বঞ্চিত করা টাক! ওড়ানো, সুরার শ্লোত যৌনসম্ভোগের প্রাবলা, অসহায়ের প্রতি অত্যাচার পঠন-পাঠনে অনীহা, ক্ষমতায় অধিষিত রাজপুরুধদের দুর্শতি ইত্যাদি আজকের সমাঁজ সংস্কৃতি-জীবনের যেসব বৈশিষ্ট্য আমাদের পীড়িত করে, অতীতেও তা ছিল। অর্থাৎ ঘুরিয়ে বলতে গেলে বৃহত্তর বাঙালী সমাজের সাংস্কৃতিক জীবনের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি সেই দশম-একাদশ শতাব্দী থেকে

জানি, সংস্কৃতি-অভিমানী বাঙালী পূর্বোক্ত মন্তব্যে আহত হবেন। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি প্রশ্ন করলেন-_তাঁহলে শ্রীচৈতন্ত থেকে শ্ররু করে রামমোহন, এবং রাষকৃষঃ-

বাঙালীর সংস্কৃতি--ভিন্ন দৃষ্টিতে ১৫১

বিবেকানন্দ, বিদ্যাসাগর সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথকে বাঙালী সমাজে ব্যাখ্যা কর! হবে কিভাবে ?

এ'রা এবং এদের মত বিরল সংখ্যক মনীষী বাঙালী সমাজ সংস্কৃতির সামান্য পরিচয় নন, এরা ব্যতিক্রম |

ব্যতিক্রম না হলে চৈতন্তের তিরোধানের অর্ধশতাব্ধী যেতে ন1 যেতেই জীববিশেষের পুচ্ছের মত বাঙালী সমাজ গ্ুলত্বের পঙ্ক গায়ে মাখত না।

রামমোহন এবং রামকুষ্জদেব দ্বার! প্রভাবিত হলেও, বিবেকানন্দ পশ্চিমের উদার মানবতাবাদের ফনল--ইংরেজদের শাসনের ফলে যার সঙ্গে ভারতের পরিচয় ঘটেছিল

বিদ্যাসাগর মহাশয় যে বাঙালীর “কাকের বাসায় কোকিলের ছান।”--একথ। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের |

রবীন্দ্রনাথের দর্শন, সৌন্দর্যতত্ব অথবা পল্লীসেবা ইত্যাদিকে বৃহত্তর বাঙালী সমাজ কোন দিনই নেয়নি নিয়েছে তার সহজ স্থরের গানগুলিকে (এবং পুজা, স্বদেশ অধ্যায়ের গভীর ব্যঞ্জনামূলক গানগুলির অর্থ না বুঝেই )-_বিশেষত প্রেম পর্যায়ের গানগুলিকে তার কয়েকটি নৃত্যনাট্যকে একেবারে কোমরভাউ। কাস্তরূপে রূপায়িত করে রবীন্দ্রনাথ একক--ঘটনাচক্রে তিনি বাঙউলাদেশে জন্মেছিলেন আসাম, কেরল, অথবা কাশ্মীরে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি রবীন্রনাথই হতেন

পূর্বোক্ত দুই দশজন ব্যতিক্রম স্বরূপ “বাঙালী"র কথ। বাদ দিলে সাধারণ বা সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালীর প্রতীক হল ভখাড়ু দত্ত, ভবানন্দ অথবা মীরজাফর, রায়- ছুর্লভের দূল। চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান”-_এ কেবল বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধের কিছু ভ্রান্তবুদ্ধি আদর্শবাদী বাঙালী তরুণের কথা নয়। হল সেন বংশের শেষ যুগের কিছু পথত্রান্ত আদর্শবাদী বাঙালী যুবকের গড়ের সীমান্তের ওপার থেকে বাঙালীর কল্যাণের জন্ত তুকীদের আমন্ত্রণ করে আনার পরিকল্পনার উত্তরাধিকার

আজকের বাঙলা সাহিত্যে যে উদ্দাম যৌনবাদের প্রাবল্য, ক্যাবারে ছাড় যে নাটক ঘযাত্রান্ুষ্ঠান হয় না, চলচ্চিত্রকে "এ" মার্কা করে দর্শক টানার মানসিকতা, তার জন্ত কেবল পশ্চিমের প্রভাবকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এর মূল বাউল! বাঙালীর অতীত এতিহা বা সংস্কৃতিতে “পাড়ার ছেলে" এই সস্সেহ প্রশ্রয়ের অভিধার পিছনে আদলে মস্তানর1 যে সমাজপতি এবং যখন

১২ বাঙলা বাঙালী

যারাই গদিতে আসীন হোক ন1 কেন তাদের ক্ষমতার উৎস মস্তান সম্প্রদায় এবং তাদের রসদ জোগাতে হয় সাধারণ মানুষকে “চাদ” নামে কথিত বস্তত জিজিয়া করের দ্বারা, আর সব জেনেশুনেও আইন-শৃঙ্খলার রক্ষাকারীর৷ এ'দের লাখ-ছুলাখ টাকার «পৃজাগ্র উদ্বোধনে প্রধান অতিথি অথবা অপর কোন পদ অলঙ্কৃত করে এ'দের পৃষ্ঠপোষকতা! করেন--এরও পিছনে রয়েছে অতীতের বাঙালী মানসিকতার ইতিহাঁস। প্রশাসনে উৎকোচেন্র প্রাবলা, দওমুণ্ডের কর্তাদের নারী স্থ্রা উপঢৌকন দিয়ে ইচ্ছা মত কাজ করিয়ে নেওয়া যায় এই অবস্থার সক্ষে সেন রাজা, নবাবী আমল বা ইংরেজ রাজত্বের কোন পার্থক্য নেই রাজনীতিতে “ভেঙে দাও” “গুঁড়িয়ে দাও” “মুণ্ডু চাই” জাতীয় রক্তপিপাস্থ জিগির এবং খুনোখুনি প্রাচীন বাঙলার মাৎসন্তায়ের আধুনিক রূপ। আর সর্বোপরি এসব দেখেও শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের মৌনী বাবা সেজে থাকা, এর প্রতিবাদে প্রবৃত্ত না হয়ে প্রথা চলতে দেওয়া_বাঙালীর সেই সনাতন “চাঁচা আপন প্রাণ বাচা”*__নীতির পরিচায়ক এর সঙ্গে যদি যুক্ত হয় মানব- চরিত্রের অন্ধকার দিককে প্ররোচনাদানকারী বিদেশাগত কোন আধুনিক মতবাদ বা ফ্যাশান, তাহলে তো! পোনায় সোহাগা বাস্তবে এই হল আজকের বাঙালীসমাজের পরিপ্রক্ষিত এবং সংস্কৃতির পটতভূমিকা

8৪ |

আসলে সংস্কৃতিকে বোধহয় কোন ভৌগোলিক বা কালিক গণ্ীর দ্বার! সীমাবদ্ধ কর! যায় না। আমরা যে বাঙালী সংস্কৃতির জন্য সঙ্গতভাবেই গর্ব করি তার মূল হল একটা উদার মানবিকতাবাদ এটাই হল উনবিংশ শতাব্দীর বাঙলার রেনেপ সের ভিত্তি, ভারতীয় ধ্যান-ধারণা! জীবনের উপর পাশ্চাত্য, আধুনিক অথবা বেজ্ঞানিক-যে নামই দ্িই না কেন--সেই উদার মানবিকতাবাদের অভিযাতের ফসল। এই সংস্কৃতি যে মূল্যবোধের প্রতীক তাকে বিশ্বজনীন বললে সত্যের অপলাপ হবে না।

তবে সংস্কৃতি সমগ্র বাঙালী-সমাজকে এখনও স্পর্শ করতে পারেনি বড় বেশী হলে শ্রেণীগতভাবে মধ্যবিত্ত সমাজকে এবং বাক্তিগতভাবে উচ্চবিত্ত বা নিষ্নবিত্ত সম্প্রদায়ের কোন কোন বাঙালীকে প্রভাবিত করেছে নচে্

বাঙালীর সংস্কৃতি-_ভিন্ন দৃষ্টিতে ১৫৩

রবীন্দ্রনাথ-বিভূতিভূষণ-তারাশঙ্করের রচনার পাশাপাশি দেহবাদী গল্প-উপন্তাসের চাহিদ] দেখ! যেত ন1, রবীন্দ্র-অতুলপ্রপাদ-নজরুল গীতির সঙ্গে সঙ্গে বোম্বাই মার্কা ফিল্ী গানার এত সমঝদার চোখে পড়ত নাঁ। উদাহরণের সংখ্যা আর ন] বাড়িয়েও বলা যায় যে চলচ্চিত্র, নাটক রাজনীতি প্রভৃতি সমাজ-জীবন সংস্কৃতির অপরাপর ক্ষেত্রেও পাশাপাশি এজাতীয় সুক্ম স্থল, আধুনিক প্রাকৃত মানসিকতার পৃষ্ঠপোষকতার নিদর্শন আজকের বাঙলা বাঙালীদের মধ্যে দৃষ্টিগোচর |

অবশ্ত এর জন্য বিচলিত ব! ক্ষুব্ধ হবারও কিছু নেই সংস্কৃতির বিবর্তন এই ভাবেই হয়। সংস্কৃতির আধার হল মনোভূমি। মনের সম্যক কর্ষণের ফল সংস্কৃতি। ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে লালন ফকির যে কথা বলেন, সংস্কৃতির বিকাশের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য লালন ফকিরের বক্তব্য--“আমার সাই যে ফুল ফোটাতে চান, তার জন্য ফুলে জল দিতে হয়। ফুল তাড়াতাড়ি ফোটে না বলে কি তাকে তলোয়ারের ঘ। দিলে ফুটবে ?” কিলিয়ে কাঠাল পাকানো যায় কিন্তু চিতপ্রক্যূলক সংস্কৃতির ফুল ফোটানো সম্ভব হয় না।

আর একটি কথা, সংস্কৃতি খণ্ড জীবনের আরাধ্য নয়--সমগ্র জীবনের সাধনা এক নিরবচ্ছিন্ন পুর্ণাঙ্গ মানসিকতার প্রতিফলন জীবনের প্রতিটি কর্মে প্রতিটি মুহূর্তে যার প্রকাশ সমন্ত দিন চোরাঁকরবারে লিপ্ত থাকার পর সন্ধ্যায় গীতাপাঠ করলে ধর্ম হয় না। রাজনীতিতে খুনোখুনির প্রশ্রয় দিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে দুই চার ঘণ্টা কাটালে সংস্কৃতির চর্চা হয় না। জবরদস্তি করে আদায় কর! টাকায় সাংস্কৃতিক অহুষ্টান হয় না। বাসে-ট্রামে সহযাত্রী অথব। কণ্ডাক্টারের সঙ্গে সামান্য কারণে ব্চসা করে আকাদেমী অফ ফাইন আর্টসের হলে ছবির প্রদর্শনীতে ঘুরলে চিত্তের প্রপারতালাভ হয় না। চোখের সামনে অনুষ্ঠিত জলজ্যান্ত অন্তায্সের প্রতিবাদ করার ঝুকি এড়িয়ে সভা- সমিতিতে সম্বন্ধে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দিয়ে অথবা মোট মোটা কেতাব লিখে সংস্কৃতিপ্রেমীর কর্তব্য নিম্পন্ন হয় নাঁ। জীবনের মতই সংস্কৃতি এক এবং. অবিভাজ্য, অদ্বৈত এর সাধন]

পশ্চিমবঙ্গ-_ কোন্‌ পথে ?

শ্বাধীনত্বার সাতাশ বছর আর পরিকল্পনার বাইশ বছর পরও পশ্চিমবঞ্গবাপীর এই হা ভাত জো ভাত অবস্থা! সক্ষোভে ভদ্রলোক কথাট। বললেন ক্কোন বিরোধী দলের নেতা নন তিনি অথনা হতাশাবাদীও নন। রাজ্যের শাসনযস্ত্রের কর্ণধারদের একজন, অপ্রিয় স্পষ্টবক্তারূপে ধার স্থনাম বা দুর্নাম যা-ই বলুন না কেন আছে। প্রায় দুন্তিক্ষের মত অবস্থার সম্মুখীন প্রতিটি পশ্চিম বঙ্গবাপীর মনের কথাই সেদিন সেই ভদ্রলোকের কথায় মূর্ত হয়ে উঠেছিল

কিন্ত কেন এমন হল? প্রশাসনযন্ত্রের কর্ণধার, রাজ্যের অন্যতম নেতৃস্থানীয়, শাদকদলের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুক্ত পেই ভদ্রলোক বলছিলেন, রং প্রায়রিটি বা পরিকল্পনা রচনা তার বরূপায়ণে ভ্রান্ত অগ্রাধিকারই এর কারণ। কথাটির মধ্যে চিন্তার খোরাক আছে।

পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার কিসের হবে প্রশ্নের জবাৰ খুঁজতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে পরিকল্পনা কাদের জন্য আজকের বা যখন পঞ্চবাধিকী পরিকল্পনার স্থত্রপাত হয় তখনকারও পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতবর্ষের অবস্থার কথা বিবেচনা করলে একথ। দিবালে'কের মত স্পষ্ট যে আথক উন্নয়নের পরিকল্পনায় দেশের শতকরা ৪* জন (এ রাজ্যের ক্ষেত্রে ৭* জন) দারিদ্র্যের সীমারেখার নীচে অবস্থিত নর-নারীরাই অগ্রাধিকার পাবেন উন্নয়নের আরও একটু স্পষ্ট করে বললে বলতে হবে যে টেলিভিশন, ইলেকট্রনিকস অথবা শহরাঞ্চলের পাকা রাস্তা অথবা দশ বিশ মহল! বাড়ি দিয়ে আমাদের দেশের উন্নয়নের সাফল্যের পরিমাপ কর হবে না। কর] হবে-যুগ যুগ ধরে এই যে কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধার দুটি অন্ন সংগ্রহ করতে পারছে না, পরনে যাদের কদাচিৎ একখানা নৃতন অথবা আস্ত কাপড় মেলে, তাদের খাওয়া পরা এবং তারপর বাসগৃহ, শিক্ষা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেছে কিন] কতটা গেছে তার নিরিখে

টেলিভিশন, ইলেকট্রনিকস, এগার-কশ্তিশনার, সুউচ্চ পৌধমাল! অথব! পাকা রাস্তা বা যোটরগাঁড়ির সার্থকতা আমাদের মত দেশে এই দরিদ্রতম মানুষের কতট] কাজে লাগছে বা লাগতে পারে তার মানদণ্ডে। আর অনুর ব্ডবিস্ততে এসব যদি তাদের কাজে না লাগে তবে বিজ্ঞান বা “সভাতা"প অবদান

পাশ্চমবঙ্গ কোন্‌ পথে? ১৫৫

শ্যতই চমকপ্রদ হোক না কেন, আমাদের দেশে এসবের প্রবর্তন প্রসার আপাতত মূলতুবী থাকতে পারে।

থরা, বস্তা অথবা এই জাতীয় প্রাকাতিক দূর্যোগ দেখা দেওয়া মাক্স পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের মত যেদেশে উন্নয়নের ক্ষীণ পর্দাটুকু সরে গিয়ে অস্থি-পঞ্চরসার নর-নারীর মিছিল দেখা যায় সেখানে উন্নয়নের অপর কোন অগ্রাধিকার থাকতে পারে ন!। রূঢ় হলেও এই সত্যের আরও একটু সম্মুখীন হওয়া উচিত। প্রাকতিক ছুর্যোগ সব দেশে সব কালে ঘটে থাকে কিন্তু উন্নত দেশ আমাদের মত এত অল্প ধাক্কাতেই ছিন্নমূল কদলীতরুর মত ধরাশয্যা গ্রহণ করে না। উন্নত দেশে জাতীয় ছুর্ধোগে দেশের কোণ কোণ থেকে সাহাধ্য আসে এবং অচিরে বিপদাপন্ন নর-নারীরা আবার ক্প্রতিষ্ঠিত হন। আর আমাদের দেশে? আন্তর্জাতিক সাহায্য পাবার পরও আমরা যে তিমিরে “সেই তিমিরে অর্থাৎ আমরা প্রায় চোরাবালির ভিত্তির উপর দীড়িয়ে আছি এবং প্রথমেই আমি যে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির বক্তব্য উদ্ধৃত করেছি তার ক্ষোভের গভীরতাও হয়ত এই জন্য

যাই হোক, আজকের মত দৈব ছুধিপাক দেশে থাকবে, কিন্তু তার প্রতিবিধান কি শুধু রিলিফ? অথবা পশ্চিমবঙ্গের সমাজ অর্থব্যবস্থায় স্বাধীনতার প্রায় পর থেকেই যে টি. আর. (টেস্ট রিলিফ) বা জি, আর. ( গ্রাটুটাস রিলিফ ) স্থায়ী শিকড় গেড়েছে তাই? গ্রামাঞ্চলের অভিজ্ঞতীসম্পন্ ব্যক্তিমাত্রেই জানেন যে এইসব টি, আর. এবং দি. আর.-এর স্থায়ী যূল্য কতটুকু? এর সঙ্গে সম্পর্কিত রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক দুর্নীতির যে অভিযোগের কথা শোঁন। যায় তা দি ছেড়েও দেওয়া যায় তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায় যে এর দ্বারা রিলিফ দেবার প্রয়োজনীয়তা৷ কতটা দূর করা গেছে? অর্থাৎ ধিলিফ মানুষকে সাময়িক সাহায্য দিয়ে দাড় করিয়ে দিলে ভালে এবং এজাতীয় সাময়িক সহায়তার প্রয়োজনও আছে-_বিশেষ করে দুর্যোগ ছুর্পিপাকের সময়। কিন্তু মানুষকে যদি চিরকাল রিলিফ দিতে হয়, তবে বুঝতে হবে রিলিফ ব্যবস্থার গোড়ায় গলদ এজাতীয় রিলিফে মানুষকে স্থায়ী ভিক্ষুক পরিণত করা হয় এবং তার যে সামাজিক আধিক প্রতিক্রিয়া আছে সে কথা! এখানে ধর] হচ্ছে না।

পশ্চিমবঙ্গের রাজম্ব থেকে স্বাধীনতার পর এতগুলি বছর ধরে রিলিফ বাবদ যে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে, আজকের প্রায়-ছুর্ভিক্ষের সম্মুখীন

১৫৬ বাঙলা বাঙালী

হয়ে যদি বলা যায় যে সবটুকুই জলে গেছে তাহলে বোধ হয় সত্যের বড় বেশী অপলাপ হবে না।

এবং এর প্রধান কারণ হল রিলিফের টাকা কদাচিৎ উৎপাদনযূলক কাজে খরচ হয়েছে। মানুষকে উতপাদনযূলক কাজে লাগাতে না পারলে স্বয়ংচালিত অর্থব্যবস্থা গডে ওঠে না এবং দেশের মানুষও উৎপাদন-চক্রের ভাগীদার হয়ে মজবুত অর্থনীতির বনিয়াদ গড়তে পারে না। রিলিফের টাকা শুধু ক্ুনিবৃত্তিতে গেল অথবা এমন বাধ বা রাস্তা হল তাঁর দ্বার প্রথম বর্যাতেই যা ভেঙে আবার পূর্বের অবস্থা ফিরে এল--এরকম হলে বাবদে ব্যয়িত অর্থের কোন স্থায়ী ব1 দীর্ঘমেয়াদী পরিণাম আসে না

তো! গেল শুধু রিলিফের বাবদ বায়িত অর্থের কথা। উন্নয়নের অপরাপর খাতে ব্যয়িত অর্থ কি উৎপাদনযূলক কাজে ব্যবহৃত হয়েছে? তা যদি হত তবে পশ্চিমবঙ্গের শতকরা ৭* জন দারিদ্র্যের সীমারেখার নীচে অবস্থিত এইসব মানুষগুলির সামনে মোট ভাত মোট কাপড় রোজগার করার উপায় থাকত। তাহলে এবছর খরা আর বন্যা দেখা দেওয়া মাত্র এমনভাবে ফ্যান ভিক্ষা শুরু হত না। তাহলে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা সম্বন্ধে পূর্ণমাত্রায় ওয়াকিবহাল এবং দেশ গড়ার কাজে মশগুল থাকতে ইচ্ছুক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিটির এই ক্ষোভ প্রকট হতনা।

পরিকল্পনা তৈরী করার দরকার ছিল যাতে দরিদ্রতম ব্যক্তিরা খেয়ে- পরে বাচার মত টপাজন করতে পারে কারণ রিলিফ দিয়ে কতজনকে বাচানেো যাবে কত কাল? আর এই রিলিফের টাক] আসবে কোথা থেকে ? সবার কর্মসংস্থান করার পরিকল্পনা করে তাঁর রূপায়ণ করার দরকার ছিল এবং এটা 'মলপ কল্পনা৭ নয়। জাপান জার্জানীর মত যেসব দেশের অর্থনীতি যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল, ভারতের তুলনায় অনেক অল্প সময়ে তারা এই কার্ধসাধন করেছে তাঁরা বিদেশী সাহায্য পেয়েছে ঠিকই। তা বিদেশী সাহায্য আমরাও কম পাইনি এই ভারতবধধেই পঞ্জাব-হরিয়ানার মত কয়েকটি রাজ্য প্রায় এই আদর্শে উপনীত হয়েছে। সবার কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করে কেবল সরকারী দপ্তরের কর্মীসংখ্যা বাড়িয়ে অনুৎপাদক ব্যয় বাড়ানে| অথবা ফ্রিজ, রেডিও, টেলিভিশন কিংবা কলকাতায় বড় বড় বাড়ি করার নামই হল সেই বিশিঃ ব্যক্তিটি কথিত রং প্রায়রিটি বা ভ্রান্ত অগ্রাধিকার এমনকি এই শতকরা সন্তরজন ক্ষুধার্ত মান্থুষের ছেলেমেয়েদের ক্ষুধার অন্তর

পশ্চিমবঙ্গ কোন্‌ পথে? ১৫৭

উপার্জনের শিক্ষা না দিয়ে শুধু বই পড়ার কেতাবী শিক্ষা দেবার জন্তও যা খরচ কর! হয়েছে তাও অনুৎপাদক ব্যয় এবং সেই কারণে পূর্বোক্ত ত্রাস্ত অগ্রাধিকারের শ্তধু অপচয় হয়নি--গত সাতাশ বছরে এই শিক্ষার ফলে একটা অনুৎপাদক প্রজন্ম (29706796892) তৈরী করে তাদের সমাজে ছড়িয়ে দিয়ে সমশ্যাটাকে আর জটিল করে দেওয়া! হয়েছে

বিদেশী টাকা আমাদের সীমিত সম্পদ একত্র করে অন্ুৎপাদক পরিকল্পনা রূপায়ণের ফলে আমরা একাধিক দিক দিয়ে মার খেয়েছি মাত্রাতিরিক্ত টাকা ছড়িয়ে পড়ায় এক দিকে যেমন মুদ্রাম্ফীতি ঘটেছে, সঙ্গে সঙ্গে বিদেশী খণ বাড়া ছাড়াও আমাদের জাতীয় চরিত্রে ঘুণ ধরেছে গরীবের হাতে হঠাৎ বেশী টাকা পড়লে তার চরিত্র কদাচিৎ ভালো থাকে চারিদিকে লাইসেন্স, পারমিট আর কনট্রাক্টের ভেক্কিবাজীতে ট:কা উড়ে বেড়িয়েছে এবং শ্বভাবতই বিনা মেহনতে বেশী টাকা রোজগারের সর্বনাশ। মনোভাব বিশেষ করে সথলুক সন্ধান শিকারী শিক্ষিত সমাজকে দূষিত করেছে। _. ভ্রাপ্ত অগ্রাধিকার ছেড়ে সঠিক অগ্রাধিকার সহ পরিকল্পনা রচনা তার রূপায়ণের প্রথম ধাপ হল সবার কর্মসংস্থান 1 এবং এই কর্মসংস্থান যদি উৎপাদন- যূলক না হয় অর্থাৎ জনসাধারণের ভোগ্য উপকরণ অথবা যন্ত্রপাতির মত ভবিষ্যতে উত্পাদনকার্ধে লাগার মত মূলধনী সামগ্রী উৎপাদন করার কাজে অধিকাংশ মানুষকে না৷ লাগানো যায় তবে মুদ্রান্ষীতি মূল্যবৃদ্ধি অপরিহার্ধ। অন্ুৎপাদক ব্যবস্থাশক শ্রেণীর কাজ অল্প অল্প থাকতে পারে, তবে তার হার হবে যথাসম্ভব কম এবং একট জাতীয় বেতন নীতি গ্রহণ করে অন্ুৎপাদক পেশায় নিযুক্ত মানুষদের মজুরীর হার কম করতে হবে যাতে অধিকাংশ মানুষ উৎপাদক কাজ নিতে আগ্রহী হয়।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি সহ নানা কারণে বিদেশী সাহায্য আর খুব বেশা জুটবে না এবং জুটলেও আত্মশন্মান দেশের ভবিম্বতের মুখ চেযে পাঁরত- পক্ষে বিদেশী সাহায্য নেওয়! উচিত নয় এই পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে সবার কর্মসংস্থান করার কথা ভাবতে হলে কৃষি কুটিরশিল্পের কথা আপতে বাধ্য বৃহৎ যন্ত্রশিল্প যত সম্ভব বাডুক, কিন্তু তার দ্বারা বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের কোটি কোটি বেকার অর্ধবেকারদের সমশ্যার নমাধান হবে না। স্বতরাং সবার কর্মসংস্থানের জন্য কুটিরশিল্পই ভরস]

এর মধ্যে কৃষির উদ্তিও একটু দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপার পশ্চিমবঙ্গের সেচ

১৫৮ বাঙলা বাঙালী

সারের অবস্থা! খুব ভালো! নয় ধান গম কেন, আলুর মত ফসলের উন্নত বীজও" প্রয়োজনীয় পরিমাণে রাজ্যে পাওয়া যায় না। পাট-নামে ত্বর্ণতভ্ত হলেও- পাটকল-ফাট কাবাজ-আড়তদার চক্রের জন্য এর চাষী গ্রামবাঙলার রুষকের কাছে এখনও গলায় ফাসের মত | এসব সমগ্ঠার সমাধান ছুই চার বছরে" হবে নাঁ। তবে সমস্যার মোকাবিলায় শৈথিল্য করলেও চলবে না।

অল্প যূলধনে এবং অবিলম্বে যা পশ্চিমব্গবাসীর উত্পাদনমূলক কর্মসংস্থান করতে পারে তা হল ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প। এর যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তিবিদ্যার জন্য বিদেশের মুখাপেক্ষী হতে হয় না এবং পুজি বিনিয়োগের অত্যল্প কালের মধ্যে উৎপাদন শুরু হয়ে যায়। এর মধ্োখাদি গ্রামীণ শিল্প বাবদ পুজি পাওয়। যায় কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাঙ্ক থেকে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের সীমিত সম্পদের উপর চাপ না দিয়ে অবিলম্বে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে খাদি গ্রামীণ শিল্পের মাধ্যমে প্রয়োজনমত একটু সরকারী সংরক্ষণ পেলে অত্যল্প কালের মধ্যে এই শিঞ্পগুলি নিজের পায়ের উপর দাড়াতে পারে এবং বিশেষ করে গ্রামবাঙলার কোটি কোটি মাস্থষের হাতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ক্রয়শক্তি তুলে দিয়ে আজকের গ্রামাঞ্চলের এই প্রায়-দুর্তিক্ষ অবস্থার বদলে মোটা ভাত মোটা কাপড় পাবার অবস্থা নিয়ে আসতে পারে॥ পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণকামীর1 কথাটি ভেবে দেখুন

আফিং

না, সেই আফিংএর কথা আমার আলোচ্য নয়.যার মাত্রা একটু বেশ চড়ালে, কমলাকাস্তের মত পাঁকা নেশাখোরেরও মনে হত যে “মনুষ্যনকল ফল বিশেষ |” অথব। যার মান্রা চড়িয়ে কমলাকাস্তের জ্ঞাননেত্র ফুটত এবং বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের সামনে ভবের বাজার সুবিস্তৃত হয়ে উঠত কিংব। যার প্রপাদাৎ সপ্তমী পূজার দিন মুন্সয়ী চিন্ময়ী রূপ ধরে হিরগ্ময়ী বঙ্গভূমি হয়ে উঠতেন আমার আলোচ্য আফিংকে বরং সপ্তমী পুজার দিন কমলাকান্ত-সেবিত অহিফেনের ত্যান্টিথিসিস বল! যেতে পারে, যার পরিচয় প্রসন্ন গোয়ালিনীর আশ্রিত বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ মাত্র একবারই পেয়েছিলেন তার “পলিটিকৃস্‌” শীর্ষক জবানবন্দীতে।

কিন্ত রাজনীতির কথা পরে | প্রথমে আফিং-এর সর্পতে রচ্ছুত্রমকারী ( এর" বিপরীতট। নয় ) প্রভাবের কথ! খতিয়ে দেখা যাক

বন্ধুরা আমাকে বিদূষণকারী অপবাদ দিয়ে অভিযোগ করেন যে, বাঙালীর খেলাধূলাগ্রীতির এত সব জাজল্যমান প্রমাণ সত্বেও আমি তাদের ঘরকুণো বলি কিন্তু বন্ধুদের কি করে বোঝাই যে যদি বাইশজন বাঙালী মাঠে ফুটবল অথবা ক্রিকেট খেলেন তবে অস্তত বাইশ হাজার দর্শক বেশ কয়েক ঘণ্ট1 করে সময়, এবং টিকিটের জন্য অবিশ্বাস্ত রকমের মোট] টাকা ব্যয় করে সেই খেলা কেবল দেখেন। আর খেলার মাঠে যে মারপিট ভাঙচুর এবং এমনকি প্রাণাস্তকর ব্যাপারও ঘটে তা তে! উপরি পাওনা মাঝে মাঝে এই মারপিট ভাঙচুর পথে ছড়িয়ে পড়ে খেলার ব্যাপারে ধাদের আদে কোন আগ্রহ নেই সেইসব সাধারণ গৃহস্থের পক্ষেও বিপজ্জনক হয়ে দাড়ায় জাতিগতভাবে আফিং চড়িয়ে না থাকলে এমনটা হতে পারত ?

আরও আছে বাইশ হাজার বাঙালী যদি খেলার মাঠে আফিং-এর. মৌতাতে থাকেন, তাহলে অন্তত বাইশ লঞ্ষ ঘরে বসে রেডিও এবং ইদানীং টিভির দৌলতে সেই মোতাতের মৌজ উপভোগ করেন। জাতির যুবশক্তির সময় উদ্ধমের এজাতীয় অপচগ্নের হিসাব করলে-মস্তক বিঘৃপিত হয়। এর! জনক অফিস-কারখানা, স্কুল-কলেজ পালিয়ে এবং এমনকি কর্মস্থলে হাজরিটুকু মাত্র দিয়ে কাজের সময়ে “খেলা শোনা” অথব1:দ্িনের পর দিন তার আলোচনায়

:১৬০ বাঙল। বাঙালী

মাতা যে নৈতিকতার কোন্‌ স্তরের ব্যাপার তার কথাই বা কে ভাবছে? এই পরিমাণ কাজের সময়ের অপচয় রোগগ্রস্ত জাতীয় অর্থনীতিকে আরও কতটা গীড়িত করছে-_সে প্রশ্রেরই বা কে জবাব দেবে?

খেলাধূলা নিশ্চয় ভালে! কিন্তু তাকে অবলম্বন করে এই উন্মত্ততা কি অহিফেন-প্রভাবিত মস্তিষ্কের লক্ষণ নয়?

অতঃপর কমলাকান্তের “পলিটিক্ম্‌* অর্থাৎ একালের রাজনীতির কথা ষুগের ভাষায় প্রলিটারিয়েট সেই ব্রদ্ষিণ অন্ুযোগভরা আক্ষেপ করেছিলেন, “আমি রাজা, না খোশামুদে, না জুয়াচোর, না ভিক্ষুক, না সম্পাদক যে আমাকে পলিটিকৃস্‌ লিখিতে বলেন ? - কোথায় আমার এমন স্থুলবুদ্ধির চিহ্ন পাইলেন-*" আফিমের জন্ত আমি আপনার খোশাযোদ করিয়াছি বটে, কিন্তু তাই বলির! আমি এমন স্বার্থপর চাটুকার অগ্যাপি হই নাই যে.*** ইত্যাি ইত্যাদি তাবৎ, পলিটিক্সকে কমলাকান্ত সারমেয় বলীবর্দ ছুই ভাগে বিভক্ত করে তার বৈশিষ্ট্য উদাহরণ সহযোগে উপস্থাপিত করেছিলেন তবু বাঙালীর রাজনীতি কচ্চায়ন- স্গহ] উত্তরোত্তর বুদ্ধি পেয়েছে ছাড়। হাস পায়ণি

কমলাকান্তের সছুপদেশের কথা থাক সাম্প্রতিক কালে এবং বিশেষ করে ১৯৪৭ গ্রীপ্টাব্ষের পর থেকে অগ্যাবধি " রাজনীতির নীতিবিহীনতার ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত থাকা সত্বেও বাঙালীর মত রাজনীতির /অবৃসেশন অর্থাৎ বাতিক আর কারও মধ্যে দেখা যাবে না। শিক্ষা-দীক্ষা উত্সন্গে যাক, অর্থব্যবস্থা লাটে উঠে পেটের ভাতে টান পড়ুক, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে প্রস্থত হতে হতে কোণঠাস। হতে হোক এবং এষনকি নিজগৃহে পরবাপী হয়ে অস্তিত্বেরেই সঞ্ঘট উপস্থিত হোক--তবু বাঙালী রাজনীতির মত্ততা ছাড়ে না। একথার বড় প্রমাণ বাঙলা সংবাদপত্র রাজনীতি সেই গঙ্স্ুণড মর্দন করতে করতে ঘুৎকারকারী বিষুর এক অবতার জীবের মত ব্যক্তিদের কেচ্ছাকাহিনী আমাদের তাবৎ “জাতীয়” সংবাদপজে যেমন প্রাধান্য পায়, মান্ছষের গঠনধমী কাজকর্মের বিবরণ তার এক ভাগও স্থান পায় না। কোনও এফ বিখ্যাত ব্যক্তি সংবাদের ভাথ্তু প্রসঙ্গে বলেছিলেন, কুকুর মানুষকে কামড়ালে সংবাদ হয় না, মানুষ কুকুরকে কামড়ালে সংবাদ হয়। অতএব আমাদের সংবাদপত্রগুলি পরমানন্দে মানুষের কুকুরকে- কামড়ানো-রূপী বিকৃতির সংবাদের ভিয়েন বসিয়েছেন

তা বসান কিন্তু রাজনীতি বস্তুটি আসলে কি? এহল আর সবাইকে কহ্ই-এর গু'তায় ঠেলে সরিয়ে দিয়ে নিজে গদিটি দখল করা--এই নিন্দাস্ুচক

আফিং ১৬১

সংজ্ঞার্থ না হয় স্বীকার না-ই করলাম কিন্তু রাজনীতির সেবকরাও স্বীকার করবেন যে হচ্ছে জনসাধারণের কল্যাণার্থ রাষ্ট্রক্ষমতা করায়ত্ত তার সঞ্চালনের শাস্ত্র কিন্তু অন্তত ১৯৬৭ খ্রীস্টাব্ঙ থেকে আজ পর্যস্ত ডান বাম মধ্যপন্থী নিধিশেষে তাবৎ রাজনৈতিক দল নেতাদের দেশবাসী পালা করে সুযোগ দিয়েছে এবং সবাই সমানভাবে ব্যথ হয়েছে একই সময়ের মধ্যে সশস্ত্র শ্রেণীসংগ্রামের প্রবক্তারাও হাউই-এর মত জ্বলে উঠেই ফুরিয়ে গেছেন চোখের সামনে উদাহরণ থাক। সত্বেও রাজনীতি নিয়ে এত মাতামাতি করার যুক্তি কোথায়? রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পাবার পর মানুষের উন্নতিসাধন করব, এই কুযুক্তির বদলে এখনই নিজেদের চেষ্টায় যতটা পারি আত্মোন্নাতি প্রাততি- বেশীদের কল্যাণসাধন করি--এট1 কি বেশী কাজের কথা নয়? সরকারের উপর নিতর ন। করে জনসাধারণের মধ্যে অবরুদ্ধ গঠন-ক্ষমতাঁর শ্রোত মুক্ত করে দেওয়ার প্রয়াসে ব্রতী হওয়া কি অধিকতর বাস্তববাদী বুদ্ধির কথা নয়? কিন্তু রাজনীতির আফিং-এ বু'দ বাঙালীকে কথা বোঝানে। দায়।

বাঙালীর সাহিত্য, শিল্প, নাটক, চলচ্চিত্র_-সর্বব্রই কম-বেশী মাত্রায় আফিং-* এর প্রভাব ! কিন্তু আলোচনাকে আর দীর্ঘায়ত ন1] করে শেষ উদাহ্রণটি দিয়ে? বক্ত?্য সমাপ্ত করব হল ধর্মচর্চায় অূহফেনের প্রভাব

তবে গোড়াতেই বলে রাখি আমি কিন্তু মার্কসের বিখ্যাত উক্তি--ধর্ন জনসাধারণের আফিং-এতে বিশ্বাপী নই। আমি ঈশ্বরবিশ্বাসী এবং নিজের মত ধর্মনিষ্ঠ তবুও আজকের বাঙালীর ধর্মচর্চায় ষে আফংএর প্রভাব সুস্পষ্ট এট দেখার জন্য অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দরকার হয় ন]।

অলি-গলিতে ঈশ্বরের জীবন্ত অবতার বাবা দাদা মায়ের কথা এবং তাদের ভক্তদের সেইসব শ্রাচরণে অন্ধ আবেগে লুটোপুটি খাবার কাহিনী না৷ হয় ছেড়েই দিলাম সেসব ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু সব্জনীন পুজার নামে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেসব অসামাজিক কাজ হয় এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সবত্র স্বেচ্ছায় হোক অথবা অনিচ্ছায় বাঙালীকে যেমনভাবে তার সঙ্গে সহযোগিতা করতে হয় তা দেখে ব্যাপারটা আফিং-প্রভাবিত বলে সিদ্ধান্ত ক্র! ছাড়া আর কি বল। যায়?

এক-একটি পূজার জন্য মানুষের কাছ থেকে যে পরিমাণ জিজিয়া কর আদায় করে খরচ কর! হয় তার দ্বার! পশ্চিমবঙ্গের অর্থব্যবস্থাকে চাহ্ন৷ করার জন্য কয়টি কলকারখানা অথবা শিল্প-ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করা যেত তার হিসাব করার মত

বা.-১১

১৬২ বাউলা বাঙালী

জড়বাদী যদি না-ই হই, তবু সেই টাক! দিয়ে শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে এবং এমনকি পাড়ার অন্য পাড়ার গরীবদের জন্ত একখানি করে বস্ত্রের ব্যবস্থা করলে যে ধর্মকার্ধ হত--তার কথা মনে না এনে উপায়কি? প্রায় এক শতাব্দী হতে চলল বাঙালীর গর্ব রবীন্দ্রনাথের “কাঙালিনী” আমাদের পুজামণ্ডপের সামনে অপেক্ষা করছে; কিন্তু তার চোখের জল মুঁছয়ে তাকে নববস্ত্র পরাবার ব্যবস্থা বাঙালী এখনও করে উঠতে পারেনি

ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে আফিং-এর এই প্রভাবের বিকুদ্ধে সাম্প্রতিক কালে একটি মাত্র বলিষ্ঠ প্রতিবাদ শুনেছিলাম রাজ্যের সর্ববুহণ্ মার্কসবাদী দলের জনৈক প্রবীণ নেতার কণ্ঠে। কিন্তু তারই দলের অনুগামীর। যেভাবে পাড়ায় পাড়াক্স একই ভাবে সবজনীন পুজার পাণ্ড সাঁজেন এবং তারই দলের অন্যান্য নেতার! সেইসব পুজার উদ্বোধক অথব1 পৃষ্ঠপোষক হরে ভোট প্রাপ্তির ব্যবস্থা করে রাখেন তা দেখে মনে হয়-_শিরেই সর্পাধঘাত, ভাই তাগা বাধি কোথায়?

আন্দামানের বাঙালী

কলকাতা থেকে আন্দামানের প্রধান বন্দর শহর পোটব্রেয়ারের দূরত্ব সমুদ্রপথে ১২৯০ কিলোমিটারের কিছু বেশী। মাদ্রাজ বিশাখাপত্তনম থেকে পোর্টব্রেয়ারের দূরত্ব এর চেয়ে কিছু কম। কলকাতা, মাব্রাজ বিশাখাপত্তনম্-_ ভারতীয় যূল ভূখণ্ডের এই তিনটি বন্দর থেকেই পোটরব্রেয়ারের সঙ্গে জাহাজে নিয়মিত যোগাযোগ আছে উপরন্ত কলকাতা থেকে পোর্টব্রোরে যাতায়াতের বিশেষ একটি স্ববিধা আছে--সপ্তাহে ছুইবার ইত্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান চলাচল করে ইদাঁনীং।

ছোট-বড় যে ৩২১টি দ্বীপ নিয়ে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং যার দক্ষিণ-পূর্ব দিকের সর্বশেষ দ্বীপটি স্থমাত্রা থেকে মাত্র ৯* মাইল দুরে, তার সঙ্গে বাঙালীর যোগাযোগ কিন্তু খুব পুরাতন নয়। ভারতবর্ষের অন্যান্য অনেক অঞ্চলে ইংরেজ শাসকশক্তির পিছু পিছু তাদের সহায়কম্বূপ গিয়ে বাঙালীর! বসতিস্থাপন করেছিল, যদিও ইংরেজদের আসার অনেক পুর্ধ থেকেই ভারতের যূল ভূখণ্ডের এক এলাকা থেকে অপর এলাকায় নানা কারণে কিছু কিছু যাতায়াত ছিল। আন্দামানের কথ! কিন্তু পূথক এখানে বাঙালী সহ মূল তৃখণ্ডের ভারতবাসীদের যাতায়াত শুরুই হয় ইংরেজদের আগমনের পর।

ইংরেজদের আগমনের পুবে সাংস্কৃতিক দিক থেকে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারতবর্ষের অঙ্গ ছিল না দ্বীপপুঞ্জের আন্দামান অংশের আদিম বাসিন্দারা নিগ্রো বংশোদ্ভূত জনজাতির, সাংস্কৃতিক দিক থেকে যার! ইংরেজদের আগমনের সময় ভারতীয় মূল ভূখণ্ডের নদী-উপত্যকার বাসিন্দা হিন্দু মুসলমানদের থেকে কয়েক হাজার বছর পিছিয়ে ছিল। নিকোবরীরা তাদের থেকে ভিন্ন মঞ্গোলীয় গোষীর মানুষ এবং আন্দামানীদের তুলনায় তারা অপেক্ষাকৃত সভ্য ছিল এই অবস্থায় ইংরেজর! সর্বপ্রথম প্রশাসনিক দিক থেকে দ্বীপপুঞ্জের ভারতভুক্তি ঘটিয়ে এই এলাকার কাছে আধুনিক বিশ্ব জ্ঞান- বিজ্ঞানের দরজা! উন্মুক্ত করে। কাজে কাজেই ইংরেজদের আগমনের পূর্বে বাঙালী অথবা ভারতের অন্ত কোন প্রান্তের অধিবাসীদের আন্দামান-

১৬৪ বাঙলা বাঙালী

নিকোবরে আসার কথা ওঠে না।

ইংরেজের নৌশক্তির জন্য ছীপপুঞ্জের উপর তার প্রশাসনিক কর্তৃত্ব স্থাপিত, হলেও এখানে পরিকল্পিতভাবে বসতি স্থাপন শুরু হয় ১৮৫৭ গ্রপ্টাব্ষের পর সিপাহী বিদ্রোহের যেসব ছোট-বড় নায়কদের তদানীন্তন শাসকরা মূল ভূখণ্ডে রাখ সাম্রাজ্যের স্বার্থে বিপজ্জনক মনে করল, দেশবাশীর উপর তাদের প্রভাব হাসের জন্য তাদের এখানে দ্বীপান্তরে পাঠাতে মনস্থ করল। এইভাবে রচিত হল সেলুলার জেলের ভিত্তি। তারপর ক্রমশ কঠিন অপরাধী স্বাধীনতা-

গ্রামী-বিশেষ করে এর সশস্ত্র বিদ্রোহের নেতাদের এখানে নির্বাসনে

পাঠানোর প্রথা চালু হল যার জন্য সেলুলার জেল সাতটি ব্রিতল ওয়ার্ডের এক বিশাল বন্দীনিবাসে পরিণত হল। ত্রিশের দশকের পর ভারতীয় জনমতের চাপে ইংরেজ সরকার এখানে বন্দী পাঠানে। বন্ধ করে।

মূল ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে এত দূরে সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপে কয়েদীদের নির্বাসন দেওয়ায় তাদের উপর খবরদারীর ঝামেলা কম বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক কয়েদী নয়, এইরকম প্রতিকূল পরিবেশে এসে তাদের মধ্যে অনেকের মনোবল ভেঙে পড়ে। পালাবার পথও খোল। নেই তাদের সামনে কারণ ছোট-খাট নৌকায় সুদীর্ঘ সদুদ্রপথে পাড়ি দেওয়ার কথ। ভাবা আত্মঘাতী পরিকল্পন।। ইংরেজর] তাই সাধারণ কয়েদীদের দিয়ে দ্বীপপুঞ্জে বসতি স্থাপনের পরিকল্পন। করল মাপ তিনেক করেদীরা অন্থগত কিনা দেখে নিয়ে তাদের সেল থেকে বার করে জঙ্গল কেটে ক্ষেত-্খামার পথ-ঘাট তৈরীর কাজে লাগানো হত ।, অবশ্ঠ অস্বাস্থ্যকর জলহাওয়া, শক্রভাবাপন স্থানীয় অধিবাসী এবং বন্য প্রাণীদের, জন্য সে কাজও সহজপাধ্য ছিল না। বেশ কিছু কষেদীর প্রাণ যায় সেই প্রক্রিয়ায় যারা টিকে গেল, তারা বন্দীশালার জীবনের তুলনায় কিছুট? স্বাধীনত। উপভোগ করতে পারত মাসে তার] দশ টাক ভাতাও পেত যার. কিছুট| জমাতে পারলে মেয়াদের শেষে কিছু জমি চাষের উপকরণ সংগ্রহ করে স্থারী বাসিন্দা হবার পথে বাধ! ছিল না। কারা কর্তৃপক্ষ বন্দীদের চাল-চলন. কিছুদিন দেখে নিয়ে এমনকি তাদের স্ত্রী-পুত্রকন্তাদের নিয়ে আদারও অনুমতি. দিতেন কয়েদীদের মত তারাও কাজে লাগলে স্ত্রীরা মাসে পাঁচ টাকা ছেলেমেয়ের]! তিন টাকা হিসেবে ভাতা পেত।

দীর্ঘ মেয়াদের দণপ্রাঞ্থ কয়েদীদের মধ্যে অনেকেরই নিজ নিজ দেশে আধিক অবস্থা ভালে৷ ছিল না। তার উপর জেলে যাওয়ার জন্য সামাজিক.

আন্দামানের বাঙালী ১৬৫

অর্ধাদাহানি স্থতরাং বেশ কিছু কয়েদীর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তারা দেশে ফেরার বদলে এখানেই স্থায়ীভাবে থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। যারা পরিবার আনতে পারল না, এখানে সমাজ ব1! জাতের ভয় নেই বলে ঘর রাধার জন্য যার সঙ্গে বনিবনা হল, তাকেই জীবনসঙ্গিনী করল এদের বংশধরদেরই “লোকাল” বলা হয়।

অবশ্ত এইভাবেও এযাবৎ মোট ৩৮টির বেশী দ্বীপে জনবসতি নেই। এর মধ্যে কয়েকটি দ্বীপে কেবল আন্দামানী অথবা নিকোবরীদের বাস, যেখানে সভ্য মানুষদের বসবাস না তারা পছন্দ করে এবং না পরকার অনুমোদন করে ভূখণ্ডের শতকরা ১* ভাগ মাত্র জনবসতির উপযুক্ত এবং শতকরা ৭৫ ভাগে অরণ্য যা ছ্বীপপুণ্রের অর্থব্যবস্থার বৃহত্তম সম্পদ

"২ |

«লোকালশ্ৰের মধ্যে বাঙালী কিছু থাকলেও তাদের মধ্যে হিন্দী, তামিল মালায়লম্ভাষাঁদেরই প্রাধান্য

কিন্তু ১৯৭১ খ্রীস্টাব্দের জনগণনার হিসাবে দেখা যাম্ন যে মোট লক্ষ ১৫ হাজার (বর্তমানে সংখ্যা লক্ষের মত হবে বলে অনুমান করা হয়) অধিবাসীর মধ্যে বাঙলাভাষীরা সংখ্যায় ২৮ হাজারেরও কিছু দেশী হয়ে (বর্তমান সংখ্যা ৩৫ থেকে ৪” হাজার বলে অন্থমিত ) একক সংখ্যাগরিষ্ঠ এর পর স্থান হিন্দী (১৮৪৯৯), নিকোবরী (১৭৯৫৫) তামিল ( ১৪৫১৮ ) মালায়লম্‌ ( ১৩৯৫৩ ) ভাষার

বর্তমানে বাঙালীদের সংখ্যাবুদ্ধির একক কারণ স্বাধীনতার পর প্রথমে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় তারপর ১৯৪৯ খ্রীস্টাব্খ থেকে কয়েক বছর সরকারী পরিকল্পনার অঙ্গ হিসাবে এখানে বাঙালী উদ্বাত্তের পুনবাসন। এই কারণে ১৯৬১ ১৯৭১ খ্রীন্টাব্দের জনগণনায় এখানকার জনসংখ্যায় অস্বাভাবিক বুদ্ধি-_যথাক্রমে শতকরা ১৫১৯ ৮১১৭ ভাগ যাই হোক, বাঙালীর সংখ্যা ওখানে আরও অনেক বাড়তে পারঙ। কিন্তু বাড়ল না পশ্চিমবঙ্গেরই কয়েকটি বামপন্থী রাজনৈতিক দল কর্তৃক ওখানে উদ্বাস্ত পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে 'আন্দোলন করার জন্য অনেক উদ্বাস্ত তার দ্বার! প্রভাবিত হয়ে এমন উ্ধরাশক্তি

১৬৬ বাঙলা বাঙালী

বিশিষ্ট অহল্যাভূমির আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করলেন এখন ওখানে নৃতন করে বাঙালী উদ্ধাত্ত পাঠানে। সহজ নয় অমৃতবাজার পত্রিকার একটি সম্পাদকীয়কে মূলধন করে ভূতপূর্ব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্র কে. আর. গণেশকে সামনে রেখে (তিনি অবশ্ঠ তখন মন্ত্রী নন, কমিউনিস্ট পার্টির উঠতি নেতা |) “লোকালঙ্রা (যাদের অধিকাংশ অবাঁঙালী ) দ্বীপপুঞ্জে আর বাঙালী পাঠাবার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন।

দীর্ঘদিন পূর্বেকার সেই আন্দোলনের রেশ এখনও আন্দামান-নিকোবর প্রশাসনের উপর রয়ে গেছে বলে মনে হয়। তাই কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলের ২৪ হাজারের মত সরকারী কর্মচারীদের মধ বাঙালীদের সংখ্য। আড়াই থেকে তিন হাজারের বেশী নয়। আর উচ্চ পদে তো (১৯৭১ খ্রীস্টাব্বের সিভিল লিস্ট অন্সারে ) বাঙালীর সংখ্যা খুবই কম। স্থানীয় বাঙালীদের কেউ কেউ মনে করেন যে বাঙালীদের মধ্যে বামপন্থী রাজনীতির প্রাবল্য থাকায় দিল্লী থেকে আগত প্রশাসনের কর্ণধারদের কাছে বাঙালীর। কাম্য অধস্তন কর্মচারী নন |

বাঙালীদের বসতি এখানে প্রধানত দক্ষিণ আন্দামানের গ্রামাঞ্চল, লিটল আন্দামান আরও কয়েকটি দ্বীপে এদের প্রধান পেশা কৃষি। সরকারের কাছ থেকে থেকে একর কৃষিযোগ্য জমি তার সাজসরঞ্জাম পাবার প্রাতি- শ্রতিতে এ'র৷ এখানে আপেন তবে সরকারী প্রশাসনের দীর্ঘস্থত্রিতার জন্য কেউ কেউ এখনও তা! পাননি জঙ্গল কেটে, শিকড়-বাকড় পরিষ্কার করে সেচাবহীন এলাকাতে একফসলী জমি তৈরী করে মোটা ভাত-কাপড়ের সংস্থান করতে বাঙালী উদ্বাস্তদের যে কঠোর পরিশ্রম ছুর্ঘয় সাহসের পরিচয দিতে হয়েছে (সে সময়ে অনেককে ঘটি-বাঁটি বিক্রি করে প্রাণধারণ করতে হয়েছিল ) ত৷ সমুদ্রপারের বাঙালীদের ইতিহাসে স্বর্ণীক্ষরে লিখিত হবার মত বিবরণ।

নিজেদের গ্রামে ছোটখাট দোকান চালানে। ছাড়া আর যে পেশার মাধ্যমে অনেক বাঙালী ওখানে জীবিক। নির্বাহ করেন ত! হল শিক্ষকতা "ওখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির শতকর। ৮* ভাগ ছাত্রই হল বাঙালী এবং সেই কারণে অধিকাংশ শিক্ষকও তাদের সমাজ থেকে তবে মিশ্র বসতির জন্য বাঙালী ছেলের! প্রাথমিক বা মাধ্যমিক সর্বস্তরে সর্ধত্রই যে মাতৃভাষার মাধ্যমে পড়ার স্থযোগ পাচ্ছে তা নয়। (গ্রামাঞ্চলের কথা বলাই বাহুলা, এমন কি থাস পোটরেয়ার শহরের বুকে প্রতিষ্ঠিত “সেবা নিকেতনের” সব বাঙালী শিশু বাউল বিষ্ভালয়ে যেতে পারে না। যাই হোক, বাঙালী ছাত্রদের জন্ত এক এক করে

আন্দামানের বাঙালী ১৬৭

পাচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে এবং তার অনেক শিক্ষকও বাঙালী তবে যে একটিমাত্র কলেজ, আইনের কৃটকচালিতে কলকাতা! বিশ্ববিগ্তালয় তাকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় ত1 পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এবং তাই অধ্যাপক মহলে বাঙালীদের সংখ্য। বেশ নয়।

একমাত্র শহর বন্দর পোর্টব্রেয়ারে হাজার আড়াই বাঙালী সরকারী চাকুরিয়৷ ছাড়া ব্যবসায়ী বাঙালীর সংখ্যা আঙ্গুলে গোনার মত। এখানকার পুরাতন-নৃতন ছুটি বাজারই সমৃদ্ধ এবং তাতে বেশ বড় বড় দোকান-পসার রয়েছে কিন্তু মিষ্টির দোকান থেকে শুরু করে পরিবহনের ব্যবসায়ে স্থপ্রতিষ্ঠিত একজন বাঙালী ব্যবসায়ী ছাড়া আর কোন বাঙালীর নাম বড় বা মাঝারি ব্যবসায়ী হিসাবে শুনলাম না। সাময়িক পত্রিকার এজেন্সী জনৈক বাঙালীর তবে কোন বই-এর দোকান নেই এখানে, যদিও অক্ষরজ্ঞানসম্পন্নের হার মুল ভূখণ্ড থেকে অনেক বেশী- শতকরা ৪৩-৫৯ ভাগ। বাঙালী আইনজীবী মাত্র একজন একমাত্র বেসরকারী ইংরাজী দৈনিক "আন্দামান টাইমস এবং তার সাপ্তাহিক সংস্করণের সম্পাদক স্বত্বাধিকারী হলেন শ্রীসমর সোম, যিনি সাংবাদিকতা ছাড়াও নানারকম জনসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত লোকসভার একমাত্র সদন্ত শ্রীমনোরঞ্জন ভক্ত বিগত ছুটি সাধারণ নির্বাচনেই জয়ী

হয়েছেন

আন্দামানের বাঙালীদের অতীত বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে জানার পর স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে--তাদের ভবিষ্যৎ কি? ভবিষ্যৎ, অর্থাৎ বাঙালী হিসাবে ভবিষ্তুৎ।

প্রশ্নের মধ্যে কোন সক্কীর্ণ প্রাদেশিকতাবাদ আবিষ্কার করার চেষ্টার কারণ নেই। বাঙালীত্বের ভিত্তিভূমির উপর বিশ্বপথিক হবার সৌধ গড়ার বাধ! নেই। বিশ্বের যে-কোন কোণে যে মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছে তিনি বিশ্বপথিক হয়েছেন নিজ অঞ্চলের ভাষা-সংস্কৃতিকে অবলদ্বন করেই বাঙালীদের মধ্যেও এযুগে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, শ্রীরামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ রবীন্দ্রনাথ থেকে শ্তরু করে অগ্যাবধি যেসব ছোটবড় মনীষী নিজ প্রতিভাবলে দেশবিদেশে বিখ্যাত

১৬৮ বাঙল! বাঙালী

হয়েছেন তারা কেউ বাঙালীত্বকে অন্বীকার করেননি যে-কোন বিকশিত সংস্কৃতির মত বাঙালীর সংস্কৃতিতেও বিশ্বমানব হবার উপাদান আছে স্তরাং বাঙালীয়ানার আত্মীকরণ করেই আমরা তার উর্ধে উঠতে পারি বল! বাহুল্য আন্বামানের বাঙালীদের সম্বন্ধেও এই কথা খাটে এবং তাই সঙ্গত কারণেই পুর্বোক্ত প্রশ্ন উঠতে পারে বাঙালীত্বের উপাদান হল বঙ্গনংস্কৃতি এর বাহ্য উপকরণ ভাষা, সাহিত্য, সঙ্গীত, নাট কাভিনয় প্রভৃতি হলেও এর প্রচ্ছন্ন এবং অপেক্ষাকৃত অধিক গুরুত্বপুর্ণ অঙ্গ হল একট! বিশিষ্ট ধ্যান-ধারণাভিত্তিক বাঙালী মানসিকতা বলা বাহুল্য এই ছুই ধরণের উপকরণ পরম্পর থেকে জীবনরপ সংগ্রহ করে। পূর্বোক্ত মানদণ্ডে নিরিখে আন্দামানের বাঙালীদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অনুমান করার প্রয়াস কর] যেতে পারে সংস্কৃতি-চর্ায় এবং কোন বিশেষ সংস্কৃতি নিজেদের মধ্যে ধরে রেখে তাকে আরও বিকশিত করার ব্যাপারে মধ্যবিত্ত সমাজের একটা বড় ভূমিকা আছে। কিন্ধ ত্রিতল-বিশিষ্ট আন্দামানের বাঙালী সমাজে একটি গোষ্ঠী বাঙালীত্ব সম্বদ্ধে আদে সচেতন নয়, অপরটি মূলত আত্মকেক্দরিক_-ওখানকার বৃহত্তর বাঙালী সমাজের প্রতি কর্তব্য পালনে সেই গোষ্ঠীর বিশেষ আগ্রহ নেই এবং তৃতীয়টির £ভিতর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্ম হতে এখন কিছু দেরী প্রথম গোঠীত্র বাঙালী এখানকার স্থায়ী বাশিন্দা হলেও বাঙাঁলীত্ব বজায় রাখার প্রতি এদের তেমন কোন আগ্রহ নেই। তবে এ'র! সংখ্যাল্প। এদের মধ্যে “লোকালগ্রা! ছাড়াও ১৯৪৯ শ্রীন্টান্দ থেকে পুনবাঁসন্পাপ্ব উদ্বাত্রাও আছেন শিক্ষা-সংস্কৃতির নাঁন। স্তরের উদ্বাস্তর! এখানে এসেছিলেন ধারা এই স্তরের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিলেন, নৃতন পরিবেশে এসে তাদের অনেকের সামাজিক বন্ধন ক্ষীণ হয়ে পড়ল। কারও কারও ক্ষেত্রে কিঞ্িৎ আথিক সচ্ছলতার পরই সহজলভ্য সুরা তার সঙ্গে সম্পকিত বৈধ-অবৈধ নারীসংসর্গ সহ অন্যবিধ ব্যপন মস্তক বিঘৃপিত করে দেবার কারণ হয়ে পড়ল। এদের পরিবারে তাই ভিন্নভাষাভাষী বা ভিন্নধর্ষের (মুসলমান খ্রীস্টান ) জীবনসঙ্গী অথবা সঙ্ষিনীর আবিভাব ঘটছে। এসব বিবাহ কেবল তরুণ-তরুণীদের প্রণয়ঘটিত উদ্বাহই নয়, অভিভাবকদের সম্বন্ধ করে দেওয়া! বিবাহও আছে কালক্রমে এইসব বর্ণসঙ্করেরা “লোকালগদের মত নৃতন এক আন্দামানী জনগোর্ঠীর প্রবর্তন করতে পারেন কারণ আন্দামানের মূল বাঙালী সমাজে

আন্দামানের বাঙালী ১৬৯

্রকাশ্তভাবে না হলেও প্রচ্ছন্নভাবে তার৷ অপাউ.ক্তেয় হয়ে যাবেন। স্বতরাং এ'দের সম্বন্ধে খুব বেশী৷ ভরস! রাখার কারণ নেই বোধহয়

ছিতীয় গোষ্ঠী, ধাদের যূলত আত্মকেন্দ্রিক আখ্যা দিয়েছি তার! প্রধানত পোরটব্রেয়ার আর দুই-একটি জনপদের বাসিন্দা যূলত সরকারী চাকুরিয়া এক-আধজন ব্যবসায়ী এ'র! বদলি হলেই অথব1 প্রয়োজন পড়লে ব্যবস। গুটিয়ে মূল ভূখণ্ডে ফিরে যাবেন যদিও এর মোটামুটি সচ্ছল অবস্থার মানুষ এবং এদের মধ্যে এমন বহুসংখ্যক কৃষ্টিসম্পন্ন মধ্যবিত্ত আছেন ধারা ইচ্ছা করলে আন্দামানের গ্রামাঞ্চলের বাঙালীদের সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব দিতে পারেন তবু কদাচিৎ এর সেই দারিত্ব পালন করেন। এদের মধ্যে রাজনীতিসচেতন বামপন্থী ধারা তার নিজেদের মাইনে-ভাতা৷ বাড়ানোর আন্দোলন নিয়েই মত্ত ধারা নিজেদের নিছক সংস্কৃতিচর্চাকারী বলে মনে করেন তাদের দৌড়ও “অতুল স্থাতি সমিতি” নামক বাঙালীদের একমাত্র সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত যেখানে তাস, দাবা! ক্যারাম খেল! হয়, কখনও-সখনও নাটকাভিনয়ও হয় এবং পাঠাগার থেকে কিছু বই-এর লেন-দেনও হয়। কিন্তু পর্যস্ত। গ্রামাঞ্চল অন্ান্য দ্বীপে বসবাঁসকারী বাঙালীদের সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব নেবার জন্য পোটর্রেয়ারে একটি বাঙলা বই-এর দোকান চালানে। অথবা! কোন বাঙলা পত্রিকার প্রকাশন কিংব! যাত্রা-নাটক-কীর্তনের দল সংগঠিত করে গ্রামাঞ্চলে যাবার কথা এরা কেউ ভাবেন বলে শুনলাম না। পোটর্রেয়ারে ছুটি প্রেক্ষাগৃহে নিয়মিত চলচ্চিত্র দেখানো হয়। কিন্তু ১৯৭৭ হীস্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী সেখানে সমগ্র বছরে মাত্র পাঁচবার বাউলা ছবি দেখানো হয়। ব্যাপারেও পোটব্রেয়ারের মধ্যবিত্ত বাঙালীর কিছু করার নেই অনুরূপভাবে এখানকার একমান্তর বেতার কেক্জের বেচারী বাঙলা ভাষার জন্য বরাদ্দ সপ্তাহে মাত্র পৌনে ছুই ঘণ্টা সময়। আর বেতার কর্তৃপক্ষের এমন ব্যবস্থা যে সাধারণ সেটে (গ্রামাঞ্চলের গরীব বাঙালীর এইরকম সেট কিনতেই হিমসিম খাঁন ) কলকাতা কেন্দ্রের প্রোগ্রাম শোনা যায় না। বরং আন্দামান থেকে ঢাকার প্রোগ্রাম শোনা! সহজ যাই হোক, ব্যাপারের প্রতিবিধানের জন্য ওখানকার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালী নিয়মিত আন্দোলন করছেন বলে শুনিনি গ্রামাঞ্চলের গরীব বাঙালীদের বাউলা বই-এর পাঠতৃষ্ণ মেটাবার জন্য ভ্রাম্যমাণ গ্রস্থাগার স্থাপন করার পরিকল্পনা পোর্টব্রেয়ারের কোন বাঙালীর আছে বলে শুনিনি |

এই প্রসঙ্গে পোর্টব্রেয়ারের তামিল, মালায়ালম্‌ অথবা কন্ড়ভাষীদের

১৭৯ | বাউল! বাঙালী

সাংস্কৃতিক কার্ধকলাপের তুলনা সহজেই এসে পড়ে এসব ভাষার অধিবাসীরা সংখ্যায় বাঙালীদের তুলনায় কম হলেও নিজ: নিজ প্রদেশের মানুষদের জন্য সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়েছেন শিখদের গুরুদ্বারাও একই কাজ করে। এই- সব সংগঠনের সাহায্যে ছীপপুঞ্জে নিজ নিজ ভাষার অধিবাসীদের এনে কাজকর্মের স্থবিধা করে দিয়ে সংখ্যাবৃদ্ধির বিধিবদ্ধ প্রচেষ্টা চলেছে দক্ষিণ ভারতীয়র| নিজেদের এবং শুনলাম স্ব স্ব রাজ্য সরকারের আথিক অন্ুদানে এই কাজ সুভাবে করছে। শিখরা কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য পাচ্ছেন সৈম্যবাহিনীর ভূতপূর্ব কর্মী হিসাবে গ্রেট নিকোবরের ক্যাম্বেল বে 'এলাকায় বসতি স্থাপন করার জন্য জনৈক বিশিষ্ট বাঙালী ক্ষোভ সহকারে বললেন যে বাঙালী উদ্বাস্তদের পুনর্বাসনের জন্য যেখানে পরিবার পিছু আড়াই তিন হাজার টাকাও বরাদ্দ করা হয়নি সেখানে ক্যান্বেল বে-র পুনর্বাসনে পরিবার পিছু ৫০-৫? হাজার টাকা খরচ হচ্ছে এবং কোন এক অজ্ঞাত কারণে বাঙালী একজণএ নেই।

কিন্তু সে প্রসঙ্গ থাক। কথা হচ্ছিল আন্দামানের বাঙালীর নিজেদের প্রয়াসে বাঙালী থাকার প্রচেষ্টা সম্বন্ধে

তৃতীয় গোষ্ঠীর বাঙালী ধারা আন্দামানের গ্রামাঞ্চল অথবা বিচ্ছিন্ন ছীপের অধিবাসী এবং ধাদের পেশা প্রধানত কৃষি, দোকানদারী অথবা] সডক নির্মাণ বা জঙ্গলে কাঠ কাটার কাজ ধার। ওখানকার বাঙালীদের মধ্যে সংখ্যাগরি্ তারাই আন্দামানের বাঙালীদের ভবিষ্যৎ দক্ষিণ আন্দামানের ফেরারগঞ্জের এক অনুষ্ঠানে লক্ষ্য করলাম পুরুষদের সঙ্গে নানা বয়মের মহিলারাও শ্রোতা এসব মহিলাদের প্রায় সবাই বাঙালী তাখিল, হিন্দী মালায়ালম্ভাষীদের ব্সতি ধারেকাছে থাকলেও এবং তাদের পুকুষ সমাজের প্রতিনিধিরা সভায় যোগদান করলেও তাদের মহিলারা প্রায় প্রতিনিধিত্ববিহীন উপস্থিত মহিলার! আদে৷ উচ্চশিক্ষিতা ছিলেন ন1 বটে কিন্ত তাদের চলনে-বলনে, সাজে-পোশাকে বাঙালী নারী-সমাজের বৈশিষ্র্-_-অহেতুক লজ্জাবজিত অথচ শালীনতাযুক্ত ভাব স্পষ্ট। অকুগ্ভাবে তাঁরা সভায় গাইলেন, অপেক্ষাকৃত ছোটর] নাচলও। খবর নিলাম হারমোনিয়াম সহযোগে নিয়মিত বাঙল। গানের চর্চার আসর অনেক গ্রামেই আছে। ওখানকার মাটি খোলা তৈরী করার অনুপযুক্ত, এছাড়া “খষি'রাও নেই যে খোল] ছাইবে স্থৃতরাং অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে পশ্চিম। ঢোলকের সঙ্গে সঙ্গত করেই গ্রামাঞ্চলে কীর্তন গাওয়া হয়। দুর্গা পাজর

রি

আন্দামানের বাঙালী ১৭১

সময়ে অনেক গ্রামের বাঙালীর থিয়েটার-যাজাও করেন ছুর্গা, কালী, সরম্বতী. পূজার অনুষ্ঠান যথাসম্ভব বাংলার গ্রাম্য পরিবেশের মধ্যে হয়-_ মাইক্রোফোনের দিকৃ্দিগস্ত প্রকম্পিতকারী হিন্দী ফিল্সী গানা, টুইস্ট নাচ এখনও পুজানুষ্টান গুলিকে দূষিত করতে সক্ষম হয়নি

'এই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সামাজিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে তার কথাও বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে বাঙালী শ্রীমনোরঞ্জন ভক্ত সঙ্গত কারণেই লোকসভার সদন্য নির্ধাচিত হয়েছেন তিনি গ্রামের কৃষ্জীবী বাঙালী উদ্বাত্তদেরই একজন বিভিন্ন ভাষার আদিবাসীদের নিয়ে গঠিত গ্রাম অঞ্চল পঞ্চায়েতের অনেক নিধাচিত প্রধান, উপপ্রধান সদস্য বাঙালীর সভা-সমিতি পরিচালনার সময় অপরাপর ভাষার অধিবাসীদের নেতৃত্ব দিতে স্বতঃপ্রবুত্তভাবে হিন্দীতে (হোক না ভা প্টুটি কুটি”) বক্তা দেন ! আন্দামানে যে নৃতন সমাজ গড়ে উঠছে প্রশাসনের হিন্দীয়ানা পরিবেশের তামিল- মালায়ালমের চাপ সত্বেও এই বাঙালীরা তার মধ্যে আপন বৈশিষ্ট্যে ভাম্বর এক যোগ্য স্থান অধিকার করার দিকে শনৈঃ শনৈঃ এগোচ্ছেন

বাঙল। বৃই, পত্র-পত্রিকা এবং বাঙালী সংস্কির বিকাশের সহায়ক অন্যান্য উপকরণ অনুষ্ঠানের জন্য তীব্র পিপাসা সমুদ্পারের এঁসব বাঙালীর বঙ্গসংস্কাতিপ্রেমীদের জন্য বড় একটা কর্মক্ষেত্র অপেক্ষা করছে ওখানে

রাঢ়বঙ্গের ইতিহাসের অমূল্য উপাদান

অধিকাংশ সম্পদের কেন্দ্রীকরণ করে কলকাতা কেবল আথিক দৃষ্টিকোণ থেকেই গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গের শ্রহীনতার কারণ হয়নি, সাংস্কৃতিক দিক থেকেও রাজধানী গ্রাম-বঙ্গের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য পরিদৃশ্তমান সত্য নৃতন করে উপলব্ধ হল “পশ্চিম রাঢ় তথা বীকুড়া সংস্কৃতি" গ্রন্থটি পাঠ করার সময়ে

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষত্-এর বিষু্পুর শাখার মিউজিয়াম, পুঁথি সংগ্রহ গ্রশ্থাগার দেখার সৌভাগ্য ধাদের হয়েছে, তার] এর প্রাণ যানিকলাল সিংহ মহাশয়ের সংস্কৃতি-কর্মের নিষ্ঠা দেখে অভিভূত হয়েছেন। স্বদেশের ইতিহাস, শিল্প-সংস্কৃতি সাহিত্যের প্রততি কী অপরিসীম অন্্রক্তি থাকলে প্রায় একক প্রচেষ্টায় তিলে তিলে তিলোত্তমা স্গ্ির মত বিঞ্ুপুরের গর্ব সাহিত্য পরিষ্-এর এঁ কেন্দ্রের মত পুরাচ্চার পীঠস্থল গড়া যায়, তা বুঝতে হলে মানিকবাবুর কীতি স্বচক্ষে দেখতে হয়।

কিন্ত সংগঠক কর্মী মানিকলাল সিংহের কথা প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় নয়। তাই সাহিত্য পরিষৎ্-এর কেন্দ্রের প্রসঙ্গ মূলতবী রেখে গ্রন্থ-প্রসঙ্গে আসা যাক মানিকবাবুর ইতিহাস-গবেষণাও যে কত মৌলিক এবং কী পরিমাণ গভীরমূল তার নিদর্শন সমালোচ্য গ্রন্থটি পরের মুখের ঝাল খেয়ে অর্থাৎ এই গ্রন্থ গ্রন্থ থেকে কিছু কিছু নিয়ে ভালে ছাপা বাধাই-এর দৌলতে বনু বাউলা গ্রস্থকার অনেকবিধ পুরস্কার, পারিতোষিক অথবা জাতীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন নানা পত্র-পত্রিকায় সেইসব পল্লবগ্রাহী গ্রন্থকারদের সম্বন্ধে ধন্থা ধন্য পড়ে গেছে কিন্ত তার্দের তুলনায় শতগুণ প্রাতিভাশালী এবং বঙ্গের প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে বিরল সংখ/ক মৌলিক গবেষণাকারীদের অন্যতম মানিকলাল সিংহ মহাশয়ের বর্তমান গ্রন্থটির প্রতি ন্ুধীসমাজের দৃষ্টি এখনও তেমনভাবে আকষ্িত হয়নি__এইটাই ক্ষোভের বিষয় এবং এর যূল কারণের প্রতি প্রথমেই

* পশ্চিম রাঢ় তথা বীকুড়া সংস্কৃতি--মানিকলাল মিংহ £ বঙ্গীয় সাহিতা পরিষণ্ বিষ্ু্পুর, বাকুড়া

রাঢ়বঙ্গের ইতিহাসের অমূল্য উপাদান ১৭৩

ইঙ্গিত কর! হয়েছে-_মানিকবাবু কলকাতার বাষিন্দা নন অথবা কলকাতার যে- সব সংস্কতি-ক্মীদের হাতে প্রচারের তাবৎ মাধ্যম তাদের পরিমগ্ুলে মানিকবাবু ঘোরাফেরা করেন না। মাত্রাতিরিক্ত কলকাতী-কেন্দ্রিকতা বাঙলা শিল্প- সাহিত্য-সংস্কৃতির পক্ষে আদে) শুভ নয়।

গ্রস্থের নিবেদনে লেখক লিখেছেন, ****ম্ুড়ি কুড়ানো! আমার পেশা আর গ্রামে গ্রামে ঘুরিয়। বেড়ানো আমার নেশ1 সুদীর্ঘ চল্লিশ বৎসর ধরিয়৷ আমি বাকুড়ার গ্রামগুলিতে ঘুরিয়াছি, নানান্‌ প্রত্ববস্তর অনুসন্ধান করিয়াছি, সংগ্রহ করিয়াছি এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষণ বিষুপুর শাখার ভাগ্ডারে সংরক্ষণ করিয়াছি 1”

গ্রন্থের নাম এবং ভুমিকার উদ্ধত উপরিউক্ত অংশের সাহায্যে গ্রন্থের বিষয়বস্তর পরিধিনির্ণয় করা সহজ হয়ে ওঠে অর্থাৎ প্রধানত পশ্চিম রা বা বাকুড়া জেলার প্রাচীন ইতিহাস সংস্কৃতিই তার গবেষণা আলোচনায় বিষয়বস্ত। আর পূর্বেই যেমন বল৷ হয়েছে, আলোচনা পারমিউটেশান- কথ্িনেশনের প্রক্রিয়া নয়, অথবা অধ্যাপকস্থলভ উদ্ধৃতি ফুটনোট-কণ্টকিতও নয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, যোগেশচন্দ্র বিদ্যানিধি, অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, দীনেশনন্দ্র সেন, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মলকুমার বস্থর পণাঙ্ক অন্থসারী মানিকবাবুর তথ্যসংগ্রহ সরেজমিনে-_-বীকুড়ার হাট-মাঠ-ঘাট-গ্রাম থেকে

সংগৃহীত এইঞ্ব তথ্যকে মানিকবাবু এই ক্ষেত্রের পূর্বস্থরীদের বিবরণের সঙ্গে তুলন। বিশ্লেষণ করেছেন এবং তারপর নিজ সিদ্ধাস্তে উপনীত হয়েছেন ১৮৬৭ খ্রীষ্টান্ের ভি. বল থেকে শুরু কবে ভি. ডি. কৃষ্ণন্থামী, ডি- সেন, হারাণচন্দ্র চাকলাদার, বি. বি. লাল, পরেশচন্দ্র দাশগ্প্ত গ্রমুখ প্রতুতত্ব গবেষকদের প্রতিবেদন তিনি যেমন বিগ্লেষণ করেছেন, তেমনি বিষয়ের চিরায়ত গবেষক [.. 9. [68106%, 13. £৯, 700600, 7110165 0.8. 111161 প্রমুখের নীতি- নির্ধারক অভিমতও তার বিশ্লেষণে যথাযোগ্য মর্ধাদ1 পেয়েছে এইখানেই তার মৌলিকতা, এইখানেই তীর বৈশিষ্ট্য

প্রথম প্রবন্ধটি “প্রাগৈতিহাসিক পর সংক্রান্ত এই পবে বীকুড়া জেলায় এযাবৎ আবিষ্কৃত প্রত্বাশ্ম, নবাশ্ম, আদি প্রস্তরযুগ ইত্যাদি কালের প্রাগৈতিহাসিক

১৭৪ বাঙলা বাঙালী

নিদর্শনের উল্লেখ করে সেইসবের এঁতিহাসিক মুল্যায়ন করার প্রয়াস করেছেন, এবং তার এই প্রয়াস যে বিজ্ঞানদৃষ্টিচালিত তার নিদর্শন তার মন্তব্যের জিজ্ঞানু মানসিকতা এর একটি উদাহরণ দিচ্ছি £

“ক্ষুদ্রাশ্মর আমুধগুলির সাহায্য হাড়, হরিণের শিং, হাতির দাত, কাঠ ইত্যাদি হইতে তীরের ফলা, স্থচালো হাড়ের হাতিয়ার, স্তীক্ষ বর্শাফলক, হারপুণ ইত্যাদি শিকারোপযোগী হাতিয়ারগুলি নিমিত হইত। ক্ষুদ্রাশ্মর আফুধের সাহায্যে প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ নানাবধপ শিল্পকার্ধ করিতেও সক্ষম হইত কিন্ত শুধুমা ক্ষুত্রাশ্মরের সাহায্যে শিকার করা সম্ভব হইত বলিয়া মনে করা যায় না ভাই বীকুডা জেলার প্ররত্বাশ্মর, নবাশ্মর, তামাশ্মর আয়ুধ ক্ষেত্রগালি হইতে এত দুরবর্তী দে-জুডি এবং মনোহর গ্রামের আদিম মানব গোষ্ঠীগুলির জীবিকা অজন সম্বন্ধে প্রশ্ন উঠে। তবে কি সেই সুদূর অতীত কালেও বৃত্তি বিভাগ এবং বিনিময় স্থরু হইয়াছিল? প্রশ্নের উত্তর হয়তো আজই এত সহজে দেওয়া! সম্ভব নয়। আরও ব্যাপকতর অনুসন্ধান আবিষ্কারের পরে সম্বন্ধে সুম্পষ্টভাবে জান। থাইবে |” (পৃ ২৩)

কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হুবার পূর্বে এইজাতীয় বিজ্ঞানীগ্ুলভ সংশয়বাদ মানিকবাবুর রচনায় প্রায়ই নজরে পড়ে

প্রত্বতত্বনির্ভর অনুরূপ দ্বিতীয় রচনাটি “ডিহর পরিমণ্ডল” সংক্রান্ত মন্ল- রাজাদের রাজধানী বিষুপুরের তিন মাইল উত্তরে দ্বারকেশ্বর নদের তীরবর্তী & নামের গ্রাম এবং সংলগ্ন আরও সাত-আটটি গ্রাম নিয়ে এই পরিমগ্ডল যেখানে জেলার প্রাগৈতিহাসিক যুগের বহুবিধ নিদর্শন পাওয়া গেছে। এঁ এলাকায় এযাবৎ প্রাপ্ত নিদর্শনগুলির পরীক্ষা বিশ্লেষণের পর গ্রন্থকার যেসব সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, তার কিছু কিছু উদ্ধৃতি এখানে দেওয়া হচ্ছে £

“-..প্রাগেতিহাসিক ঘুগে ডিহরে বসবাসকারী কোন কোন গোষ্ঠী মুৎপান্রের গায়ে আচড় কাটিয়া বুষ্টি, ঢেউ, সারিবদ্ধ ঢেউ (নদী বা জলাশয় ), হুর্য, পাখী, ভীরের ফল। ইত্যাদির চিত্র আকিতে প্রয়াসী হইয়াছিল ।” (পু ৩৯)

“মিশর এবং মেক্সিকোর চিত্রলিপির সঙ্গে ডিহর হইতে প্রাপ্ত মু্পাত্রের

রাঢ়সঙ্গের ইতিহাসের অমূল্য উপাদান ১৭৫

গায়ে আচড় কাটিয়া ভৈয়ারী নঝ্মাগুলির সাদৃশ্ঠ যথেষ্ট পরিমাণে রহিয়াছে ।*

“...প্রাগৈতিহাপিক যুগের কোন এক অধ্যায়ে দ্বারকেশ্বর নদের তীরবর্তী ডিহর পরিমগ্ডলের গ্রামগুলিতে মত্স্তজীবি, মত্ত শিকারী গোষীগুলির বসবাস ছিল। এই মতস্তজীবি, মত্স্তশিকারী গোষ্ঠীর নর-নারীর যে একদ]। মাছ ধরিবার প্রয়োজনে হৃতা, স্থতা দিয়া জাল এবং লজ্জা নিবারণের উপযোগী বন্ত্রথণ্ডের উদ্ভাবন করিয়াছিল তাহা মানিতে হয়। ভিহরের টিবিগুলি হইতে স্থতা বা কাপড়ের প্রাচীনতম নমুনা এতাবৎ আবিষ্কৃত না হইলেও স্তা পাকাইবার তকৃলী বা টাকুর (চাঁকির ) সব শুর হইতে আবিষ্কার এবং তৎসঙ্গে আড়বোঁন1 চৌকার নান। ধরণের প্যানেলগুলি হইতে স্ব্পট্টভাবে প্রমাণিত হয় যে প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোন এক সময়ে পশ্চিম রাট়ের দ্বারকেশ্বর তীরবর্তী গ্রাম ডিহরে বসবাসকারী মৎস্যজীবী মৎস্য শিকারী গোঠীগুলির দ্বারাই সর্বপ্রথম কাপড় উদ্ভাবিত হইয়াছিল ।” (পৃ ৩৯-৪০)

“এতাবৎকালের মধ্যে রাটের যে সমস্ত প্রাচীনতম বসতি কেন্দ্রের সন্ধান পাঁওয়া গিয়াছে সে সমস্তগুলি হইতেই দক্ষিণ ভারতীয় কৃষ্ণ লোহিত কৌলাল পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং সর্ধনিয় অধিবসতি স্তর হইতেও পাওয়া গিয়াছে এখন প্রশ্ন উঠেযে এই রুষ্ণ লোহিত কৌলালের বাহক রাঁট়ের কোন্‌ আদিম নরগোষঠীগুলি? ইহারা কি কলিঙ্গদেশ হইতে আগত অথবা! উত্তরভারত হইতে রাঢে তাত্রলিপ্তিতে গিয়াছেন ? কালে ইহার স্থমীমাংস। হইবে |” (পৃ ৪২)

ডিহর পরিমগুলে প্রাগৈতিহাসিক থেকে মৌর্ধ-শুঙ্গ পর্যস্ত নানা যুগের প্রত্বতাত্বিক নিদর্শন স্তরে স্তরে পাওয়া গেছে তবে সর্বনিম্ন অধিবসতির স্তরে ( নবাশ্মর সংস্কৃতি ) যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে তার থেকে বলা চলে যে, “এই সংস্কৃতির যুগে কতকগুলি পশুপক্ষীকে গৃহপালিত করা, শস্ত বপন উৎপাদন করা, ম্পাত্রের ব্যবহার এবং খাছ্যদ্রব্যগুলি প্রস্তুত বিষয়ে আগুনের ব্যবহার ভালভাবেই হইয়াছিল ।” (পু ৩৫)।

তৃতীয় প্রবন্ধটির বিষয়বস্তু ডিহরের “এতিহাসিক আদি-পর্য', নানা স্তরে বিশ্ান্ত বিভিন্ন যুগের যেসব অবশেষ পাওয়া গেছে তাতে ডভিহরে সংস্কৃতি সমন্বয়ের সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই ***উপরোক্ত কয়েকটি মৎস্যজীবী মত্গ্যশিকারী জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে নবাশ্মর তাত্রাশ্মর সংস্কৃতির শর্ট] বাহকদের মিলন বা পরম্পর সহযোগিতার ফলে এক স্বয়ংসম্পূর্ন সংস্কৃতির অন্ভ্যুদয় ঘটিয়াছিল। মাছ, ভাত, কাপড় এই যৌথ সংস্কৃতির অবদান 1” (পৃ ৪৩)

১৭৬ বাঙলা বাঙালী

বল! বাহুল্য এই মাছ, ভাত কাপড় বাঙালী সংস্কৃতিরও বনিয়াদ

এতিহাসিক প্রথম যুগে বীকুড়া জেলার সঙ্গে ভারত-সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল উত্তর পশ্চিম ভারতের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের সম্বন্ধেও বহুবিধ প্রমাণ উপস্থাপিত করেছেন লেখক

“ডিহর হইতে আবিষ্কৃত উপরত্বের মঞ্জ্ষাগুলি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে- সুদূর অতীতকালে বীাকুড়া জেলার ডিহর গ্রামটির সহিত মালবের উজ্জয়িনীর-_ অবস্তীর স্থনিবিড় সম্পর্ক গড়িয়া! উঠিয়াছিল। ডিহরের পার্বতী একটি গ্রামের নাঁম অবস্তিকা) সংলগ্ন গ্রামটির নাম জন্তা। দামোদর তীরের একটি গ্রামের নাম পুষ্র্ণা ।.-“তাহ1 ছাড় দেখা যায় যে বাকুড়। জেলার কবি বড়ু চণ্ডীদাস তাহার শ্রীরুষ্ণ কীর্তনে অনেকবারই মালব রাগের ব্যবহার করিয়াছেন ।--"চণ্ীদাসের সহিত রামীর সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে বলা হইরাছে __

বসিঞা অবস্তিপুরে পড়ুঞা পড়ণপড়ে হেনকালে এক রসের নায়রি দরশন দিল মোরে

অবস্তী, উজ্জয়িনী ( উজানী ) নামের প্রীতি রাঢ-বঙ্গে এত বেশী হইল কেন? ইহার উত্তরে বলা যায যে রাঢ-বঙ্গের সহিত উজ্জয়িনী--তক্ষশিলার স্থনিবিড় সম্পর্ক বহু পূর্ব হইতেই গড়িয়া উঠিয়ীছিল |” (পৃ ৪৯)

এই প্রবন্ধে প্রাচীন বাঁকুড়া জেলার সঙ্গে অশোক-পূর্ব পরবর্তী বৌদ্ধ ধর্ম সংস্কৃতির সম্পর্কের অজন্র প্রমাণ উপস্থাপিত করে লেখক আধুনিক বীকুড়ার জন- জীবনে বৌদ্ধপ্রভাবের অবশেষ সম্পর্কে চিত্তাকর্ষক নিদর্শন পেশ করেছেন £ “..-উপরোক্ত (দাযোদরের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত জেলার উত্তর-পশ্চিমের কিছু গ্রামে ) অঞ্চলে ১৩ই বৈশাখ হালসাল অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বীকুড়! জেলার পুরাতন বাসিন্দা দোকানদারশণ নৃতন খাতার মহরৎ করিয়া থাকেন অপরাহে গৃহস্থগণ গৃহের ঈশান কোণাম্ব শেওড়া গাছের ভাল গুঁজিয়৷ দেয়-_তাহাদের বিশ্বাস গৃহে বজ্র বিদ্যুতের ভয় থাকিবে না। আচার্য যোগেশচন্ত্র রায় বিদ্যানিধি ইহাকে বৌদ্ধ সংস্কার বলিয়া মনে করেন। খুষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে মহাপন্ননন্দের রাজ্যাভিষেকের কালে ভরণী নক্ষত্রের আদিতে মহাবিযুব হইত তদম্ুপারে ১৩ই বৈশাখ বর্ষারস্তের প্রথম দ্বিনরূপে গণন1 শুরু হয়। বীকুড়া জেলার আকুড়ে ভোমগণ এই দিনে তাহাদের স্বজাতি কালুবীরের উদ্দেস্তে তর্পণ করিয়৷ থাকেন। খুব সম্ভব মহাপন্ননন্দের কণিঙ্গ অভিযানের সময় এই অঞ্চলের লোকের] তাহার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করিয়াছিল |” (পৃ ৫৩)

রাঢ়বঙ্গের ইতিহীসের অযৃল্য উপাদান ১৭৭

এমনি বিস্তীর্ণ ইতিহাস দেওয়। হয়েছে “ছান্দাড় পরিমগ্ডলে'র যার মধ্যে পড়ে শুশুনিয়া পাহাড়। এখানকার শিলালিপির নির্দেশে রাজা চন্দ্রবর্মার রাজধানী পুষ্তরণা1 বা! পখন্নার আবিষ্কার হয়। ন্থ্ধী পাঠকেরা জানেন যে এই পখন্না গ্রামে আচার্য সথনীতিকুমার মৌর্যস্তঙ্গ আমলের পোড়ামাটির যক্ষিণী মৃত্তি আবিষ্কার করেন

এমনিভাবে হ্ধবর্ধন, আদিশ্র এবং তারপর পাল রাজাদের সময়কার ইতিহাস বণিত হয়েছে 'তিহাসিক মধ্যপর্ব প্রবন্ধে তবে ইতিহাঁস-বিখ্যাত এসব নরপতিদের আমল লেখক গ্রহণ করেছেন কেবল পটভূমিক! হিসাবে তাদের যুদ্ধাভিযান বা আর কিছু মুখ্য স্থান পায়নি ; বাকুড়ার গ্রামাঞ্চলের একালের তথ্যনির্ভর ইতিহাপই তার প্রধান আলোচ্য |

আলোচ্য সর্বশেষ যুগটি পাঠান-মোগল রাজত্বের পটভূমিকায় যখন মল্লরাজা বীর হাম্বীরের প্রভাবে বিষুণপুরকে কেন্দ্র করে বীকুড়ার সংস্কৃতি ইতিহাসের শ্বর্ণ- যুগ। এঁকলাজাত মহল পরিমণ্ল বিঞুপুর” প্রবন্ধে সেই কালের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন লেখক

ছুটি প্রবন্ধেরই পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় মূল্যবান তথ্য লিপিবদ্ধ থাকলেও বর্তমান প্রবন্ধের আয়তন দীর্ধায়ত হবার আশঙ্কায় এর বিস্তৃত উদ্ধৃতি দেওয়া সম্ভব নয়। তাই কেবল অপেক্ষাকৃত অজ্ঞাত কিছু তথ্য পাঠকদের উপহার দিয়ে সন্তষ্ট থাকতে হবে।

“ছান্দাড় গ্রামে জঙ্গলাসিনী দেবীর অবস্থানের জন্য এই গ্রামে শারদীয় তুর্গাপুজ] নিষিদ্ধ |” (পৃ ৮৬)

“্বীকুড়া জেলায় যত বেশী পার্খনাথ জৈন তীর্ঘস্করের মুতি পাওয়া গিয়াছে এত বেশী আর কোন তীর্ঘহ্বরের মৃতি দেখা যায় নাই।” (পৃ ১*৬)

প্বীকুড়া তথ! দক্ষিণরাটঢ়ের প্রাচীন শিবলিঙ্গগুলির পুজা উৎসব অহ্থষ্ঠান ইত্যাদির ক্ষেত্রে নিগ্রস্থ জৈন ধর্মের সহিত এক স্ুনিবিড় সংযোগ এবং সাদৃণ্ঠ পরিলক্ষিত হয়” (পৃ ১০৬)

“জৈন আচারঙ্গ বা আয়রঙ্গ স্থজে লিখিত আছে যে, চব্বিশতম জৈনতীর্ঘনহকর

বা.-১২

১৭৮ বাঙলা বাঙালী

মহাকীর রাঢ়ে জৈনধর্ম প্রচারের অন্ত যখন আসেন তখন রাট়ের বর্বর অধিবালীরা? তাহার প্রতি দৃর্যবহার করে এবং কুকুর লেলাইয়! দেয়” (পৃ ১৭)

“বঙ্গীয় কায়স্থ সমাজের ঘোষ, বন্ধু, মিত্র, সোম, চন্দ্র ইত্যাদি পদবী যুক্ত গোঠীগুলি একপময় করণব্রাহ্ষণ ছিলেন 1” (পৃ ১০৯)

“রা এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলগুলি মধ্যযুগে বিভিন্ন সামন্তরাঁজাদের অধিকারভুক্ত হওয়ায় এক একটি অঞ্চল উক্ত সামন্তরাজাদের পদবী অন্যায়ী এক একটি “ভূম” রূপে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল যেমন_-শিখরভূম, তুংভুম, সামস্তভূম, মল্লভূম, সিংভূম, গোপভৃম, শূরভূম, শবরভৃম ইত্যাদি |” (পৃ ১১২)

প্র্মঠাকুর শুণ্যমৃত্তি, নিরঞ্ন নিরাকার প্রভূ ধর্মঠাকুরের শিলামুতিগুলি' বৌদ্ধত্ুপের অনুরূপ অনেক ধর্মশিলার মধ্যে পাচটি করিয়া ফোকর দেখা যায়। বৌদ্ধস্্রপে এই ধরণের কুলুর্গি থাকিত। আবার অনেক ধর্মশিলায় পাচদিকে পাঁচটি ধ্যানী বুদ্ধের যৃতি থাকিতেও দেখা যায় ।” (পৃ ১২৭)

«*..এই সময়ের ( বড়ু চণ্ডীদাসের ) বৈষ্ণব ধর্ম, জয়দেব প্রবতিত তান্ত্রিক সহজিয়] বৈষ্ণব ধর্ন-__-ইহাঁর সহিত গ্রচৈতন্ত প্রবর্তিত গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ষের যথেষ্ট পার্থক্য রহিয়াছে ।” (পৃ ১৩৭)

“ছান্দাড়ের রাজা শীতল মল্লের আমলে প্রবতিত ধর্মঠাকুরের পুজায় জাতিভেদ উঠিয়া গিয়াছিল। ধর্মঠাকুরের গাজনে জাত কলসি অনুষ্ঠানে সব জাতির মানুষ আসিয়া এই কলসটিকে স্পর্শ করে ।” (পু ১৩৭)

“পশ্চিম রাঢের সেকালের ধর্মের উপর এই তান্ত্রিকতা উড়িস্তা হইতে আসিমাছিল।” (পু ১৩৭)

“মল্পরাজাদের দ্বারা প্রতিষ্িত অনেক শ্যান্টাদ, মদনমোহন বিগ্রহের ভে'গে শোলমাছের সহিত কঠিআমের টক দেওয়ার রীতি আছে।” (পৃ ১৩৮)

“...মল্পরাজাদের মধ্যে প্রচলিত অপর একটি উল্লেখযোগ্য সংস্কার রহিয়াছে-- ইহা বড় হূর্গাপুজা ছোট ছুর্গাপূজার কল্লারস্ত হয় শুক্লা ষ্ঠীর দিন কিন্তু বড় হর্গাপূজার কল্পরস্ত হয় জিতাষ্মী বা তাহার পর:দিন হইতে ।* (পৃ ১৪২)

«লোহ্‌ নিষ্কাশনের জন্য বীরহাম্বীর*সিংভূম হইতে লোহার জাতির মানুষদের আনয়ন করান ।” (পৃ ১৬৪)

“মল্্ভূমের লোহারগণ স্থানীয় মাকড়া পাথর গলাইয়! প্রয়োজনীয় লৌহ নিষ্কাশন করিত।.--কামাণের বিপযেএঅভিজ্ঞ এই সব স্থদক্ষ কারিগর মিরদাহা (711-081 ) বলিয়া অভিহিত.হইতেন ।:..বিষুপুর নগরীর বাধপাড় মহল্লায়

রাঢবঙ্গের ইতিহাসের অমূল্য উপাদান ১৭৯

এক সদ্গোপ পরিবার পুরুষানুক্রমে মিরদাহা (14810) 1০০%)র কাজ করিতেন তাহার মিছ্যা বলিয়া সুপরিচিত |” (পু ১৬৫)

“--.মল্পরাজার।"""উৎকষ্ট বারুদ প্রস্তত করিবার জন্য স্থদক্ষ মুসলমান কারিগরও আনাইয়া ছিলেন। বিষ্ুপুর শহরের অনতিদূরে--এই সমস্ত দক্ষ মুসলমান কারিগরদের বংশধরগণ আজও বসবাস করিতেছেন ।* (পু ১৬৬)

“..-বীরহাম্বীর তাহার রাজ্য পরিচালন] ব্যাপারে মোগল রীতির প্রবর্তন করেন এই মিজ্রতার (মানমিংহ তৎ্পুত্র জগৎপিংহের সঙ্গে ) স্যত্র ধরিয়াই' মল্পরাজ পরিবারে অন্বরী তামাকের বিলাস, তাসের খেলা ইত্যাদির অনুপ্রবেশ্ট ঘটে।” (পৃ ১৬৭)

“রাট়ীয় শাখারী জাতির যূল সন্ধান করিতে গিষা দেখা যায় যে ইহাদের পূর্বপুরুষ ন্বপ্রাচীনকালে দক্ষিণ ভারতের সমুত্র উপকূলবর্তী অঞ্চল হইতে রাঢ় বঙ্গের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়াছিলেন 1. চুণাঁক্ বলিয়া অভিহিত জাতির মানুষই রাটীয় শাখারী জাতির আদিম রূপ ।” (পৃ ১৭)

"মন্নভূমের রাজার] তাহাদের দীক্ষাপ্ুরু শ্রীনিবাস আচার্য ইত্যাদি লইয়া কাতিক শৌর্ণমাসীতে অহঠিত শ্ররুষ্ণের রাসলীলা উপলক্ষে যাত্রাভিনয্ব করিতেন | এই যাত্রাভিনয়ে অংশগ্রহণ গ্রহণ করিতেন মল্লরাজা। স্বয়ং, তাহাদের, মন্ত্রী মহাপাত্র, স্বয়ং আচার্য শ্রীনিবাস গোস্বামী, তাহার দুই পত্বী, কন্যা হেমলতা,, কনক লতা ইত্যাদি ।...রাসমঞ্চে অভিনীত মল্লরাজ পরিবারের রাসযাত্রাই খুব সম্ভব রা বঙ্গের প্রথম যাজ্রাভিনয় এবং প্রথয ভাষা তথা বাংলায় অভিনয় ।” (পৃ ১৮৩)

আরও নানা বিষয়ের আলোচনা আছে যার মধ্যে বাকুডার মন্দিরের ভাস্বর্থ, তার গড়ার ইতিহাস এবং জেলার সঙ্গীত সাধনার ইতিবৃত্ত তবে এই প্রসঙ্গ: ইতিপূর্বে যোগ্য লেখকদের দ্বারা আলোচিত হয়েছে বলে সে সম্বন্ধে আর. বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন নেই

|

যেহেতু যূলত সংস্কৃতি-আলোচন। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থের লক্ষ্য তাই ইতিহাসের সঙ্গে এগারোটি প্রবন্ধে পশ্চিম রাঢ় ব! বাকুড়ার সংস্কৃতির নান দিক সম্বন্ধে আলোচন! করে বিষয়টির পুর্ণ তাসাধনের চেষ্টা করা হয়েছে।

১৮০ বাঙলা বাঙালী

বিষুপুরে প্রচলিত মুঘল তাস, নক্সা তাস দশাবতার তাসের বৈশিষ্ট্য ইতিহাস সম্বন্ধে এজাতীয় প্রথম প্রবন্ধটিতে আলোচনা করা হয়েছে দেশে সাধারণত প্রচলিত চার রং-এর ৫২ খানি তাসের থেকে পূর্ব বিষ্ুপুরে প্রচলিত পূর্বোক্ত তিন ধরণের তাস তার খেলার পদ্ধতি পুথক।

দ্বিতীয় প্রবদ্ধটিতে মল্পরাঁজাদের শিকারোৎ্সব এবং তৃতীয়টিতে জেলার ছুটি প্রমুখ লোকোঞ্সব মনসাপুজা ঝাপানের সবিস্তার বর্ণন করা হয়েছে। অঙ্রূপ একটি লোকায়ত পর্ব 'শিয়াল-শকুনি পর্ব__যা একাস্তভাবেই পশ্চিমবঙ্গের অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য এই পর্বের প্রচলিত লোককথাটিও বিচিত্র অভিনব বলে লৌকপাহিত্যে স্থায়ী স্থান পাবার উপযুক্ত বঙ্গের বিখ্যাত গণিতজ্ঞ সম্প্রদায় শুভঙ্করগণ তাদের গণিতপ্রতিভা সম্পকিত আলোচনা একালের পাঠকদের মনোরঞ্জন করবে। শুভস্কর কারও নাম নয়-_বিশিষ্ট গণিতজ্ঞদের সামান্ত উপাধি বীকুড়াতেও দশ-বারোজন শুভঙ্করের জন্ম হয়েছিল

“বিভিন্ন কালের বাজার দর সম্পকিত রচনাটি পড়ে একালের গৃহস্থরা ঘন 'ঘন দীর্ঘশ্বাস মোচন করবেন পাঠকদের মনে সেকাল সম্বন্ধে ঈরধান্থষ্টির মানসে দুই-একটি দরদাম উদ্ধৃত করার লোভ সংবরণ করা গেল ন]।

বীর হাম্বীরের আমলে “টাকায় দেড় মণ চাল পাওয়া যাইত এক মন গব্য স্বতের দাম ছিল ছুই টাকা আর সরিষার তেলের মণ ছিল এক টাক কুড়ি

পয়লা ---।” “...বীরসিংহের আমলে মাছের দর বলিয়া কিছু ছিল না দুই এক পয়সার

বিনিময়ে কয়েক সের মাছ মিলিত”

“...১১৫১ বঙ্গাবে সম্পাদিত দলিল হইতে জানা যায় যে তখন পাঁচ সের এক পুমা আতপ তগুলের দর ছিল দুই আন। অর্থাৎ টাকায় এক মণের মত। দেবতার নিত্য সেবায় বরাদ্দ দৈনিক আধ পুয়া গব্য ঘ্বতের মূলা ছিল তিন পয়সার মত অর্থাৎ গব্য ঘ্বতের সের ছিল ছয় আনা, এক সের মিঠাই এর দাম ছিল ছুই আনা, এক সের সন্দেশের মূল্য ছিল সাত পয়সা *-: 1”

বিষুপুরের তিন বৈশিষ্ট্য-_গান বাজনা মতিচুর সম্বন্ধেও একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ আছে। আর আছে “মন্দির নির্মাণের কয়েকটি সাংকেতিক শ্বত্রয অম্পকিত একটি ক্ষুদ্রায়তন কিন্তু যূল্যবান রচন]।

“সাহিত্য” শীর্ষকে পশ্চিম রাঢ়ের সারশ্বত সাধনার ইত্িবুন্ত বর্ণিত হয়েছে আচার্য শ্রনিবাস, তার কন্া হেমলত। তার শিশ্ত যছুনন্দন থেকে আরম্ত করে

রাঢবঙ্ষের ইতিহাসের অমূল্য উপাদান ১৮১

শ্রীনিবাস প্রভাবিত গোবিন্দদাস অন্ান্ত বৈষ্ণব পদকর্তাদের রচনার বিস্তারিত আলোচন।1 করা হয়েছে

৪॥

সংক্ষেপে বলতে গেলে মানিকবাবুর সমালোচ্য এই গ্রন্থটি বাকুড়া সহ পশ্চিম রাটের ইতিহাঁপ সংস্কৃতি সম্বন্ধে মৌলিক গবেষণাভিত্তিক একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা চারটি ম্যাপ এবং অজভ্্র আর্টপ্রেটের ছবি ইতিহাস সংস্কৃতি আলোচনার দিক থেকে গ্রস্থটির মূল্য বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে

সরকার অথবা ব্যবসায়ী পত্র-পত্রিকার কর্তৃপক্ষের দ্বারা এমন প্রথম শ্রেণীর গবেষণাকর্ম পুরস্কত হবার আশা খুব একট! নেই। কারণ ওসব জায়গায় ধরাধরি আদান-প্রদানের রাজত্ব কিন্তু গবেষণা অথবা সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠান কর্মীদের দ্বারা যানিকবাবুর এই অনন্য কৃতি সম্মানিত না হলে তা৷ হবে একাস্ত পরিতাপের বিষয়

বাঙালীত্বের ভূমিকা!

দুরদ্রষ্টী কবি অনেক বছর পুর্বে লিখেছিলেন-_-শিঞাছে দেশ ছুঃখ নাই আবার তোর মাহৰ হ।” একালে লিখলে হয়ত তিনি লিখতেন-__-“আবার €তার] বাঙালী হ।”

কারণ বাঙালীরও দেশ গিয়েছে পূর্বতন দেশের এক-তৃতীয়াংশ প্রায় যা 'আছে, তাও না থাকারই সামিল। কারণ পশ্চিমবঙ্গের স্বস্থভাবে বাচার পথ রাজ্যের অর্থব্যবস্থাই কেবল অবাঙালীর কবলিত নয়, কলকাতা তো! বটেই শিলিগুড়ি, আসানসোল, বর্ধমান, খড়গপুর প্রমুখ শহর থেকেও বাঙালীদের বসতবাটার উচ্ছেদ ঘটে চলেছে আর গ্রামাঞ্চলের অবস্থা? সেই পঞ্চাশ বছর আগে আচার্য প্রফুল্চন্দ্র রায় ছুতার, কামার, কুমোরঃ মাঝি, জেলে, নাপিত, হারে ইত্যাদির পেশা থেকে বাঙালীর সরে যাবার অন্ত যখন আসন্ন সর্বনাশের ইঙ্সিত দিতেন, তার থেকে মন্দ ছাড়া ভালে নয় শেষ অবধি দোষ বাঙালীর নিজের ছাড়া কারও নয়। তবে আমরা আপাতত দোষ বিচারে বসিনি তাই য] বলছিলাম--বাঙালী নিজ গৃহে পরবাসী হতে চলেছে

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালীদের মনে মনে একট। আশা জেগেছিল «যে, ছেড়ে আসা ছুই-তৃতীয়াংশ বুঝি আবার বাঙালীখ্েদ উত্ন হবে। দেশে আর ফিরে যেতে না পারলেও ওখানকার বাঙালীয়ানার স্থধা গৌড়জন আবার নিরবধি পান করতে পারবে কিন্ত দেখতে না দেখতেই সে আশ ক্ষীণ হতে লাগল আর শেষ পর্ধস্ত ১৯৭৫ গ্রীস্টাব্দের ১৪ই আগস্টের রাজে ভীষণ এক বিশ্ফোরণে তা একেবারে চুর্শবিচুর্ণ হয়ে গেল। আউল, বাউল, সাঁই, দরবেশের দেশের হিন্দুমুললমান নিবিশেষে যুগ যুগ ধরে সত্যপীর, ওলাঁবিবি, শীতল] মা, কালু রায়ের ভজনকারী বাঙালীদের এবার মুজিবের অবর্তমানে শুদ্ধ ইস্লামী' বানাবার প্রয়াস শুরু হয়ে গেছে। ওদিকের এক কোটির উপর হিন্দুবৌদ্ধ- ঘবীষ্টানের ভাগ্যে কি আছে ঈশ্বরই জানেন ধর্মনিরপেক্ষতা একাগের ব্যাপার নয়, অথব| কেবল গান্ধী, জওহরলাল অথবা মুজিবের কথা নয়__এটা যে বাঙালীর (তিহাস সংস্কৃতির বুনিম্নাদ এই সত্য বাংলাদেশের আজকের শাসকেরা

বাঙালীত্ববের ভূমিকা ১৮৩

দেখতে অস্বীকার করছেন। স্থৃতরাং আপাতত পুরবৈয়া বাযু আর বইবে না। উদয়াচল অবকুদ্ধ।

বাঙালীকে তাই স্বভাবতই প্রবাসকেই স্বদেশ করে নিতে হবে।

সৌভাগ্যবশত স্বাধীনতা আন্দোলন পু্টিলাভ করার সঙ্গে সঙ্গে “বঙ্গ আমার জননী আমার ধাত্রী আমার আমার দেশ, শেষ অবধি "ভারত আমার জননী আমার-**” ইত্যাদি রূপ নিয়েছে অখিল ভারতীয়ত্ব অবশ্ঠ এখনও বহুলাংশে আবেগ যুক্তির স্তরে রয়েছে, বাস্তব জীবনে এর ষোলো আনা রূপায়ণ হয়নি নান! রাজ্যে স্থানীয় অধিবাসীদের চাকুরিতে অগ্রাধিকার অথবা মাতৃভাষায় পড়াস্তনার অন্থৃবিধা অবধি এই সত্যের গ্যোতক। তবুও স্বীকার করতেই হবে 'যে অখিল ভারতীয়ত্বের একট] ভূমিক। তৈরী হয়েছে এবং ধীরগতিতে হলেও পুষ্ট হচ্ছে।

তাই প্রশ্ন হচ্ছে থে এই অখিল ভারতীয়ত্বের (প্রবাস বা প্রবাসী ইত্যার্দি শব্ধ তাই আর বাবহার করার অর্থ হয় না) পটভূমিকায় বাঙালীত্বের ভূমিকা! কি?

কেবল বারোয়ারী দূর্গাপূজা, কালীপুজ! 'অথবা সরম্বতী পুজা? সামাজিক মিলনের ক্ষেত্র হিসেবে এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মূল্য থাকলেও ইদানীং আর সবে নিছক বাঁঙালীয়ান! অশ্বু নেই। বাঙালী সংস্কৃতির প্রভাবে অন্তত পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্যসমূহের ভিন্নভামাভাষী অধিবাসীরাও এইসব অনুষ্ঠানকে নিজেদের করে নিয়েছেন

তাঁহলে এইসব উতৎ্পব উপলক্ষে যেসব যাত্রা, নাটক গান-বাজনার আয়োজন হয় তাকেই কি বাঙালীত্বের নিদর্শন বলব? অংশত হয়ত তা বল! যায়, তবে পূর্ণমাত্রায় নয় এই জন্য যে এপব নৈসিত্তিষ্ক ব্যাপার--যাঁর আমু ছুই-দশ দিন নিত্য বাঁঙালীত্বের অনুশীলনের মাধ্যম কি?

বল! বাহুল্য একমাত্র ভাষা সাহিত্যই বাঙালীত্বের এই প্রাত্যহিক উপাদান

'আরণ্যকে” বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় ভাষা সাহিত্যের যোগাযোগ না থাকার বাঙালী হয়েও বাঙালীত্ব হারানে। একটি পরিবারের চিন্ত একেছেন। আমি শ্বয়ং গয়া মুক্ষের জেলায় এরকম একাধিক পরিবারের সম্পর্কে এসেছি বাঙলা ভাষা সাহিত্যকে উপেক্ষা করার জন্য ধাদের ছেলে-মেয়েরা আজ শুদ্ধভাবে একটা বাঙল! বাক্য বলতে পারে না। বল!

১৮৪ বাঙলা বাঙালী

বাহুল্য এদের পক্ষে আর বাঙালী সভ্যতা সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা? সম্ভব নয়। প্রাণ-প্রবাহ কুদ্ধ হয়ে গেলে হৃংস্পন্দন তে বন্ধ হয়ে যাবেই

তাই বলছিলাম যে অখিল ভারতীয়ত্বের ভূমিকা সত্বেও বাঙালী সংস্কৃতির' উত্তরাধিকার বজায় রাখতে হুলে বাঙলা ভাষা সাহিত্যের নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। ছেলে-মেয়েদের তো! বাঙলা শেখাতেই হবে এবং শুধু তাদের: জন্যই নয় তাদের মা-বাবাদের জন্তও বছরে দুই-চারখানা বাঙলা বই কিনতে হবে যেমন আমরা চাল-ডাল অথবা কাপড়-চোপড় কিনি চাল-ডাল যদি দেহের খাছ হয়, তবে বাউল! বই হল সর্বভারতীয় হয়ে যাওয়া বাঙালীদের:

মনের খোরাক

বঙ্গসংস্কৃতির প্রতিনিধি

পাঠান-মোগলের যুগ থেকেই “ন্থবে বঙ্গাল” হিসেবে বিহার-ওড়িস্যার সঙ্গে বঙ্গদেশের একটা প্রশাসনিক যোগস্ত্র ছিল। এইরকম যোগস্থত্র কোচ প্রাগজ্যোতিষের রাজত্বের কারণে আসামের সঙ্গেও। অবশ্ত রাজ্যের উত্থান- পতনের সঙ্গে এই যোগন্ুত্র কখনও ক্ষীণ কখনও প্রবল হয়েছে তারপর ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে এই যোগাযোগ প্রবল হয়, ১৯১২ খ্রীপ্টাব্খে বিহার-ওড়িস্যা! পৃথক প্রদেশ না হয়ে যাওয়। পর্ষন্ত তবে প্রশাসনিক দিক থেকে পৃথক হয়ে গেলেও ইংরেজ রাজশক্তির সহায়ক হিপাবে প্রথমে সেই রাজশক্তি যে প্রদেশে শক্তিশালী হয়েছিল পেখানে অর্থাৎ বাঙলাদেশ থেকে শাসকদের সহায়ক সরকারী কর্মচগাবী এবং উকিল মোক্তার হিসেবে বাঙালীর! প্রতিবেশী রাজ্য- সমূহে ছড়িয়ে পড়ে এর সঙ্গে সঙ্গে নৃতন শিক্ষা সংস্কৃতির অগ্রদূত হিসাবে কখনও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা, কখনও বা নিজ আ্যাডভেঞ্চরপ্রবণতার জন্য ডাক্তার, শিক্ষক ধর্মপ্রচারক হিসাবেও বাঙালীর! প্রতিবেশী রাজ্যে বসতি, স্থাপন করেন। |

প্রথমদিকে যাতায়াতের ব্যবস্থা স্থলভ ছিল না বলে কয়েক পুরুষ পরেই' প্রতিবেশী প্রদেশে আগত বাঙালীর কথাবার্তা চাঁলচলনে তাদের পৃথক অস্তিত্ব ভুলে গিয়ে স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে এড়েন। কেবল বিভৃতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মুখোপাধ্যায় প্রমুখ সাহিত্যিকদের রচনাতেই এইরকম [একদা] বাঙালীর চিত্র পাওয়া যায় না, চোখ খুলে দেখলে বিহার ওড়িব্যা আসামের বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এমন অনেক বাঙালীর খোজ পাওয়া যাবে, ধাদের পক্ষে এখন ভালো করে বাঙলা বলাও কঠিন তাদের বাড়িতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মেয়ের] বে৷ হয়ে গেলে প্রথম প্রথম বেশ অসুবিধায় পড়েন

কিন্তু বিজ্ঞানের দৌলতে এখন যাতায়াত ব্যবস্থা সুগম হয়েছে মুদ্রাষস্ত্র বেতার মারফত বাউলা বই পত্রপত্রিকা পাওয়া বা বাঙলা গান নাটক শোন পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্যের বাঙালীর পক্ষে আর কঠিন নয়। অর্থাৎ আদি, বাসভূমি তার সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এখন আর দুরূহ ব্যাপার নয়। সুতরাং জীবিকার জন্তে খণ্ডিত বঙ্গ ত্যাগ করতে হলেও এবং পুরুষান্ুক্রমে ভিন্ন প্রদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও বাঙালী থাকার অস্থবিধ

“১৮৬ বাঙলা বাঙালী

নেই। প্রয়োজন শুধু নিজ শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রতি নিষ্ট' |

বল! বাহুল্য সঙ্কর সংস্কৃতি অথবা সংস্কৃতিবিহীনত! নিজের অথবা অপর কারও কাছেই পাঙ্ক্রেয় নয়। ভিন্ন রাজ্যের বাঙালীদের তাই বঙ্গসংস্কৃতি- সচেতন হবার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আছে পূজা উৎসব আদি অবশ্ঠই এর এক অঙ্গ। তবে এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সর্জনাত্মক ভূমিকা অল্প বঙ্গ- সংস্কৃতির প্রধান স্তম্ভ বাউল! ভাষা এর নিয়মিত শ্তদ্ধ অনুশীলনের ব্যবস্থা বঙ্গের বাইরের বাঙালীদেরই করতে হবে। ভাষাগত সংখ্যালঘু কমিশনের সুপারিশে এর প্রশাসনিক রক্ষাকবচ আছে। কিন্তু প্রশাসনযন্ত্রকে তদনুকৃল করার জন্তে সংগঠন গঠনমূলক প্রয়াস চাই। দিল্লী বোম্বের মত দূর দেশে থেকেও কেরল তামিলনাড়ুর অধিবাসীদের ছেলেমেয়েরা যে নিজ নিজ মাতৃভাঁষা শিখে নিজ সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে তার কারণ তাদের সংস্কৃতি প্রেম সংগঠনী শক্তি ওঁদের কাছ থেকে বঙ্গভাষীদের শেখার আছে।

ছেলেমেয়েদের সঞ্ষে সঙ্গে তাদের মা-বাবাদেরও বঙ্গসংস্কৃতিনিষ্ঠ হতে হবে। এর মাধ্যমে বঙ্গসাহিত্য এর অন্কশীলনের সহজ উপায় একটি করে পাঠাগার। কিছুটা সঙ্ঘশক্তি সংগঠন থাকলে সরকারী সাহায্যের মুখাপেক্ষী না হয়েও যে এমন পাঠাগার চালাঁনে যায় তার বহুতর নিদর্শন বিহার-ওড়িস্তা আপাষে পাওয়া যাবে তবে প্রয়োজনের তুলনায় এজাতীয় পাঠাগারের সংখ্যা অনেক কম। উৎপাহীদের জন্যে এদিকে তাই একটা বড কর্মক্ষেত্র পড়ে আছে। উপযুক্ত সংগঠন গড়ে উঠলে পারস্পরিক যোগাযোগের জন্যে একটি পত্রিকা এর পরের ধাপ

বহিরঙ্গের ভিন্নতা বাদ দিলে সব সংস্কৃতির যূলে শেষ অবধি মানবীয় সংস্কৃতি অর্থাৎ সেবা দয়া মাঁা প্রেম করুণা সহান্ভৃতি প্রমুখ মানবীয় সদ্‌গুণাবলী। বঙ্গসংস্কৃতির অন্কুশীলন পূর্বোক্ত মানবীয় বিভূতিসমূহ বাদ দিসে নয়। প্রাদেশিকত! নয়, পুর্বোক্ত মানবীয় সংস্কৃতির পরিচয় দেবার ফলেই একদা বঙ্গের বাইরের বাঙালী প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল। আজও প্রাতিবেশী রাজ্যসমূহে যেসব বাঙালীর সম্মান তার মূলেও এসব সদগুণাবলীর অনুশীলন এবং এখানে বঙ্গভাষী অথবা ভিন্নভাম্বাভাষীর মধ্যে পার্থক্য নেই। নেই মিথ্যা উচ্চ 'সংস্কৃতি গরিষার হুল ফোটানোর প্রয়াস |

খণ্ডিত বঙ্গের বাইরের প্রতিটি বাঙালী এই হিসাবে বঙ্গপংস্কৃতির বেসরকারী প্রতিনিধি তীঁদের মারণের উপর নির্ভর করছে বাঙালী সংস্কৃতির ভনিম্যৎ।

শিল্পায়ন বাঙালীর সামাজিক নেতৃত্ব

চণ্তীমণ্ডপ-কেন্দ্রিক এবং জমিদার-ব্রাঙ্ষণ শাসিত বাঙালীর প্রাচীন সামাজিক জীবনের নেতৃত্ব বিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদে রাজনৈতিক কমীদের হাতে যাওয়া শুরু করল। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে এই গণযুগের স্থত্রপাত এবং সশক্স বিব্রোহের পর্বতসক্কুল অববাহিকা বেয়ে নৃতন সামাজিক নেতৃত্বের পুর্ণ গ্রকাশ অসহযোগের প্রকাশ্ট গণবিদ্রোহে

বিংশ শতাব্দীর প্রারন্তে বাঙালীর সামাজিক নেতৃত্বের পালাবদলের যে সথচন। হয় তার আরও ছুটি ধারা ছিল। এর একটি হল শিল্পায়ন এবং অপরটি যুদ্ধ। আমাদের আপাত-আলোচন] শিল্পায়নকে কেন্দ্র করে বাঙালীর সামাজিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ষে পরিবর্তনের স্থচনা দেখা দিল তার বিষয়ে

১৭৬৫ শ্রীস্টান্দে বাবুরাম ঘোষকে আয়নার কারখানা করার লাইসেন্স দেওয়া হয়। ১৭৮৪ খ্রীস্টাব্দে টম ফাট সালকিয়ায় ডিহ্রিলারি করেন ১৮১৭-১৮১৭ শ্রীষ্টার্ের মধ্যে শ্রীরামপুর মিশন কাগজের কলে এঞ্জিন ব্যবহার করে। কিন্তু এব ঘটনাকে যথার্থ শিল্পায়নের স্থচনা বলা যায় ন!] এমনকি কলকাতাত্ব প্রথম কলের জাহাজ ১৮২৮ খ্রীস্টাব্খে এলেও তাঁকে ঠিক শিল্পায়নের স্থত্রপাত বলা যায় না। পূর্বোক্ত কলগুলির মত প্রথম বাম্পচালিত জাহাজও বড় বেশী হলে বাঙালীর মনে সাহেবদের কল সম্পর্কে একটা সম্্রম-মিশ্রিত কৌতৃহল স্ষষ্টি করেছিল কলকাতাসহ বঙ্গদেশে তখনও জমিদার-ব্রাহ্ষণদেরই সামাজিক নেতৃত্ব চলছে

কলকাতার কাছে বাউড়িয়ায় ১৮১৮ খ্রীপ্টাব্ে প্রথম কাপড়ের কল স্থাপিত হল। প্রথম পাটকল গড়ে উঠল ১৮৮৫ শ্রীন্টান্দে রিষড়ায়। প্রথম রেলগাড়ি চলল ১৮৫৪ খ্রীস্টাব্জের ১৬ই আগস্ট হাওড়া থেকে হুগলী পর্যন্ত |: পরের বছর ওর! ফেব্রুয়ারী রাণীগঞ্জ পর্যস্ত রেল লাইনের ছুই পাশের বহুদূর পর্যস্ত গ্রামবাসী দেখল "রেল কম ঝমাঝম্।” সিপাহী বিদ্রোহের বছর ৬ই জুলাই তারিখ থেকে কলকাতায় গ্যাসের বাতি জ্বলতে শুরু করেছে তারপর একে একে আরও বহু কলকারখান] ভাগীরথীর ছুই ॥কূলে লৌহমস্তক সগৌরবে তুলে ধরে

১৮৮ বাঙল| বাঙালী

আকাশ কালিমালিপ্ত করা আরম্ভ করেছে ১৮৯৭ খ্রীষ্টাব্দে বিছ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়ে শিল্পায়নের গতি জ্যামিতিক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে

শিল্পায়ন বাঙলার প্রাকৃতিক চেহারাতেই পরিবর্তন আনেনি, তার চেয়েও বড় পরিবর্তন এনেছে বাঙলার সমাজ-জীবনের কাঠামোতে বলা বাহুল্য এই একই কারণে বাঙালীর সামাজিক নেতৃত্বেও পরিবর্তন ঘটেছে

শিল্পায়নের প্রথম পূর্বশর্ত হল কলকারখানার যথাসম্ভব কাছে তার কমীদের নিবাপ। স্বভাবতই এক্ষেত্রে বামুন-কায়েতপাড়া অথবা মুচি-মেথরের পাড়ার কোন অবকাশ নেই। কারখানা-শহরের বাসিন্দাদের পল্লী নির্ধারণ হয় বেতন অথবা পদমর্যাদা অনুসারে আর প্রাতিবেশ৷ হিসাবে থাকতে থাকতে ক্রমশ গড়ে ওঠে সমাজ এবং নৃতন সামাজিক নেতৃত্বও। একটা কথা, কল-কারখানা এসে প্রথমেই সনাতন জাতিগত পেশার যূলে কুঠারাধাত করেছে ব্রাক্ষণ-সন্তান কুলগত বৃত্তি ছেড়ে মসীজীবী এবং এমনকি অক্রাহ্মণের পদধারণ করে চর্মপাদ্কার, বিক্রেতা হয়েছে--এ কেবল শিল্পায়নেরই পরিণাম

প্রথমদিকে যদিও বা কলকারখানার কর্মী বাঙালীদের গ্রামের সঙ্গে এবং সেই কারণে সনাতন সমাজের সঙ্গে যোগস্থত্র ছিল, ক্রমশ প্রাকৃতিক কারণেই তা ছিন্ন হয়ে গেল। তখন কারখানা-শহরের সমাজই একমাত্র সমাজ হয়ে দাড়াল তাছাড়' কারখানা-শহরের সমাজও স্থাণু হয়ে রইল না। শিল্পায়নের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামাঞ্চলকে আক্রমণ করে প্রভাবিত করল। আজকে তাই পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ-সমাজ একেবারেই কোণঠাপা কলকাতা, আসানসোল- দুর্গাপুর এবং খডগপুরের শিল্পকেন্দ্রের সমাজ বঙ্গোপসাগর থেকে শুক করে পশ্চিম রাঢ় পর্ধস্ত গ্রানাঞ্চলকে পরিচালিত প্রভাবিত করছে। উত্তরবঙ্গের চা-বাগান সমাজ বহু পূর্বেই গ্রাম-বাঁঙলার সমাজের সঙ্গে অসম্পক্ত দ্বীপের মত ছিল, বর্তমানে ক্রমবর্ধমান শিলিগুড়ির সমাজ উত্তরবঙ্গের বকেয়! গ্রাম-সমাজের কাছে অপ্রতিরোধ্য চ্যালেগ্রম্বরূপ মাথা তুলে দীড়াচ্ছে।

এবার এই কারখানা-পমাজের (বলা বাহুল্য চা-বাগান প্রমুখ শিল্পকেন্দ্র- সমাজও এর মধ্যে পড়ে ) স্তর-বিস্তাস লক্ষ্য কর! যাক।

এর শিখরদেশে অবস্থান পু'জির বিনিয়োগকারী মালিকগোঠীর, ম্বভাবতই সংখ্যায় যারা হ্বল্প। আর এর ভিত্তি-ভূমিতে অবস্থান শ্রমিকবর্গেরঃ যারা সংখ্যাগুরু আর ছুই-এর মাঝামাঝি রয়েছেন বড়বাবু, টেকনোক্রাট বুরোক্রাট সম্প্রদায়-_ধাদের উপর ব্যুবস্থাপনার ভার। ইদানীং সরকার

শিল্পায়ন বাঙালীর সামাজিক নেতৃত্ব ১৮৯

শিল্প-ব্যবসায়ের প্রবর্তন হওয়ায় পৃথকভাবে মালিকগোষ্ঠীকে আর খুঁজে পাওয়া যায়না আর এর বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকেই উৎপাদন-ব্যবস্থা ক্রমশ জটিল হওয়ায় ক্ষমতা নিছক পু'জিনিয়োগকারী মালিকদের বদলে টেকনো ক্রাট- বুরোক্রাটদের হাতেই কেন্দ্রীভূত হচ্ছিল তাছাড়া পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী গড়ে সাধারণ মানুষের টাকায় কলকারখানা চালানোর প্রথা! শুরু হওয়ায় এঁজাতীয় প্রতিষ্ঠানেও শেয়ারহোল্ডাররূপী মালিকর1 গৌণ হয়ে ম্যানেজিং এজেন্ট এবং বোর্ড অফ ডাইরেক্টারের সদন্তরূপী একদল আঘিক ক্ষেত্রের ম্যানেজারদের হাতে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব চলে গিয়েছিল

যাই হোক, বিশ-ত্রিশ বৎসর পূর্বে যদিও কারখানা-শহরসমূহের সমাজ পুর্বোক্ত ত্রিস্তরে বিন্যস্ত ছিল, বর্তমানে অন্তত সামাজিক অস্তিত্বের ক্ষেত্রে পুঁজির বিনিয়োগকারীদের প্রভাব সেইসব জায়গাতেই মাত্র রয়েছে, যেখানে মালিকের টেকনোক্রাট বুরোক্রাটদের বিদ্যা এবং কর্মও আয়ন্ত করেছেন। সুতরাং বর্তমান কারখানা-শহরসমূহের সমাজ প্রধানত ছুই স্তরে বিভক্ত বললে সত্যের অপলাপ হবে না।

প্রথমদিকে (মালিকদের অবস্থার অবক্ষয়ের পর ) কারখানা-শহরসযূহ্র সমাজের মধ্যমণি ছিলেন টেকনো ক্রাট-বুরোক্রাটরূপী এইসব ম্যানেজারের এ'রাই ছিলেন নৃতন জনপদের জমিদার ব্রাঙ্মণ বলা বাহুল্য সরকারী প্রশাসনযন্ত্ররে (বিশেষ করে পুলিশ ) সমর্থনও এদের পিছনে থাকায় এ'রা প্রায় সর্বের্বা ছিলেন। প্রতিদ্ানে অবশ্য এরাও সরকারী প্রশাসনযন্ত্রের ম্যানেজারদের (মার্কসবাদী উভয়ের শ্রেণীচরিত্রের অভিন্নতা আবিষ্কার করতে পারেন ) সহায়তা করতেন

কিন্তু প্রথম মহাযুদ্ধের পর থেকে ম্বুভাবে এবং ছিতীয় মহাযুদ্ধের পর থেকে প্রবলভাবে সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন কারখানা-শহরের সমাজের এই নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাল। মাথা-পিছু ভোটের শক্তিতে গঠিত ম্বাধীনতা- উত্তর সরকারকে স্বভাবতই শ্রমিক আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে স্বীকার করে নিতে হল এবং বামপন্থী অভিধাযুক্ত পরিচিত সরকারসমূহ প্রয়োজনে আরও দু-এক পা৷ অগ্রসর হয়ে শ্রমিক আন্দোলন সংগঠনকে জঙ্গী করে তুলে অধিকতর মর্যাদা দিলেন হুতরাং কলকারখান1 পরিচালনের ক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠনসমূহের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পাবার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কারখানা- 'শহুরসমূহ্র সমাজে শ্রমিক নেতাদের নেতৃত্বের আসন ক্রপ্রতিষ্তিত হতে লাগল।

১৯৩ বাঙলা বাঙালী

তবে শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক নেতারা কিন্তু ভারতবর্ষের অন্য এলাকার মত পশ্চিমবঙ্ষেও কোন স্বয়স্্ু সত্তা নন। প্রথমাবধি তারা রাজনৈতিক দলের ছত্র- চ্ায়ায় পুষ্ট আর বর্তমানে তো তাবৎ রাজনৈতিক দলের পৃথক পৃথক শ্রমিক ফ্রণট বা সংগঠন আছে এবং আমাদের দেশের শ্রমিক আন্দোলন যতট] না নিছক ট্রেড ইউনিয়ন ( অর্থাৎ শ্রমিকদের আঘথিক ) স্বার্থে চালিত হয়, তার চেয়ে বেশী চলে রাজনৈতিক দলের মুখ চেয়ে। একই শ্রমিক সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গী, আচরণ কার্ধপদ্ধতিতে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে মাঝে মাঝে যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য দৃষ্টিগোচর হয়, তার যূলে থাকে আর কিছু নয়, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন

স্বত্রাং অর্থব্যবস্থার ( উত্পাদন-ব্যবস্থার ) পরিবর্তন গুণগত পরিবর্তনের কারণ হয়ে শেষ অবধি সামাজিক নেতৃত্ব তুলে দেয় রাজনৈতিক দলের হাতে

এই পরিবর্তন কেবল কারখান| (অথনা চা-বাগান ) শহরটুকুর মধে]ই সীমাবদ্ধ থাকে না। পূর্বেই যেমন বল হয়েছে, গোট। পশ্চিমবঙ্গই আজ প্রায় একটি বড় কারখানা-শহর অথবা তাঁর শহরতলী স্থতরাং সামাজিক নেতৃত্বের এই পালাবদল-পর্ব শহরতলীন্বরূপ গ্রামগুলিকেও প্রভাবিত করে।

কারখান। শহরসমূহ তার উপকণ্ঠের সামাজিক পরিস্থিতির একটু গভীর বিশ্লেষণ করলেই দেখা যাবে যে তার ভিত্তি গড়ে ওঠে বিস্তকৌলীন্তের উপর এমনিতে অবশ্ট পু'জিবাদের স্বধর্মম এই এবং প্লুজিবাদকে আশ্রয় করেই কলকারথানার স্থট্টি। কিন্তু কলকারখাঁনাসমূহের জাতীয়করণ অথবা তার পরিচালনায় শ্রমিক নেতৃবৃন্দের পূর্ণ বা আংশিক অধিকার প্রতিষ্ঠা সত্বেও প্রতিষ্ঠানগুলির_-অস্তত সামাজিক ক্ষেত্রে এই পুঁজিবাদী চারিত্রধর্মের অবক্ষয়ের কোন স্থচনা দেখা দিচ্ছে না। ব্যক্তিগতভাবে এক-মাধজন শ্রমিকনেতা কর্মীর জীবনচর্ধায় এর ব্যতিক্রম দেখ দিলেও তাদের আশেপাশে অথবা এমনকি তাদের পরিবারেই সমাজবাদী অথবা কাঞ্চমকৌলীন্তের অতিরিক্ত অপর কোন সংস্কৃতি অথবা মূল্যবোধের সৃষ্টি হচ্ছে না। হয়ত বা সমাজের আযুল পরিবর্তন ছাড়া বিত্তকৌলীন্যের সমাজে পূর্বোক্ত ধরণে দু-চারটি নৃতন মূল্যবোধের, দীপ কৃষ্টি করা যায় না।

তবে সমাজ পরিবর্তানের প্রক্রিয়া আমাদের বর্তমাণ আলোচ্য বিষয় নয়।

কথা হচ্ছিল বিস্তকৌলীন্য অথবা অর্থনির্ভর সমাজ-ব্যবস্থা সম্বন্ধে। এর বৈশিষ্ট্য হল-_জাতি (ব্রাঙ্ষণ, কায়স্থ ইত্যাদি) অথবা বয়স এমনকি চরিত্রের

শিল্পায়ন বাঙালীর সামাজিক নেতৃত্ ১৯১,

গুণপনার বদলে সামাজিক নেতৃত্বের জন্ত কেবল বিত্তেরর পরিমাণই মানদণ্ড হওয়া পূর্বেও জমিদার মহাশয় গ্রামের অনুষ্ঠানাদির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন |" কিন্তু তার সে নেতৃত্ব ছিল প্রধানত শোভাবর্ধনের জন্য এখনকার সামাজিক, নেতাদের মত তাদের নেতৃত্ব এমনভাবে (একটা রাজনৈতিক শব্ধ ব্যবহার করার প্রলোভন হচ্ছে) সর্বাত্মক ছিল.না। আজকের ক্লাব-সঙ্ঘের এইসব সামূজিক নেতারাই স্থির করেন যে রবীন্দ্রয়ন্তীতে কোন্‌ সাহিত্যিককে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কোন্‌ আর্টিস্টকে এবং পুজার উদ্বোধন করতে কোন্‌ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানে। হবে। প্রপঙ্গত বলে রাখি এইসব ক্লাব-সজ্ছে যেসব করিৎকর্ম]া তরুণদের দেখা যায় এগুলির সামাজিক নেতা বলতে তাদের থেকে ভিন্ন, অধিকাংশ সময়ে অন্তরালবর্তী আরও প্রবীণ কাঞ্চনমূল্যে নৈকত্তকুলীন নেতাদের প্রতিই ইঙ্গিত করা হচ্ছে এইসব দৃষ্টিগোচর তরুণদের দল অধিকাংশ: ক্ষেত্রেই মিছিলের জনতা, নেতার নির্দেশে যেসব শ্পোগান দিচ্ছেন, তার অধিকাংশের অর্থও জানেন ন]।

অর্থ রাজনৈতিক ক্ষমতার সম্বন্ধ কুট তার ডিমের মত। একটি থেকে অপরটির শুধু হ্ৃ্টি নয় কোন্টি আগে কোন্টি পরে ন্যায়শাস্ত্রের তর্কও . মীমাংসার অতীত তাই ঘুরিযন-ফিরিয়ে বিত্তকৌলীন্য রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। এই কারণেই তো লাখ টাকার কালীপুজার এন্ুষ্ঠানে মন্ত্রী রাজনৈতিক নেতাদের দেখ! পাওয়া এত সহজ

শিল্পায়ন ব্যাপক হবার ফলে সনাতন ঘরগৃহস্থালিই_ চেহারাও পাল্টে গেল। অবশ্ঠ সামাজিক নেতৃত্বের পরিবর্তনের দিক থেকে এর যে অংশ সবচেয়ে বেশী, গুরুত্বপুর্ণ, ত। হল_-নারীদের কেবল ঘরগৃহস্থালি সম্তানপালনের বদলে কল- কারখানা অফিস-আদালতে যোগদান। শিল্পায়নের ফলে এমনটা হয্ননি, শিল্পায়ন আঘিক সমন্তায় পীড়িত বাঙালী সমাজের নারীদের আঘিক স্বাধীনতার স্যোগ করে দিয়েছে এমন অভিমতও ব্যক্ত করা যায়। কিন্তু তাতেও মূল অবস্থার পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ শিল্পায়নের পর কেবল ঘরকন্নাই বাঙালী মেয়েদের জীবনে একমেব হয়ে রইল না। চাকুরির মাধ্যমে তারা আধিক স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ায় পারিবারিক এবং সামাজিক সম্বন্ধের ক্ষেত্রেও পুনধিন্যাস ঘটল। আর এর পরিণাম সামাজিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও পড়তে বাধ্য কিন্ত, বঙ্গললনার আধিক স্বাধীন তা সামাজিক স্বাতন্থয স্বয়ং এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনার বিষয় বলে এখানে কেবল তার প্রতি ইঙ্গিত করেই ক্ষান্ত হতে হবে।

বাঙালীর সামাজিক নেতৃত্ব--আগামী শতাব্দীর প্রস্ততি

"বাঙালীর সামাজিক নেতৃত্বের পালাবদলের যূলে স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষবাহিত রাজনীতি, শ্রমশিল্পের প্রসার তজ্জনিত নাগরিক জীবন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, মন্বম্তর এবং দেশধিভাগের ফলস্বরূপ উদ্বাস্তর সমস্থ! প্রমুণ অনেক কারণ তবে এর মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী হল রাজনীতি, অর্থব্যবস্থ] প্রশাসনের ষুষ্ম সহায়তায় যা আজ বাঙালীসমাজে অদ্বিতীয় বলশালী শক্তিরপে মাথা তুলে দাড়িয়েছে

আরও একটি কারণে রাজনীতি আজকে পশ্চিমবঙ্ষে-_সমগ্র ভারতবর্ধসহ্‌ আধুনিক বিশ্বের সর্ধত্র__সর্ধশক্তিমান ব্ূপ ধারণ করতে চলেছে হল কল্যাণব্রতী রাষ্ট্রের ধ্যান-ধারণ]

রাষ্টুরূপী যন্ত্রের শ্বত্রপাত কেমন করে হল সম্বন্ধে কোন সর্বজনস্বীকুত তথ্য এখনও আমাদের জানা না থাকলেও একথা মোটামুটি বিশ্বাস করা যায় এটা দানা বেধে ওঠে “ছুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের” জন্যই অর্থাৎ যাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কর! বলা হয়, প্রধানত তারই জন্ত। কিন্তু নানাধরণের সমাজবাদী রাষ্ট্রদর্শন আন্দোলন এসে রাষ্ট্রের ভূমিকা সম্বন্ধে এই দীর্ঘদিনের বিশ্বাসে মৌলিক পরিবর্তন ঘটাল সমাজবাদী নান! মুনির নানা মত সত্বেও একথা বল৷ অন্যায় হবে না যে তাদের সামনে লক্ষ্য ছিল দরিদ্র নিপীড়িত নিগৃহীত অর্থাৎ এক কথায় সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য কিছু করা, পলিজা ফেয়ার নীতি গ্রহণ করে কেবল রেফারীর ভূমিকা অবলম্বন করা নয়। বিংশ শতাব্দীর আধুনিক রাষ্ট্র তা সে সমাজবাদী হোক অথবা গণতন্ত্রী কিংবা পুঁজিবাদী নামে খ্যাত হোক, দেশের অনগ্রসর অংশের জন্য কোন না কোন রকমের কল্যাণযূলক কাজে তাকে নামতেই হবে। দ্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ধ- সহ পশ্চিমবঙ্গ তার ব্যতিক্রম নয়। অর্থাৎ সর্বাত্মক রাষ্ট্রের জয়জয়কার

আজকে সরকারের হাতে তাই শিক্ষা, সংস্কৃতি থেকে আরম্ভ করে ব্যাস্ব, ব্যবসা, কারখান! ইত্যাদি জন্ম থেকে মৃত্যু ( একেবারে শব্বার্থে, কারণ ভূমিষ্ঠ হবার হাসপাতাল থেকে নশ্বর দেহ ভম্মীভূত হবার শ্মশানঘাট ) পর্যস্ত যাবতীয়

বাঙালীর সামাজিক নেতৃত্ব_-আগামী শতাব্দীর প্রস্ততি ১৯৩

ব্যবস্থার কর্তৃত্ব দায়িত্ব। আর সরকারের উপর কর্তৃত্বের চাবিকাঠি রাজনীতির কাছে। রূপকথার রাজপুত্র রাক্ষদদের প্রাণ যে ভোমরার মধ্যে ছিল তাকে করতলণত করে তা-বড তা-বড রাক্ষসদের শায়েস্তা করেছিল। আর আজকের রাজনীতি ধুরদ্ধরেরাও রাষ্ট্যন্্টির উপর কর্তৃত্ব কাষেম করে জনজীবনের সবকিছুর হর্তা কর্ত। বিধাতা হয়ে বসেছেন আজকের পশ্চিমবঙ্গ এর ব্যতিক্রম নয়।

অথচ গণতন্ত্র কেবল প্রাপ্তবয়স্ক ভোটের আধারে নির্বাচিত অথবা লোকসভা- বিধানসভার দ্বার] নিয়ন্ত্রিত সমীজব্যবস্থা নয। এর মূল কথা হল শ্বাধীনতা-_ সর্বস্তরে ব্যাঞ্চ স্বাধীনতা অবশ্ঠ জনসাধারণের এই স্বাধীনত! যে স্বেচ্ছাচারের অন্থমতি নয়, একথা খুলে বলার অপেক্ষা রাখে না।

স্তরাং কেবল অর্থব্যবস্থা, কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অথবা ব্যাঙ্থ- বীমাই নয়, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, সমাজসেবা এবং এমনকি মন্দির তীর্থ- স্থানগুলির উপরেও সবকারী কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রণ আদৌ সুস্থ সামাজিক ব্যবস্থার নিদর্শন নয়। সমাজের তাবৎ কার্ধকলাপের নেতৃত্ব পরিচাঁলন-ব্যবস্থা থাকবে সরকাবের ( অর্থাৎ মুষ্টিমেয রাজনীতিবিদ আমলাদের ) হাতে এবং সে সমাজকে গণতান্ত্রিক ব৷ স্বাধীন আখ্যা দেওয়! যাবে--এমন কোন অশস্তব কল্পনা যেন আমর! মনে ঠাই না দিই সমাজের নেতৃত্ব তার কর্তৃত্ব এর ভিন্ন ভিন্ন অগ্গের মধ্যে ছড়িয়ে ন! পড়লে, সে সমাজ স্বাধীন ব! গণতান্ত্রিক হতে পারে না অর্থাৎ যা চাই তা হল আজকের মত এককেন্দ্রিক সমাজ নয়, বহুকেন্দ্রিক সামাজিক নেতৃত্ব-_-আধুনিক রাজনীতি সমাজ/বজ্ঞানীরা যাকে প্রুরালিস্ট সমাজ বলেন।

আর আজকের এই যে এক অর্থাৎ রাজনীতিকেন্দ্রিক সমাজ, এর নেতা কারা? ম্বাধীনতার পুর্বে এদেশে রাজনীতি দেশসেবারূপে পরিচিত ছিল এবং দেশের নেতারাও মোটামুটি সে ভূমিকা পালন করেছেন কিন্তু স্বাধীনতার পর এদেশের রাজনৈতিক নেতৃহ্থের চারিব্রধর্মেও গুণগত পরিবর্তন হ্যেছে। স্বাধীনতা-উত্তর রাজনৈতিক নেতৃত্ব মোটামুটি কেরিয়ারিজম ছাড়া আর কিছু নয়। কেউ কোন দগ্চরের নিয্পপদের কর্মচারী হন ভবিষ্যতে বড়বাবুর আসন অলঙ্কত করার জন্য, রাএনৈতিক দলেও কর্মীরা আসে ধাপে ধাপে সম্পাদক- সভাপতি এবং তারপর বিধানপসভা-লোকসভার সদন্য মন্ত্রী হবার জন্ত। আয়ারাম-গয়ারামদের ভূমিকার কথা বাদ দিলে এই কেরিয়ারিজমকে দোষও দেওয়া যায় না যে-কোন কাজেই মানুষ স্বীকৃতি উন্নতি তো চাইবেই।

বা.-১৩

১৪৪ বাঙলা বাঙালী

কয়জন আর গীতায় উক্ত অনাসক্ত কর্মে সন্তুষ্ট থাকতে পারে ?

বলা বাহুল্য রাজনীতির ক্ষেত্রে পূর্বোক্ত স্বীকৃতি উন্নতির অর্থ হল আরও টাকা এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করা। রাজনীতি থেকে তাই দেশসেবার মানসিকতা অনৃশ্ত হয়ে গিয়ে টাকা 'ও ক্ষমতার মানসিকতা এসেছে এই কারণে রাজনীতি থেকে ভদ্র-মধ্যবিত্তদের নেতৃত্ব চলে গিয়ে আযাডভেরিস্টদের নেতৃত্ব প্রতিঠিত হয়েছে, টাক। ক্ষমতালোভের অন্যতম কারণ 'এই মানসিক পরিবর্তন |

বিশ-ত্রিশ বখ্সর পূর্বে এইভাবে রাজনৈতিক দলপমূহে ধারা স্বেচ্ছাসেবক- রূপে যোগদান করেছিলেন সিনিয়রিটির নিয়মাুযায়ী তারা এখন রাজনৈতিক নেতৃত্বে কাঠামোর মধ্যভাগে তো বটেই, কেউ কেউ শিখরদেশেও পৌছে গেছেন শীদ্রই “সব লাল হো! জায়েগ।” |

স্থতরাং এই রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাভে সামাজিক নেতৃত্ব চলে যাওয়। আদৌ প্রগতি নয়, বরং অধোগতি-_-একথা বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এখনই এই সামাজিক নেতৃত্বের পালাবদলের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে রুখে না দাড়ালে অদূর ভবিষ্যতে বোধহয় আর সে সুযোগ পাওয়াও যাবে না হিটলারের “কালো শার্ট” মন্তানদের বিরুদ্ধে রুখে ন] দাড়িয়ে সংস্কৃতিগধী জার্ধান জাতি যে মহা ভুল করেছিল, তার উদাহরণ তো আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে--বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাধবে কে?

সমাজের প্রাণভোমরা রাজনীতি-ধুরন্বরদের হাতে প্রায় চলেই গেছে। তবু এরই মধ্যে ধারা! রাজনীতির এই সবগ্রাপী এবং সর্বনাশী ভূমিকার বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করতে পারেন, তারা হলেন বাঙালী বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এদের মধ্যেও ঘুণ ধরেছে। ভয় এবং লোভের কারণে এদের মধ্যে অনেকেরই “সেই একটি প্রতিভা ন& ( মিন্টনের 0] 1319 13117017699 স্মরণ করুন )। তবু গোষ্ঠী হিসাবে এরাই পারেন রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাত থেকে সমাজজীবনকে মুক্ত করে এক বহুমুখী সামাজিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য জনমানসকে প্রস্তুত করতে।

আর কিছু না হোক, রাজনৈতিক নেতৃবুন্দকে যেন শিল্প-সআহিত্যা-সংস্কাতি- শিক্ষা-সমাজসেবা' প্রভৃতি রাজনীতি বহিভূতি বিষয়ে£ফতোয়া জারী করতে না দেওয়া হয়। ফতোয়া অবশ্ঠ তার] জারী করবেন, যতদিন সেই ফতোরায় কান ; দেবার মত মানুষ থাকবে। প্রয়োজন সেইস্ব ফতোয়াকে উপেক্ষা করে তারের ফতোয়। জারী করার মানসিকতার গ্বাভাবিক ম্বত্যু ঘটতে দেওয়া প্রয়োজন ;

বাঙালীর সামাজিক নেতৃত্ব-.আগামী শতাব্দীর প্রস্তুতি ১৯৫

এইসব ক্ষেত্রের কর্মীদের উপর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ছড়ি ঘোরাবার প্রবণত্তাকে বন্ধ কর]।

এর অন্যতম বাস্তব পস্থা হল রাজনীতিবিদদের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিক্ষা সমাজসেবাসহ বিজ্ঞান-ইতিহাস-দর্শন-ধর্ম ইত্যার্দি বিষয়ের অনুষ্ঠান এবং সভা- সমিতিতে ম্ধ্যমণির স্থান ন। দেওয়া এবং তাঁদের শ্রীমুখনিঃস্থত বাণী বিতরণের স্যোগ বন্ধ করা। পূর্বোক্ত রাজনীতির সম্বন্ধবজিত বিষয়ের অনুষ্ঠানের উদ্ভোক্তার। সাধারণত কিঞ্চিং আথিক লোভে অথবা সংবাদপত্রে নান প্রচারিত হবার মোহে রাজনৈতিক অর্থাৎ সরকারী নেতাদের দ্বারস্থ হুন। এই সামান্য দুর্বলতার জন্য সমাজ এবং সমগ্র সামাজিক কাঠামোর কী প্রচণ্ড ক্ষতি তারা করছেন সেকথা তার] বিস্থৃত হন।

বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম সাংবাদিকদেরও ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা! আছে।

ংবাদপত্রে রাজনীতিসুরদ্ধরদের এত প্রাধান্য দেবারও কারণ নেই। রাজনীতি-

ব্যবসায়ীদের আবোল-তাবোল ছাপার জন্য সংবাদপত্রে স্থান থাকে কিন্তু সমাজ- সেবার অজ্ম্র নিদর্শন, মানবীয় গুণাবলীর আদর্শ প্রকাশ--পরার্থে আত্মত্যাগের ঘটনার কথা প্রকাশিত করে আর সবাইকে উদ্বদ্ধ করার সামাজিক দায়িত পালন করতে তাদের তেমন উত্সাহ দেখা যায় না। ব্যাপারের যুলে মালিকদের নীতি অথবা হস্তক্ষেপের বদলে সাংবাদিকদের অভ্যামলের দাসত্ব চিন্তার জড়তাই অধিকতর ক্রিয়াশীল বলে আশঙ্কা হয !

বাঙালীর সামাজিক নেতৃত্বের এক যুগসদ্ধিক্ষণ বিংশ শতাব্দীর এই শেষার্ধ। বাঙালী বুদ্ধিজীবী এপময়ে কি ভূমিকা নেন তার উপরই আগামী শতাব্দীর বাঙালীর সামাজিক নেতৃত্ব এবং সেই কারণে সামাজিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে

আজকের পশ্চিমবঙ্গ আগামীকালের ভাবনা

আজকের অর্থাৎ ১৯৯৪ হ্রীন্টাব্দের প্রাক্কালে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীর সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা কি-_-এই প্র্থ উঠলে সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমরা বোধহয় এখনই জবাব দেব এবং তা হল মৃলাবৃদ্ধি বেকার সমস্যা প্রথমটি নিয়ে আমরা বিশদ আলোচনা করন না কারণ এটি মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপার তবে সামান্তভাবে এর কারণের প্রতি ইঙ্গিত করব-_কেননা দ্বিতীয় সমস্যাটির সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে। যে-কোন উন্নয়নশীল দেশে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের জন্ত সঞ্চয় করার উদ্দেস্টে জনসাধারণের ক্রয়শক্তির একাংশকে বর্তমান ভোগ্যপণ্য ক্রয় কর। থেকে নিরস্ত রাখতেই হয় এবং তার জন্য কিছুট। মূল্যবৃদ্ধি অপরিহার্য কিন্তু ভারতের মূল্যবৃদ্ধি অভাবনীয় এবং তার মূলে রয়েছে একটানা ঘাটতি বাজেট, কোটি কোটি টাকার সরকারী ব্যয়, কালো টাকার দোর্দগু প্রতাপ ইত্যাদি সমন্তার প্রতিবিধানের ক্ষমতা এক। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নেই'। ব্যাপারে অগ্রণী হতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে

তবে বেকার সমস্যা সম্বন্ধে একথ! খাটে না, কারণ এর সমাধানের আ'গ্যস্ত দায়িত্ব এই রাজ্যের পশ্চিমবঙ্গে বেকারের সঠিক সংখ্যা কত সম্বন্ধে নানা মত থাকলেও এই সংখ্যা ত্রিশ লক্ষের কাছাকাছি বললে সত্যের অপলাপ হবে না এবং এর ভিতর আট থেকে দশ লক্ষ হল শিক্ষিত বেকার

যুক্ফ্রণ্ট সরকারের সময় বেকার ভাতা! দেবার কথা৷ উঠেছিল এবং বর্তমান সরকার চাকরি দেবার কথা বহুবার ঘোষণা করেছেন কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের আধিক অবস্থায় ( এবং সম্ভব-অসম্ভব যত কেন্দ্রীয় সাহায্যই পাওয়া যাক না কেন) সব বেকারকে দৈনিক «* পয়স৷ বেকার ভাতা দেওয়াও এক অসম্ভব কল্পন]। তাই প্রস্তাবকে রাজনৈতিক স্টাপ্টের বেশী গুরুত্ব দেবার দরকার নেই সব বেকারকে ভাতা দেবার প্রবক্ত। নৃতন সরকার প্রশাসনযস্ত্রের পুর্ণ কর্তৃত্ব পাবার পর কত জনকে চাকুরী দিয়েছেন--এ এক সঙ্গত প্রশ্ন হলেও তা এখনকার মত মূলতুবী রেখে দেখা যাক আরও সরকারী কর্মচারী নিয়োগ বাঞ্ছনীয় কিনা সরকারী কর্মচারীদের মাইনে ভাতা দিতে হয় জনসাধারণ প্রদত্ত রাজন্ব

আজকের পশ্চিমবঙ্গ আগামীকালের ভাবনা ১৯৭

থেকে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ সরকারী আধা-সরকারী কর্মচারীর বেতন-ভাতার জন্য আদায়ীকৃত রাজন্বের বেশ মোটা! একটা অংশ (সম্ভবত অর্ধেকেরও বেশী) খরচ হয়ে যায়। আরও সরকারী কর্মচারী নিয়োগের অর্থ আরও ব্যয়, তাঁর অর্থ উন্নয়নমূলক কাজ বাদ দিয়ে অথবা ন্‌তন করে চাপিয়ে এই অর্থের সংস্থান অর্থাৎ আরও মৃল্যবৃদ্ধি। আর সরকারী দণ্তরের সঙ্গে ধাদের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে তার। জানেন যে এমনিতেই সব দপ্তরে কতটুকু কাজ হয় এবং কী পরিমাণ বাড়তি কর্মচারী রয়েছেন সরকারী দপ্তরগুলিতে আরও কর্মচারী নিয়োগ করলে পাক্কিনসনের বিখ্যাত্র ল” অনুসারে কাজ কমবে ছাড়া বাড়বে না। অতএব পশ্চিমবঙ্গের বেকার সমস্যার সমাধান করতে হলে উৎপাদনযূলক কর্ণের সংস্থান করতে হবে। উৎপাদনযূলক অর্থাৎ যে কাজ করে যূলধনী (0৪801021 ) অথবা ভোগ্য (00750791 ) পণ্য উৎপন্ন হয় এই প্রসঙ্গে তাই ভাবতই কলকারখানার কথা এসে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষের অন্ঠতম শিল্পোন্নত রাজ্য কিন্তু এখানকার সব কল-কারখানায় নিযুক্ত মোট শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে আট লক্ষের ( এর ৬*% আবার অবাঙালী ) বেশী নয়। এবং এর চেয়েও গুরত্বপূর্ণ কথা হল এই যে বিগত কয়েক বত্সর এই সংখ্যা বিশেষ বাড়েনি যদি ধরে নেওয়া যায় যে কাচামাল, যন্ত্রপাতির পরিবর্তন আধুনিকীকরণ, শ্রমিক-মালিক বিবাদ, বিনিয়োগের আবহাওয়া তৈরী ইত্যাদি পমন্তার সমাধান হয়ে যাবে (ব্যাপারটা আদে। পৃহজ নয়) তবুও বৃহৎ যন্ত্র শিল্পের দ্বার রাজো প্রতি বছর যে নৃতন ছয় লক্ষ হারে কর্মপ্রার্থীর হ্ষ্টি হচ্ছে তাদের সবার কর্মসসস্থান হওয়া অসম্ভব এই অবস্থায় কৃষির কর্মলংস্থানের ক্ষমতার কথা বিচার করতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের কৃষিযোগ্য জমি গ্রামের অধিবাসীদের মধ্যে ভাগ করলে ৩৬ শতকের বেনী কারও ভাগে জুটবে না। জমি খুবই কম হলেও সেচ এবং উন্নত ধরণের বীজ সার ইত্যাদির ব্যবস্থা করলে কৃষিই গ্রামাঞ্চলের অসংখ্য বেকারকে কাজ দিতে পারে এছাড়া সেচের ব্যবস্থা করা, পাম্প উতৎ্পানন মেরামত, সার উন্নত ধরণের বীজ উৎপাদন, বিক্রী তার পরিবহণ এবং কৃষিজাত পণ্য বিপণনের দ্বারাও অনেকের অন্্পংস্থান হতে পারে। কৃষির উৎপাদন বাড়ানোর আর একটি লাভ আছে বর্তমানে খাগ্শস্ত থেকে শুর করে ডাল, তৈলবীঞ্জ এবং এমনকি ভাতে খাবার লেবু কল| বাঁ ডিমের মত জিনিসেও

১৯৮ বাঙলা বাঙালী

রাজ্য হ্বয়স্তর নয়। খাগ্ঘদ্রব্যের উৎপাদন বাড়লে চাহিদা যোগানের নিয়ম অনুসারে এসবের দাম কিছুট1 কমার সম্ভাবনা |

'তবে কৃষির উন্নতি দীর্ঘমেয়াদী যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ পরিকল্পনা পশ্চিমবঙ্গে সেচের ব্যবস্থা আছে মাত্র শতকরা দশ ভাগ জমিতে, যার এক ক্ষুদ্রাংশে (৩%) আছে দোফপলী চাষের ব্যবস্থা বিদ্যুৎ শতকর। আট দশ ভাগের বেশী গ্রামে যায়নি এবং বিদ্যুতের স্থায়ী অভাবের ফলে শিল্পাঞ্চলেই যখন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তখন দীর্ঘ দিনের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে সেচ বা যন্ত্রশিল্লের জন্য খুব বেশী বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। এমত অবস্থায় অবিলম্বে গ্রামের বেকার আংশিক বেকারদের কাজ দিতে হুলে কুটিরশিল্প ছাড়া গত্যন্তর নেই। বর্তমান অবস্থাতেই নয়, এখনও দীর্ঘকাল কৃষিকর্ষমের পর গ্রামবাসীদের যে বাধ্যতা- মূলক অবকাশ থাকে সেই সময়ে কিছু উৎপাদনমূলক কর্মসংস্থানের জন্য কুটিরশিল্পই একমাত্র ভরসান্বরূপ থাকবে কুটিরশিল্পের নীতি হবে গ্রামের কাচামালকে গ্রামবাপীর বাধ্যতামূলক বেকারত্বের সময়কে কাজে লাগিয়ে দেশবাসীর প্রয়োজনীয় ভোগ্য উপকরণ উৎপাদন করা এই নীতিকে সামনে রেখে যে-কোন ধরণের প্রযুক্তিবিদ্ঞা যন্ত্র কুটিরশিল্লে প্রবর্তন করা যেতে পারে এবং প্রয়োজনে ডিজেল বা বিদ্যুৎ শক্তির সহায়তা নেওয়া হবে তবে সরকারকে একটি বিষয়ে সংরক্ষণ দিতে হবে এবং তা হল এই যে জাতীয় স্বার্থে যেযে পণ্য কুটিরশিল্পে উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাদের বুহৎ যন্ত্র শিল্পে উৎপাদন করতে দেওয়া হবে না। কারণ মানুষের পেশী৷ অথব। ছোটখাট যন্ত্রের পক্ষে অত্যাধুনিক যন্ত্রের সঙ্গে অসম পজিযোগিতা করা সম্ভব নয় এবং এজাতীয় প্রতিযোগিতায় নেমে দেশের সীমিত সম্পদের (£5509:০5) অপচয় করাও অযৌক্তিক।

বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের বেকার, আংশিক বেকার ধারা লাভজনকভাবে কর্ষে নিযুক্ত নন তাদের জন্য কুটিরশিল্পের অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে দারিত্র্য যে কি ভয়ঙ্কর তা এরাজ্যের শতকর!। সত্তর ভাগ অধিবাসী দারিদ্র্যের সীমারেখার নীচে (অর্থাৎ মাসে যারা! কুড়ি টাকা নিজের জন্য ব্যয় করতে পারেন ন] ) বললেও স্পষ্ট বোঝ] যাবে না। পরিনংখ্যান অনেকটাই নর্যক্তিক ধার] চোখ মেলে আমাদের চারপাশের কৃষক-শ্রমিকদের অবস্থা, ফেরিওয়ালা, মুটে, ছোট দোকানী অথবা! ধোপা- নাপিতের মত বৃত্তিতে নিযুক্ত মানুষদের হাড়ির হালচাল জানতে আগ্রহী, তারা

আজকের পশ্চিমবঙ্গ আগামীকালের ভাবনা ১৯৯

জানেন যে চৌরঙ্গী, গড়িয়াহাট, নিউ-আলিপুর অথবা আসানসোল-ুর্গাপুরই পশ্চিমবাউল! নয় শহর কলকাতায় শুধু রেজিস্টার্ড বস্তির সংখ্যা তিন হাজার যেখানে পনের লক্ষ নরনারী শিশু (কলকাতায় মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০০% ) পশ্তর জীবন যাপন করেন এবং যেখানে বর্তমান সভ্যতা -সংস্কৃতি রাজনৈতিক আধিক ব্যবস্থাকে এক প্রচণ্ড বিক্ফোরণে উড়িয়ে দেবার জন্য বিপ্লবের বাক্দ তিলে তিলে সংগৃহীত হুয়। পশ্চিমবঙ্গের কুর (£২০1) ) নিওন আলোয় ঝলমল দুর্গাপুরের মাত্র দশ মাইলের মধ্যে বাকুড়া জেলার শহরজোড়া, হাট-আশুরিয়ার মত গ্রামের ক্ষেতমজুরর1 বছরে ১৩৫৬০ টাকার বেশী রোজগার করতে পারেন না ( তদানীন্তন শ্রম কমিশনার প্রীদেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবেদন, জুন ১৯৭২। তাঁর মতে এর। যে টি'কে আছে সেটাই এক পরমাশ্চর্য ঘটনা )। বীকুড়া জেলার সতেরোঁটি মৌজায় আর একটি সমীক্ষা অহ্থদারে (শ্রম দণ্তরের ডেপুটি কমিশনার ডঃ পারুল চক্রবর্তী ) এদের বাৎসরিক আয় ১১৯৯৬ টাকা মাত্র। (দৈনিক যুগান্তর, সম্পাদকীয়, ১১-৭-১৯৭৩ )। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামবাসীদের জন্য অধিকতর কর্মসংস্থান করে আমরা যদি তাদের গ্রামেই ধরে রাখতে ন! পারি তবে পঙ্গপালের মত এঁ বৃতুক্ষু অর্ধউলঙ্গ নর-নারীরা এসে ১৩৫৭ সনের মত কলকাতা দুর্গাপুর-আসানসোলের মত নগরীবঝ পথঘাট ছেয়ে ফেলবে। চৌরঙ্গী গড়িয়াহাটের মত সমুদ্ধ এলাকায় এখনই গ্রাম থেকে আগত এই জাতীয় মানুষদের দেখা যাস চিরকাল এরা ক্রী-পুত্রকন্যার হাত ধরে করুণ কগে ভিক্ষা! চাইবে না। এই জনশ্রোত যে শুধু সি. এম. ভি এ.-র নগর-উন্নয়ন পরিকল্পনাকে বানচাল করে কলকাতাকে বসবাসের অযোগ্য করে দেনে তাই নম, এরাই হবে নগর সভাতাকে ধ্বংপ করার বিপ্রব স্কুলিঙ্গ বর্বর হুনেদের আক্রমণে সমৃদ্ধ রোমাঁন সভ্যতা বিধ্বস্ত হয়েছিল--এ তো ইতিহাসেরই সাক্ষ্য

|

কিস্তু পর্যন্ত যা বল! হল তা আসলে মূল বক্তব্যের ভূমিকা মাত্র। কারণ পশ্চিমবঙ্গের এই সমস্যার স্বরূপ সন্থন্ধে নৃতন কিছু বল! হয়নি বঙ্গদেশ খণ্ডিত হুবার পূর্ব থেকেই আচার্ধ প্ররছু্চ্্র রায় থেকে শুরু করে একালের শ্রীযুক্ত প্গীলাল দাশগুপ্তের মত বাঙালীর কল্যাণকামী অনেকেই বাঙালীর এই রোগ

২৭৯ বাঙলা বাঙালী

নির্ণয় করেছেন। সমস্তা হল রোগের চিকিৎসা সম্বন্ধে। সংক্ষেপে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা! বাধবে কে?

বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাধা বা নেতৃত্বের সমন্তার গভীরত৷ উপলব্ধি করার জন্য একটা ছোট উদাহরণই যথেষ্ট। উতৎপাদনযূলক শ্রমের মাধ্যমে বাঙালীর, বেকার সমন্যার সমাধান করতে হলে শিক্ষাব্যবস্থাকেও উৎপাদনমূলক কর উচিত-__-এটা বুঝতে খুব একটা যুক্তিজাল বিস্তার করতে হয় না কারণ বর্তমানে যখন পশ্চিমবঙ্গে সাক্ষরের শতকরা হার ত্রিশ জনের মত তখনই প্রতি বৎসর উচ্চতর মাধ্যমিক স্কুল ফাইন্যাল পরীক্ষা! দেয় বছরে প্রায় আড়াই লক্ষ ছাত্রছাত্রী যদি এর শতকরা চল্লিশ ভাগও উত্তীর্ণ হয় ( অনুত্তীর্ণের হার এব্ূপ হওয়। আবার শিক্ষাব্যবস্থার দেউলিয়া অবস্থা এবং জাতীয় সম্পদ যুবশক্তির প্রবল অপচয়ের নিদর্শন) এবং তার অর্ধেক যর্দি আবার উচ্চতর শিক্ষা বা প্রযুক্তিবি্যা শেখার জন্য যায় অথব। মেয়ের! বিয়ে করে সংসারী হয় তাহলে কেবল স্কুলের শিক্ষাপ্রাপ্ত কর্মপ্রার্থীর সংখ্য। বছরে হয় ৫* হাজার জন। এছাড়া গ্রাজুয়েট পোস্ট গ্রাজুয়েট কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা রাজ্যে বছরে কোন্‌ না হাঁজার পনেরে৷ জন হবেন? এবং এই ৬৫ হাজার জন কর্মপ্রার্থী প্রচলিত শিক্ষার জন্য পাকা ছাদের তলায় পাখার নীচে বসে হোয়াইট কলার জব বা বাবুদের কাজ ছাড়া অপর কিছু করার পক্ষে অন্ুপযুক্ত দীর্ঘ দিন রোদে-জলে চাষের কাজ করার অভ্যাস না থাকায় এবং কল-কারখানায় প্রয়োজনীয় কঠিন পরিশ্রম করতে অভ্যস্ত ন। হওয়ায় এরা আর কোন ধরণের কাজের পক্ষে উপযুক্ত নন। পশ্চিমবঙ্গের অর্থব্যবস্থা পু'জিবাদী, সমাজবাদী অথব| প্রচ্ততম সামাবাদী যাই হোক না কেন বছরে এতগুলি বাবুদের কাজ স্থষ্টি হবার কোন সম্ভাবনাই নেই। আর রাজ্যের সব শিশুর জনা যখন শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে ( এট। অবশ্যই কর] উচিত্ব। কারণ অশিক্ষা গণতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে না ) তখন আরও কত গণ বেশী যুবক-যুবতী বাবুদের কাজ চাইবেন ! অতএব শিক্ষাব্যবস্থা পাণ্টে সবাইকে শিক্ষিত চাষী বা মজুর করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। এই সহজ সরল কথাট1 মহাত্মা গান্ধী থেকে শুক করে ইন্দিরা গান্ধী পর্বস্ত কত নেতাই তো বললেন, কত কমিটি-কমিশনের সুপারিশ পাওয়া গেল এর সপক্ষে অথচ শিক্ষাক্ষেত্রের কায়েমী স্বার্থের প্রবল চাপে অচলায়তনে কোন চিউ পর্যন্ত: ধরল না।

এমনকি বাঘ। বাঘ! বিপ্রবী নামে আত্মপরিচয়দানকারীরাও এক্ষেঞ্জে

আজকের পশ্চিমবঙ্গ অগামীকালের ভাবনা ২০১.

শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হলেন। এদের কোনজন বললেন অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা বিনা ব্যয়ে দেওয়া হোক। অর্থাৎ এই বিকৃত শিক্ষাই চলুক। কেউবা স্কুল কলেজের লাইব্রেরী পোড়ালেন, পাখা-চেয়ার ভাউলেন বৌম] ফাটিয়ে ছুই- একবার পরীক্ষা ভুল করলেন কিন্তু এরা কেউই বিকল্প কোন শিক্ষাব্যবস্থা যাকে তারা আদর্শ মনে করেন তার নিদর্শন পেশ করলেন না। নিজেদের বৈজ্ঞানিক সমাজবাদের অনুগামী বলে ধারা দাবি করেন, তারা বিজ্ঞানের এই প্রাথমিক স্ুত্রটুক খেয়াল রাখলেন না৷ যে, প্রকুতিতে শূন্যতার স্থান নেই-_ বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে না তুললে প্রচলিত ব্যবস্থাই চলবে, তৃষ্ণার্ত মানুষ পরিষঞ্ার জল না পেলে ঘোল! জলই খাবে। অপর কেউ কেউ শিক্ষার জাতীয়করণ চাইছেন। অর্থাৎ গাঁলভরা বুলির আড়ালে বড় বেশী হলে শিক্ষার ক্ষেত্রে কর্মের কর্মীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা হবে কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার কোন্‌ নেতৃত্বের কথা হচ্ছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় প্রচলিত সরকারের শুধু পাশাপাশিই নয় তার প্রতিদ্বন্দ্বী একটি সমান্তরাল নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতা-সংগ্রামীদের ্বারা। এর যূল ছিল জনপাধারণের মধ্যে হাটে, মাঠে, গঞ্জে, কলকারখানায় স্থতরাং তা! ছিল সার্থক গণনেতৃত্ব যার ভিত্তি ছিল জনশক্তি স্বাধীনতার পর এই নেতৃত্বের চারিত্রধর্ষে পরিবর্তন ঘটল। এর ভিত্তি হল সরকার-_ আরও নিদিষ্টভাবে বলতে গেলে সরকারী প্রশাসনযন্ত্র বা আমলারা। পাঁচ বছরে একবার জনসাধারণের ম্যাণ্ডেট নিতে যাওয়া হয় বটে কিন্তু গ্রশাসনযস্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে ভোট যোগাড় করার সমন্তা্ন অনেকটা সুরাহা হয়। প্রাক্‌-্বাধীনতা যুগের নেতৃত্ব জনসাধারণের মধ্যে থেকে আগুয়ান স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বার! ছৃ্তিক্ষ, বন্যা ভূমিকম্পের মত সাময়িক ছৃর্ষিপাক থেকে শুরু করে জনসাধারণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান অথব1 পথ চলার জন্য রাস্তাঘাট করার যেসব কাজ করতেন তা বন্ধ হয়ে গেল। প্রাক্-স্বাধীনত] যুগের নেতৃত্ব জনশক্তি সংগঠন করে গঠনমূলক কাজ করার যে সিড়ি বেয়ে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব করতলগত করলেন, স্বাধীনতার পর সধাগ্রে তাকেই পদানত করে দূরে সরিয়ে দিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর যুগের ল্লোগান হল--সরকার সব কিছু করে দেবে। সাধারণ মানুষ কেবল মুখ বু'জে ট্যাক্স দিয়ে যাবে সরকার সব করে দেবেন অর্থাৎ স্থায়ী, আমলাদের দিয়ে করিয়ে দেবেন কংগ্রেস, সমাজবাদী, কমিউনিস্ট, জনসঙ্ঘ. ইত্যাদি সব দলের কর্মপন্ধতিই এই। এমনকি নকশালপন্থী নামে পরিচিত. ধার! বর্তমান রাষ্রব্যবস্থার তীব্রতম সমালোচক, দেশনির্মাণের প্রক্রিয়৷ সম্বন্ধে,

২৯২ বাঙলা বাঙালী

তাদেরও এই মত। তাঁদের মতভেদ শুধু রাষক্ষমতা৷ দখল করার পদ্ধতি সম্বন্ষে__ ব্যালটের সহায়তায় নয়, বুলেটের সাহায্যে প্রশাসনযন্ত্রকে করায়ত্ত করতে হবে। দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের বুদ্ধি, কর্মশক্তি, উদ্যম উৎসাহ বাদে কেবল কিছু সংখ্যক আমলাকে দিয়ে রাজ্যের অন্ন-সমস্তারূণী জীবনমরণ প্রশ্নের সমাধান কর] যাবে এক দিবাশ্বপ্র মাত্র হয়ত যুক্তির দিক দিয়ে বর্তমান নেতৃত্বের কেউ কেউ একথা বোঝেন কিন্তু কার্ধত তাঁরা কেউই স্বাধীনতার পরবর্তী এই ছাবিবশ বছরের ইতিহাস থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করেছেন ₹লে মনে হয় না কেবল আমলাতন্ত্রের দ্বার] সমস্যার সমাধান অসম্ভব, চোখের সামনে এই প্রত্যক্ষ প্রমাণ থাকা সত্বেও কংগ্রেস দল মুখে আমলাদের নিন্দাবাদ করেই কর্তব্য শেষ করছেন। আমলাদের পরিবর্তে জনশক্তির উদ্বোধন ব1 গণ-নেতৃত্ প্রতিষ্ঠা করার কোন প্রত্যক্ষ কর্মস্থচি নেই। অথচ যুক্তফ্রশ্টের আমলের সেই অন্ধকার দিনগুলির বদলে এইরকম কিছু একটা হবে এই আশাতেই সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে যুবশক্তি বন্যাঁশ্োতের মত কংগ্রেসের পতাকাতলে সমবেত হয়েছিল। কিন্তু কোন মতে ভোটে জেতা এবং তারপর গদ্দির লড়াই-এর হ'ত- ভাগ্য হাতিয়ার হওরা ছাঁড়া পশ্চিমবঙ্গের ভবিস্তুৎ এই যুবশক্তির কোন সদ্বাবহার হল ন1। বামপন্থী দলগুলি যেমন ১৯৬৭ সালে তাদের প্রতি প্রনল জনসমর্থনের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারেননি, তারপর এই এতগুলি বছরের শিক্ষাও তার! গ্রহণ করেননি আজও তাদের কর্মস্থচি সেই আগ্িকালের শোভাযাত্রা “চলবে না চলবে না” বলে বদ্ধমুষ্টি আশ্ফালন, আর বড় নেশী হলে নিষ্ষলা হরত!ল বা বন্ধ, এইসব কর্মন্থচি যে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সমন্যার সমাধানে আদৌ সহায়ক নয় একথা তাদের কে বোঝাবে।

পশ্চিমবঙ্গবাপীকে এখন কিছু হোম ট্রথ বাস্পষ্ট কথা শোনানে। প্রয়োজন,

তা খুধ শ্রুতিস্থথকর না হলেও উন্নরনের কোন শর্টকাট নেই। ক্ষেতখামাঁর কলকারখানায় মাথাপিছু উত্পাদন বাড়াতে হবে, ভবিষ্যতে লগ্ী করে মাথাপিছু উৎপাদন আয় আরও বাড়াবার জন্য বর্তমানের রোজগারের একাংশ সঞ্চয় করতে হবে। লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীকে উতপাদনযূলক কাজে লাগাতে হবে আর কাজ শুধু আমলাদের দিয়ে হবে না রাজনৈতিক দলগুলির মুষ্টিমেয দাদাদেরও সাধ্য নেই একা কাজ করেন। এর জন্য জনশক্তির সংগঠন গণনেতৃত্ব চাই। সমন্তার ব্যাপকতা যেমন প্রবল, তাতে কোন একক দল, 'বা-কফ্রপ্টের--তা সে ডান অথবা বাম যে ধরণেরই হোক না কেন--ক্ষমতা নেই

আজকের পশ্চিমবঙ্গ আগামীকালের ভাবন! ২*৩

তার মোকাবিলা করে। জনশক্তির উদ্বোধনের জন্য হয়ত রাজ্যে জাতীয় সরকার গঠন করা দরকার, যে সরকার শুধু সব রাজনৈতিক দল নয় এমনকি তার বাইরেও ধোগ্য ব্যক্তি থাকলে তার কর্মপ্রতিভাকে পশ্চিযষবঙ্গ গড়ার কাজে লাগাবে নচেৎ রাজনীতির প্রচলিত ধারার কারণে কোন বিশেষ দল ভালো কথা বললেও পেশাদার বিরোধীর1 তার বিরোধিতা করবেন | রাজনৈতিক উচ্চাশাবঞ্জিত নেতৃত্ব কর্ণধার ন1 হলে সাহস করে স্পষ্ট কথা বলা যাবে না এবং উচিত পথে চলাও সম্ভবপর হবে না। গত ছাব্বিশ বছরের ক্ষমতার রাজনীতি এবং বিশেষ করে ১৯৬৭ সাল থেকে এই ছয়-সাঁত বছরের ইতিহাস বাঙালীর মনে যে সন্দেহবাদ বিশ্বাসের সঙ্গট স্থা্টি করেছে ভাতে সঙ্কীর্ণ দলীয় রাজনীতি দিয়ে প্রশ্চিমবঙ্গের উদ্ধারল1ভের অর আশা নেই

আর একটি কথা সামগ্রিকভাবে সরকারের সাহাধ্য নেওয়া যেতে পারে, কিন্ত তাকেই মোক্ষজ্ঞান করলে চলবে না। সরকারের ভিত্তি হল রাজনৈতিক দূল আমলা গোষঠী। এই ছুইয়ের সীমাবদ্ধতার কথা পুর্বেই আলোচনা করা হয়েছে। কাজের জন্য চাই স্থানীয় নেতৃত্খ। পশ্চিমবঙ্গে শীঘ্র দেশবন্ধু' ্রফুল্লচন্ত্র, নেতাজী বা! শ্বা'মাপ্রপারদের মত নেতার আবির্ভাব হবে না, ধারা দল- মত নিধিশেষে সমস্ত বাঙালীকে নেতৃত্ব দিতে পারেন, তাদের কর্মশক্তিকে সংহত করে গড়ার কাজে লাগাতে পারেন ভবিষ্যতের নেতৃত্ব কলকাতা বাঁ অপর কোন বড় শহর থেকে আসবে আশা করাও ভুল। একে বিকেন্দ্রিত হতে হবে ধার! পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান ব্যাধি নিরসনের জন্য গড়ার কাজের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করবেনণ, আর কে কি করে বানা করে তার অপেক্ষায় না থেকে, নিজেদের সাধ্য ক্ষমতা অনুযায়ী ছোটবড় গঠনকর্মে হাত দিতে হবে তাদেরই

ভাঙা নয়, পশ্চিমব্গকে এখন গড়ার কাজে মন-প্রাণ সমর্পণ করতে হবে। এখন দল-মতের কথ ভুলে সম্মিলিতভাবে কাজ করার দিন যাতে পশ্চিমবঙ্গ বাঙলা বাচে। রাজ্যের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ত কর্মপ্রাতিভা নেতৃত্ব- শক্তিকে জাগরিত করে জনশক্তির অধিষ্ঠান করবার সময় এখন নেতিবাদ নয়, পজিটিভ চিন্তা, কথ! কাজের লগ্ন এখন। ভাঙার জবাব গড়া-_গড়। ছাড়

আর কিছুই নয়।

বাঙালীর সবচেয়ে বড় সমস্ত

বন্ধু জিজ্ঞৰস। করলেন, বাঙালীর সব চেয়ে বড় সমস্তা কি বলতো?

ভাববার জন্ত বিন্দুমাত্র সময় না নিয়েই আমি বললাম, কেন-_বেকারত্ব, উদ্বাত্ত সমন্তা, প্রতিবেশী প্রদেশগ্ুলির সহানুভূতির অভাব, কেন্দ্রের অবিচার ***

আরও অনেক কিছু বলার ইচ্ছা! ছিল আমার কিন্ত বন্ধুর দিকে চোখ পড়াতে থেমে যেতে হল দেখলাম বন্ধু ঈষৎ মাঁথ! নাঁড়ছেন অসহমতির ভঙ্গীতে এবং ত্বার চোখে মুখে প্রচ্ছন্ন অবিশ্বাসের হাসি

আক্রমণোগ্ত ভঙ্গীতে আমি তাই প্রশ্ন করলাম, কেন, বাউলা বাঙালী

কি এসব ব্যাধির শিকার নয়?

বন্ধু প্রপন্ন ভঙ্গীতে উত্তর দিলেন, এগুলি বড় বেশী হলে ব্যাধির উপপর্গ ৭! বাহু লক্ষণ মূল ব্যাধি এর কোনটিই নয়।

কি তবে?

বন্ধু বললেন, আমাকে তো! প্রাচীনপন্থী বল। তাই বলছি আমার মত প্রাচীনপন্থীর কথ! মনে ধরবে কিনা জানি না। বে আমার মতে বাঙালীর সব্৷ চেয়ে বড় সমস্ত হল ভক্তির অভাব

কী আবোল-তাবোল বকছ তুমি, ক্ষুপ্ন ক্ষুব্ধ কঠে আমি বললাম বাঙালী জলছে তার জীবন-মরণ সমস্যায়, অ!র তুমি কিনা এখন তাকে “ভজ গোবিদ্বম্? মার্কা ভক্তির কথা শোনাতে এলে !

দু কণ্ে বন্ধু বললেন, তুমি যাকে “ভজ গোবিন্দম্* মার্কা ভক্তি নাম দিয়েছ, আদে আমি তাঁর কথা বলছি না।

অধীরভাবে আমি বললাম, রাখ তোমার হেঁয়ালী, সহজ কথায় বলত ভক্তি বলতে তুমি কি বোঝাচ্ছ ?

মুদু হেসে বন্ধু বললেন, বলছি ভাই-ধৈর্য ধর ভক্তির অর্থ আমার কাছে শ্রদ্ধা, আত্মবিশ্বাস শ্রমনিষ্ঠার সমন্থয়

বিহ্বলভাবে আমি বললাম, এক হ্েপ্ালীর বদলে তিন হেষালী এবার

বাঙালীর সবচেয়ে বড় সমস্য ২০৫

কোথায় বাঙালীর হরেক রকম জ্বলস্ত সমন্যা আর কোথায় তোঁমার যতরাজ্যের নৈব্যক্তিক নিদান- শ্রদ্ধা আর কিসের কিসের অভাব

আবেগমন্দ্র স্বরে বন্ধু বললেন, হ্যা, এই তিনটির এবং বিশেষ করে শ্রদ্ধার অভাবের জন্যই বাঙালী আজকে শতবিধ সমশ্তার আঘাতে জর্জরিত শ্রদ্ধার অভাব আমাদের সর্বপ্রথম সমস্য]

শ্রদ্ধার অভাব! আমার কণ্ে অকৃত্রিম বিন্ময়।

দৃঢ়কণ্ে বন্ধু বললেন, হ্যা, শ্রদ্ধার অভাব। তবে দ্বিবিধ অর্থে আমি শ্রদ্ধা শব্দটির প্রয়োগ করছি তারপর একটু থেমে যোগ করলেন, এর প্রচলিত অর্থ নিশ্চয় জান--শ্রদ্ধা অর্থাৎ সম্মান

কিঞ্চিৎ বিভ্রান্তের মত আমি প্রশ্ন করলাম, কার আবার অসম্মান করলাম আমরা? তুমি কি অতীতে এক শ্রেণীর বাঙালী, প্রতিবেশী প্রদেশের অধিবাসীদের প্রতি যেসব অসম্মানকর উক্তি করতেন তার প্রতি ইঙ্গিত করছ? কিন্ত সেপব তো বিদেশী শাসকদের অন্বর্তী মুষ্টমেয়_মাত্র মুষ্টিমেয় বাঙালীর কথা, ধার। নিজেদের ডেপুটি ইংরেজ ভেবে শ্বদেশবাসীর প্রতি এঁজাতীয় অশ্রদ্ধাজনক উক্তি করতেন ইংরেজের সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষুদে দোসর হয়ে। কিন্তু জনকতক মতিচ্ছন্ন বাঙালীর অন্যায়ের মাশুল কি সমগ্র বাউলাদেশ বাঙালী কম দিয়েছে? তবে কেন এখনও সেই পুরাতন কথা তুলে আজকের বাঙালীদের খোটা দিচ্ছ? বিশেষ করে সেদিনকার মিথ্যা অহমিকা আজকের এই বিভক্ত বাঙলার হতশ্র! বাঙালীর মধ্যে নেই বললেই চলে। আর কত প্রায়শ্চিত্ত করাতে চাও বাঙালীদের দিয়ে বলতে পার সেকথা? আবেগভরা কঠে আমি অন্যোগ করলাম

সাস্বনার সুরে বন্ধু বললেন, এবিষয়ে আমিও তোমার সঙ্গে সহমত ভাই-_ উনবিংশ কি বিংশ শতান্বীর গোড়ার দিকের কিছু বাঙালীর অপরাধে অথবা। তারই যৎসামান্য অবশিষ্ট অন্থস্থ মানসিকতায় পীড়িত খুচরো ছুই-পাচ জন বাঙালীকে দেখে আজকের সমস্ত বাঙালী জাতটাকে দোষ দেওয়া অযৌক্কিক। আমি “কিন্ত অশ্রদ্ধার কথা বলছি না, যদিও মনে হয় আজকের বাঙালী যে অশ্রদ্ধার ব্যাধিতে পীড়িত সম্ভবত তার মূলে সেকালের ছোট-সাহেব বাঙালীর মানসিকতার প্রভাব থাকা অসম্ভব নয়।

আমি জিজ্ঞান্থ দৃষ্টিতে বন্ধুর মুখের দিকে তাকালাম বন্ধু বলতে লাগলেন, আজকের বাঙলার ভিতর যে অশ্রদ্ধার ব্যাধি, একটু

২৯৬ বাঙলা বাঙালী

চোখকান মেলে তাকালেই তা তোমার নজরে পড়বে ভাগচাষীর জমির" মালিকের প্রতি শ্রদ্ধা নেই, কলকারখানার শ্রমিকের শ্ধু মালিক নয় ম্যানেজার, একজিকি উটিভ বা ব্যস্থাপকদের উপর শ্রদ্ধা নেই। অশ্রদ্ধা 19০1109০081] অর্থাৎ মালিকদেরও তার শ্রমিক বা কর্মচারীদের উপর শ্রদ্ধা নেই।

অধীরভাবে বাধ! দিয়ে গ্লেষের সঙ্গে আমি বললাম, বুঝেছি তোমার বস্তাপচ৷ শ্রদ্ধাতত্ব তুমি কি চাও রুটি-রুজির লড়াই তীব্র হবার পূর্বে শ্রমিক- সমাজ যেমন দাশ্তম্থথে শোষক মালিক-শ্রেণীর প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত থাকত, আবার তোমার সেই প্রতিক্রিয়াশলদের স্বর্ণযুগ ফিরে আম্বক? বিংশ শতাব্দীর এই সপ্তম দৃশকেও তুমি যে এখনও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার জয়গান গাইছ দেখে দুঃখ হচ্ছে। একটু থেমে তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে আমি বললাম, তোমার কি চোখে পড়ছে না যে আজকের বাঙলাদেশে শ্রমিকসমাজ জাগ্রত এবং শ্রেণীসংগ্রাম তাই তীর থেকে তীব্রতর হয়ে এদেশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পথে ধাপে ধাপে এগোচ্ছে?

বিন্দুমাত্র আহত অথবা উত্তেজিত ন1 হয়ে বন্ধু দেখি মিটিমিটি হাসছেন আমি দম নেবার জন্য থামতেই বন্ধু ধীর শান্ত কণ্ঠে বললেন, অশ্রদ্ধার সম্পর্ক যদি কেবল মালিক-মজুরের মধ্যে হত তা৷ হলে নাহয় তোমার শ্রেণীসংগ্রাম তত্ব মেনে নিতাম, যদিও তুমি ভালোন্ডাবেই জান যে এঁ তত্বের সার্বভৌমতায় আমার বিশ্বাস নেই এবং এও মানি না যে এর দ্বারা মানবসম[জের চূড়ান্ত কোন মঙ্গল হবে।

কেন, কোথায় শ্রেণীংগ্রামে অবিশ্বাপ করার মত কি দেখলে? আমি চ্যালেঞ্ের স্থরে প্রশ্ন করলাম

বন্ধু তেমনি অনুত্তেজিত ভঙ্গীতে বললেন, বাউলাদেশের বু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের ভিতর শিক্ষক-অধ্যাপকদের সম্বন্ধে যে অশ্রন্ধার ভাব তাকে তোমার শ্রেণীসংগ্রাম তত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করবে কিভাবে? শিক্ষকরা কি বুর্জোয়া 'হযাভদের, দলে পড়েন ধারা ছাক্রদের শোষণ করে মার্কপীয় পরিভাষা অনুযায়ী কোন 'সারপ্লাদ ভ্যালু' হাতিয়ে নিচ্ছেন?

না__নাঁ, ঠিক তা নয়, আমি একটু কৈফিয়তের ভঙ্গীতে বললাম আসলে কি জান_-অনেকে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাটাই বুর্জোয়া ব্যাপার মনে করেন তাই সম্ভবত সেই বুর্জোয়া শিক্ষাব্যবস্থার ধারক শিক্ষক-অধ্যাপকের সঙ্গে বিপ্লবী ছাত্রদের এট] ঠিক শ্রেণীসংগ্রাম না হলেও."

বাঙালীর সবচেয়ে বড় সমস্থ ২৭

চমত্কার চমৎকার তোমার ব্যাখ্যা! বিভ্রপের ভঙ্গীতে বন্ধু বললেন তারপর সুর পাণ্টে বললেন, থাকগে, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা বুর্জোয়া কিনা এবং হলেও তাকে পাণ্টে প্রলিটারিয়েটদের জ্ঞানে কোন্‌ শিক্ষাব্যবস্থ| প্রবর্তন করব-_ সেকথার আলোচন] এখন না হয় মুলতুবী রাখলাম | সর্বহারাদের জন্য প্রাণপাত করছি বলে যেসব রাজনৈতিক দলের কর্মীরা একই ফ্রন্টের আওতাভুক্ত হয়েও পরম্পরের মাথায় লাঠি মারছেন তাদের কথাও না-হ্য় বাদ দিলাম কিন্তু ছাত্রতে ছাত্রতে যে অশ্রদ্ধার ভাব-_এক রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন অন্ত দলের ছাত্রদের যে চরিত্রহনন করছে, একই কারখানার শ্রমিক যাঁদের আধিক স্বার্থ একই, তার] বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শ্রমিক-সংগঠনের সদন্ত হয়ে 'শ্রেণী-শত্র' মালিকদের নয়, পরস্পরের বুকে ছুপি মারছে এটা কোন্‌ দেশী *শ্রেণীসংগ্রাঘ” ? একটু থেমে বন্ধু বললেন, আজকের বাঙলাদেশে বাসযাত্রী বা রেলযাত্রী-ধারা আবার অধিকাংশই শ্রমিক-কর্মচারী বা ছাত্র অর্থাৎ প্রলিটারিয়েট শ্রেণীর, তাদের সঙ্গে বাস বা রেলের শ্রমিক-কর্মচারীর যে মারামারি হয় অথবা! রোগী কিংবা তার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে হাসপাতালের ডাক্তার- নাদের যে সংঘর্ষের কথ। মাঝে মাঝে শোনা যায় তাতে বা কোন্‌ পক্ষ সর্বহারা আর কোন্‌ পক্ষই বা শোষণকারী বুর্জোয়।? আর এইসব তথাকথিত শ্রেণীংগ্রামের ফলে কি ধরণের সমাজবাদী বিপ্লবের পথ প্রশস্ত হয় বলতে পার?

আমি কয়েক মুহুর্ত চুপ করে রইলাম। তারপর ব্ললাম, স্বীকার করছি ভাই এসব ছন্দ-সংঘাত তোমার ভ'বায় যা! শ্রদ্ধার অভাবের নিদর্শন-_শ্রেণীসংগ্রামের তত্বে এর কোন ব্যাখ্যা আছে কিনা আমার ঠিক জানা নেই। তবে কেউ কেউ বলেন এসব পুঁজিবাদী সমাজ রাষ্ট্রব্যবস্থার অপরিহার্ধ নিদর্শন এবং সমাজবাদ প্রতিষ্ঠিত হলে এসব লোপ পাবে

বন্ধু এবার হো হো করে হেসে উঠলেন তারপর হাপির মধ্যেই বললেন, আমার এক বন্ধু ডাক্তার সেদিন তিনি বলছিলেন যে, যে-রোগ তাদের জ্ঞান- বুদ্ধি দিয়ে তার। ধরতে পরেন না এবং তুমি জান যেসব ব্যাধির কারণ বোঝার মত জ্ঞান চিকিৎসাশাস্ত্রে এখনও আবিষ্কার হয়নি-_-তার নাম তার] দিয়ে দেন আালাজি। রোগের একট নাম না জানলে রোগী খুশী হয় না এবং সম্ভবত ডাক্তারেরও অহমিকা ক্ষু্ন হয়। তাই এই আযালাজি প্রয়োজনে সবার মুখরক্ষ। করে। কঠসম্বর পাণ্টে বন্ধু বললেন, কিছু মনে কোরো! না ভাই, সমাজবাদী বিপ্লব

২০৮ বাঙলা বাঙালী

সৃর্ত হলে সব ঠিক হয়ে যাবে, এও তেমনি এক মেকি সবজাস্তা ভায়গনোসিস্। স্বাধীনতার আম্দোলনের সময় আমরা এক দফা ভুল করেছিলাম__দেশের সমস্াগুলির মূলে না গিয়ে বলেছি ইংরেজ চলে গেলেই দেশের লোক দুধ-খিয়ের সমুদ্রে সাতার কাটবে, হিন্দুমুসলমান গল জড়াজড়ি করে ঘুরে বেড়াবে এখন 'আর এক দফা সমাজবাদী বিপ্লবের ধুয়ে তুলে বাস্তব সমস্তাগুলি এড়িয়ে যাবার ব্যবস্থা করছি।

কি বলতে চাঁও তুমি, আমি এবার বিহ্বলভাবে জিজ্ঞাসা করলাম

স্বামী বিবেকানন্দের উক্তির প্রতিধ্বনি করে বলতে চাই যে অশ্রদ্ধা করে কোন মানুষ বা জাতি বেঁচে থাকতে পারে না বা বড় হতে পারে ন1। শ্রদ্ধাবানই 'ক্ঞানলাভ করে এবং জ্ঞানই উন্নতির সোপান এমনকি চোর-ডাকাতদের দল বা সমা'জও টিকে থাকতে পারে না পারস্পরিক শ্রদ্ধা না থাকলে স্থতরাং সভ্য ভদ্র সমাজে শ্রদ্ধার স্থান কী গুরুত্বপূর্ণ সহজেই তা৷ অনুমান করতে পার

কিন্ত তোমার পরামর্শ বড় বেশী আবী বা অযূর্ত হয়ে যাচ্ছে নাকি? বাস্তবের দৈনন্দিন জীবনে এই শ্রদ্ধার অনুশীলনের উপায় কি বলবে তো?

বন্ধু জবাব দিলেন, এর সেরা পন্থা হল অপর পক্ষের সততায় অবিশ্বান ন! করা। তোমার থেকে কোন বিষয়ে কেউ ভিন্নমত পোষণ করলে অমনি তার পিছনে কোন বুর্জোয়া পুঁজিবাদী অথবা অপর কোন স্বার্থ আছে ধরে না নিয়ে তাকে 15015650 16616706 0? 0010101 ব1 একট! সুস্থ মতপার্থক্য মনে করে তার বক্তব্যের সত্যাসত্য নির্ধারণের চেষ্টা করা আর একটু সহিষ্কৃতার পরিচয় দেওয়া, কারণ শেষ সত্য আমি জানি না-কেউ কোন দিনও জানতে পারে ন1।

আমি বললাম, তাহলে কি ধরে নিতে হবে যে সর্ধদাই আমার ধ্যান-ধারণ! ভুল এবং অপর পক্ষের বক্তব্যই সত্য ?

বন্ধু বললেন, তা কেন? আজকে এই মুহূর্তে যুক্তিতর্ক উপলব্ধ সাক্ষ্য- প্রমাণের ভিত্তিতে আমার যা উচিত মনে হচ্ছে আমি তাই বলব তদনুযায়ী চলব তবে অন্টেরও অনুরূপভাবে বলার চলার অধিকার আছে, আমাকে তা মেনে নিতে হবে এই প্রক্রিয়ায় যদি দেখ! যায় যে অপরের বক্তব্য আমার থেকে ভিন্ন তবে নম্র দৃঢ়ভাবে আমার যুক্তি তাঁকে বোঝাবার চেষ্টা করব এবং সঙ্গে সঙ্গে নিজের মনের দরজায় ছিটকিনি দিয়ে রাখব না-_তার যুক্তিতে কোন সত্য থাকলে তাও গ্রহণ করব এইভাবে বিজ্ঞানীরা ঘাকে 0181 0৫

বাঙালীর সবচেয়ে বড় সমস্ত ২৯৪

51707 অথব। প্রায়োগিক পদ্ধতি বলেন কিংবা দার্শনিকদের মতে যাঁ 018160610 ব1 ছ্বান্দ্িক প্রক্রিয়া তার সহায়তায় আমরা এক সত্য থেকে অপর সত্যে উত্তব্রণ করব।

মাথা নেড়ে আমি বললাম, হ্যা- শ্রদ্ধার পাঠ নিতে হলে সহিষ্ণুতার এবং হয়ত বা বিশ্বাসেরও এই পদ্ধতি ছাড়া গত্যস্তর নেই মাঁনছি।

বন্ধু বললেন, ঠিক ধরেছ তুমি-ব্যাপারট। বিশ্বাসের এলাকায়ই পড়ে তবে দ্বিতীয় প্রসঙ্গে আসার পুর্বে আর একটি কথা বলে নিই। একটু আগেই তুমি অভিযোগ করছিলে যে মালিক-মজুরের ঘণ্ব দেখ! দিলে বা কটি-কজির লড়াই শুরু হলে শোষিত পক্ষকে আমি দান্স্থথে আত্মসমর্পণ করার পরামর্শ দেব। আশা করি বুঝতে পেরেছ যে আদৌ আমি সেই কথা বলিনি। স্বার্থবিরোধ সমাজে অবশ্যই দেখা দিতে পারে এবং যে পক্ষ নিজেদের শোষিত বঞ্চিত মনে করছেন তারা অবশ্ঠই শোষক বঞ্চনাকারীর বিরুদ্ধে লড়বেন। কিন্তু সে লড়াই অশ্রদ্ধাযুক্ত হতেই হবে এমন কোন কথা নেই।

্রদ্ধাযুক্ত লড়াই ! আমার কণ্ে বিশ্ময়। এতে! এক মহাভারতের যুগেই হয়েছে বলে শোনা গেছে, ক্ষীণকণ্ে আমি বললাম

দৃঢ়কণ্ঠে বন্ধু বললেন, শুধু কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেই নয়-__সব যুগে এবং প্রায় সব দেশেই এই সৌম্য যুদ্ধের নিদর্শন রয়েছে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ প্রচার না করেও চরিত্রহননে প্রবৃত্ত না হয়েও যে জীবন-মরণ লড়াই করা যায় একালের ভারতে মহাত্মা গান্ধীর সমগ্র জীবন তার নিদর্শন আর গান্ধীর সঙ্গে সঙ্গে তার সৌম্য যুদ্ধের প্রক্রিয়ার অবসান ঘটেনি আমাদের দেশে তো৷ বটেই ইউরোপ, আমেরিক1 আফ্রিকাতে তার অনুশীলন চলছে

কিছুক্ষণ নীরবে বন্ধুর বক্তব্য পরিপাক করার চেষ্টা করলাম আমি তারপর বললাম, শ্রদ্ধার আর একটি কি যেন অর্থের কথা বলছিলে তুমি !

বন্ধু বললেন, বাল! ভাষাতে বনুলপ্রচলিত ন1 হলেও শ্রদ্ধার অপর একটি অর্থ হল বিশ্বাস, প্রত্যয় নিষ্ঠা ব্যক্তির মত জাতির জীবনেও এর স্থান অপরিহার্য

বাঙালীর জীবনে কোথায় এর অভাব দেখলে তুমি, আমি প্রশ্ন করলাম

শ্রদ্ধার অভাব প্রসঙ্গে বলার সময় তা বলেছি পারম্পরিক বিশ্বাস থাকলে শ্রদ্ধার অভাব হয় না, বন্ধু বললেন। তারপর করম্বর পাণ্টে বললেন, তোমায় একটা উল্টো প্রশ্ন করছি। বল তো! কিসের থেকে বাঙালীর মনে অবিশ্বাস_

বা.১৪

২৬০ ধাঙল! বাঙালী

সব কিছুতে নাস্তি বা নোতির মনোভাব জেগেছে? বন্ধু আমার দিকে জলজলে দুটিতে চেয়ে বললেন

আমি কিছুক্ষণ ভাবলাম, তারপর কিছুট1 ইতস্তত করে বললাম, দেখ আমার মনে হয় হয়ত বা নিজেদের উপরই বিশ্বাস হারিয়েছি আমরা তাই হয়ত চতুর্দিকে এই অবিশ্বাস আর হতাশার প্রবল প্রবাহ

সোৎসাহে বন্ধু বললেন, পাক্কা কথা বলেছ বন্ধু--খীটি সত্য আত্মবিশ্বাসের “অভাব থেকেই এই অপরের প্রতি বিশ্বাসহীনতা বা অশ্রদ্ধার জন্ম নিজের ভবিষ্ুৎ গড়ে নেবার ক্ষমতা আমার কাছে-__-এই মনোবল থাকলে, কেন্দ্র অমুক দিল না অথবা প্রতিবেশী প্রদেশগুলি অবিচার করল--এসব বলে আমর! 'দিবারাত্র অনুযোগ করতাম না।

আমি বাধ! দিয়ে বললাম, কিন্তু বাঙলার বিশেষ সমস্যা__দেশবিভাগ উদ্বাপ্তদের আগমনের ফলে আঁধিক অবস্থার বিপর্যয় ইত্যাদির গুরুত্ব কি তুমি স্বীকার কর না? এবং তোমার কি মনে হয় যেকেন্দ্রও অন্যান্ত প্রদেশ এইসব সস্তার সমাধানের জন্য বাঙলার প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতি দেখিয়েছে ?

গাঢ় শ্বরে বন্ধু বললেন, আমায় ভুল বুঝে না ভাই। বাঙলাদেশের সমশ্তাগুলি ষোলো আনা খাটি এবং কেন্দ্র 'ও প্রতিবেশী প্রদেশগুলি যতটা সহানুভূতি দেখানো উচিত ছিল তা দেখাননি। কিন্তু অপরের প্রতি অভিযোগ-অন্যোগ করে সমস্ত দিন কাটিয়ে দিলেই কি আমাদের সমস্যাগুলির সমাধান হয়ে য'বে? আত্মবিশ্বান সহকারে সমস্তাগ্তলির সমাধানে লেগে পড়তে হবে নাযা হাতিযার বা রসদ আছে তাই নিয়ে? কোন ভালো সৈনিক কি যুদ্ধের সময়ে এই বলে লড়াই কর] থেকে বিরত থাকে যে আরও 'বৈলী হাতির়ীর তার নেই !

আমি বললাম, তোমা যুক্তিতে জোর আছে স্বীকার করছি।

বন্ধু যেন আমার থা শুনতেই পাননি এইভাবে বলে চললেন, দেখ ছিন্মূলের! আমাদের মাথাব্যথা আর ইজরাইলের তারা সম্পদ | দুরের কথ। বাদ দিই। আমাদের শ্দেশ ভারতে পঞ্জাবীদের আমাদেরই মত ছুরবস্থা হয়েছিল-_ সিহ্ধীদের তো৷ তার থেকেও বেশী কিন্তু তার! উদ্বান্ত সমস্যার সমাধান অনেক দিন করে ফেলেছেন! ফেলে আসা-সম্পত্তির জগ্ঠ তাদের মধ্যে কেউ ফেউ যে টাকা পেয়েছেন তাকেই নিশ্চয় তুমি তাদের সমন্তার সমাধানের একমাত্র কারণ 'বলবে না কারণ টাকার অঙ্কে যদি হিসাব কর, পূর্বপাকিস্তানের উদ্ছাত্তদের

বাঙালীর সবচেয়ে বড় সমস্যা ২১১.

জন্তও ভারত সরকার কম টাকা খরচ করেননি--গত বছরের শেষ পর্যন্ত এই অঙ্ক ছিল ৩২২ কোটি টাকা জার্মানী জাপান দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ফলে আমাদের থেকে অনেক বেশী বিধ্বস্ত হয়েছিল। অথচ আমরা এখনও আঘাতের বেদনায় জর্জর আর এসব দেশ কবে আঘাত ভুলে পৃথিবীর উন্নততম্‌ দেশগুলির অন্যতম কেবল টাকায় হয় না ভাই।

আমি সম্মতিস্থচক মাথা নেড়ে বললাম, ঠিক চাই এর সঙ্ষে আত্মবিশ্বাস কঠিন পরিশ্রম। বাঙালীও এর পরিচয় দিতে পারত, কিন্তু সম্ভবত আমাদের রাজনৈতিক দলগুলি আর খবরের কাগজ:

মাঝপথে বাধা দিয়ে অধীরভাবে বন্ধু বললেন, রেহাই দাও ভাই এইসব রাজনৈতিক দল আর খবরের কাগজের হাত থেকে, দেশের ছুর্দশাই যাদের ফলাও ব্যনসার বড় পুজি তারপর কহস্বর পান্টে অন্ুযোগের ভঙ্গীতে তিনি বললেন, কিন্তু জেনেশুনে বাঙালী কেন রাজনৈতিক দল খবরের কাগজের উপর মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ করে নিজের সর্বনাশ করবে তা বলতে পার? আমার তো মনে হয় ছুইটি বাঙালীর জীবনে প্রায় একট' অবসেসনের রূপ নিচ্ছে। রাজনীতিকেই পরমত্রক্দ খবরের কাগজের বন্তব)কে বেদবাক্য বলে মনে কর! সুস্থ মীনসিকতার লক্ষণ নয়। রাঁজনীতি সমাজের বহুবিধ কৃত্যের একটির বেশী নয়__-তাই যে-কোন প্রগতিষ্ঈীল সমাজে এর স্থান অনন্য নয়, বনহুর মধ্যে একটিমাত্র মান্ষ সমাজের জীবনে লোককল্যাণ, ধর্ম, বিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কাতির অন্ুশী-।নঃ শরীরচর্চা এমনকি নিছক কৌতুক রঙ্গরসেরও যথোচিত স্থান আছে। সব ভুলে কেবল রাজনীতি নিয়ে হৈ চৈ কর। একাঙ্গী এবং সেইজন্য তা অন্ুস্থ বিকাশের লক্ষণ

আমি বললাম, বুঝলাম তোমার কথা কিন্তু এর হাত থেকে পরিত্রাণের পথ কি বলতে পার?

বন্ধু বললেন, বলছি সেকথা তবে তার আগে আর একটি কথ! বন্ধে নিই। কেন্দ্র আমাদের প্রতি উদ্ালীন_-এই যে কথাট। রাজনৈতিক উদ্দেশ্টে কিছু দিন যাবৎ আমাদের দেশে চালু করার থুব চেষ্ট! করা হচ্ছে এবং যার ফলে বাঙালীর আত্মবিশ্বাসকে কুষ্টিত রেখে তার আত্মশক্জির উদ্বোধন-পর্বকে, আরও বিলখিত কর] হচ্ছে তাক বিরুদ্ধে আর একটি, কথা বলর | ত্বন্তান্ত প্রদেশগুনির, কথা যদি ছেড়েও দিই--১৯৬৭ সন থেকেই তামিলনাড়ু, কেরব আমাদের, গ্রত্তিবেগী ওড়িয্যায়, কেনে, যে রাজনৈতিক দতেক বর্ষ তার প্রতিত্বনী

২১২ বাঙলা বাঙালী

দলগুলির সরকার আর কংগ্রেস ভাগাভাগি হয়ে যাবার পর কর্ণাটক গুজরাতের একই অবস্থা পঞ্জাব, হরিয়ান।, উত্তরপ্রদেশ বিহারে থেকে থেকে সরকার বদল হয়েছে বলে সেইসব প্রদেশের উদাহরণ ন1 হয় নাই দিলাম কিন্তু হিসাব নিয়ে দেখা যাবে তামিলনাড়ু, কেরল, ওড়িস্কা এবং গুজরাত কর্ণাটকে গত তিন বছরের উন্নয়নের হার বাঙলার থেকে বেশী হবে। আর উন্নয়নের আধুনিক মান-_সেচ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, কলকারখানার প্রসার দ্বারা শহরের বেকার সমন্তার সমাধান এবং কুটির মাঝারি শিল্পের দ্বারা গ্রামের কর্মসংস্থান প্রয়াসের প্রগতি ইত্যাদির দিক থেকে এরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুধু এগিয়েই নেই, এইসব ক্ষেত্রে তাদের অগ্রগতির বর্তমান হারও আমাদের তুলনায় বেশী স্থতরাং একথা নিশ্চয় মানবে যে কেবল কেন্দ্র বিরূপ বলে শোরগোল করা বাউলাদেশের সমস্তার সমাধানের পথ নয়। পথ হল যে-কোন এক বা একাধিক সমস্যা নিয়ে তার সমাধানের জন্য কোমর বেঁধে কাজে লেগে পড়া

বন্ধুর কথাগুলি আমার কানে অন্থরণন স্ট্টি করছিল আমি তাই বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, তোমার” কথ। হ্বীকার কর] ছাড়! আমার কিছু বলার নেই ভাই তারপর বন্ধুকে আবার মনে করিষে দিলাম, কিন্ত-_কিন্ত এর থেকে পরিজ্রাণের পথ কি বলতে পার?

দৃঢ় প্রতায়ের সঙ্গে বন্ধু বললেন, বিশ্বান বা আত্মবিশ্বাস যা-ই জাগানোর কথা বল ন। কেন, এর উপায় হল বিশ্বাস__দৃঢ় বিশ্বাস যুক্তি দিয়ে বিশ্বাস জাগানো যায় না। অবিশ্বাসের প্রত্যক্ষ কারণ না ঘট! পর্যজ্ অপর সকলের আন্তরিকতা সদিচ্ছায় বিশ্বাস করতে হবে এবং বাঙালীও শুধু বাচবে নয়, ন্স্থ শরীরে সানন্দ চিত্তে বাচবে--এই বিশ্বাস নিযে আমাদের কাজ করতে হবে। বাঙলাদেশে আজকে এই যে ভাউনের জোয়ার লেগেছে তাঁর একমাত্র জবাব হল গড়া- দেশ জাতিকে গড়া এছাড়া নান্তা পন্থা

কিন্তু কোন্‌ পম্থায় কাজ করবে সেইটেই তো প্রশ্ন। বিব্রতভাবে আমি বললাম

জলদগন্ভীর কে বন্ধু জবাব দিলেন, পন্থাটা আদে! বড় প্রশ্ন নয়। আজকের পশ্চিমবঙ্ের চাহিদা হল ধার. উপর পশ্চিমবঙ্গকে গড়ার যে কাজের দায়িত্বই পড়ক--তা তিনি রাজ্যের খাদ্য জোগান দেবার কৃষক, শন্তান্ পশ্য উৎপাদনের শ্রমিক অথবা বাঙালীর ভবিষ্তৎ গড়ার কারিগর শিক্ষক কিংবা

বাঙালীর সবচেয়ে বড় সমস্থ ২১৩

বাঙলার ভবিষ্তৎ_-ছাত্র, যাই হোন না কেন-প্রন্বল নিষ্ঠ। প্রভূত পরিশ্রমে তাকে নিজের নিজের কাজ করতে হবে। কাজ করতে হবে এই বিশ্বাস উদ্দীপন নিয়ে যে আমার উপর বাঙলাকে গড়ার এই দায়িত্ব পড়েছে এবং আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করে সেই দায়িত্ব পালন করব

আমাকে মাঝপথে বাধা দিয়ে আবেগভরা কণ্ঠে বন্ধু বললেন, তুমি হয়ত সম্পদের ন্যায়সঙ্গত বণ্টনের কথা বলবে তা! তোমার সে আন্দোলন চলুক _- সৌম্যগগবে চললে আমিও তোমার সে আন্দোলনের শরিক হব। কিন্তু তার জন্য পশ্চিমবঙ্গের সম্পদ স্থষ্টির কাজে বিন্দুমাজ্র বাধ! পড়ে না যেন। কারণ আরও অতিরিক্ত সম্পদ স্থ্টি করতে না পারলে কি বন্টন করবে? ভারতের সমগ্র জাতীয় আয় সমানভাবে বণ্টন করলে টাকার অস্কে আজ বছরে চার-পাচশ টাকার বেশ কারও ভাগে পড়বে না। কেনল পশ্চিমবঙ্গের পরিসংখ্যান নিলে হয়ত আরও কয়েক টাকা বাড়বে তা দিয়ে নিজের জীবনযাত্র! নির্বাহ করতে কোন্‌ সমাজবাদী সাম্যবাদী রাজী হবেন? আর খেয়াল রেখো! এটা গড় আয়-_দেশের অধিকাংশ লোকের বাৎসরিক আয় এর থেকে অনেক কম। স্ৃতরাং নিছক অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকেও কোমর বেঁধে পরিশ্রম কর] ছাড়। অপর কোন পথ নেই। কুশ-চীন-ভিয়েতনামের সব সাম্যবাদী অথবা আমেরিকা-জাপান-পশ্চিমজার্ানীর মত পুঁজিবাদী বেশ-_সবার উন্নতির গোপন রহ্স্তই হল এই কঠিন মেহনত। এর কথা খেয়াল না রেখে কেবল উৎপাদন- ব্যবস্থার লেবেল পালটালে খুব বেশী দূর এগনো যায় ন1।

একটু থেমে বন্ধু যোগ করলেন, তোমাদের ভাষায় আমি তো প্রাচীনপন্থী তাই জনৈক প্রাচীন কিন্তু চিরকালের মনীষীর উক্তি উদ্ধত করে বলি-_ চালাকির দ্বারা কোন মহৎ কার্ধ হয় না।

আমি এতক্ষণ তন্ময়ভাবে বন্ধুর কথ! শুনছিলাম বন্ধু থামতে অর্ধ দ্বগতোক্তির মত বললাম, তাহলে,সমাধান হল অপরকে শ্রদ্ধা, আম্মবিশ্বাস আর শ্রমনিষ্ট|':- |

সোৎসাহে বন্ধু বললেন, হ্যা, এরই মিলিত নাম দিয়েছি আমি ভক্তি। বাঙালীর উন্নতির পথে বাধক বাইরের কোন মেকি শক্রর প্রতি ইঙ্গিত করলে ুষ্টব্ধ হাত আকাশে আম্কালন করে গগনভেদী জোগান দেওয়া অনেক অনুগামী হয়ত আমি পেতাম। তবে তা দিয়ে আমার বা আমার দলের

২১৪ বাঙলা বাঙালী

রাজনৈতিক উদ্দেশ্ট সাধিত হলেও বাউলা বাঙালী যে তিমিরে সেই তিমিরেই থাকত বলে আমি সম্ভতা জনপ্রিয়তার কথ খেয়াল না করে আমাদের ভিতরকার এই মূল সমস্ত!-_-ভক্তির অভাবের কথা বলছি

ভক্তি! জোর দিয়ে আমি কথাটি উচ্চারণ করি

হ্যা, ভক্তি। বন্ধু দুঢ়কণ্ে পুনরাবৃত্তি করলেন তারপর বন্ধুর কে ঈষৎ, বিরতি চেয়ে দেখি বন্ধু তার বইয়ের তাক থেকে একটি বাধানে। বই বার করেছেন কয়েক যৃহূর্ত লাগল তার পাতা ওলটাতে তারপর এক জায়গায় পৌছে তার আহুল নিরস্ত হল। আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে চাইলেন এবার বন্ধু। আবেগ-উদছ্েল দৃষ্টি সন্ধানী আলোর মত আমার মুখমগ্ডলে নিবদ্ধ রেখে মেঘমন্জ্রক্ঠে বন্ধু বললেন, বাঙলাদেশের ইতিহাসের এইরকম এক-সংক্রাস্তি- কালে মাতশ্তন্তায় যখন আজকেরই মত প্রবল, বাঙলার উদ্ধারের জন্য সন্ন্যাসী সাধকদের কাছে কোন্‌ পথ নির্দেশিত হয়েছিল এই বাঙলাদেশের এক মহান্‌ মনীষী সাহিত্যিকের আর্ধদুষ্টির প্রসাদে, তারই অন্থপম ভাষায় তোমার তা শোনাই শোন £

-**সেই অস্তংশূন্ত অরণ্যমধ্যে, সেই স্থচিভেগ্ অন্ধকারময় নিশীখে, সেই অননুভবনীয় নিস্তবূতা মধ্যে শব্ধ হইল, “আমার যনস্কাম কি সিদ্ধ হইবে না?”

শব হইয়া আবার সেই অরণ্যানী নিস্তব্ধতায় ডুবিয়া গেল; তখন কে বলিকে যে, অরণামধ্যে মনুষাশব্ধ শুন গিয়াছিল? কিছুকাল পরে আবার শব্দ হইল, আবার সেই নিস্তব্ধতা মথিত করিয়া মনুষ্তক ধ্বনিত হইল, «আমার মনস্কাম কি সিদ্ধ হইবে না?”

এইরূপ তিনবার সেই অন্ধকারসমুদ্র আলোড়িত হইল তখন উত্তর হইল» “তোমার পণ কি?”

প্রত্যুত্তর বলিল, “পণ আমার জীবনসর্বন্ব ৷”

প্রতিশব্খ হইল, “জীবন তুচ্ছ, সকলেই ত্যাগ করিতে পারে ।”

“আর কি আছে? আর কি দিব ?”

তখন উত্তর হইল, “ভক্তি”

বিহার বাঙল৷ আকাডেমি প্রকাশন!

১। কেদার রচনাবলী প্রথম ভাগ ৫০ টাকা ( কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় )

২। দ্বিতীয় ভাগ ৬০ *

৩। (যন্্স্থ) তৃতীয় ভাগ ৬৭ «

৪। আশালতা সিংহ রচনাবলী ৬০ 5

| রবীন্দ্রনাথ জাতীয় সংহতি ১০ %

৬। বিহারে বাঙল। সাহিত্য--নন্দছুলাল রায় ৩০ %

৭। বাঙলা বাঙালী-__শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ৩০ ৮| বাঙলা সাওতালী-বাস্তা সরেন ( যন্রস্থ ) ৯। রা এবং ঝাড়খণ্ড : সংস্কৃতি-সমহ্বয়-_কল্যাণী মণ্ডল (যন্ত্স্থ ) ১০। বিহারের কবিতা সংকলন--_ (যন্তস্থ ) ১১। রবীন্দ্রপ্রবাহ-_ রামবহাল তেওয়ারী (যন্ত্রস্থ)